এক শহর ভালোবাসা পর্ব_৩০

0
1216

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩০
#সুরাইয়া_নাজিফা

“কিরে সোহা সবাই ভিতরে চলে গেলো তুই ওই গাড়ির পিছনে কি করছিলিস?”
“কিছু না শাড়ীটা মনে হচ্ছিল খুলে যাচ্ছে সেটা ঠিক করছিলাম। ”

তখনই শানও বেরিয়ে এগিয়ে আসছিলো আমাদের দিকে। হঠাৎ আপু মুচকি মুচকি হাসছিলো আর বললো,
“এভাবে হুটহাট শাড়ী খুলে গেলে হবে নিজের বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত ওয়েট কর। ”

আপুর কথা শুনে আমি আশ্চর্য হলাম
“মানে? ”

আপু কোনো কথা না বলে শুধু মিটিমিটি হাসছিলো তখনই শান আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। শানকে দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আপু আবার শানের সাথে উল্টাপাল্টা কিছু ভাবছে না তো। ভাবতেই লজ্জায় পড়ে গেলাম।

শানকে উদ্দশ্যে করে আপু বললো,
“ভালো আছেন ভাইয়া? ”
“হুম ভালো। ”
কথাটা বলার সময় শান একবার রাগী চোখে আমার দিকে তাকালো তারপর আবার আপু দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি?”
“হুম আমিও ভালো। আসুন ভিতরে আপনি। ”
তখনি আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,
“শুধু ওনাকে বলছিস কেন আমাকে বললি না? ”
“তুই কি এই বাড়ির মেহমান নাকি যে তোকে বলতে হবে আসলে আয় নাহলে এখানেই দাঁড়িয়ে থাক। ”

বলেই শান আর আপু ভিতরে চলে গেল। আর আমি ওখানেই মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এতো অপমান প্রাণে সয়। কেউ আমার মূল্য বুঝেনা কেন? না বাবার বাড়ির কেউ বুঝে না জামাই বুঝে। যেদিন আমি থাকব না ঐদিন বুঝবে সবাই। নিজের মনে বকবক করতে করতে বাড়ির ভিতরে ধপধপ করে পা ফেলে চলে গেলাম।


আমি, আপু, আরশ ভাইয়া তিনজনে একপাশে বসে আছি। মা রান্নাঘরে সবার জন্য নাস্তা তৈরী করছে।যদিও আপু অনেকবার উঠে যেতে চাইছিলো কিন্তু আরশ ভাইয়া বারণ করছে যেতে। আমি এদের এসব দেখে মুচকি মুচকি হাসছিলাম। শানসহ বাকিরা অন্যপাশে বসে বসে কথা বলছে।বাড়ির ভিতরে ঢোকার পর শান অনেকবার ইশারা করেছিল উনার পাশে বসার জন্য কিন্তু আমি ইচ্ছা কৃতই উনার পাশে না বসে আরশ ভাইয়ার পাশে বসেছি। সবার কথা বার্তায় মহল বেশ জমে উঠেছে। যদিও মাঝখানে আমি চুপ।উনি সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে বাট কথা বলতে বলতে যে কয়বার আমার চোখের উপর চোখ পড়েছে সেখানে হাসি মিলিয়ে চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠেছে। সাথে আমার হাসিটাও মিলিয়ে যাচ্ছে উনার রাগ দেখে। উফ আমার কপালে যে আজ কি আছে আল্লাহ জানে। এতোটা রাগানো হয়তো উচিত হয়নি। এখানে আর বসে থাকতে পারবো না ভয় লাগছে উনার চাহনী দেখে তাই আমি উঠে দাঁড়ালাম।

তখনই আরশ ভাইয়া বলে উঠল,
“কি হলো ভাবীজান কোথায় যাচ্ছো।”

আরশ ভাইয়ার কথা শুনে আপু একটু অবাক হলো। কারণ আপু কখনো ভাইয়াকে ভাবী ডাকতে শুনেনি আমাকে তাই একটু অবাক হবেই স্বাভাবিক। এই আরশ ভাইটাও না যেই কাজটা উনাকে করতে বারণ করব সেটাই উনি আরো বেশী করে করবে। দুপুরে বলেছিলাম না ভাবী না বলতে তাই এখন আরো বেশী করে বলছে যাতে আমি বিরক্ত হই।দুই ভাই একদম এক। আমার পিছনে লাগা ছাড়া এদের আর কাজ নেই।

