এক শহর ভালোবাসা’ পর্ব-৬

0
1949

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৬
#সুরাইয়া_নাজিফা

হঠাৎ শান ভাইয়ার একটা হাত আমার পিঠ স্পর্শ করতেই আমার হুশ এলো। ছি ছি এটা আমি কি করলাম। উনাকে জড়িয়ে ধরেছি? তাড়তাড়ি ওনাকে ছেড়ে ওনার থেকে দূরে সরে এলাম। লজ্জায় তাকাতেও পারছি না ওনার দিকে। উফ সোহা এতো এক্সসাইটেড হওয়ার কি ছিলো?নিজেই নিজেকে কিছুক্ষন শাসালাম। তারপর অন্যদিকে মুখ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,

“স স্যরি। আসলে এতো খুশি হয়েছিলাম যে খেয়ালই করিনি সামনে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। সত্যি আমার ফোনটা দরকার ছিলো। ধন্যবাদ। ”
“ইট’স ওকে। বুঝতে পেরেছি আমি। এই সামান্য কারণে এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।”

উনার কথায় আরো যেন লজ্জারা এসে ভর করলো আমার উপর।না চাইতেও বারবার চোখের সামনে ঘটনাটা ভেসে উঠছে।উনার বুকের মাঝে মাথা রেখে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সমস্ত শান্তি হয়তো আমার জন্য এখানেই রয়েছে। মন বারবার বলছিলো যে এভাবেই থাকি সারাজীবন।শুধু উনার সাথেই। ছি ছি! এসব কি ভাবছি আমি ।

শান বুঝতে পারল সোহা লজ্জা পাচ্ছে এজন্য স্বাভাবিক হতে পারছে না। যদিও সোহার লজ্জা মাখা মুখটা দেখতে ভালোই লাগছে। মনে অন্যরকম বাসনা জাগছে কিন্তু এখন সেখানে লাগাম টেনে সোহাকে স্বাভাবিক করাটা বেশী প্রয়োজন মনে করল শান। তাই বললো,

“উফ কালকে কত কষ্ট হয়েছে এই সেম ডিজাইন কালারের মোবাইল খুঁজতে জানো?ঘুরতে ঘুরতে জান শেষ।”

আমি উনার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম,
“তারমানে কালকে আপনি আমার জন্য এই ফোনটা আনতেই গিয়েছিলেন?”

” তা নয়তো কি? একটা ফোনের জন্য কালকে মুখটা যা করেছিলে না পুরাই এ্যাটোম বোম। যেন সাদা আকাশটাতে কালো মেঘের ঘনঘটা লেগেছিল। আমি তো এটাই ভয় পাচ্ছিলাম কখন ফেঁটে যায়। তাই ফাঁটার আগেই তাড়াতাড়ি করে নিয়ে আসলাম। ”
শান ভাইয়া কথাটা বলেই হাসলেন।

যদিও উনার কথায় রাগ করার কথা ছিল কিন্তু কেন জানি না উনার কথাটা শুনে আমার খুব ভালো লাগছিলো যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। উনি শুধু মাত্র আমার জন্য, আমার মন খারাপ ছিলো বলে ফোনটা আনতে গেছিলো?আমি ভাবতেই পারছি না উনি আমার এতো খেয়াল রাখে। হঠাৎ খুব খুশি খুশি লাগতে লাগলো মনের মধ্যে।ইচ্ছা হচ্ছিল আরেকবার গিয়ে জড়িয়ে ধরি। তবে এইবার ভুলবসত না সত্যি সত্যি মন থেকে। ভাবতেই আমার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল আর মিষ্টি একটা হাসির রেখা ফুটে উঠল।

“এই মেয়ে আজকেও দেখছি মাথাটা ভালো করে মুছনি? দেখো তো পুরো মেঝেটা ভিজে একাকার অবস্থা। ভালো কথা তুমি এটা প্লান করে করোনি তো যাতে পড়ে আমার কোমড় ভাঙে।”

শান ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম। এতক্ষণে যত অনুভুতিরা মনের মধ্যে বাসা বেঁধে ছিলো তা দূর হওয়ার জন্য এই একটা কথাই যথেষ্ঠ ছিল।আমি রেগে ওনার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম,

