#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪
#সুরাইয়া_নাজিফা
“আমার কাছে আসো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
শান ভাইয়া এসে আমার পাশে বসল। আমি একবার ওনার দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। এখন আসছে দরদ দেখাতে। একটু আগে শ্বাশুড়ী মা যখন বললো তখন কি ক্ষতি হতো খাইয়ে দিলে। আমি মুখ গোমড়া করে বললাম,
“লাগবে না কারো হেল্প। ”
শান ভাইয়া কিছু না বলে পায়ের উপর পা তুলে বসে রইল। আমিও আমার খাওয়ায় মন দিলাম। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে কাঁটা হাত দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা। এবার চামচ দিয়ে গুঁতাগুঁতি করতে থাকলাম। কিন্তু বাম হাত দিয়ে কতটাই বা পারা যায়। কালকে রাতে অতটা বুঝতে পারিনি তবে হাতটা বেশ কয়েক জায়গায় অনেকটাই কেঁটে গেছে। শ্বাশুড়ী মা, ভূমিকা ভাবী, বাবা বেশ কয়েকবার চেয়েছিল খাইয়ে দিতে। কিন্তু আমিই বারণ করেছি। ভেবেছিলাম পারব। কিন্তু এখনও একটুও মুখে দিতে পারিনি। শান ভাইয়া অনেকক্ষন ধরে আমার কান্ড-কারখানা দেখে চলেছে।উনার এভাবে তাকিয়ে থাকাতে আমার অস্বস্তি হচ্ছে। তাই চামচটা হাত থেকে প্লেটে ফেলে বললাম,
“দূর খাবোই না। ”
চোখ মুখ কুচকে কথাটি বলতেই শান ভাইয়া খিলখিল করে হেসে উঠল। আমি উনার দিকে একবার তাকালাম ওনার হাসিটা দেখে আরো রাগ হচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে উনি আমাকে ব্যঙ্গ করছেন। উনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিরক্ত হয়ে উনার পাশ থেকে উঠে যেতে চাইতেই শান ভাইয়া আমার হাত ধরে টান দিয়ে আবার উনার পাশে বসিয়ে দিলেন।
“এটা কোন ধরনের অসভ্যতা? ”
“অসভ্যতামি তো এখনও শুরুই করিনি তবে তুমি দেখতে চাইলে করতে পারি কি দেখতে চাও? ”
শান ভাইয়া বাঁকা হেসে আমার আরো একটু কাছ ঘেঁসে বসল। উনার এমন বিহেভ দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। মানে এই কিছুক্ষন আগেই তো কেমন ব্যবহার করল এর মধ্যেই আবার পাল্টি খেয়ে গেল। আমি ওনার থেকে একটু সরে গিয়ে বললাম,
“আচ্ছা আপনার কি ছোটবেলায় কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছিল?”
শান ভাইয়ার হাসি মুখ থেকে গায়েব হয়ে অবাক হয়ে বললো,
“মানে? এক্সিডেন্ট হবে কেন?”
“হতেও পারে হয়তো আপনার মনে নেই। এই যে যেমন ধরেন মাথায় কোথাও চোট ফোট পেয়েছেন এরপর থেকে একটু আগে যা করেছেন কিছুক্ষন পর সেটা ভুলে যান।”
এবার শান ভাইয়ার অবাকের মাত্রা দ্বিগুন হলো। উনি জিজ্ঞেস করলেন,
“কি ভুলে গেছি আমি?
“কেন একটু আগেই আমার সাথে তিতা করলার মতো ব্যবহার করলেন। এখন মুখ থেকে মধু ঝরে কিভাবে?”
আমার কথা শুনে উনি কিছুক্ষণ চোখ ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপরই হো হো করে হেসে উঠল যাকে ঘর কাঁপানো হাসি বলে,
“এভাবে হাসার কি হলো? আমি হাসার মতো কি বললাম। ”
শান ভাইয়া হাসতে হাসতে বললো,
“যতই ভাবি রাগ করে থাকব। কথা বলব না। বাট তোমার এই কিউট কিউট কথা গুলো কখনো হতেই দেয় না। ”
“কথা আবার কিউট কিউট হয় নাকি? ”
“হয়। এইবার হা করো সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। ”
“না খাবো না। আমি না খেলেও বা কার কি? কারো তো আর ঠেকা পড়ে নাই আমাকে খাওয়ানোর। ”
আমি কথাটা শান ভাইয়াকে খোঁচা মেরেই বললাম। কারণ তার তখনের কথাটা আমার অনেক খারাপ লেগেছে। শান ভাইয়া গালে হাত দিয়ে বললো,
“বাবা এখানে দেখছি আমার উপর একজন অভিমান করে বসে আছে।”
আমি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললাম,
“আমি কারো উপর অভিমান করিনি। ”
“জানি আমি। তা কি পেলে রাগ কমবে?”
