#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৫
#সুরাইয়া_নাজিফা
সকালে ঘুম থেকে উঠে শানের বুকের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। একদম শক্ত করে ধরে আছে যেন ছেড়ে দিলেই আমি পালিয়ে যাবো।আমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। কালকে অনেক রাতে ঘুমিয়েছে তাই উনাকে আর উঠালাম না। আস্তে আস্তে উনার হাতটা সরিয়ে বেড থেকে নেমে গেলাম। রোজকারের মতো ফ্রেস হয়ে ওনার জন্য কফি বানিয়ে আনলাম। এসে দেখি শান রুমে নেই। আমি একটু অবাক হলাম এতো সকালে গেল কই? আমি কফিটা রেখে পিছনে ঘুরতে যাবো তখনই শান পিছন থেকে আমাকে উনার দুই হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নিলেন। প্রথমে ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
“আপনি কি কখনো স্বাভাবিক মানুষের মতো আসতে পারেন না সবসময় ভয় পেয়ে যাই আপনার কাজে। ”
“এতদিনও আমার ছোঁয়া বুঝতে পারোনা তুমি?”
“সেটা কখন বললাম?আপনি এতক্ষন রুমে ছিলেন না এজন্যই ভয় পেয়েছি। ”
শান কপাল কুচকে বললো,
“তো তুমি কি ভেবেছো কেউ আমার বাড়ি আমার রুমে ডুকে আমার বউকে ছোঁয়ার সাহস রাখে? ”
আমি আমার মাথা নিচু করে রইলাম।শান আমার গাল টেনে বললো,
“সুইটহার্ট এমন স্টুপিডের মতো চিন্তা ভাবনা দূরে রাখো কেন ভাবো এসব। এটা মাথায় রাখ ইউ আর অনলি মাইন। দ্বিতীয় কারো সাহস নেই শানের জিনিসে হাত দেওয়ার তাই নিশ্চিতে থাকো। ”
উফ উনার মুখে এই সুইটহার্ট ডাকটা এতোটা মাতাল করা লাগে যে নিজেকে সামলাতে পারিনা মাঝে মাঝে। আমি নিজেকে উনার থেকে ছাড়ানোর জন্য বললাম,
“আচ্ছা বুঝেছি ছাড়ুন এবার আমাকে। ”
“কেন ছাড়ব? ”
“তাহলে কি এবাবে দাঁড়িয়ে থাকবো? “আমি উনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম।
“ওহ আমার সুইটহার্টের দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি সেটা আগে বলবে তো। ”
কথাটা বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি আঁতকে উঠে বললাম,
“আরে করছেন কি?”
“তোমার কষ্ট কমানোর চেষ্টা করছি। ”
উনি বেডে বসে আমাকে উনার কোলের উপর বসালেন।
“এবাবে কে কষ্ট কমায়? ”
“কে কি করে আমি কি করে জানবো আমি এবাবেই কমাই সেটা জানি। ”
কথাটা বলেই উনি আমার ঘাড়ে একটা লাভ বাইট দিলেন আমি একটু কুকিয়ে উঠে বললাম,
“আহ ব্যাথা পাচ্ছি আমি। ”
“স্যরি সুইটহার্ট ওয়েট এখনি ভালো করে দিচ্ছি। ”
কথাটা বলেই উনি আমার ব্যাথা পাওয়া জায়গায় উনার ঠোঁট ছোঁয়ালো। আমি কেঁপে উঠলাম,
“আ আমি য যাবো কাজ আছে। ”
উনি ভ্র কুচকে বললেন,
“আমি কাছে এলেই তোমার যত কাজ সব একসাথে চলে আসে?কালকে রাতে কি করেছিলে ভুলে গেছো? ”
উনার কথা শুনে আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম। চোখ বন্ধ করেই ধীর কন্ঠে বললাম,
“ওটা তো আমি দুষ্টমি করে করেছি। ”
“তাহলে আমিও আজ সব দুষ্টমি করে করবো। ”
আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“সব মানে?”
