এক শহর ভালোবাসা পর্ব_৩১

0
1128

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩১
#সুরাইয়া_নাজিফা

শান্ত বিকালে সূর্যের লালচে আলোয় ছাদের এককোণে কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে দুটো মানব মানবী।সূর্য অস্ত যাবে যাবে এমন অবস্থা। চারদিকে ফুরফুরে হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিচ্ছে মেয়েটার চুল। ছেলেটা সেই দিকে অপলক চেয়ে রইল। আর মেয়েটা ছেলেটার কাঁধ থেকে হালকা মাথাটা উঁচিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল। কারো চোখেরই পলক পড়ছে না যেন কত বছরের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।চুলগুলো উড়ে এসে বারবার মেয়েটার মুখে পড়ছে বিধায় ছেলেটা আলতো হাতে মেয়েটার চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিল।

ঐশী মুচকি হেসে বললো,
“কি দেখছো অমন করে? ”

তিমির খানিকটা হেসে বললো,
“তোমাকে? ”

“কেন আগে দেখোনি নাকি কখনো?”

“দেখেছি তো তবে আগে তো কখনো এতো কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি তাই এখন দেখছি মনভরে। ”

ঐশী তিমিরের কাঁধ থেকে মাথা তুলে বললে,
“ভালোবাসো?”

“কি মনে হয়?”

“মনে তো অনেক কিছুই হয় তবে আমি শিউর হতে চাই তাই তো জিজ্ঞেস করলাম। ”

“প্রতিটা মূহূর্ত তোমাকে অনুভব করি, তোমাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারিনা, তোমার হাসি মুখ দেখলে ভালো থাকি, কষ্টে থাকলে নিজে দ্বিগুন কষ্ট পাই এসব যদি ভালোবাসা হয় তাহলে ভালোবাসি। ”

ঐশী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তিমিরের দিকে কি অমায়িক ব্যবহার মানুষটার।এতটা ভালো মানুষ এতো ভালোবাসা কি ডিজার্ভ করত ও বুঝতে পারছে না। হয়তো জীবনে কোনো এক পূন্যের জোরে তিমিরের মতো এমন একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে। ঐশীর চোখ ছলছল করে উঠল,

“এই পাগলি এতো চুপ হয়ে গেলে কেন হঠাৎ? ”
“কেন ভালোবাসো এতোটা? ”

হঠাৎ ঐশীর প্রশ্ন শুনে অবাক হলো তিমির পরক্ষনেই হাসি মুখে জবাব দিলো,
“তুৃমি মানুষটাই এমন যাকে ভালো না বেসে থাকাই যায় না তাই ভালোবাসি।

ঐশী অন্যদিকে চেয়ে বললো,
“আচ্ছা আমি তোমার ভালোবাসা ডিজার্ভ করি না তিমির বলো?”

তিমির রাগান্বিত হয়ে বললো,
“এইবার কিন্তু বেশী বেশী হচ্ছে ঐশী। এসব কথা বললে কিন্তু এখন আমি এখান থেকে উঠে চলে যাবো। ”

ঐশী আতকে উঠে বললো,
“এতো রাগ করছো কেন আমার মনে শুধু কিছু প্রশ্ন ছিল তারই উত্তর খুজছি। ”

তিমির ঐশীর পাশে বসে ঐশীর মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,
“আমার ভালোবাসা তুমি ছাড়া অন্যকেউ ডিজার্ভ করে না তাই আমি তোমাকে ভালোবাসি। কেন নিজেকে ছোট ভাবছ? ”

ঐশী কিছুক্ষন চুপ করে রইল তারপর আবার বললো,
“তুমি জিজ্ঞেস করবে না আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা? ”

তিমির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“না। ”

ঐশী সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“কেন?”