“আমার কিছু চাই না। ”
“আচ্ছা। তাহলে আর কি করার। তবে এখন তো খাওয়াটা খেতে হবে। ”
“খাবো না আমি। ”
“কোনো না শুনতে চাইনা। দেখি হা করো। ”
“বললাম তো খা।”
পুরো কথাটা আর বলতে পারলাম না তার আগেই উনি খাবারটা আমার মুখে পুড়ে দিলেন,
“একটা কথাও সোজা ভাবে শুনতে চাও না। তোমার জন্য সবসময় বাঁকা পথটাই বাঁচতে হয়। ”
আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম উনি হাসলেন।
“আচ্ছা আপনার সাথে আমার একটা কথা ছিল।”
“বলো? ”
“নিচে তখন সবাই আমাকে বকেছে।”
শান ভাইয়া অস্থির হয়ে বললেন,
“কে বকেছে? কেন বকেছে? কি হয়েছে বলো আমাকে? ”
“আরে আপনি এতে অস্থির হচ্ছেন কেন? বলছি তো।ঐ আপনাকে বিয়ের পরেও এখনো ভাইয়া ডাকি তাই শুনে বকেছে।”
আমার কথাটা শুনে উনি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন। তারপর বললেন,
“বেশ করেছে। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
” বেশ করেছে মানে? ”
“দেখো আমরা মানি আর না মানি আমাদের বিয়েটা তো হয়ে গেছে। এখন তুমি যদি সবার সামনে নিজের হাজবেন্ডকে ভাইয়া বলো তাহলে সেটা তো দৃষ্টিকটু দেখাবেই। ”
আমি হতাশ হয়ে বললাম,
“তাহলে কি ডাকব?”
“শান বলবে?আমার নামটা কি ডাকার মতো না?”
“সেটা না কিন্তু আমার শান ডাকতে কেমন জানি লাগে। ”
“কেমন লাগে। ”
“জানি না। মনে মধ্যে সুড়সুড়ি লাগে।”
শান ভাইয়া আবারও খিলখিল করে হেসে দিলেন,
“প্লিজ সোহা আর কিছু বলো না। তুমি আজকে হাসাতে হাসাতেই আমাকে মেরে ফেলবে। বাঁপের জন্মে এমন কথা শুনিনি। তোমার সাথে থাকলে যে আরো কতো নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারবো আল্লাহ ভালো জানেন। ”
আমি দুইহাত দুই দিকে প্রসারিত করে বললাম,
“আরো অনেক কিছু শিখতে পারবেন যেটা আগে জানতেনই না। ”
শান ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“বাচ্চা মেয়ে। আচ্ছা তোমার যেটা ডাকতে ইচ্ছা হয় সেটা ডেকো।এইবার খাওয়াটা শেষ করো।”
উনি একমনে আমাকে খাইয়ে যাচ্ছেন।একদম বাচ্চাদের মতো যত্ন করে খাওয়াচ্ছে। আমার কেমন অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছিল। ওনাকে চুপ থাকতে দেখে বললাম,
“আচ্ছা আপনি কি রাগ করেছেন? ”
“রাগ করার কোনো কারণ আছে কি?”
“আচ্ছা শান ডাকব হ্যাপি। ”
শান ভাইয়া অবাক হয়ে বললো,
“কি বললে শুনতে পেলাম না? ”
“নাটক করবেন না তো আপনি কি কানে কম শুনেন নাকি? ”
“ব্যাস শ্রীমতী চলে এসেছে নিজের রূপে। তোমার এই রূপটাই এতক্ষন মিস করছিলাম। ”
“তাই নাকি?
“একদম। আচ্ছা তখন মিথ্যে বললে কেন যে ওয়াসরুমে পড়ে গেছ সত্যিটা কেন বললে না। ”
“এখন আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে না এখন চাইলেই তো সবাইকে সব বলা যাবে না। ”
“বাবা মেয়ে তো দেখি বড় হয়ে গেছে। ”
“তো আপনার কি মনে হয় আমি বাচ্চা? ”
আমি কোমড়ে হাত দিয়ে বললাম। শান ভাইয়া একটু মুচকি হেসে বললেন,
“না কার এতো সাহস আছে তোমাকে বাচ্চা বলবে তুমি তো পাকা বুড়ি।”
আমি হেসে বললাম,
“দূর কি যে বলেন না। ”
“হুম। একটা কথা রাখবে।”
“কি?”