শান সোহার কানে কানে স্লো ভয়েসে বললো,
“ভাবছিলাম আমাদের ফুলসজ্জাটা সেড়ে নিলে কেমন হয়। ”
উনার কথাটা শুনে আমার হার্টবিট চলা মনে হয় বন্ধ হয়ে গেল। একটু একটু ভয় লাগতে লাগলো। উনি আমার হাতটা ধরে হাতে একটা চুমু দিলেন। আমার হাত পা ঠান্ডা বরফ হয়ে গেল উনার কথা শুনে।
হঠাৎ শান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হয়েছে সোহা? ”
আমি মাথানিচু করে রইলাম।উনি আমাকে ছেড়ে আমার থেকে খানিকটা দূরে সরে গেলেন আর খিলখিলিয়ে হেসে উঠলেন।হাসির আওয়াজ শুনে আমি মাথা তুলে তাকালাম।
শান বললো,
“রিলাক্স আমি মজা করছিলাম এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।দুষ্টমি কি শুধু তুমি একা করতে পারো নাকি। ”
উনার কথা শুনে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এতক্ষনে মনে হচ্ছে প্রাণ ফিরে পেয়েছি। আমি উঠে বসে পাশের টেবিলে রাখা উনার কফিটা এগিয়ে দিলাম,
“আপনার কফি। ”
শান কফিটা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে বললো,
“পড়তে বসো দ্রুত। ”
ব্যাস সকাল সকাল কথাটা বলে এতক্ষন হাসিখুশি থাকা আমার মনটাই খারাপ করে দিল। আমি উনাকে কফিটা দিয়ে রাগি দৃষ্টিতে একবার উনার দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে গিয়ে টেবিলে বসলাম। শান কফিটা মুখে দিয়ে একটু মুচকি হাসল।
“শোনো পরীক্ষার এই কয়দিন যেন তোমাকে রান্নাঘরে যেতে না দেখি মন দিয়ে পড়বে। ”
“কিন্তু….।”
“কোনো কিন্তু না যেটা বললাম সেটা মাথায় থাকে যেন। ”
উনি রেডি হয়ে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলেন অফিসে। উনি যাওয়ার কিছুক্ষন পর আমি চলে গেলাম তানিশার সাথে দেখা করতে।
★
★
শান কালকে আসেনি অফিস তাই আজকে প্রায় অনেক কাজ জমে গেছে। কাজ শুরু করার আগে একবার ডিজাইন সেকশনে গিয়ে ঘুরে আসবে ভাবল। ড্রেস ডিজাইনের কাজ কতটুকু হয়েছে সেটাও দেখা হবে আর তিমিরের সাথেও দেখা হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। তবে ডিজাইন সেকশনে নিয়ে দেখলাম তিমির এখনও আসেনি। বুঝলাম না তিমিরের হঠাৎ কি হলো তিনদিন ধরে অফিসে আসছে না। তখনই কেউ পিছনে হাত রাখল। শান পিছনে তাকাতেই দেখল তিমির দাঁড়িয়ে,
“কিরে এতোদিন পর কই ছিলি তুই? শরীর ঠিক আছে তো?”
“আরে হ্যাঁ শরীর ঠিক আছে। ”
“তো এতদিন আসিস নাই কেন?”
“একটা কাজ ছিল।”
“ওহ। তো নতুন প্রজেক্টের কাজ কতটুকু এগোলো। ”
“অলমোস্ট শেষ। ”
“ওকে গুড। আচ্ছা তুই কাজ কর পরে কথা হচ্ছে। ”
বলেই শান যেতে নিবে তখনই তিমির বললো,
“শান।”
তিমিরের ডাক শুনে শান ঘুরে তাকালো,
“কিরে কিছু বলবি?”
“হুম।”
“কি?”
তিমির কিছুটা ইতস্তত করে বললো,
“আসলে আমি…।”
“আরে ব্যাটা এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন মেয়েদের মতো জেন্ডার চেন্জ করছিস নাকি?”
কথাটা বলে শান হাসলো সাথে তিমিরও মুচকি হাসি উপহার দিল। শান আবারও বললো,
“কি হয়েছে বল?”
“আসলে শান আমি বিয়ে করে ফেলেছি। ”
শান হেসে বললো
“মজা করছিস?”
