এক শহর ভালোবাসা’ পর্ব-৫

0
1965

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৫
#সুরাইয়া_নাজিফা

“তোমাদের এই লায়লী-মজনুর প্রেম কাহিনী মাঝে মাঝে আমি বুঝতে পারিনা। এই দেখি হাসছ, কখনো কাঁদছো, কখনো ঝগড়া করছ, তো কখনো আবার প্রেম-ভালোবাসায় ভরপুর।”

আমি পুষ্পের সাথে ভিডিও গেমস খেলছিলাম। হঠাৎ ভূমিকা ভাবী এসে কথাটা বলতেই খেলা বন্ধ করে উনার দিকে ফিরে বললাম,

“প্রেম-ভালোবাসায় আর ওনার সাথে এটা হতেই পারেনা। আগে থেকেই তো দেখছেন আমাদের কখনো মিল হয়েছে?”

“হুম ওটা তো আমাদের সামনে দেখাও যাতে নজর না লাগে।”

“মোটেও না। ”

“একদম মিথ্যা বলো না আমি কিন্তু সব দেখেছি আর আজকে সকালের ঘটনাটাও কিন্তু ভুলিনি।”

ভাবীর কথা শুনে আবার সকালের ঘটনাটা মনে পড়ে গেল আর লজ্জায় পড়ে গেলাম,

“উফ আর কতো পঁচাবেন। ওটা শুধু চোখের ভুল ছিল। আর বাদ বাকি প্রেম-ভালোবাসার কথা বলছেন ওইটা আপনি আপনার দেবরকেই জিজ্ঞেস করেন উনিই বলতে পারবে। ওনার হাল-চাল মাঝে মাঝে আমিই বুঝতে পারিনা। ”

“বুঝতে না পারলে হবে?এখন থেকে সারাজীবন সংসারটা তো তোমাকেই করতে হবে। তাই বুঝতে শিখো। শানকে বুঝলে একদম পানির মতো সরল আর না বুঝলে জিলাপির মতো পেঁচালোই লাগবে। ”

ভূমিকা ভাবীর কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলাম।দূর্ভাগ্যবসত উনার দ্বিতীয় কথাটি এখন আমার জন্য প্রযোয্য। আগে যাও বুঝতে পারতাম কিন্তু কালকে থেকে উনার কথা বার্তা মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না। কি বলছে? কি করছে উনিই ভালো বুঝে।

ভূমিকা ভাবী আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“কি হলো কই হারিয়ে গেলে?”
উনার কথা আমি ভাবনার সাগর থেকে উঠে এলাম,
“ঐ মানে না কিছু না। ”
“আচ্ছা তোমাকে পুষ্প বেশী জ্বালাতন করছে নাতো?”
“না না জ্বালাবে কেন? ও তো আমার উপকার করছে আমি বোর হচ্ছিলাম ঘরে বসে। ওর সাথে থাকতে পেরে আমারও অনেক ভালো লাগে।”
“হুম পুষ্পও তোমার পাগল একেবারে।আমার কাছে তো থাকতেই চায় না এখন। ”
ভূমিকা ভাবীর কথায় একটু মুচকি হাসলাম।সবাই বলতো আমি নাকি বাচ্চাদের সাথে খুব সহজেই মিশতে পারি। আসলে কথাটা সত্যি। বাচ্চাগুলো এতো কিউট যে কেউ এদের থেকে দূরে কি করে থাকবে।আমি ভূমিকা ভাবীকে বললাম,

“আচ্ছা আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি কি আপনাকে ভাবী না বলে আপু বলতে পারি?”
“তোমার যা ইচ্ছা তাই বলতে পারো। তবে আজকে একটা কথা বলি এখন থেকে তুমিও আমাকে তুমি বলবে। তুমিতো আপনি আপনি বলে আমাকে দূরেই ঠেলে দিচ্ছো।”
“না দূরে ঠেলবো কেন আপনার মধ্যে আমি আমার আপুকে দেখতে পাই যে আমার অনেক আপন এজন্যই তো বললাম আপু বলব। ”
“তুমি কিন্তু আবার আপনি বলছো।”
“স্যরি তুমি।”
আমি হেসে দিলাম সাথে ভূমিকা আপুও।