“আমার আর কাজ নাই কোনো যে এসব ফালতু প্লান করবো। আর যদি করেও থাকি তাহলে বেশ করেছি। আমি আপনাকে এটা বলে রাগাতে পারবো আমার কোমড় ভাঙা জামাই। ”

বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে শান ভাইয়া বললো,

“হাসছে দেখো যেন কোনো রাক্ষসী হাসছে। ”
“বেশ হয়েছে আমি রাক্ষসী হলে আপনিও
রাক্ষস।কারণ রাক্ষসীর জামাই তো রাক্ষসই হয় তাইনা। ”
আমি শান ভাইয়াকে মুখ ভেঙিয়ে বললাম।

শান ভাইয়া হেসে বললো,
“তুমি দিন দিন অনেক দুষ্ট হয়ে যাচ্ছো বুঝেছো তো। এইবার এদিকে আসো তোমার মাথা মুছে দি। নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“না থাক লাগবে না আমি পারব।”
“হুম কত যে পারো সেটা আমি খুব ভালোই জানি। এইবার বেশী কথা না বলে এখানে এসে বসো।”

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনের চেয়ারে বসে গেলাম। কারণ শান ভাইয়া বলেছে মানে সে আর কারো কথা শুনবেনা ওটাই করবে। তাই কিছু বলাটা বৃথা। আমি বসতেই উনি খুব যত্ন করে আমার মাথা মুছে দিচ্ছিলেন। উফ এমন একটা কেয়ারিং হাজবেন্ড পেলে জীবনে আর কি লাগে?

শান সোহার চুল মুছছিল। সোহার শরীর আর চুল থেকে একটা মিষ্টি মাতাল করা সুঘ্রাণ আসছে। যেটা শানকে বারবার পাগল করে দিচ্ছে। শান সোহার আরেকটু কাছে গিয়ে চুল গুলো আলতো করে ছুয়ে সোহার কানে কানে বললো,

“কি শ্যাম্পু ইউজ করো বলোতো?”

আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম। আসলে কেউ যদি আমার মাথায় হাত বুলায় আমার ঘুম চলে আসে। হঠাৎ কানে ফিসফিস কথা আর ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাসের ছোঁয়া লাগতেই শিউরে উঠলাম। চোখ খুলে পাশে ফিরেই দেখলাম শান ভাইয়া আমার অনেকটা কাছে রয়েছে। একদম কাছে। যতটা কাছে থাকলে একটা মানুষকে খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এই প্রথম আমি শান ভাইয়াকে এতো ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। মানুষটা এতো সুন্দর বুঝতেই পারিনি কখনো। হঠাৎ শান ভাইয়া আমার নাক ধরে টান দিয়ে বললো,

“কি ব্যাপার ম্যাডাম কি দেখছো এমন করে? প্রেমে পড়ে গেলে নাকি? ”

বলেই একটু বাঁকা হাসলো। উফ কোনো ছেলের হাসি এতটা সুন্দর হয় জানা ছিল না। আমি আমার চোখ ফিরিয়ে নিলাম। ওনার থেকে একটু দূরে সরে বললাম,

“প্রেমে পড়ব তাও আপনার? স্বপ্ন দেখছেন নাকি?”
“স্বপ্ন দেখা তো খারাপ না। আর এছাড়া আমাকে দেখলে সব মেয়েরাই প্রেমে পড়ে যায়। সেখানে আমি তো তোমার হাজবেন্ড তুমি পড়তেই পারো আমি কিছু মনে করব না। ”
আমি কিছুটা ভাব নিয়ে বললাম,
“ওহ নো।কোন দুনিয়ায় আছেন?আমি জীবনেও কখনো আপনার প্রেমে পড়ব না। সে আপনি আমার যাই হন না কেন।”
“আচ্ছা দেখো কখনো প্রেমে পড়ে গেলে বলতে এসো না যেন।তখন আমি এক্সসেপ্ট নাও করতে পারি।এমনিতেও আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।”
“ওহ হ্যাঁলো, আপনি স্বপ্নই দেখেন সেটা সত্যি কখনোই হবে না।”