“না। ”
শান যেন ভিতর থেকে একটা ধাক্কা খেল পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
“ওহ কাকে বিয়ে করলি একবার জানালিও না। ”
“ঐশীকে। ”
শান প্রচন্ড অবাক হলো ঐশীকে তিমির বিয়ে করে নিলো। তিমির আর ঐশী ওর এতো কাছের বন্ধু হয়েও জানালো না। ঐশীর কথা নাহয় না ধরলাম কিন্তু তিমির।
তিমির শানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“স্যরি দোস্ত আমাকে ভুল বুঝিস না আসলে ঐশী এতো তাড়াহুড়া করছিলো। ও চায়নি আমাদের বিয়েটা কেউ জানুক। এমনকি ওর বাবাকেও জানায় নি। ”
শান একটু হাসল,
“সমস্যা নেই। তোর নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভ কামনা রইল। একটা কথা মাথায় রাখিস তুইও যেমন আমার ফ্রেন্ড ঐশীও তেমন আমার ফ্রেন্ড। ঐশী মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই অনেক একাকিত্বে, অবহেলায়, অসহায় ভাবে কাঁটিয়েছে ওর যেই হাত ধরেছিস সেই হাতটা কখনোই ছাড়িস না।”
শানের কথাটা শুনে তিমির হেসে শানকে আশ্বস্থ করলো “যে ও সারাজীবন ঐশীর খেয়াল রাখবে। ”
★
★
তানিশার বাসায় গিয়ে দেখি তানিশা বসে বসে গিলছে।আমি ওর পাশে বসে বললাম,
“ঐ নোট গুলা দে। ”
তানিশা খেতে খেতে বললো,
“চোখে দেখিস না খাচ্ছি খাওয়া শেষ হোক নিস। ”
আমি ওর চুল টেনে বললাম,
“রাক্ষসী পরে গিলিস এখন আমাকে নোট গুলো দে বাসায় যেতে হবে। ”
তানিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
“এইমাত্রই তো এলি এখনই যাবি কি বস খেয়ে গল্প করে যা। ”
“এতো সময় নেই পড়তে হবে কিছুই পড়িনি। ”
“আরে চাপ নিস না পড়া হয়ে যাবে। আগে বল বিয়ের পর জীবন কেমন কাঁটছে? ”
“আর কেমন কাঁটবে যেমন কাঁটার কথা। ”
“তো জিজুর সাথে প্রেম জমে ক্ষীর মনে হচ্ছে। ”
ওর কথা শুনে আমার সকালের কথা মনে পড়ে গেল।শানের কথা মাথায় আসতেই আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম।তবে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
“কিসের প্রেম উনার এতো সময় আছে নাকি সারাদিন শুধু কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। ”
কথা বলতে বলতে তানিশার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলাম তানিশা মুখ টিপে হাসছে। আমি ওর দিকে সরু চোখে তাকালাম ও নিজের হাসি থামিয়ে বললো,
“হুম আমাকে বলবি না যে সেটা বল তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কি কাজ নিয়ে থাকে। ”
ওর কথা শুনে আমি আমি চমকে উঠে বললাম,
“মানে? ”
তানিশা হেসে আমার চুল গুলো একটু সরিয়ে লাভ বাইটটাকে ইঙ্গিত করে বললো,
“তোর মানের উত্তর পেয়েছিস। ”
কথাটা বলেই আবার হাসতে লাগলো।লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে গেলো। ইশ এই লোকটার জন্য আমার মাথাটা সবজায়গায় কাঁটা যায়। একটু সামলে চললে কি ক্ষতি হয় উনার। রাক্ষস একটা কি করেছে আমার? আমি তাড়াতাড়ি চুল গুলো সামনে দিয়ে দাগটা ঢেকে দিলাম। আর আমতা আমতা করে বললাম,
“তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছুই না। ”
“শোন আমি বাচ্চা না যে কিছু বুঝব না। তবে আমি তোর জন্য খুব খুশি যে তুই ভাইয়াকে মেনে নিয়েছিস।যেমন ভাবে তোর বিয়েটা হলো আমি অনেক টেনশনে ছিলাম তোর জন্য। তুই অনেক লাকি বুঝলি যে শান ভাইয়ার মতো একজন জীবনসাথী জীবনে পেয়েছিস।যে তোকে সবসময় সব বিপদ আপদ থেকে ছায়াসঙ্গীর মতো সাথে থেকে আগলে রাখবে। ”
আমি তানিশার কথা শুনে অবাক হলাম ও এতো কথা জানলো কি করে? আর শানকেই বা ও কোথায় দেখেছে। আমি তানিশার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“তুই শানকে চিনিস কেমনে? ”
“ঐদিন দেখা হয়েছিল পার্টিতে তোকে নিতে এসেছিল। ”
ঐদিনের কথা উঠতেই আমার আবার মনে পড়ল যে ঐদিন আমার কি হয়েছিল যে এতোকিছু হয়ে গেল কিন্তু আমার সেদিন রাতের কোনো কথাই মনে নেই আমি তানিশাকে বললাম,
“আচ্ছা সেদিন রাতে আমার কি হয়েছিল?”