পুষ্প আর ভূমিকা আপুর সাথে আড্ডা দিয়ে ঘরে আসার জন্য বের হলাম। মায়ের কথা মনে পড়ছে খুব। কখনো আম্মুকে ছেড়ে থাকিনি। আর আজকে পুরা একদিন হয়ে গেল না আম্মুকে দেখেছি না কথা বলেছি। ফোনটাও নেই যে কথা বলব। এদিকে স্মৃতি আপু সাথেও ভালো করে কথা হয়নি। কি করছে?কোথায় আছে? তারা কি বিয়ে করেছে?উফ আর নিতে পারছি না। এতো ঝামেলা সবসময় আমার গলাতেই এসে ঝুলে আল্লাহ জানে।

কথা বলতে বলতে ঘরে ডুকতেই আমার চোখ রসগোল্লা আর মুখ হা হয়ে গেল। শান ভাইয়া সম্ভবত এখন গোসল করে বের হয়েছে। শুধু একটা টাওয়াল ছিল। পুরো ধবধবে সাদা শরীরটা দৃশ্যমান।জিম করা বডি।শরীর থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।আমি তাড়াতাড়ি করে অন্যদিকে ফিরে বললাম,

“উফ চেন্জ করার আগে দরজাটা লাগাতে পারেননি। ”

আমার কথা শুনে শান ভাইয়া বললো,
“কি হলো তুমি ওদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

“তাহলে কি আপনার দিকে ফিরে থাকব?”

“সে তুমি চাইলে তাকাতেই পারো আফটার অল তোমারই তো হাজবেন্ড। ”

“আপনার মাথা। নিজের কি অবস্থা একবার দেখেছেন। ”

শান ভাইয়া আমার সামনে এসে বললো,
“কি অবস্থা? ”

শান ভাইয়া সামনে আসতেই আমি অন্যদিকে ঘুরে গেলাম,
“একদম সামনে আসবেন না। আপনার জামা-কাপড় কই?শুধু টাওয়াল পড়ে আছেন কেন? আপনি কি ভুলে গেছেন যে ঘরে আপনি ছাড়া আরো একজন থাকে।”

“এমন কি খারাপ অবস্থায় আছি। টাওয়াল আছে তো। আর তুমি এমন করছো এই প্রথম আমাকে এভাবে দেখছো।বাপরে তোমার দাঁতে কি জোড় সেদিন কি জোরে কামড় মেরেছিলে রাক্ষসী । ”


শান ভাইয়ার কথা শুনে আমার আমাদের প্রথম দেখার কথা মনে পড়ে গেল। যেটা চাইলেও কখনো আমি ভুলতে পারব না।
আমি শান ভাইয়াদের বাড়িতে বেড়াতে গেছিলাম। সবার সাথেই দেখা হয়েছিল শুধু শান ভাইয়া ছাড়া। ওনাকে এর আগে আমি কখনো দেখিনি। কারণ উনি স্ট্যাডির জন্য বাহিরে থাকতেন।এই বাড়িতে আসলেই একটা রুমে আমি বেশী থাকতাম।কারণ ওই রুমটা একদম আমার মন মতো সাজানো ছিল। সবথেকে ভালো লাগত বেলকনিটা। তবে সেটা কার রুম ছিল আমি জানতাম না। তাই প্রতিবারের মতো এসেই আমি বেলকনিতে চলে গেলাম। এখান থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্যটা ভালোই উপভোগ করা যেত বাহিরে না গিয়ে।

হঠাৎ খট করে দরজা আটকানোর শব্দ হতেই আমি ভয়ে দৌড়ে বেলকনি থেকে আসতেই দেখলাম একটা ছেলে খালি গায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। শুধু একটা ট্রাউজার পরা ছিল। আর শরীর মুছছিল। সম্ভবত গোসল করে বেরিয়েছে। যেহেতু আমি আগে উনাকে দেখিনি তাই ভয় পেয়ে দিলাম চিৎকার।