শান একটা মুচকি হেসে নিজের নিচের ঠোট কামড়ে মনে মনে বললো,

“হবে ম্যাডাম হবে। তোমাকে তো আমার প্রেমে পড়তেই হবে। সহজে না হলে একটু ঘুড়িয়ে। তবে ভালো তো তুমি আমাকেই বাসবে। তোমার মনে যার নাম আছে সেটা কেঁটে যদি আমি আমার নাম না বসাতে পারি তাহলে আমার নামও আরিয়ান আরেফিন শান না। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। ”

শান নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো,
“আচ্ছা দেখা যাবে।তবে তুমি কিন্তু বললে না কি শ্যাম্পু ইউজ করো?”
“বলতে পারবো না ওয়াশ রুমে রাখা আছে গিয়ে দেখে নিন। ”

কথাটা বলেই আমি মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। আর শান সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসল।



সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। সাম্য ভাইয়ারা আজকেই চলে যাচ্ছে। খুব খারাপ লাগছে এতদিন বাড়িটা এতো কোলাহল ছিল হঠাৎই আস্তে আস্তে সব কমে যাচ্ছে। সবথেকে খারাপ লাগছে পুষ্পর জন্য মেয়েটা কতো আশা করেছিল আমার সাথে থাকবে কিন্তু এখন চলে যেতে হচ্ছে। কারণ ওর পড়াশোনা আছে ওখানেই। শান ভাইয়ারা ঢাকাতেই থাকত শুধু বিয়ের জন্য এসেছিল চট্টগ্রামে। যদিও সবার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এখানেই থাকতে হচ্ছে। আমি ভূমিকা আপুকে জড়িয়ে ধরলাম,

“অনেক মিস করবো তোমাকে?”
“আমিও তোমাকে অনেক মিস করব। সবার দিকে খেয়াল রেখো। বিশেষ করে শান। এখন এই পুরো সংসারের দায়িত্বটা কিন্তু তোমার। ”

আমি ” হ্যাঁ ” সূচক মাথা নাড়ালাম। ওনারা সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলেন। আমি পুষ্পকে কোলে তুলে নিলাম। ভূমিকা আপু অনেকবার নিতে চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। আমারও ছাড়তে মন চাইছিল না।

“মিষ্টি আমি তোমাকে ফেলে যাবো না। তুমিও চলো আমার সাথে। ”

পুষ্প বায়না করছিল বারবার। ভূমিকা আপু বললো,
“মা মিষ্টি তো যেতে পারবেনা । কারণ তোমার যেমন ওখানে পড়া আছে।মিষ্টিরও তেমন এখানে পড়া আছে। মিষ্টির যখন পড়া শেষ হবে তখন আবার আমরা সবাই একসাথে থাকব। ”
“সত্যি?”
শান ভাইয়া পুষ্পকে আমার কোল থেকে নিয়ে বললো,
“একদম সত্যি। এছাড়া মিষ্টি যখন ছুটি পাবে আমি নিয়ে যাবো তোমার কাছে। ”
“শান তুমি আমাকে কথা দিচ্ছো তো?”
“হ্যাঁ প্রিন্সেস। ”

তারপর অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে পুষ্পকে রাজি করানো হলো যে যেন ছুটি পেলেই আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওর কাছে। তারপর আমাকে এতোগুলা পাপ্পি দিলো আমিও দিলাম। তারপর একে অপরকে বাই বলে দিলাম। ওদের গাড়ি চলে গেল।আমরা সবাই ভিতরে চলে আসলাম।



আমি চুপচাপ বসে আছি রুমে। অনেকক্ষণ ধরে শান ভাইয়ার ফোনটা বেজে চলেছে। ফোনটা আমার কাছেই ছিল। কিন্তু কারো পারমিশন ছাড়া ফোন ধরাটা খারাপ দেখায় তাই ধরলাম না।শুধু স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। তাকাতেই দেখলাম লেখা আসছে,

“oishi is calling । ”

আমি একটু অবাক হলাম। এই ঐশিটা কে? কখনো নাম শুনিনি তো। হয়তো অফিসের কেউ হবে। তাই তেমন পাত্তা দিলাম না। পুষ্পর জন্য মন কেমন করছিলো। ভালো লাগছিলো না তখনই শান ভাইয়া রুমে আসল। আসতেই আমি বললাম,