আমি আরশ ভাইয়ার পাশে বসে বললাম,
“একদম মুখ বন্ধ রাখো নাহলে কিছুক্ষন আগের কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলে তবে বুঝবে মজা করার ফল। ”

আমার এমন শান্ত থ্রেট শুনে আরশ ভাইয়ার মুখ চুপসে গেল।আরশ পড়েছে মহাবিপাকে। কিছুক্ষন আগে বর্না নামে একটা মেয়ের সাথে আরশ কথা বলছিলো। আসলে কথা তো না ফ্লার্ট করছিলো ফোনে রং নম্বর ছিলো তাই ফাজলামি করছিলো।আর ওরই বা কি দোষ ছিল মেয়েটাও তো ওর সাথে তালে তাল মিলাচ্ছিলো।ব্যাস এটাই কিভাবে যে সোহা শুনে নিয়েছে সেই থেকে এভাবেই ব্লাকমেইল করে যাচ্ছে।

আরশ ভাইয়ার চুপসানো মুখ দেখে আমি শয়তানি একটা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। আপু আমার কানে ফিসফিস করে বললো,

“ব্যাপার কি তোদের বলতো?”
“সেটা তোর বরকেই জিজ্ঞেস কর। ”

বলেই আমি দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম।

রান্নাঘরে মা কাজ করতে ব্যাস্ত তখনই আমি পিছন থেকে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। মা হেসে বললো,
“এইখানে এলি কেন আবার ওখানেই তো বসতে পারতিস। ”

আমি মাকে ছেড়ে একপাশে দাঁড়িয়ে বললাম,
“না ওখানে ভালো লাগছিল না তোমাকে ছাড়া। কি এতো কাজ করছো বলোতো সবাই ওখানে আড্ডা দিচ্ছে। ”

মা হেসে বললো,
“এখন তো একটা সংসার সামলাস এখন বুঝিস না একটা সংসারে কতো কাজ থাকে। বাড়ির সবাই আড্ডা দিলেও আমাদের এতো সময় কোথায়। ”

মায়ের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো। আসলেই মেয়ে মানুষের জীবনটাই কেমন অদ্ভুত। যে মেয়েটা একসময় নিজের জিনিস গুলোকেই সামলাতে পারতো না তাকে একসময় ঠিকই পুরো একটা সংসার সামলাতে হয়। সবচেয়ে অগোছালো মেয়েটাও একদিন গুছালো হয়। সবসময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা মেয়েটাও একদিন নিজের কথা বাদ দিয়ে নিজের সর্বস্ব দিয়ে পরিবারকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা গুলোর উপরেও একদিন অন্যের রাজত্ব মানতে বাধ্য হয় ভালোবেসে। আসলেই মেয়ের অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়।যদিও আমার উপরে এতো চাপ আসে না তবে কথা গুলো তো সত্যি। অনেকটা পরিবর্তন তো হয়েছি আগের থেকে সেটা তো বুঝতে পারি।

আমি টেবিলের কাছে গিয়ে জগ থেকে একগ্লাস পানি ঢেলে মুখে দিলাম হঠাৎ মা বলে উঠল,
“শানের সাথে কি এখনো আগের মতোই ঝগড়া করিস নাকি উন্নতি হয়েছে সম্পর্কে কিছুটা?”

মায়ের কথা শুনে আমার মুখ ফসকে সব পানি গুলো বেরিয়ে গেল। কি বলবো এখন কিছুক্ষন আগেও তো ঝগড়া করে আসলাম। উনার সাথে ঝগড়া তো আমার মনে হয় না এই জন্মে শেষ হবে। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“না ঐ আরকি ঝগড়া করব কেন?এখন তো আমরা দুজনেই খুব ভালো আছি। ”
“ঠিক তো? ”
আমি মাথা জোরে জোরে ঝাঁকিয়ে বললাম,
“একদম ঠিক। ”
“ঠিক হলেই ভালো বুঝলি তো মেয়েদের স্বামী ভালো না হলে জীবনে কখনো সুখ হয়না। ”
আমি হুট করে বলে উঠলাম,
“সেদিক থেকে দেখতে গেলে আমি অনেক ভাগ্যবতী। শানের মতো মানুষই হয় না। ”