“কারণ আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো।যে মানুষটা সারাজীবন নিজেই ভালোবাসা হীনতায় ভুগেছে সে যখন সত্যিকারে ভালোবাসার স্বাদ পেয়েছে তখন কি কখনো তার ভালোবাসার মায়াজাল ছেড়ে যেতে পারে। এতটুকু তো বিশ্বাস থাকাটা প্রয়োজন দুজন দুজনার মধ্যে। তাই আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তোমার আছে হয়তো আমি তোমাকে এতটা ভরষা এখনো দিতে পারিনি যার ফলে তোমার মনে এই প্রশ্ন গুলো জাগছে। ”

ঐশী ছলছল চোখে বললো,
“এভাবে বলো না তিমির বিশ্বাস করি তো নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করি তোমাকে।আমার জীবনে এখন যদি কোনো ভরষার, ভালোবাসার জায়গা থাকে সেটা শুধুই তুমি। এটা আমার সন্দেহ না নিজের সাথে নিজের একটা যুদ্ধ যেটা লড়তে লড়তে আমি আজ ক্লান্ত হয়ে গেছি। তুমি তো জানো আমি কতটা একা তাই পাশে কাউকে পেলে ভয় হয় হারাবার। ”

তিমির ঐশীর কপালে একটা চুমু দিয়ে ঐশীর চোখের পানি মুছে দিলো। তারপর ঐশীকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো,
“এখন আর তুমি একা নও আমিও আছি তোমার সাথে বুঝেছো জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে পাশে পাবে কথা দিচ্ছি। ”

ঐশীও তিমিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কখনো না ছাড়ার প্রতিজ্ঞায়।কিছুক্ষন দুজনে ওভাবেই রইল। তারপর ঐশী তিমিরের বুকের উপর থেকে মাথা তুলে কিছুটা ইতস্তত করে বললো,

“তিমির তোমাকে একটা কথা বলার আছে। ”
“বলো না কি বলতে চাও? ”
ঐশী একটু ভীত কন্ঠে বললো,
“ভুল বুঝবে না তো?”
তিমির ঐশীকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
“কখনো না।বলো? ”

ঐশী কিছুক্ষন চুপ করে রইল। বুকের ভিতর ডিপডিপ করছে। যদি কথাটা শুনার পর তিমির ওর পাশে না থাকে যদি ছেড়ে দেয়। তাহলে ও তো বাঁচতে পারবে না। কিন্তু ঐ কথাটা তো লুকাতেও পারবে না তাহলে তিমিরকেই ঠকানো হবে। মনের ভিতর যে বোঝাটা আছে সেটাও যাবে না। আর না জীবনে কখনো শান্তি থাকবে। তাই বলাটাই শ্রেয় মনে করল ঐশী।

তিমির ঐশীকে ইশারায় বললো,
“বলো?”
ঐশী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে বললো,
“আমি শানকে ভালোবাসতাম। শানকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখতাম। কি করবো একাকিত্ব জীবনে না ছিল বাবা মা বা আত্মীয়-স্বজনদের ছায়া না ছিল বন্ধু বান্ধব। যার কারণে শানকে পেয়ে ওকেই আকড়ে ধরেছিলাম। শান আমার একা জীবনে প্রথম বন্ধু ছিল। কিন্তু এটা আমার ভুল ছিল যে শানের বন্ধুত্বের হাতকে আমি ভালোবাসার হাত ভেবেছিলাম। ”

কথা গুলো বলার সময় ঐশীর গলা ধরে আসছিলো। ঐশী কথা গুলো চোখ বন্ধ করেই বলছে ওর চোখ থেকে জরজর করে পানি পড়ছে পারবে না তিমিরের চোখে চোখ রেখে এসব বলতে। ঐশী কিছুক্ষন থেমে আবার বলা শুরু করল,

“কিন্তু শান আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে ও শুধুই আমার বন্ধু ছিল ভালোবাসার মানুষ নয়। যদিও শান চাইলেই আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আমাকে ইউজ করতে পারত তবে সে সেটা না করে আমাকে সত্যির মুখোমুখি হতে সাহায্য করেছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে শানের প্রতি ভিতর থেকে সম্মান বোধ জাগ্রত হয়। কিন্ত যাই হোক না কেন বলে না মানুষ প্রথম ভালোবাসা কখনো ভুলে না হয়তো শান আমাকে ভালোবাসেনি কিন্তু আমি তো শানকে ভালোবেসেছি তাই ভুলতে পারিনি তবে….।”