“আপনাকে কেউ ফোন দিয়েছে?”
“কে?”
“ঐশি নামের কেউ। বাট আমি রিসিভড করিনি।আপনি কল ব্যাক করে নিন হয়তো অফিসের কেউ হবে।ইম্পরট্যান্ট কোনো দরকারে কল করেছে।”
শান ভাইয়া একটু অবাক ভঙ্গিতে বললেন,
“কি নাম বললে।”
আমি থতমত খেয়ে গেলাম উনার প্রশ্নে। এমন ভাবে জিজ্ঞেস করার কি আছে?বললাম,
“কেন ঐশি।”

শান ভাইয়া নিজের একহাত কোমড়ে আরেক হাত কপালে দিয়ে কিছু একটা ভাবলেন। আমি একটু আশ্চর্য হলাম। নামটা শুনে এতো ভাবার কি আছে। আমি উনাকে আবার বললাম,

“কি হয়েছে?”
“হুম। না কিছু না। আচ্ছা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও এখন। ”

শান ভাইয়ার এতো তাড়া দেখে একটু অবাক হলাম। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

“কেন?”
“তোমাকে নিয়ে যাবো এক জায়গায়। ”
“কোথায়?”
“উফ এতো প্রশ্ন করো না যখন নিয়ে যাবো তখন দেখে নিও। সারপ্রাইজ। ”
“কি ব্যাপার বলুন তো আজকে সকাল সকাল এতো সারপ্রাইজ দিচ্ছেন? ”
“হুম ব্যাপার তো আছে কিছু একটা তবে সেটা সময় হলেই জানতে পারবে আর কথা নয়। যাও গিয়ে রেডি হও। ”

শান ভাইয়া আমাকে একটা শাড়ী ধরিয়ে দিয়ে রেডি হতে পাঠিয়ে দিলেন। আর উনিও গেলেন বাট আজকে হঠাৎ কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি আর না চিন্তা করে শাড়ীটা পড়ে নিলাম। তারপর একে একে জুয়েলারি, সাজ সব কম্প্লিট করে ফেললাম শুধু চুড়ি পড়াটা বাকি ছিল।

শান অন্য রুমে গেছিল চেন্জ করতে। কারণ এখানে সোহা রেডি হচ্ছিল। শান রেডি হয়ে রুমে আসতেই থমকে গেল।শানের মনে হচ্ছিল সোহা না কোনো হুরপরী দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। যাকে ও দেখতে তো পাচ্ছে কিছু ছুতে পারছে না। ঝনঝন করে চুড়ি গুলো সুর তুলছে শান সেগুলোর মধ্যেও যেন মুগ্ধ হচ্ছে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শান সোহার দিকে।

“আপনি কখন এলেন? ”

সোহার কথায় শানের ঘোর কাটল,
“এইতো তুমি রেডি?”
“হুম।”
“তোমার হাতের ব্যাথা কেমন আছে এখন? ”
“ঠিক আছে।আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন তো?”
শান ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো,
“কি কথা? ”
“ওইদিন রাতে আপনি আমার হাতে ব্যান্ডেজ করেছিলেন তাই না? ”

শান একবার আমার দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো তারপর মৃদু হেসে বললো,

“আমি ছাড়া সেদিন রাতে এই ঘরে আর কি কেউ ছিল?”
“হুম। কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝলাম না ব্যাথা দিলেনও আপনি আবার মলম লাগালেনও আপনি। যদি আমার ব্যাথায় মলম লাগানোরই ছিল তাহলে ব্যাথা দিলেন কেন?”

শান বডি স্প্রে মেরে আমার দিকে ঘুরে তাকালো তারপর নিচের ঠোঁট কামড়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমার একদম কাছে গিয়ে বললো,

“ম্যাডাম কাউকে ব্যাথা দিয়ে সেই ব্যাথায় মলম লাগাতে কতটা আনন্দ পাওয়া যায় সেটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে আমাকে এতটা হেয়ালি করতেই হতো না। ”

কথাটা বলেই শান আমার মুখের মধ্যে বডি স্প্রেটা মেরে পাশ থেকে ব্লেজারটা নিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেল। আমি এখনও চোখ বন্ধ করে রইলাম। উনার কথার অর্থ বুঝলাম না। কিন্তু এটা অনুভব করতে পারলাম যে কথা গুলোর মধ্যে যেন একটা মাদকতা মেশানো ছিল। চোখ খোলার সাহস হচ্ছে না যদি সে সামনে থাকে আমি পারব না তার চোখে চোখ রাখতে। হারিয়ে যাবো তার মাঝে যেখান থেকে কেউ আমাকে কখনো খুজে পাবে না।