কথাটা বলতেই আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। কার সামনে কি বলে দিলাম। আমার কথা শুনে মা মাথা নিচু করে হাসলেন। হয়তো আমার লজ্জার কারণটা বুঝতে পেরেছে। মা হাফ ছেড়ে বললেন,
“যাক এতোদিনে তোর মুখ থেকে শানের নামে সুনাম তো শুনলাম এতেই খুশি আমি। এখন মনে হচ্ছে সত্যিই ভালো আছিস। আমি জানতাম শান তোকে অনেক ভালো রাখবে। এখন তোর জন্য সব চিন্তা দূর হলো আমার। এখন সব চিন্তা স্মৃতিটার জন্য কি যে হবে মেয়েটার। আর কি কোনো ভালো পরিবারে বিয়ে দিতে পারবো।”

মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি হয়েছে কেউ কিছু বলেছে?”

“কে কি আর বলবে। স্মৃতি যেদিন থেকে পালিয়েছে সেদিন থেকেই তো সবার কথাই শুনতে হচ্ছে এখন সবাইকে বুঝাবো কি করে। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা। ”
আমি মাকে আশ্বাস দিয়ে বললাম,

“কিছু হবে না মা সমস্যা যখন শুরু হয়েছে তার সমাধানও খুব দ্রুতই হবে ইনশাআল্লাহ। শুদু একটু ধৈর্য ধরো। সবার মুখই বন্ধ হয়ে যাবে। ”

“হুম সেটাই যেনো হয়। ”

মা নাস্তা গুলো ট্রে তে সাজিয়ে দিলেন। তারপর আমি আর মা আস্তে আস্তে সবকিছু এনে উনাদের সামনে পরিবেশন করে দিলাম ।

মা আমাকে বললো,
“সোহা সবাইকে একটু সার্ভ করে দে আমি বাকি কাজগুলো সেরে আসছি। ”

মা চলে গেল।শানের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম সে আমার দিকেই চেয়ে আছে। আমি দ্রুত অন্যদিকে তাকালাম। আমি আপুকে বললাম,
“আপু একটু সার্ভ করে দে তো।”
তখনই আরশ ভাইয়া ফট করে বলে উঠলো,
“কেন তোমার শ্বশুরবাড়ীর লোক সবাই তুমিই না সার্ভ করবে অন্যকে বলছো কেন? ”

আমি আরশ ভাইয়ার দিকে কটমট চোখে তাকালাম আর মনে মনে অকথ্য বাসায় গালি দিলাম কিছু। যখন থেকে বুঝতে পেরেছে শানের থেকে পালানোর চেষ্টা করছি একটা ঝামেলা হয়েছে উনার সাথে তখন থেকে এমনই করছে।ইচ্ছাকৃত বাঘের সামনে ঠেলে দিচ্ছে। এটা নাকি আমার জিজু বদের হাড্ডি। আমি আস্তে আস্তে সবার দিকে সরবতের গ্লাস এগিয়ে দিলাম। যখনই শানকে দিবো তখনই আমার হাত অটোমেটিক কাঁপতে লাগলো।

শান ভ্রু কুচকে বলে উঠল,
“কি ব্যাপার হাত কাঁপছে কেন?এখন তো এটা আমার গায়ে ফেলবে তুমি। ”

আরশ ভাইয়া পেছন থেকে টোন কেঁটে হেসে বললো,
“তাই তো কি হয়ছে ভাবীজান আমরা কি তোমাকে এই প্রথম দেখতে এসেছি নাকি যে তুমি এমন ভাবে ভয় পাচ্ছো। ”

আমি নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলাম।মাথানিচু করে রইলাম।

শ্বাশুড়ী মা বললেন,
“কি বলিস এসব আরশ সেই তখন থেকে মেয়েটার পিছু লেগে আছিস তুই। ”
“ওহ মা ভাবীর পিছনে দেবর লাগবে না তো কে লাগবে বলো। ”

