এক গুচ্ছো কদম পর্বঃ৭

0
1502

#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ৭
লিখাঃসামিয়া খান

মাদিহার বয়স মাত্র সাত মাস।অনেক ছোট।এসময়ের বাচ্চাদের সবসময় মায়ের সাথে থাকা উচিত কিন্তু ইদানীং রোদসী কেমন যেনো মাদিহার প্রতি বেশ উদাসীন।হিমাদ্রি থাকার কারণে মৃদুলের ওতোটা টেনশন হচ্ছেনা তাও মা তো মা হয়।বেশ সুন্দর করে মাদিহাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে মৃদুল।কোলে করে রুমে এসে শুইয়ে দিয়ে মৃদুল দেখতে পেলে রোদসী গোসল দিয়ে বের হচ্ছে।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো মৃদুল,,

“তুমি কখন আসলে?”

“যখন তুমি তোমার প্রাণ প্রিয় হিমকে বসে বসে খাইয়ে দিচ্ছিলে”।

“খাইয়ে দিতে সমস্যা কথায়?আগেও দিতাম আর এখনোও দেই”।

” না কোন সমস্যা নেই।তুমি কেনো তোমার চৌদ্দ বংশের মানুষও এসে খাওয়াতে পারে তাতে আমার কোন সমস্যা নেই”।

“রোদসী এখানে ঝগড়া করার মতো কিছু নেই”।

” ওহ জানতাম না তো”।

রোদসীর এই খামখেয়ালি কথায় মেজাজটা খারাপ হচ্ছে মৃদুলের। কিন্তু তাও সে চুপ করে গেলো।কারণ খুব কষ্টে মাদিহা ঘুমিয়েছে এখন যদি জেগে যায় তো হিমের কাছে দিতে হবে।কিন্তু হিমাদ্রিও ঘুম পাড়ছে। ওদের দুজনের কারো ঘুম নষ্ট করতে চায় না সে। তাই চুপচাপ দূর থেকে রোদসীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

“আমি যদি খুব বেশী ভুল না হই রোদসী, তাহলে তোমার হাতের ব্রেসলেটটা প্লাটিনামের তৈরী।এম আই রাইট?”

মৃদুলের দিকে না তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো রোদসী।ঠিক এই ভয়টা পেয়েছিল সে।

“হুম এটা প্লাটিনামের।কেন তাতে কী হয়েছে?”

“কয়েকটা প্রশ্ন জেগেছে। এই যেমন, প্লাটিনাম ডায়মন্ডের থেকে দামী।আর তোমার কাছে ডায়মন্ড এফোর্ড করার মতো টাকা নেই। সেখানে প্লাটিনাম! বিষয়টা কেমন যেনো আশ্চর্য হয়ে গেলো না!”

“এটা আমি গিফট হিসেবে পেয়েছি। এখন দয়া করে এটা জবাবদিহি করতে বলবেনা যে কে দিয়েছে,কোথায় থাকে সে, নাম কী! এসব লেম জিনিস আশা করি জিজ্ঞেস করবেনা?”

“অবশ্যই আমি করতে পারি।এবং তুমি জবাবদিহি করতে কী বাধ্য নও?”

“হয়তো না।”

মৃদুল মূলত সোফায় বসে রয়েছে। রোদসী হেলদুলে মৃদুলের কাছে গিয়ে দাড়ালো।একটু ঝুঁকে মুখটা ঠিক মৃদুলের মুখের সামনে নিলো।

“মৃদ জানো তুমি আমার দেখা সব থেকে ফর্সা পুরুষ। খুব আশ্চর্যভাবে তোমার ঠোঁটের রং কিন্তু চেঞ্জ হয়।এই যেমন এখন তোমার ঠোঁটের রং এখন ঠিক পাকা জামের মতো।যদি ঠিকভাবে খোঁজ নিয়ে দেখি তো হিমাদ্রির ও এখন সেম ঠোঁটের কালার।আমি অনেকদিন ধরে জিনিসটা অবজার্ভ করছি।আচ্ছা বলতে পারবে এক টাইমে কীভাবে সেম কালার হয়।রহস্যটা কী?

কথাগুলো শুনে মৃদুলের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।রোদসীর জায়গায় অন্য কেও বললে হয়তো এতোক্ষণে তাকে হসপিটালে দর্শন করিয়ে দিতো।নিরব ভঙিতে সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে শুধু একটা বাক্য মুখ থেকে উচ্চারণ করলো,,

” যার সম্পর্কে এতো বাজে কথা বললে না রোদসী।এটা ভুলে যেও না সে আমার মৃত ভাইয়ের স্ত্রী”।

আর এক সেকেন্ড ও রুমে থাকলো না গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো মৃদুল।মৃদুলের যাওয়ার পথের দিকে তাঁকিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো রোদসী।
,
,
,