ঐশীর কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে তিমির বললো,
“তবে তুমি এখন আমাকে ভালোবাসো সেটা তোমার বলার প্রয়োজন নেই আমি বুঝি। তোমার ডিপ্রশনের কারণ শানের থেকে পাওয়া রিজেকশন ছিল সেটাও আমি জানি। তুমি শানকে কতটা ভালোবাসতে সেটা তোমার ডায়েরীর প্রতিটা পাতা বলে আমাকে। তবে সেটা তোমার অতিত ছিল। আর আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে তোমার অতীতকেও ভালোবাসি। তাতে কোনো সাফাইয়ের প্রয়োজন নেই। আর যদি তোমার কথা ধরি তাহলেও এখনি তুমি নিজেই শিকার করেছো তুমি শানকে ভালোবাসতে তারমানে এখন তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি কখনো তোমায় বলব না যে তুমি শানকে পুরোপুরি ভুলে যাও। বরং আমি তোমাকে এতটা ভালোবাসবো যে কংনো তোমার অতিত তোমার মনেই পড়বে না। আমার শর্ত শুধুই একটা জীবনে যতদিন বাঁচবে শুধু আমাকেই ভালোবাসবে। আমিই থাকবো তোমার সাথে আর কিছু না। ”

ঐশী এখনো চোখ বন্ধ করে ছিল। তিমিরের বলা প্রতিটা কথায় কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এতে ওর অপরাধবোধ আরো বাড়ছে।মানুষটা কতটা সহজে বুঝে গেল ওর কথা গুলো।এতটা তো ঐশীও গুছিয়ে বলতে পারত না। এতটা বুঝতে আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি ঐশীকে। তিমির ঐশীর মুখটা নিজের দুইহাতের মধ্যে নিয়ে ঐশীকে স্লো ভয়েসে বললো,

“চোখ খোলো?তাকাও ঐশী আমার দিকে। ”
তিমিরের কথা শুনে ঐশী ধীরে ধীরে নিজের চোখ খুলে তিমিরের চোখের দিকে তাকালো তিমির মিষ্টি করে হেসে বললো,

“এভার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো আমার চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছো?”

ঐশী মাথা নাড়িয়ে বললো,
“হুম। ”
“ব্যাস তাহলে এসব কথা গুলো আর কখনোই তুলবে না আর না নিজেকে ছোট ভাববে। আমি সব পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থেকে তোমায় আগলে রাখব। সবসময় তোমার পাশেই থাকব। ”
তখনই ঐশী হুট করে বলে উঠলো,
“বিয়ে করবে তিমির। ”
তিমির হেসে বললো
“ধুর পাগলি বিয়ে করবো বলেই তো ভালোবাসি। ”
“তাহলে আমাকে বিয়ে করে নেও আজই এখনি পারবে?”
তিমির একটু আশ্চর্যান্বিত,
“এখনই? ”
“হুম কেন পারবে না?তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। আমি তোমাকে হারাতে চাই না তিমির। ”
তিমির একটা লম্বাশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো আর ঐশীর হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বললো,
“চলো আমার সাথে।”
ঐশী অবাক হয়ে বললো,
“কোথায়? ”
“কেন তুমিই তো বললে বিয়ে করবে। তো দেরী করে লাভ কি। আর কতকাল একা থাকবো এখন তো বিয়ে করে নেওয়া উচিত তাই না। ”

তিমিরের কথা শুনে ঐশীর মুখে হাসি ফুটল। আজ ওর ও একটা স্বপ্ন পূরণ হবে নিজের একটা সংসার হবে নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে এরচেয়ে বেশী জীবনে আর কি লাগে।


শান যাওয়ার পরে আমিও রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। নিচে যেতেই আগে আপুর সাথে দেখা,
“আরে বাহ আমার বোনটাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে তো?ওয়াও বেলী ফুলের মালা কে দিলো হুম।রুমে তো ছিল না। ”

আপু চোখের ইশারায় বললো। আমি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসলাম। আপু আবারও বললো,
“হুম হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে গিফটটা স্পেশাল কেউ দিয়েছে তাই তো লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেছে। ”