এদের এসব কথাবার্তার মাঝে শান আমার হাত থেকে সরবতটা নিয়ে নিলো আর কানে ফিসফিস করে বললে,
“তখন আমার দেওয়া শাড়ীটা পড়োনি না এইবার দেখো আমি কি করি। ”

উনার এমন শীতল কথা শুনে ভয় পেলাম। গলায় কিছুটা খুশখুশ করছিলো।আমি টেবিল থেকে দ্রুত একগ্লাস পানি খেয়ে নিলাম। শান আবার কি করবে কে জানে? আমি গিয়ে আবার আরশ ভাইয়ার পাশে বসে পড়লাম।মাও কিছুক্ষন আগে এসে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে। সবাই খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে বাট শান এখনও সরবত ধরে বসে আছে।তাতে আমার কি আমি আমারটা খাচ্ছি। হঠাৎ শান বললো,
“কি ব্যাপার সোহা তোমার হাতে কি হয়েছে? ”

কথাটা বলেই উনি আমার কাছে চলে আসলো। আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম,
“কই কি হয়েছে। ”
শান হাতের দিকে ইশারা করে বললো,
“এই যে হাত থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। ”
আমি হেসে বললাম,
“কই রক্ত না তো টমেটো সস লেগেছে। ”
আমার কথা শুনে আরশ ভাইয়াও হেসে বললো,
“ভাইয়া আজকাল বউকে একটু বেশীই চোখে হারাচ্ছিস মনে হচ্ছে? ”

আরশ ভাইয়ার কথায় সবাই মিটিমিটি হাসছিলো। লজ্জায় কান গরম হয়ে যাচ্ছে আমার শান বিরক্ত হয়েই বললো,
“আরশ কি হচ্ছে এসব বড়রা আছে এখানে? ”
শ্বশুর মশাই হেসে বললো,
“তাতে কি আমরা এখনো বুড়ো হয়ে যায়নি বুঝেছো। ”
শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেসে বললো,
“বাবা তুমিও না। ”

কথাটা বলে আমার পাশ থেকে উঠে যেতে নিবে হুট করে সেন্টার টেবিলের সাথে পা ভেজে উনার হাতে থাকা সরবতের গ্লাসটা উল্টে এসে পড়ল আমার শাড়ীর উপর। আমি পুরা হা হয়ে গেলাম।

“এটা কি করলেন আপনি?”
“আই আ’ম এক্সট্রেমলি স্যরি এক্সচুয়েলি আই কুডন্ট কিপ দ্যা ব্যালেন্স। ”

আমি কটমট চোখে উনার দিকে তাকালাম। আমি বুঝতে পারছিনা উনি যখন সামনের দিকে ছিলেন তখন বাবার গায়ে পড়ার কথা ছিলো উল্টে এসে আমার গায়ে পড়ল কি করে।আমি উনার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,

“পা ভাঙা নাকি যে ব্যালেন্স রাখতে পারেন না? ”

আমার কথায় শান শীতল দৃষ্টিতে তাকালো তখনই আমার বাবা বলে উঠলো,
“এটা কেমন ব্যবহার সোহা?শান স্যরি বলছে তো তারপরও এভাবে কথা বলছো কেন?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
“স্যরি বাবা। ”
শ্বাশুড়ী মা বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে যা হয়েছে হয়েছে এইবার গিয়ে চেন্জ করে নে।”

আমি আর কিছু না বলে উপরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এটা শানের ইচ্ছাকৃত কাজ। কি মনে করে পিছনে তাকালাম তাকাতেই খেয়াল করলাম শান আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।আমি রাগি চোখে উনার দিকে তাকালাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ মারল। আমি অবাক হয়ে গেলাম উনার কর্মকান্ডে এতক্ষনে আমি একদম শিউর হয়ে গেছি যে উনি এটা ইচ্ছা করেই করেছে। উনার পছন্দের শাড়ী পড়িনি বলে কি খারাপ। আমি মনে মনে অসংখ্য গালি দিতে লাগলাম শানকে।