একটু ঘুমিয়েছিল হিমাদ্রি। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে অনবরত কল এসে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিলো হিমাদ্রি। ফোনের স্ক্রিনে আহাদ নামটা ভেসে উঠেছে।হিমাদ্রি দ্বীধায় পরে গেলো কলটা রিসিভ করবে কীনা?কারণ আহাদ ভিডিও কল করেছে।একটু ভেবে কলটা রিসিভ করলো হিমাদ্রি।স্ক্রিনের ওপাশে সাদাএপ্রোন পরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে আহাদ।

“কেমন আছেন প্রজাপতি”।

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো,আপনি”।

” আছি ভালোই কিন্তু একটা রিসার্চ নিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে”।

“তা তো দেখতেই পাচ্ছি।একদম ল্যাব থেকে কল করেছেন”।

” তার একটা রিজন আছে,এটা আমার নিজস্ব তৈরী ল্যাব।বাট এভরোডে যেটা রয়েছে তার ধারের কাছেও এটা যাচ্ছে না।”

“এটা ঠিক না ওই ল্যাবটাও আপনার ক্রিয়েশন এটাও। কিন্তু আপনি কবে চলে যাবেন?”

“কয়দিন লেট হবে।বিকজ কিছু স্যাম্পেল লাগবে।বাংলাদেশে একধরনের গাছ রয়েছে যার কিছু জিনম দরকার আমার বর্তমানের রিসার্চে দরকার”।

“জেনেটিক্স হিসেবে বংশ বৃদ্ধি করার জন্য?”

“বিষয়টা ঠিক তেমন না। আসলে আমি এই জিনম গুলো এক প্রাণির মধ্যে প্রতিস্থাপন করতে চাচ্ছি”।

” জিনিসটা কী আদৌ পসিবল কোন কিছু?”

“আসলে ৯৯.৯৯℅ চান্স আমার ফেইল হওয়ার।বাট ট্রাই করতে সমস্যা নেই তো”।

” বাট মানুষের ওপর কিন্তু ট্রাই করবেন না?”

“আমি কোন অবৈধ কোন কাজ করিনা।তোমাকে যার জন্য কল করেছিলাম। একটা স্কলারশিপ রয়েছে।তুমি তো মাইক্রো বায়োলজি নিয়ে স্টাডি করছো তাইনা?”

“হ্যাঁ বাট আমি তো অর্নাস কম্পলিট করিনি এখনো”!

” হ্যাঁ তা জানি।এক্সামটা অর্নাস কম্পলিট না হলেও দেওয়া যাবে।সেক্ষেত্রে তোমার সি.জি.পি মার্ক ৩.৩+ লাগবে।আমার জানা মতে তোমার ৩.৫+। ”

“বুঝতে পেরেছি।বাট আমি তো পড়াশোনা থেকে বেশ কয়দিন ধরে দূরে রয়েছি”।

” আজকে থেকে শুরু করে দিন। একটা এক্সাম দিতে হবে।কিছু প্রেজিন্টেশন শো করতে হবে।আর অবশ্যই তাদের সামনে ভয় পাওয়া চলবে না।আর আইএলটিএস করা আছে তো?”

“হ্যাঁ একবছর আগে করেছিলাম”।

” সেই মার্কটা লাগবে।”

“কিন্তু আমি কী পারবো?”

“নাও পারতে পারেন।বাট চেষ্টা তো করা যায়।এটা মনে রাখবেন সুযোগ বারবার আসেনা”।
,
,
,
আহনাফের মুখ থেকে টান দিয়ে সিগারেটটা নিয়ে নিলো মৃদুল।এবং ওর পাশে বসে পরলো।

“স্লা কোনদিন ঠিক হবিনা তাইনা”?

” ভাই মুড এমনিতেই খারাপ।একটু শান্তিতে সিগারেটটা খেতে দে”।

“কেনো রে এতো রাগ।চা খাবি চা।একটু ঢেলে দেই”।

” মস্করা করার আর জায়গা পাওনা মিয়া তাইনা”!

“আচ্ছা বাদ দিলাম।এতো রাগ কেন ভাই”।

” এমনি কিছুনা”।

“ঠিক আছে না বললি”।

কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে রইলো।নিরবতা প্রথমে মৃদুলই ভাঙলো।

” আহনাফ তোকে দেখে মনে হয়না যে তুই এতো বড় একজন আর্কিটেক্ট”।

“এখানে মনে হওয়ার কী রয়েছে”।

” এতো টাকা কামিয়ে কী লাভ যদি তা তুই নিজের জন্য খরচ না করিস”।

“ধুর টাকা টাকার জায়গায় আর আমি আমার জায়গায়।কিছু টাকা কামাতে শিখেছি তাই বলে বড়লোক হয়ে গিয়েছি এমন তো না?”