“আআআআআআআ।”

আমার চিৎকার শুনে ছেলেটা দ্রুত আমার দিকে ফিরেই হা করে তাকিয়ে থাকল। আমি তখনও চিৎকার করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ উনাকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি ভয়ে বেডের উপরে উঠে বলে উঠলাম,

“এই ওখানেই দাড়ান একদম আগাবেন না বলছি।”
“তার আগে বলো তুমি কে?এখানে কি করছ? ”
“আগে বলুন আপনি কে?”
ছেলেটা আমার কথায় হাহা করে হেসে বললো,
“আমার বাড়ি আমার ঘর কোথা থেকে টপকে বলছে আমি কে?এবার বলো তুমি কে?”
“আমি এখানে বেড়াতে এসেছি। ”
“তুমি নজরুল আঙ্কেলের মেয়ে।”
“হুম।”
“আচ্ছা নিচে নেমে আসো।”
“নামছি আগে আপনি সরুন। ”
“না তুমি নামো আগে। ”

আমি না বোধক মাথা নাড়ালাম। উনি না সরলে আমি নামবো না। এভাবেই আমাদের তর্ক চলতে লাগল। হঠাৎ কথার মাঝে উনি কখন বেডে উঠেছে খেয়াল করিনি। এসেই আমার হাত ধরে বসলো

“আরে আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন?ছাড়ুন বলছি নাহলে আমি কিন্তু চিৎকার করব।”
“এতক্ষন ভালো ভাবে বলেছি শুনোনি এখন করো চিৎকার আমিও দেখি তোমার স্পিকারে কত দম। ”

উনার কথা শুনে ভয়ে আমার গা কাঁপতে লাগল। তাই নিজেকে ছাড়াতে উনার বাহুতে একটা কামড় দিতেই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন আর সেই সুযোগে আমিও দৌড়ে বেরিয়ে এলাম। ব্যাস সেদিন থেকেই উনাকে অসহ্য লাগত। আর শুরু হলো উনার সাথে আমার ঝগড়া। যেটা আজ পর্যন্ত চলছে।

“ও ম্যাডাম কি ভাবছ। চুপ কেন?”

শান ভাইয়ার কথা শুনে আমি বাস্তবে ফিরে এলাম,

“ছি ছি কি খারাপ আপনি। ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো ওকে। আমি ইচ্ছা করে দেখতে যাইনি আর কামড়টা আপনার ভাগ্যে ছিল।?”

“হুম। তাহলে আজকেও তো এক্সিডেন্টলি হয়েছে এতো হাইপার হওয়ার কি আছে নাকি আজকে ইচ্ছা করেই দেখেছো। ”

“ছি ছি কি সব কথা বার্তা। আমার বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে। কখন এসেছেন বাসায় আমি ভাবলাম এতক্ষণে চেন্জ করে নিয়েছেন। ”

“এতো তাড়াতাড়ি হয় নাকি।ভালো করে ফ্রেস হতে হবে না। ”
“হুম মেয়েদের থেকেও বেশী টাইম লাগে বসে বসে রূপচর্চা করেন। ”
“কি ফালতু কথা বলছো তুমি। ”
“বেশ করেছি। এখন তাড়াতাড়ি ড্রেস পড়েন।”

শান ভাইয়া আর কোনো কথা না বলে নিজের ড্রেস পড়ে নিলো।
“এই যে ম্যাডাম এইবার এদিকে তাকাতে পারেন। ”

শান ভাইয়ার কথা আমি ঘুরে তাকালাম। উনি একটা হোয়াইট ট্রাউজার আর লাল টি-শার্ট পড়েছে। জাস্ট ওয়াও লাগছে দেখতে। তাও আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম,

“আপনার ফোনটা একটু দেয়া যাবে। ”
শান ভাইয়া আমার পাশের সোফায় বসে বললো,
“কি করবে?”
“আম্মুর সাথে কথা বলব।”

শান ভাইয়া তার ফোনটা আমার হাতে দিতেই আমি ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম। আম্মুকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে আম্মু রিসিভড করলেন,