আরশ ভাইয়া আপুকে থামিয়ে বললো,
“আহা স্মৃতি কেন মেয়েটাকে লেগ-পুলিং করছো। ”
আপু আরশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তো কি করব সারাজীবন অন্যেরটাই দেখে যাবো কেউ তো আর আমাকে দেবে না। ”

আরশ ভাইয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
“সিরিয়াসলি কতগুলো চাই তোমার। বেলী ফুলের মালা দিয়ে প্রতিদিন সকালে সাজিয়ে দেবো শুধু বিয়েটা হতে দেও। ”

এদের কথা বার্তা শুনে আমি একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,
“যেকোনো জায়গায় শুরু হয়ে যেও না প্লিজ। আমি আছি এখানে। ”

আরশ ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“হুম দেখতো পাচ্ছি এভার চলো নাহলে সবাই আমাদের তিনজনকে খোঁজার জন্য এখনি হারানো বিজ্ঞপ্তি দিবে। ”

বসার রুমে সবাই বসে বসে টুকটাক কথা বলছে। আমি শুধু বসে বসে ভাবছি আপুদের বিয়ের কথাটা কখন উঠবে। আধোও শান সবাইকে ম্যানেজ করতে পারবে তো। যদিও শানের উপর আমার পুরো ভরষা আছে এর আগেরবার ও শানের জন্যই আপুদের ব্যাপারটা সফটলি মিটে গেছিলো। এবার নিশ্চয়ই মিটে যাবে তারপরও নিজের মনের অস্থিরতা দূর করতে শানকে ফিসফিসিয়ে বললাম,

“বলছি আপুদের বিয়ের ব্যাপারটা কখন বলবেন? ”
শান আমাকে ইশারায় বললো,
“এখনি বাবা বলবেন অপেক্ষা করো। ”

উনার কথা শুনে আমি একটু অবাক হলাম বাবা বলবে মানে?বাবার সাথে উনি এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন? তাহলে আমাকে বললো না কেন?উনি এমন কেন কখনো কোনো কাজ আমাকে বলে করে না অদ্ভুত।

কিছুক্ষন পর আমার শ্বশুর মশাই বললেন,
“আচ্ছা আজকে যে জন্য আমাদের এখানে আসা সেটা আগে বলা প্রয়োজন। ”

শ্বাশুড়ী মা উনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। উনার তাকানো দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনিও কিছু জানে না।

শ্বশুর মশাই আবার বললেন,
“আমরা দুইবাবা মিলে ঠিক করেছি আরশ আর স্মৃতির বিয়ে দেবো। ”

কথাটা শুনে সবাই কম বেশী অবাক হলো আমার মা বলে উঠলেন,
“বিয়ে?”
বাবা বললেন,
“হুম বিয়ে, দেখো স্মৃতি আর আরশের পালানো নিয়ে প্রথমত কম ছোট হতে হয়নি দ্বিতীয়ত ওরা যখন ফিরে এলো তখন তো মানুষের কাছে মুখ দেখানোই দায় হয়ে যাচ্ছে। সবাই বলছে মেয়ে মুখ পুড়িয়ে এসেছে। ওরা কেন পালিয়ে ছিল সেটা আমি আর তুমি জানলে সবাই তো বিশ্বাস করছে না। সবাই স্মৃতির চরিত্র নিয়েই কথা বলছে। তাই স্মৃতি আর আরশের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই স্মৃতিকে ওরা ওদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চাইছে।”

বাবার কথা টেনে শ্বশুর মশাই বললেন,
“আর তাছাড়া স্মৃতির তো আমাদের বাড়ির বউ হওয়ার কথা ছিলোই হয়তো শানের তবে এখন যখন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে তাহলে স্মৃতির সাথে আরশের বিয়েটা নাহয় আবার উৎযাপন করা হোউক। ”

দুই মা কিছুক্ষন চুপ থেকে একে অপরের দিকে তাকালো তারপর নিজের মধ্যে কিছু কথা বলে দুজনেই একসাথে হেসে বললো,
“তোমরা তাহলে বিয়ের ব্যবস্থা করো আমাদের কারো কোনো আপত্তি নেই। ”