“কখনো চেন্জ হয়ো না। তোমাকে এরকম ভাবেই ভালো লাগে। তুমি একটু চেন্জ হলেই ভয় হয়। তাই প্লিজ।”
আমরা দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অনেক না বলা কথা একে অপরের চোখে চোখ রেখেই যেন বলে দিচ্ছিলাম। ওনার এতো আবেগময় কথা মাঝে মাঝে আমার মনটা তোলপাড় করে দেয়। আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিলো তাই চোখ সরিয়ে মাথা একবার উপর নিচ করে নাড়ালাম।
“আচ্ছা আরেকটা কথা বলি?”
“এখন আর কোনো কথা না আগে খেয়ে নেও। খাবার সময় এতো কথা বলতে হয় না। বিষম লাগবে।”
“কিছু হবে না। ”
মুখের কথা মুখে রয়ে গেল আর তখনই আমার বিষম লেগে কাঁশতে আরম্ভ করলাম। শান ভাইয়া তাড়তাড়ি পানি এগিয়ে দিয়ে মাথা আর পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন পর আমি একটু স্বাভাবিক হতেই রেগে বললেন,
“একটা কথাও যদি আমার শুনতে তুমি।কখনো মানুষ হবে না। ”
কথাটা বলেই উনি উঠে চলে গেলেন। আমি হা করে রইলাম,
” যাক বাবা তাহলে এখন কি আমি মানুষ না তাহলে কি? অদ্ভুত।”
★
★
★
দুপুরে খাওয়ার পর একটু সুয়ে ছিলাম। কালকে রাতে ঘুম হয়নি তাই শোয়া মাত্রই চোখে ঘুম নেমে আসল।দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরেই সব আত্মীয়-স্বজনরা চলে গেছে তাই একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারলাম। শান ভাইয়া বাড়িতে নাই। দুপুরে খেয়েই কোথায় জানি বেরিয়েছে। যদিও আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি শুধু বলেছিল কাজ আছে বাট কি কাজ সেটা বলেনি। আমিও আর জিজ্ঞেস করিনি।
আমার চোখ খুলতেই চাইছে না।আমি ঘুমালে আমার মাথার পাশে বসে মা যেমন বিলি কেঁটে দিতো তেমনি অনুভব হচ্ছে।যেন কারো ছোট ছোট আঙ্গুল গুলো সারা চুলে খেলে বেড়াচ্ছে। চোখ খুলতে না চাইলেও কে দেখার জন্য চোখ খুলতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল,
“আরে আমার পুষ্প সোনা যে কখন এলে তুমি? ”
“তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন। ”
“আমাকে ডাকোনি কেন সোনা তাহলে?”
“তোমাকে ঘুমাতে দেখে অনেক মিষ্টি লাগছিলো তাই ডাকিনি। ”
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলাম। পুষ্পর বয়স মাত্র পাঁচ বছর। কিন্তু এখনি যেভাবে কথা বলে কেউ বুঝতেই পারবে না যে কথা গুলো কোনো পিচ্ছি বলছে একদম গুছিয়ে।এতো গুছিয়ে মনে হয় আমিও কথা বলতে পারিনা। যেকোনো মানুষকে ওর কথার দ্বারাই সব কিছু ভুলিয়ে দিতে পারবে। আমি ওকে ছেড়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম,
“পাঁচটা বাজে।”
কিন্তু তখনও শান ভাইয়া আসেনি।পুষ্প আবার বললো,
“মিষ্টি এখন থেকে তুমি আমাদের সাথে থাকবে?”
“হুম এখন থেকে আমি পুষ্পের সাথে থাকব। ”
কথাটা বলতেই পুষ্প লাফিয়ে আমার কোলে উঠে আমার গালে একটা চুম্মা দিয়ে বললো,
“ইয়ে তাহলে এখন থেকে আমি সবসময় তেমার সাথে থাকব আর অনেক মজা করব। ”
পুষ্পের খুশি দেখে আমার মুখেও হাসি ফু্ঁটে উঠল।আমি পুষ্পকে বসিয়ে রেখে ফ্রেস হয়ে নিলাম। ঘরে আর থাকতে ইচ্ছা হচ্ছিল না। তাই ভাবলাম পুষ্পকে নিয়ে একটু বাগানের দিকটায় ঘুরে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ।
আমি আর পুষ্প বাগানের একটা বেন্ঞ্চে গিয়ে বসলাম। অনেক সুন্দর পরিবেশ। না আলো না অন্ধকার। মাঝে মাঝে একটা ঠান্ডা ধমকা হাওয়া দিচ্ছে আর তার সাথে নাকে এসে ঠেকছে বিভিন্ন ফুলের সুভাস। একদম মনটা শান্ত হয়ে যায় এমন পরিবেশে এলে। সব সমস্যা,চিন্তা ভুলে যাওয়া যায় এক নিমিষে। হঠাৎ পুষ্প বললো,
“মিষ্টি তুমি ঘুড়ি বানাতে পারো?”