রুমে গিয়ে আমার কাবার্ড খুলে একটা নীল রঙের থ্রী-পিছ বের করে নিলাম পড়ব বলে তখনই আপু কোথায় থেকে দৌড়ে এসে বললো,
“সোহা এটা পড়ে নে? ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“এটা কি?”
“শাড়ী।”
“তুই কোথায় পেলি।”
আপু আমতা আমতা করে বললো,
“আমার শাড়ী নতুন পড়িনি একবারও। উফ এতো প্রশ্ন করিস কেন পড়তে বলেছি পড়লে পর না পরলে নাই। ”

আমি আপুর হাত থেকে শাড়ীটা নিয়ে নিলাম। শাড়ীটা দেখতে অনেক সুন্দর একদম শানের জামার সাথে ম্যাচিং করা কালোর মধ্যে লাল পাড়ের পুরো কাজ করা শাড়ী। আমার পরনের শাড়ী থেকে সরবত সরবত ঘ্রাণ আসছে এটা এখনি চেন্জ করা প্রয়োজন। তাই দ্রুত চলে গেলাম ফ্রেস হতে।

শাড়ীটা পড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম দেখার জন্য যে আমাকে কেমন লাগছে। তখনই পিছন থেকে কেউ বলে উঠল,
“মাশাআল্লাহ একদম পুতুলের মতো লাগছে। শাড়ীটায় এতো মানাবে বুঝিনি। ”

কথাটা শুনে আমি ভয় পেয়ে পিছনে তাকালাম।পিছনে ফিরতেই দেখলাম শান দরজার সাথে হেলান দিয়ে দুই হাত বুকে ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে তাকাতে দেখে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো।উনাকে দরজা বন্ধ করতে দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম,

“আপনি এখানে কি করছেন? ”
“এই তো আমার বউকে দেখতে এসেছি।”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
“বাড়িতে সবাই আছে কে কি ভাববে প্লিজ দরজা খুলুন। ”
“এতো ভয় পাচ্ছো কেন আমি কি পর-পুরুষ। যে ইচ্ছা সে আসুক না সমস্যা কি? ”
এরপর আসলে কি বলতে হতো আমি জানি না তাই চুপ করে ছিলাম শান এসে আমার হাত ধরে আমাকে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসালো।উনি আমার কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো,
“আজকে তোমাকে আমি আমার পছন্দে সাজাবো। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“তাহলে আপনার রাগ পড়ে গেছে? ”
আমার কথা শুনে শান শব্দ করে হাসল
“ভেবেছিলাম তোমার উপর রাগ দেখাবো বাট আমি হেল্পলেস পারলাম না রাগ করে থাকতে । তোমাকে দেখলেই আমার রাগ গুলো কোথায় হাওয়া হয়ে যায় জানি না। ”
আমি উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। আচ্ছা ভালোই যখন বাসেন তাহলপ স্বীকার করেন না কেন। মন খুলে বলেননা ভালোবাসি?আমার চোখ ছলছল করে উঠল উনি আমায় চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে?”
আমি মাথা নেড়ে কিছু না বললাম উনি হেসে বললেন,
“তাহলে শুরু করি?”
আমি ভীত চাহনীতে তাকিয়ে বললাম,
“কি?”
“সাজানো? ”
আমি আনমনে বললাম,
“ওহ। ”
উনি আমার ঘাড়ে হালকা ঠোঁট ছুয়ে বললো,
“তুমি কি অন্যকিছু ভেবেছিলে? ”
আমি মাথা নিচু করেই বললাম,
“কি ভাববো?”
“এই যে আমি তোমাকে….। ”
উনার বলার ভাব ভঙ্গি শুনে আমি দ্রুত উনার দিকে তাকিয়ে উনার মুখ চেপে ধরলাম,
“প্লিজ যা বলছেন বলবেন না আমি তেমন কিছুই ভাবিনি। ”
আমার কথায় উনি আবারও হেসে উঠলো যেন খুব মজা পেয়েছে।
“সত্যি তুমি না একদম পাগলী একটা মেয়ে সব জিনিসে এতটা হাইপার হয়ে যাও কেন। এইবার দেখি তো আমাকে সাজাতে দেও।”
আমি চোখ পিটপিট করে বললাম,
“আপনি সাজাতেও পারেন?”
উনি হাতের আঙুল দিয়ে দেখালেন,
“একটু একটু।এইবার সাজাতে দেও। ”
আমি লাফিয়ে উঠে বললাম,
“প্লিজ আমার পেত্নী সাজার কোনো ইচ্ছা নাই আমি এমনিতেই ভালো আছি।”
উনি ধমক দিয়ে বললেন,
“একদম এক্সট্রা কথা বলবে না এখনি এখানে চুপচাপ বসো আর চোখ বন্ধ করো নাহলে এরপর যদি আমি কিছু করি তাহলে আমাকে দোষ দিও না। ”