আমার কথা শুনে তানিশার হাসি মুখটা চুপসে গেল।কি বলবে এখন? কিছুতেই সেদিন রায়ান কি করতে চাইছিল সেটা বলা যাবে না। তানিশা আমতা আমতা করে বললো,
“কি হবে হয়তো ছাইপাশ কিছু খেয়ে নিয়েছিলি । ”
আমি একটু ভেবে বললাম,
“জুস ছাড়া আর তো কিছু খাইনি। ”
তানিশা কথা ঘুরানোর জন্য বললো,
“কি কথা নিয়ে বসে গেছিস কত আগের কথা বাদ দে না। যাই বলিস না কেন তোর বরটা কিন্তু অনেক সুন্দর আমি তো প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেছি। ”
আমি তানিশার মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,
“চুপ শয়তান মেয়ে ভুলেও এই চিন্তা মাথায় আনবি না। লজ্জা করেনা অন্যের বরের দিকে তাকাতে। একদম চোখ তুলে নেবো। ”
” বিয়ের পর তো দেখি গুন্ডি টাইপ হয়ে গেছিস। তাকাচ্ছি না বাবা তোর বরের দিকে আমার নিজের জীবনের মায়া আছে।”
আমি একটু হাসলাম তারপর বললাম,
“আচ্ছা রায়ান ভাইয়ার খবর কি? তোর জন্মদিনের পরে আর দেখলাম না। ”
তানিশা ভ্রু উচিয়ে বললাম,
“হঠাৎ ওর কথা জানতে চাইছিস। ”
“এমনি। ”
তানিশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“দেখবি কি করে। ভাইয়াকে চাচ্চু তার একসপ্তাহ পর বিয়ে দিয়ে লন্ডন পাঠিয়ে দিছে। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“বিয়ে করে নিয়েছে উনি? ”
তানিশা “হ্যাঁ সূচক “মাথা নাড়ালো।
আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো যাক অবশেষে পাগলটার মাথা থেকে আমার ভুতটা তো নেমেছে। যেভাবে পিছনে পড়ে ছিল। যাইহোক সবাই ভালো থাকুক সেটাই চাই। তারপর আমরা দুই বান্ধবী অনেক গল্প করলাম। কিছুটা সময় পর আমি ওর থেকে নোট গুলো নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
★
★
টানা দুই দিন মনোযোগ সহকারে পড়লাম। বাড়ির কেউই আমাকে ডিসটার্ভ করেনি।শানের কড়া নিষেধ যে কয়দিন আমার পরীক্ষা চলবে সেই কয়দিন যেনো কেউ আমাকে বিরক্ত না করে। এমনকি রান্নাঘরে যাওয়াও বন্ধ। খাওয়াটা পর্যন্ত আমাকে ঘরে দিয়ে যায়। শানের শুধু একটাই কথা ভালো রেজাল্ট করতে হবে। শান আমাকে একটা রুটিনের মধ্যে বেঁধে দিয়েছে। ঠিক সময় খাওয়া, ঠিক সময় মতো পড়া, ঠিক সময় মতো ঘুমানো। উনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে আমাকে সেগুলো ফলো করায়।
কালকে পড়া কমপ্লিট করে অনেক রাতে ঘুমিয়েছিলাম যার কারণে সকালে যেন ঘুম ভাঙতেই চাইছে না।
“সোহা উঠো জলদি কতো ঘুমাবে। ”
হঠাৎ কারো কন্ঠো শুনে একটু নড়ে উঠলাম কিন্তু ঘুম ভাঙলো না। শান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বেলা হয়ে যাচ্ছে এখন না উঠলে সোহা একটু পড়া রিভাইজ করতে পারবে না তাই শান আবার সোহাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে নিজের বুকের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে সোহাকে ডাকতে লাগলো,