“হ্যাঁলো শান। কেমন আছিস। ”
“আম্মু আমি সোহা। ”
“শানের ফোন থেকে হঠাৎ। তোর ফোন কই? ”
“হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে।”
“কি যে করিস নিজের জিনিস নিজে সামলাতেও শিখিসনি। এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি। ”
“হুম তোমার এই কথা গুলো অনেক মিস করছিলাম আম্মু। ”

কথাটা বলতেই আমার গলা ধরে এলো। আম্মু বললো,
“সোহা তুই কাঁদছিস কেন। ”
আম্মুও কান্না করে দিলো,
“তোমাদের দেখতে ইচ্ছা করছে। কবে আসবা তোমরা। ”
“আরে বোকা মেয়ে তুই কাঁদছিস কেন?আমরা খুব তাড়াতাড়ি আসব। আর নাহলে শানকে নিয়ে তুই চলে আয়। তোর বাড়ি তোর ঘর। ”
“হুম অবশ্যই আসব তবে ওই হনুমানটাকে আনব না। ”
“ছি মা নিজের হাজবেন্ডের সম্পর্কে এমন বলে না। এইবার একটু নিজের জিনিস গুলো আগলাতে শিখ নাহলে কখন হাতছাড়া হয়ে যাবে টেরও পাবি না। ”
“উফ মা কিছু হবে না আমি সব সামলে নেবো।”

এরপর আম্মুর সাথে অনেক কথা বললাম। কথা শেষ করে চোখ মুছে বেলকনি থেকে বেরিয়ে গেলাম।তারপর শান ভাইয়ার ফোন ওনাকে দিয়ে দিলাম।তখনই শান ভাইয়া বললো,

“কি হলো তুমি কাঁদছিলে?”
“না কাঁদবো কেন?”
“মিথ্যা বলছো কেন সোহা। তোমার চোখ মুখ দেখলেই বুঝা যায় তুমি কান্না করছিলে। বলো কি হয়েছে?”
“কিছু না ওই আম্মুর সাথে কথা বলছিলাম তাই। ”
শান ভাইয়া একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললেন,
“তুমি আন্টির সাথে কান্নাকাটি করেছিলে? আন্টি কি ভাবল। আমরা কি তোমাকে কষ্টে রেখেছি। ”
“আমি কি সেটা একবারও বলেছি? আপনার কি মনে হয় আমি শ্বশুরবাড়ীর নিন্দা করেছি?”
“তাহলে কাঁদছিলে কেন?”
“আপনারা ছেলেরা সেটা বুঝবেন না। কারণ আপনাদেরকে তো আর আপনার চেনা জায়গা, চেনা মানুষ, চেনা বাড়ি, বাবা,মা ছেড়ে একেবারের জন্য চলে যেতে হয় না। যদি হতো তাহলে হয়তো আমার অবস্থা বুঝতেন। ”

কথাটা বলেই আমি বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে।
শান হা করে তাকিয়ে আছে। ও ভাবতেও পারেনি সোহার মনে অবস্থা এমন হয়ে আছে। তাই ও মনে মনে ভাবল সময় করে একবার সোহাদের বাড়ি থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে।
ভেবেই সোফায় বসল শান। ফোনের দিকে তাকিয়ে রেকর্ডিংটা একবার শুনে ডিলেট করে দিলো। শান ভেবেছিল সোহা হয়তো ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলবে বলে ফোন নিয়েছে তাই রেকর্ডিংটা অন রেখেছিল। নিজের বোকামির কথা মনে করে নিজেই হেসে দিল।



রাতে সবাই ডিনার করতে বসল। আমি আর ভূমিকা আপু সবাইকে সার্ভ করে দিতে লাগলাম। আমার হাত কাঁটা তাই শান ভাইয়া আমাকে আগেই খাইয়ে দিয়েছিলো। এখন নিজে বসল। আমার সবার সামনে এতো লজ্জা লাগছিলো বলার বাহিরে। সবাই খাচ্ছিল তখনই শান ভাইয়া বলে উঠল,