মায়ের কথা শুনে আমি এতটা খুশি হয়ে গেছিলাম যে খুশির চোটে চিৎকার দিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম,
“ইয়ে আজকে আমি অনেক অনেক হ্যাপি। এরপর থেকে আমরা দুইবোন একসাথে থাকবো আমি তো জাস্ট ভাবতেই পারছি না। আমাদের দুইবোনকে এখন আর কেউ আলাদা করতে পারবে না। ”

আপুও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আমার কথা শুনে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। আমি নিজেই নিজের কাজে লজ্জা পেয়ে চুপচাপ আবার আপুর পাশে বসে গেলাম।

“আচ্ছা স্মৃতি তুই আর আরশ আলাদা করে একে অপরের সাথে কথা বলে নে । তারপর তোদের মতামত জানা। ”

আপু আর আরশ ভাইয়া মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি লাফিয়ে বলে উঠলাম,
“তাহলে আমি নিয়ে যাই দুজনকে।”

আম্মু স্মমতি দিয়ে বললেন
“যা। ”

আমি আপু আর ভাইয়াকে আমাদের রুমে নিয়ে আসলাম দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম দুজনের মুখেই কি অমায়িক হাসি দেখলেও মন জুড়িয়ে যায়।আজ দুজন ভালোবাসার মানুষকে মিলাতে পেরে অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে যদিও এর ক্রেডিট সব শানের। একটা স্পেশাল থ্যাংক্স তো বলাই যায়।কি হতে পারে সেটা? আমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।

“আমাদের এতো বছরের সম্পর্কটা আজ সত্যিকারে অর্থে পূর্ণ হলো।এরমধ্যে জীবনে কত চড়াই উৎরাই গেলো। ঝগড়া -ঝামেলা, ভুল বুঝাবুঝিও কম যায় নি তারপরও কখনো কেউ কাউকে ছেড়ে যাইনি। কারণ আমাদের সম্পর্কে ভালোবাসা ছিল সত্যিকারে ভালোবাসা যেটা কখনো আমাদের দূরে যেতে দেয়নি। ”

আরশ ভাইয়া আরেকটু থেমে বললো,
“তোমার মনে আছে স্মৃতি যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হয় সেদিন শুধু আমাদের বন্ধুত্ব হয় তারপর একে অপরকে সব শেয়ার করা আস্তে আস্তে ভালোবাসা। আমি ফার্স্টে ভেবেছিলাম তোমাকে কথাটা বলবো কিভাবে? অনেক ভয় পাচ্ছিলাম যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি আসলে সেদিন ভুল ছিলাম সেদিন যদি সাহস নিয়ে না বলতাম তাহলে হয়তো আমাদের পথটাই আলাদা হতো। তাই আমার মনে হয় কেউ যদি কাউকে সত্যিকারে ভালোবাসে সেটা প্রকাশ করা উচিত জানো দেরী না হয়ে যায়।”

এইবার আরশ সোহার সামনে গিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি জানো সোহা আমার ভাইয়া একজন অমায়িক মানুষ যে মেয়েদের সবসময় সম্মান করেছে। বিচক্ষণতা দিয়ে সব কঠিন এমুহূর্ত গুলো নিকের আয়ত্তে এনেছে। ভাইয়া কখনো জোর-জবরদস্তির সম্পর্কে বিশ্বাসী ছিল না।ভালোবেসে কাছে টানায় বিশ্বাস করতো কারণ কেউ সত্যিকারে ভালোবেসে একবার কাছে আসলে কখনো ছেড়ে যায় না। ভার্সিটিতে কতো মেয়ে ভাইয়ার জন্য পাগল ছিলো।হাত পা কেটে একাকার অবস্থা কিন্তু ভাইয়া কখনো সেসব মেয়েদের দিকে কখনো ফিরেও তাকায়নি। চাইলেই এডভান্টেজ নিতে পারতো কিন্তু সেটাও করেনি। এডভান্টেজ তো দূর কাউকেই নিজের হাতটা ধরার ও সুযোগ কখনো কাউকে দেয়নি। সব ভালোবাসা শুধু নিজের বউয়ের জন্যই তুলে রেখেছে যাতে তার ভালোবাসায় কখনো কম না পড়ে। ”