আমি বাহিরে এলাম। বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিলাম। আশ্চর্য যে তারা কিছু জিজ্ঞেস করল না কোথায় যাচ্ছি? তাহলে কি আমি বাদে সবাই জানে? শ্বাশুড়ী মা মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

“যেখানে যাচ্ছো তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। বাড়িটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তোমাদের ছাড়া। ”
“হুম মা আসি। ”

তারপর আমিও উনাদের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। বাহিরে শান ভাইয়া ওয়েট করছিল গাড়িতে হেলান দিয়ে চোখে কালো চশমা পড়ে দুইহাত বুকে ভাজ করে। ওনাকে দেখে এই প্রথম ক্রাশ খেলাম।কারণ কখনো তো এতো ভালো করে দেখিইনি। যখনই দেখা হয়েছে তখনি ঝগড়া করেছি। তাই একটু অবাক হচ্ছি। হোয়াট আ অ্যটিটিউড?কালো সুট, ব্লেজার, সু, ঘড়ি, চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা জাষ্ট ওয়াও লাগছে।ফর্সা শরীরে কালো রংটা যেন ফুটে উঠেছে। যেকোনো মেয়ে দেখলেই ক্রাশ খেতে বাধ্য।

শান ভাইয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
“এতোক্ষন লাগে আসতে?কখন থেকে ওয়েট করছি। ”
আমি মুখ চোখ ছোট করে মিষ্টি করে বললাম,
“স্যরি। ”
“ব্যাস হয়ে গেল। কেউ এতো সুন্দর করে স্যরি বললে রাগ কি করে দেখাবো। ”

শান ভাইয়ার কথা শুনে আমি হেসে দিলাম। উনি গাড়ির গেটটা খুলে দিতেই আমি ভিতরে গিয়ে বসলাম। শান ভাইয়াও এসে বসল,

“সিটবেল্টটা লাগাও। ”
কথাটা কানে আসতেই আমি সিটবেল্টটা লাগানোর চেষ্টা করছিলাম বাট পারছিলাম না। কি সমস্যা হলো বুঝলাম না। শান ভাইয়া বললো,
“কি হয়েছে?”
“জানি না লাগছে না এটা। ”
“দেখি সরো আমাকে দেখতে দেও। ”

শান ভাইয়া আমার উপরে এসে সিটবেল্ট লাগাচ্ছে। উনি আমার অনেকটা কাছে আছে।এমন অবস্থা যে একটু নড়লেই উনার গালের সাথে আমার ঠোঁটটা লেগে যাবে।আমার ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ছিল। যেন বুকের মধ্যে কেউ ঢোল বাজাচ্ছিল। আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম। তখনই শান ভাইয়া আমার থেকে সরে গেলেন।

“হয়ে গেছে। তুমি একটু ট্রাই করলেই লাগাতে পারতে।”
“হুম।”
“শুধু হুম? কি ব্যাপার বলোতো সকাল থেকে ঝগড়া না করে আছ?শরীর ভালো তো?”

উনার কথা শুনে আমি একটু হাসলাম,
“কেন ঝগড়া না করলে বুঝি শরীর খারাপ হতে হবে?”
“হতেও পারে এটা সোহা তো কোনো বিশ্বাস নেই।”
“হুম। এবার বেশী কথা না বলে গাড়িটা চালান। ”

শান ভাইয়া একটু হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি চললো আমাদের গন্তব্যে কিন্তু কোথায় সেটা আমার জানা নেই। তবে আজ কেন জানি মনে হচ্ছে যেখানেই নিয়ে যাচ্ছে যেতে রাজি আছি।হারিয়ে যেতে চাই আজ। হঠাৎ মনে ঘুনঘুন করে উঠলো,

“আজ মন চেয়েছে
আমি হারিয়ে যাবো
হারিয়ে যাবো আমি
তোমার সাথে। ”

ভাবতেই মুখের হাসি চওড়া হলো। নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলাম। তারপরও ভাবলাম যদি এই ভাবনাতেই একটু ভালো থাকা যায় তাহলে ভাবতে তো ক্ষতি নেই।
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here