“পারি তো কেন?”
“আমি পারিনা কিন্তু ঘুড়ি উড়াতে চাই কিন্তু মা, দাদু,দাদি মনি, শান, আরশ, বাবা কেউ পারে না। তাই আর উড়াতেও পারিনি। ”
“ওকে আমি আছি তো আমি শিখিয়ে দিবো হবে না? ”
পুষ্পের চোখে মুখে খুশি ফুঁটে উঠল,
“সত্যি?”
“একদম। ”
“কখন?”
“এখনি।”
“ইয়ে মিষ্টি ইউ আর বেষ্ট। ”
“বেষ্ট তো হতেই হবে পুষ্পের মিষ্টি বলে কথা। এখন তুমি গিয়ে কমলাকে ডেকে নিয়ে আসো বলো যে মিষ্টি ডাকছে যাও। ”
কথাটা বলতেই পুষ্প দৌঁড়ে গিয়ে কমলাকে ডেকে নিয়ে আসল। কমলা আসতেই বললো,
“আফনে আমারে ডাকছিলেন ভাবী? ”
“হুম। তুমি এক কাজ করো তো কমলা শলা, পেপার আর সুতা নিয়ে আসো তো। ”
“আফনার কি কাম করতে হইবো হেইডা কন। হেগুলা দিয়া আফনে কি করবেন?”
“ঘুড়ি বানাবো। ”
“আফনে ঘুড়ি বানাইতে পারেন?”
“হুম পারি।এখন বেশি কথা না বলে নিয়ে আসো। ”
কমলা চলে গেল।অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। পুষ্পের দেখা শুনা করে। ওকে একটা কাজ বললে ও কখনো না করেনা। বিয়ের আগেও যখন মাঝে মাঝে আসতাম দেখতাম ভাবী আর শ্বাশুড়ী মা ওকে ছাড়া থাকতেই পারে না।অনেক খেয়াল রাখে সবার।
“এই যে আফা লন আফনের জিনিস। ”
আমি শলা আর পেপার কেঁটে ঘুড়ি বানাতে থাকলাম। আমার পাশে পুষ্প আর কমলা বসে চুপচাপ মনোযোগ সহকারে দেখতে লাগল। বেশ কিছুক্ষন পর আমার ঘুড়ি বানানো শেষ হলে সেটাতে সুতা বাঁধতে বাঁধতে কমলাকে বললাম,
“তুমি ঘুড়ি উড়াতে পারো কমলা?”
“হয় পারি। আমাগো গেরামে একবার ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম পুরষ্কার পাইছিলাম। ”
“ওহ তাহলে তো ভালোই তাহলে হবে নাকি আমার সাথে একবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা? ”
“হইতেই পারে খারাফ না। ”
ওর কথা শুনে হেসে দিলাম। তারপর কমলাও একটা ঘুড়ি বানিয়ে নিল। আমি আর কমলা দুজনেই ঘুড়ি উড়িয়ে দিলাম। পুষ্প দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল আর আমাকে উৎসাহ দিচ্ছিল ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল ও অনেক উপভোগ করছে বিষয়টা। খেলা পুরো জমে উঠেছে। আমি ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে কখন বেন্ঞ্চের উপরে উঠে গেছি খেয়াল নেই। তখনই পাশ থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ বলে উঠল,
“এসব কি হচ্ছে এখানে বাচ্চাদের মতো । ”
কন্ঠটা শুনে বুঝতে বাকি রইল না যে এটা শান ভাইয়া। আমি বললাম,
“চোখ নাই সাথে দেখতে পাচ্ছেন না। ”
“এখনি নামো তুমি কোথায় উঠছো এখনি পড়বে। ”
“উফ বিরক্ত করবেন না তো নাহলে আমি হেরে যাবো।”
“কথা শুনবে না তো যখন এখান থেকে পড়বে তখন বুঝবে।”
কথাটা বলেই শান বেন্ঞ্চে বসে পড়ল। তখনি আমি কমলার ঘুড়িটা কেঁটে দিলাম আর খুশিতে আমি আর পুষ্প চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমি কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলাম সেটা ভুলেই গেলাম ব্যাস আর কি আমার লাফালাফিতে ধপাস করে বেন্ঞ্চ থেকে কাঁত হয়ে পড়ে গেলাম। আমি পড়তেই কমলা আর পুষ্প ভয়ে চিৎকার করে উঠল আর আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম।