উনার কথা শুনে আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম। আর চোখ বন্ধ করলাম। কোনো উপায় নেই। চোখ খুলে নিজেই না নিজেকে দেখে ভয় পেয়ে যাই সেটা ভেবেই ভয় লাগছে।

শান সাজানো শুরু করল। একদম নিজের পছন্দের রাজকন্যার মতো সাজাচ্ছে সোহাকে নিজের ভালোবাসার সবটুকু অনুভুতি দিয়ে। সাজানোর পর কিছুক্ষন নিজেই চুপচাপ দেখতে লাগলো নিজের পরীকে ইচ্ছা করছিলো একবার ঠোঁট ছুয়ে দেবে ঐ লাল টুকটুকে ঠোঁটে কিন্তু না নিজেকে সামলিয়ে নিলো।কারণ এখনও ওর পরী ওকে অনুমতি দেয়নি। আর কারো অনুমতি ছাড়া কাউকে স্পর্শ করাটা উচিত নয় সেটা যতোই অধিকার থাকুক না কেন।

“এইবার চোখ খোলো। ”

শানের কথা শুনে আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম। শান আমার দিকে তাকিয়ে আছে একগালে হাত দিয়ে। উনার তাকানো দেখে আমি নিজের চোখ সরিয়ে নিলাম। শান বললো,
“এইবার আয়নায় তো একবার নিজেকে দেখো। ”
“দেখব বলছেন? ”
শান মুচকি হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
“না থাক লাগবে না। ”
শান ধমক দিয়ে বললো,
“বললাম না দেখতে দেখো নিজেকে। একটা কথা ভালো ভাবে বললে শোনা যায় না।”
উনার ধমক শুনে আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে আস্তে আস্তে আয়নার দিকে ঘুরে তাকালাম।

তাকাতেই আমি ড্যাবডেবে নজরে আয়নার দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। কোনো ছেলে মানুষ এতো সুন্দর করে সাজাতে জানে বুঝতে পারিনি। চোখে গাড়ো করে কাজল, মুখে হালকা মেকাপ, চুল গুলো ছাড়া দিয়ে এলটা বেলী ফুলের মালা লাগানো,ঠোটে টকটকে লাল লিপস্টিক, দুই হাত ভর্তি লাল কালো রঙের চুড়ি আর হালকা জুয়েলারি।

“তো এইবার কি পেত্নীর মতোই লাগছে যে এভাবে দেখছো নিজেকে নিজে?”

শানের কথা শুনে আমি ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলাম,
“এতো সুন্দর সাজানো কোথায় শিখলেন? ”
“শিখতে হবে কেন? আমি কি প্রফেশনাল মেকাপম্যান নাকি?”

“তাহলে এতো সুন্দর করে সাজালেন কিভাবে আপনি?”

“নিজের স্বপ্নপরীকে সাজানোর জন্য সাজাতে জানতে হয়না এমনিতেই মনের মাধুরী মিশিয়ে আকিবুকি করলেও সেটা সুন্দর হয়ে যায়। নিজের বউকে নিজের মনের মতো সাজাতে পারি এতোটুকুই জানি আর আমার মনে হয় সব পুরুষেরই জানা উচিত।তাড়াতাড়ি নিচে এসো। ”

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন আর আমি উনার যাওয়ার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। ভালেবাসার কত রং হয় তাই না। কতোভাবে প্রকাশ করা যায় কেউ বলে প্রকাশ করে আর কেউ অনুভুতিতে। আসলে অনুভুতির মাধ্যমটা সর্বোউৎকৃষ্ট। মুখে তো সবাই সবকিছু প্রকাশ করতে পারে কিন্তু অনুভুতির মাধ্যমে কয়জন পারে অন্যের মনের অনুভুতিকে ছুয়ে নিজের কাছে আনতে। ”
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here