“হয়তো।কিন্তু তুই জীবনে আমার দেখা সেরা মানুষ”।

” আহারে দোস্ত আমার সাথে ফ্লার্টিং করে লাভ নেই।আমি ছেলে মানুষ”।

“আর আমি এক মেয়ের বাপ”।

” ওহো জানতাম না তো”।

বলে উচ্চস্বরে হেসে দিলো দুজনেই।হাসি থামিয়ে আহনাফ মৃদুলৃে জিজ্ঞেস করলো,,

“তো তোর কাজ কেমন চলছে”।

” আর বলিস না খুব প্যারায় রয়েছি।সব এখন বিজয় ভাইয়া আর আমার ওপর এসে পরেছে। ”

“ঠিকভাবে সব দেখাশোনা করবি।চাচা তোদের ওপর বিশ্বাস করে”।

” তা আর বলতে”।

“আচ্ছা মৃদ তোকে একটা কথা বলি প্লিজ আগে আমার কথাটা বুঝবি”।

” ঠিক আছে বল”।

“আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি।ঠিক এখন থেকে না নয়মাস আগে থেকে”।

” বাহ তলে তলে এতো দূর?!”

“তা কে সে?”

“সে আর কেওনা সে হলো সৃষ্টি “!!
,
,
,
হিমাদ্রি ইজি চেয়ারে বসে হুমায়ন আহমেদের লীলাবতি উপন্যাসটা পড়ছিল।হুট করে মৃদুল এসে তার পায়ের কাছে বসে পরলো।(লিখাঃসামিয়া খান)বই থেকে চোখ না সরিয়েই হিমাদ্রি বুঝতে পারলো এটা মৃদুল।

“মৃদ তুমি কোন বিষয় নিয়ে খুব আপসেট?”

“হ্যাঁ রে মাথাটা একদম জ্যাম হয়ে আছে।এতো লোড নিতে পারছিনা।চুলে একটু হাত বুলিয়ে দিবি?”

কোনকিছু না বলে চুপচাপ হিমাদ্রি মৃদুলের মাথায় হাত বুলানো শুরু করলো।আরামে চোখটা বুজে আসতে চাচ্ছে মৃদুলের।

“তুমি কী সৃষ্টি আর ভাইয়ের কাহিনী নিয়ে এতো টেন্সড? ”

“তুই কীভাবে জানলি?তোকে কে বললো? ”

“সৃষ্টি বলেছে আমাকে।মেয়েটা অনেক ভয় পেয়ে রয়েছে এ বিষয়ে”।

” ওকে ভয় পেতে না কর।আহনাফ এমন কিছু করবেনা যাতে করে সৃষ্টির কোন সমস্যা হয়।আর প্রেগন্যান্ট এতো চাপ নিতে না করবি”।

“আমি আমার ভাইকে চিনি মৃদ।কিন্তু তুমি অন্য বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত। ”

“আমার মনের কথা কীভাবে বুঝে যাস তুই”।

” জানিনা”।

“হিম একটা প্রমিস কর কখনো আমাকে একা করে কোথাও দূরে গিয়ে থাকবি না।”

“মৃদ তোমাকে একটা কথা বলতে চাই”।

” আগে তুই প্রমিস কর”।

“আগে আমার কথাটা তো শুনো”।

” বল শুনছি।”

“আসলে আমি একটা স্কলারশিপ এক্সাম দিতে চাচ্ছি”।

মাথা থেকে হিমাদ্রির হাতটা সরিয়ে দিলো মৃদুল।

” তোর মাথায় এই স্কলারশিপ এক্সামের ভুত কে ঢুকিয়েছে। নিশ্চয় সে আহাইদা”।
“হ্যাঁ আহাদ বলেছে আর আমি ভাবছি দিবো।পেতেও তো পারি”।

” কোন এক্সাম তুই দিবিনা।কোথাও যেতে হবেনা।দেশের বাইরে তো আরোও না।আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না”।

“তাহলে চার বছর কীভাবে ছিলে।”

“যা জানিস না তা নিয়ে কথা বলবিনা।আমি এমন কোন দিন নেই যেদিন তোকে না দেখেছি। এমন কী ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়েও আমি তোর কলেজে তোকে দেখতে গিয়েছি।”

“তা আমার দেখার বিষয় না।আর আমার লাইফের ডিসিশন আই থিংক তুমি নেও না?”

“অবশ্যই আমি নেই হিম।এমনকী দুর্জয়ের সাথে তোর বিয়ে হবে কী হবেনা সম্পূর্ণ আমার ডিসিশন ছিল।তুই যে ড্রেস গুলোও পড়িস না সব আমার ডিসিশনে কেনা।এমন কী তোর পুরো লাইফ আমার কথায় চলে।”

“বাহ তার মানে আমার মা বাবা কোন মেটার করেনা?”

“করে বাট তারা আমাকে না জিজ্ঞেস করে কিছু করেনা”।

” আমি কী তোমার হাতের পুতুল মৃদ”।

“না তুই আমার জীবনের চলার পথে সহচারী”।

” সেটা রোদসী আমি না”।

“আমি ওতো কিছু জানিনা।শুধু এটুকু জানি তুই এক্সাম দিবিনা।এটা আমার অর্ডার”।

” তাহলে তুমিও শুনে রাখো আমি তোমার কথা শুনতে বাধ্য নই।এবং আমি এক্সামটা দিবো”।

চলবে,,

বিঃদ্রঃআমার মনে হচ্ছে আজকে মৃদুল আরো বেশী বকা খাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here