“আব্বু আমি এই সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকা ব্যাক করবো। ওখানে অনেক কাজ পেন্ডিং পড়ে আছে। তাই আমাকে যেতে হবে।”

শান ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হলাম। ঢাকা যাবে মানে?তাহলে কি আমাকেও যেতে হবে?তাহলে আমার পড়া? তখনই শান ভাইয়ার আব্বু বলে উঠল,

“ঢাকা যাবে মানে? ঢাকা গেলে সোহার পড়াশুনার কি হবে?”
“ও তো যাচ্ছে না। আমি যাবো শুধু। ও এখানেই পড়াশুনা করবে।”
“মানে?ও এখানে একা থাকবে নাকি?”
“একা কই তোমরা তো আছো?”
“আমরা থাকা আর তুমি থাকা কি এক শান? বাচ্চাদের মতো কথা বলো না।ওর কতো কাজে তোমার হেল্প লাগতে পারে। ”
“জানি বাবা কিন্তু বিজন্যাসের দিকটাও দেখতে হবে। আর এছাড়া ও তো এখানে আগে থেকেই থাকে সবকিছু চেনা জানা আশা করি সমস্যা হবে না। আর এখানে থাকতে ভালো না লাগলে ওর বাবা মায়ের কাছে গিয়েও থাকতে পারে সমস্যা তো কিছু নেই। ”

শান ভাইয়ার এমন গা ছাড়া ভাব দেখে একটু কষ্ট হলো আর উনি চলে যাবে শুনে কেমন যেন খারাপ লাগছিল। কিন্তু কেন?উনি চলে যাবে সেটা তো ভালো খবর আমার জন্য। আমার ইচ্ছা অনুযায়ী থাকতে পারবো। তাহলে এতোটা খারাপ লাগছে কেন?

“সমস্যা আছে শান। তুমি যাবে না। ”
“তাহলে ঐ দিকের কি হবে?”
“সাম্য আছে তো ও সামলে নিবে। ”
তখনই সাম্য ভাইয়া বলে উঠল,
“হ্যঁ শান আমি সামলে নিবো। তুই এখানেই থাক। ”
“কিন্তু ভাইয়া। ”
“কোনো কিন্তু নয় শান। আমাদের বিজন্যাসের ব্রান্ঞ্চ তো চট্টগ্রামেও আছে। আগে আরশ সামলাতো। কিন্তু এখন তো ও নেই। ”
বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“এখন তুমি সামলাও এখানে আর সাম্য ঢাকা। ”

এরপর সবাই যার যার মতো খেয়ে চলে গেল। সাম্য ভাইয়ারা কাল সকালে চলে যাবে। অনেকটা খারাপ লাগছিলো শুনে। কিন্তু কিছু করার নেই। সবার খাওয়ার পর আমরা মেয়েরা মিলে টেবিল গুছিয়ে যার যার ঘরে চলে গেলাম।



রুমে এসে দেখলাম শান ভাইয়া কিছু ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। আমি এসে সোফায় বসলাম। হঠাৎ কি মনে হতে শান ভাইয়াকে বললাম,

“আপনার গার্লফ্রেন্ড কোথায় থাকে।”

আমার কথায় শান ভাইয়া মুখ তুলে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকালো তারপর আবার কাজে মন দিয়ে বললো,

“ঢাকা। ”

আমি বিরবির করে বললাম,
“ওহ এইবার বুঝেছি এজন্যই ঢাকা যাওয়ার এতো তাড়া। দেখা হয় না তো অনেকদিন যতোসব আদিখ্যেতা। ”

আমি আস্তে করে সোফায় শুয়ে পড়লাম।তখনই শান ভাইয়া বললো,
“বিছানায় এসে শুয়ে পড়।”
“দরকার নেই আমি এখানে ঠিক আছি। ”
“তোমাকে আমি অনুরোধ করিনি। তাড়াতাড়ি এসো।এতো বড় বিছানা থাকতে সোফায় কেন ঘুমাচ্ছো।”
আমি কিছু না বলে চুপ থাকলাম।আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি বললেন,
“ভয় নেই আমি আমার সীমানার মধ্যে থাকব। ”