আরশ ভাইয়র কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম হঠাৎ এসব কথা আমাকে বলছে কেন?কিছু সন্দেহ করেছে নাকি?আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।আরশ ভাইয়া আবার বললো,

“আমি কি বলছি বুঝতে পারছো সোহা।সব বুঝেও অবুঝ থেকো না। নিজের মনে যা আছে সব বলে দেও জীবনে তোমার জন্য ভালো কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে।বেষ্ট অব লাক। ”

আমি এখনও পলকহীন ভাবে আরশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া একটু হেসে বললো,
“যাইহোক কি বলে যে তোমাদের শুকরিয়া আদায় করব সোহা জানি না। তুমি আর ভাইয়া না থাকলে আজ আমাদের ভালোবাসায় পূর্ণতা হয়তো পেতোই না। থ্যাংক্স আ লট। ”

আমি হালকা হেসে বললাম,
“আমি আসছি তোমরা কথা বলো। ”

কথাটা বলেই আমি বেরিয়ে আসলাম রুম থেকে। বারবার আরশ ভাইয়ার বলা কথা গুলো আমার কানে বাজছে। আমার যে হ্যান্ডসাম বর সত্যিই যদি সময় থাকতে না বলে যদি শানকে হারিয়ে ফেলি। অন্যকেউ শানকে নিয়ে নেয় তখন কি হবে। ভাবতেই আতকে উঠলাম না না এমনটা কখনোই হবে না শানকে আমি ভালোবাসি ওকে হারাতে চাই না। ভালোবাসার কথা সবসময় ছেলেরাই আগে বলবে এটা তো কোনো নিয়ম না মেয়েরাও বলতে পারে আর সেটাই আমি করব।

রাতে খাওয়া দাওয়া করে আমরা বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু বাহিরে যেতেই শানের কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি। শান বাবা, মা, আরশকে আমরা যে গাড়িটা নিয়ে এসেছিলাম সেটাতে পাঠিয়ে দিলো। আর আমাকে যেতে দিলো না সাথে নিজেও দাঁড়িয়ে রইল। আমি রেগে বললাম,

“এটা কি হলো? এখন আমরা যাবো কিসে? ”
“অপেক্ষা করো দেখতেই পাবে। ”

বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শীতে কাপছি আর মশার কামড় খাচ্ছি। এতো রাগ হচ্ছে বলার বাহিরে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই দেখলাম ড্রাইবার আঙ্কেল আরেকটা গাড়ি নিয়ে আসছে। গাড়িটা আমাদের সামনে এসে দাঁড় করিয়ে চাবিটা উনার হাতে দিয়ে দিলো। উনি চাবিটা নিয়ে বললো,

“ধন্যবাদ আঙ্কেল এতটা হেল্প করার জন্য।”
“কি যে বলো না বাবা এটা তো আমার কাজই।”
“নো আঙ্কেল তারপরও আমার কথায় এতো রাতে এসেছো সেটাও বা কম কিসে। তুমি একটা টেক্সি ধরে চলে যাও। ”

শান উনার হাতে কিছু টাকা দিয়ে আমাকে নিয়ে গাড়ি কাছে এলেন। উনার কর্মকান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম উনি গাড়িতে উঠো বসে বললেন,
“কি হলো এখনো হা করে তাকিয়ে আছো কেন উঠো। ”
“আমরা তো ঐ গাড়িতেই সবাই মিলে যেতে পারতাম নতুন একটা গাড়ি আনার কি দরকার ছিলো। ”
“বলবো আগে গাড়িতে উঠে বসো লেইট হচ্ছে। ”

আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
“বলুন না ওদের সাথে না গিয়ে আলাদা কেন যাচ্ছি? ”
শান মুচকি হেসে বললো,
“কারণ আমরা বাড়িতে যাচ্ছি না। ”

উনার কথা শুনে আমি আশ্চর্য্য হলাম বাড়িতে যাচ্ছি না মানে? তাহলে এতো রাতে কোথায় যাচ্ছি আমারা?
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here