“এই সোহা উঠো লেইট হচ্ছে তোমার। ”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“কেন বিরক্ত করছেন একটু ঘুমাই না প্লিজ। ”
“নো সুইটহার্ট এখন একদম ঘুমানোর সময় নেই জলদি উঠো তোমার না আজ পরীক্ষা। ”
“পরীক্ষা” কথাটা কানে প্রতিধ্বনিত হতেই আমি দ্রুত চোখ খুলে তাকালাম আর তাড়াহুড়া করে বললাম,
“কয়টা বাজে। ”
“বেশী না যাও গিয়ে পড়াটা একবার দেখে নেও তারপর ভার্সিটিতে চলে যেও। ”
আমি উঠে ফ্রেস হয়ে আবার পড়তে বসে গেলাম। পড়তে বসলে খাওয়া, রেডি হওয়া সব ভুলে যাই। শান আমার পাশে খাবার নিয়ে বসলো,
“দেখি খাবার খেয়ে নেও। ”
“সময় নেই পরে খাবো। ”
“তুমি পড় আমি খাইয়ে দিচ্ছি ওকে। ”
তারপর শান আমাকে খাইয়ে দিলো নিজে হাতে। তারপর বাচ্চাদের মতো আমাকে বসিয়ে চুল গুলোও বেঁধে দিলো। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
“আপনি এতো সুন্দর করে চুল বাঁধতে পারেন?”
“হুম। ”
আমি বইটা পাশে রেখে বললাম,
“আর কি কি পারেন বলেন তো। একটা মানুষের এতো গুন কেমনে থাকে? ”
উনি আমার নাক টেনে বললো,
“এতো তোমাকে ভাবতে হবে না। নিজের পড়ায় মন দেও। চলো আমাদের যেতে হবে। ”
“আপনি যাবেন এতো দূর? ”
“হুম। তোমার যে কদিন পরীক্ষা হবে আমি নিয়ে যাবো আর নিয়ে আসবো বুঝলে।”
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“আপনার অফিসের কি হবে?”
“কিছু না যে কয়দিন তোমার পরীক্ষা থাকবে আমি অফিসে যাবো না। । ”
আমি পলকহীন চোখে তাকিয়ে বললাম,
“আমার জন্য কেন নিজের বিজন্যাসের ক্ষতি করবেন।আমি যেটুকু জানি আজকে আপনার একটা মিটিং আছে। ”
শান ভ্রু কুচকে বললো,
“তাতে কি? তোমার থেকে বেশী আমার লাইফে কিছুই না তুমিই আমার সব বুঝেছো। এবার এতো না কথা বলে চলো। ”
উনার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে আসলো। আমি উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।সবাই ঠিকই বলে আমি অনেক ভাগ্যবতী যে উনাকে জীবনে পেয়েছি। শান আমার কানে কানে বললো,
“আমি একটু রোমান্স করতে চাইলেই কাজ কাজ করো আর নিজে যখন এমন করো তখন। এখন আমি যদি কিছু করি তাহলেই আমাকে খারাপ বলবে।”
উনার কথা শুনে আমি একটু মুচকি হেসে উনার থেকে দূরে সরে এলাম আর সামনে এগিয়ে বললাম,
“চলুন। ”
প্রায় দুইঘন্টা পর আমরা ভার্সিটিতে এসে পৌঁছালাম। শহর থেকে প্রতিদিন c.u তে আসাটা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। গাড়ি ভার্সিটিতে এসে পৌঁছাতে আমি নামতে যাবো তখনই শান আমার হাত টেনে ধরল,
“আমাকে বাই বললে না। ”
আমি জিভে কামড় দিয়ে বললাম,
“উফ স্যরি একটুও মনে ছিল না। আচ্ছা বাই। ”
“এবাবে বাই বললে হবে না। ”
আমি চমকে বললাম,
“তাহলে কিভাবে বলবো? ”
উনি আমাকে উনার কাছে টেনে নিলেন তারপর আমার দুই গালে চুমু দিয়ে কপালে একটা চুমু দিলেন। আমি চোখ বন্ধ করে উনার শার্ট খাঁমচে ধরলাম।
“এইবার যাও বেস্ট অব লাক। ”