পড়ার পরও যখন শরীরে একটুও ব্যাথা পেলাম না তখনই তাড়াতাড়ি চোখ খুলে তাকালাম। চোখ খুলতেই আমার চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেল। আমি শান ভাইয়ার কোলে ছিলাম। আর শান ভাইয়া আমাকে দুহাতে শক্ত করে ওনার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আমাকে চোখ মেলতে দেখেই শান বললো,
“বলেছিলাম না দেখলে তো বড় মানুষের কথা না শুনলে এমনটাই হয়। ”
“কি এমন হতো একটু ব্যাথা পেতাম তেমন তো কিছু না। ”
“এজন্যই বলে কারো সাহায্য করতে নাই। কই ধন্যবাদ দিবে তা না ঝগড়া করছে। ”
হঠাৎ খিলখিলিয়ে হাসার শব্দ কানে আসতেই দেখলাম পুষ্প হাসছে। আর কমলা ওড়নার আঁচল মুখে দিয়ে মুচকি হাসছে। আমার খেয়াল হলো আমি এখনো শান ভাইয়ার কোলে আর উনি এখনো আমাকে ওভাবেই ধরে আছে। আমি তাড়াতাড়ি করে ওনার কোল থেকে নেমে গেলাম। কি লজ্জা আল্লাহ।
শান বললো,
“এমন জংলী বিড়ালের মতো করছো কেন? অদ্ভুত তো। ”
আমি উনার দিকে রাগি চোখে তাকালাম কিন্তু কিছু বললাম না। শানকে দেখে কমলা চলে গেল।পুষ্প শানের কাছে গিয়ে বললো,
“জানো শান আজ থেকে মিষ্টি আমাদের সাথে থাকবে। ”
শান পুষ্পকে কোলে নিয়ে বললো,
“জানি তো প্রিন্সেস। তোমার মিষ্টিকে তো আমিই নিয়ে এসেছি কাল তেমার জন্য।”
পুষ্প খুশি হয়ে বললো,
“সত্যি?”
“হুম।”
পুষ্প শানের গালে একটা কিস করে বললো,
“আই লাভ ইউ শান।”
“লাভ ইউ টু প্রিন্সেস। ”
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনের কাহিনী দেখছিলাম। এদের সম্পর্কটা এমন যে দেখলে কেউ বলবেই না শান ওর চাচ্চু। ওর মানা হলো ও শান ভাইয়াদের মতো বড় তাই ও শান ভাইয়া আর আরশ ভাইয়াকে সরাসরি নাম ধরে ডাকে। যদিও এই ডাকটা শান ভাইয়াই শিখিয়েছে। পুষ্পর মুখে নাম ধরে ডাকলেও শুনতে খুব ভালোই লাগে।
তারপর পুষ্প শানের কোল থেকে নেমে আমার কাছে এসে বললো,
“চলো মিষ্টি আমরা আরো অনেক কিছু খেলবো ঘরে গিয়ে।”
“ওকে সোনা চলো। ”
তখনই শান ভাইয়া বলে উঠল,
“প্রিন্সেস তুমি শানকে ফেলে চলে যাচ্ছো?”
“হুম যাচ্ছি। কারণ এখন আমি মিষ্টির সাথে খেলবো। ”
“আমিও খেলবো আমাকেও নেও। ”
“না তোমাকে নিবো না। অন্য সময় যখন বলি তোমাকে তুমি তো খেলো না বলো বিজি। আর আমি বিজি মানুষদের সাথে খেলি না। যাও এখন। ”
শান পুষ্পের সামনে বসে বললো,
“এমন করে বলছো কেন সোনা?মিষ্টিকে নিয়ে গেলে শানের কি হবে ভাবো একবার। ”
“শোনো এই বাড়িতে যারা আছে সব আমার আর এখন মিষ্টিও আমার একদম ভাগ বসাবে না। ”
তখন শান মন খারাপ করে বললো,
“হ্যাঁ মা এই বাড়ির সব তোর। আমার মা ও তোর, আমার বাবা ও তোর, আমার ভাইও তোর, আমার ভাবীও তোর। থাকার মধ্যে যা ছিল বউটা এখন সেটাও তোর বলে নিয়ে নিলি এই কষ্ট কই রাখব। ”
শান ভাইয়ার কথা শুনে কেন জানি না আমার অনেক হাসি আসল। আমি আর হাসি আটকাতে না পেরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। শান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমাকে হাসতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে উনিও মুচকি হাসলো।
.
.
চলবে