উনি কথাটা বলতেই আমি অবাক হয়ে তাকালাম। উনি বুঝল কি করে যে আমি এজন্যই চিন্তা করছিলাম। উনি এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে কাজ করছিলো। আজকে কেন জানি ওনাকেই দেখতে ইচ্ছা করছে বারবার। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম কিন্তু বিছানায় যেতে কেমন জানি লাগছিল তাই বসেছিলাম। হঠাৎ শান ভাইয়া আমার
কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো,

“আরে কি করছেন আপনি। নামান আমাকে। প্লিজ প্লিজ। ”

আমি ছোটাছুটি করছিলাম। শান ভাইয়া আমাকে বেডে শুয়ে দিলো।আমি অবাক হলাম,

“এখন ঘুমাও। ভালো কথা শুনলে এতো কষ্ট করতে হতো না আমার। ”

“আমি….। ”

উনি আমার উপর ঝুঁকে ঠোঁটে একটা আঙ্গুল দিয়ে আমাকে থামিয়ে দিলো। আমার নিঃশ্বাস খুব দ্রুত চলছিল। আমি এখনও উনার দিকেই তাকিয়ে। এটা কোন শানকে দেখছি যেন চিনতেই পারছি না।শান বললো,

“হুশ কোনো কথা নয়। ঘুমাও। ”

আমি আর বাক্য ব্যয় না করে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লাম।



সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম শান ভাইয়া একদম নিছানার একপাশে ঘুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। মাঝে কোল বালিশ থাকা স্বত্ত্বেও উনি অনেকটা জায়গা ফাঁকা রেখে শুয়েছে। এমন অবস্থা যে আরেকটু হলেই নিচে পড়বে। আমার কেন জানি হাসি চলে আসল।

ওনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে ফ্রেস হতে গেলাম। নিচে গিয়ে আজ নিজের হাতে চা বানিয়ে সবাইকে দিলাম। এখন হাতে ব্যাথাটাও কম আছে। শান ভাইয়া মেডিসিন এনে দিয়েছিলেন। সবাইকে দেওয়ার পর রুমে গিয়ে দেখলাম শান ভাইয়াও উঠে গেছে।

“এই নিন আপনার তিতা করলার রস। ”

আমার কথা শুনে শান ভাইয়া আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকলো।

“আই মিন কফি। ”

শান ভাইয়া কপালে একবার স্লাইড করে একটা নিশ্বাস নিলেন তারপর কফিটা নিলেন আমার থেকে।

“ধন্যবাদ।”
“হুম। ”
“আচ্ছা সোহা একটু বিছানার উপর থেকে আমার ফোনটা নিয়ে আসো তো।”
“আমি কেন আপনি যান। ”
“প্লিজ।”

হঠাৎ উনার প্লিজ শুনে থতমত খেয়ে গেলাম কি ব্যাপার আজ এতো সুন্দর ভাবে কথা বলছে? আমি ওনার ফোন আনতে বিছানার কাছে যেতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।

উনার ফোনের পাশেই একটা নতুন ফোন রাখা। বক্সের নিচে একটা রঙ্গিন কাগজে লেখা,

“স্যরি কালকে তোমার সাথে অমন ব্যবহার করার জন্য। আমি এমন করতে চাইনি। কিন্তু তোমার কথা শুনে রাগ হয়েছিল। আমি জানি না তুমি আমাকে কেমন ভাবো। তবে তুমি আমাকে যতটা খারাপ ভাবো অতটা খারাপ আমি নই। তোমার ফোনটা ভেঙে দিয়েছিলাম তাই তেমনই দেখতে আরেকটা কিনে দিলাম। ভেবে নিও এটাই তোমার আপুর দেওয়া।”
ইতি,
শান।

আমি ফোনটা পেয়ে অনেক খুশি হয়ে গেলাম। পিছনে ফিরতেই দেখি শান ভাইয়া দুই পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। আমি আমার খুশি আটকাতে না পেরে শান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। সোহার এমন কাজে শান পুরা ফ্রিজড হয়ে গেল। ও ভাবতেও পারেনি এমন কিছু হবে।
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here