উনি আমাকে ছাড়তেই আমি মুচকি হেসে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে ফ্যাকাল্টির ভিতর চলে গেলাম। যে কয়দিন পরীক্ষা চলেছে এই নিয়মই কন্টিনিউয়াসলি চলেছে।উনি নিয়ে আসে আবার নিয়ে যায়। প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে।এজন্য তানিশা আর সৃজনও আমার পিছনে লাগা ছাড়ে না।কিন্তু আমার কখনো এতোটুকুও রাগ হয়না বরং ভিষন ভালো লাগে যে আমার কেউ একজন আছে যে আমাকে এতোটা ভালোবাসে। প্রতিদিন শান যত্ন করে খাইয়ে দেওয়া,চুল বেধে দেওয়া, সময় মতো ডেকে তোলা,একদম বাচ্চাদের মতো আমার যত্ন করাটা শানের প্রতি আমার ভালোবাসাটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিলো দিন দিন।
আজকে সোহার পরীক্ষা শেষ। শান প্রায় চারঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে। এখনি সোহার আসার কথা। তাই শান গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। শান দাঁড়িয়ে আছে আশেপাশে বেশ সবকটা মেয়েই হা করে তাকিয়ে আছে শানের দিকে। এই কয়দিন ধরে এসবই দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে গেছে শান। তবে শান না দেখার ভান করে আজও অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কেউ একজন এসে শানের কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠলো শান।
“ঐশী তুমি এখানে?”
ঐশী হেসে বললো,
“হুম। তুমি এমন মুখ লুকাচ্ছো কেন? ভার্সিটির সব মেয়ের নজর তো তোমার দিকে একবার দেখো। ”
শান বিরক্ত হয়ে বললো,
“ধুর আর বলো না। এসব বাদ দেও আগে বলো তুমি এখানে কেন? ”
“আমার কাজিন এখানে পড়ে ওর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম তুমি এখানে কেন সোহার জন্য বুঝি?”
শান হেসে বললো,
“হ্যাঁ।”
ঐশী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“কেমন আছো? ”
“ভালো। বাট তোমার থেকে এটা আমি আশা করি নি। ”
শানের কথা শুনে ভয় পেলো ঐশী,
“কি করেছি আমি? ”
“তুমি বিয়ে করেছো অথচ জানাও নি কেন?”
ঐশী হেসে বললো,
“ওহ। এমনি ভালো লাগে না এতো মানুষকে জানাতে। যারা সারাজীবন একসাথে থাকবে তারা দুজন দুজনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকলেই হলো এতো মানুষ জানিয়ে কি হবে। তা তোমাকে কে বললো তিমির?”
“হুম। যাইহোক কনগ্রাচুলেশন। ”
কথাটা বলেই আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম ঐশীও মুচকি হেসে আমার হাত ধরল।
আজকে এক্সাম শেষে বের হতে হতে একটু লেইট হয়ে গেছিল। পরীক্ষা শেষ দেখে আজকে ক্লাসের সবাই মিলে ঘুরতে যাবে আমাকেও যেতে বলেছিল কিন্তু আমি কোনোমতে বুঝিয়ে শুনিয়ে দৌড়ে চলে এলাম। জানি না শান কি বলবে। আজকে কতটা সময় অপেক্ষা করতে হলো। ভাবতে ভাবতেই দ্রুত গাড়ির কাছে এসে শান আর ঐশী হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি থমকে গেলাম।
.
.
চলবে
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।