এক_বিন্দু_আশা পর্ব ২

এক_বিন্দু_আশা পর্ব ২
#লেখক:আর আহমেদ

-সত্যি বলছি শাহাদাত ভাইয়া, আজ যদি নিজের কোথাও যাওয়ার থাকতো আমি কখনই এরকম বাড়িতে থাকতাম না। আচ্ছা,আমি চলে গেলে আপনি সুখি হবেন? ভালো থাকবেন তো আপনি?

-সুখি মানে? প্রান খুলে বাঁচতে পারবো। বেরো তুই।

উত্তরে খিলখিল করে হেসে ওঠে রুবা। বলে,

-এত সুখ সইবে?

মুখে আগুন ছুটতে লাগলো শাহাদতের। রুবা জিজ্ঞেসু হয়ে দাড়িয়ে। শাহাদত আচমকা রুবার হাত খামচে নেয়। মুখ ঘেমে উঠেছে। টানতে টানতে নিয়ে যায় রুবাকে শাহাদত। রুবার হাটতে কষ্ট হচ্ছে, রগ দপদপ করছে। ব্যাথায় মনে হচ্ছে পা তছনছ হয়ে যাচ্ছে।শাহাদত টেনে নিয়ে যায় ড্রইংরুমে। সবাই সবার ঘরে চলে গেছে। আর সইতে না পেরে রুবা এক ছিটকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

-কি মনে করেন নিজেকে? ছাড়ুন আমায়।

শাহাদত যথাসম্ভব নিজেকে সংযত করতে ব্যাস্ত! রুবা আবার বলে,

-আমি চলে যাব! সত্যি বলছি চলে যাব আমি। ঘার ধাক্কা দেয়ার দরকার নেই।

তন্মিও নিচে নেমে আসে। দূর থেকে দাড়িয়ে দেখে শুধু। সে এসেছে তার মতলবে। এ পুরো বাড়ি আত্মসাত করতে। শাহাদাত একটা খেলার গুটি মাত্র!

রুবা খোড়াতে খোড়াতে দরজার সামনে হেটে যায়। আস্তে করে সদর দরজা খুলে একবার পেছনে তাকায়। শাহাদত উল্টো ফিরে ফুসছে। বুকে আগুনজ্বলে ওঠে রুবার। চোখ দিয়ে গড়াতে থাকে অজস্র পানি। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুবা।

তন্মি উপর থেকে ডাক ছোড়ে,

-বেবি শাঁকচুন্নিটা চলে গেছে, নাও ইউ কাম প্লিজ।

শাহাদত একবার উপরে তাকায়। ডাক শুনে নেমে আসেন ইরফান আর ওনার স্ত্রী। তন্মিকে দেখেই চোখ বুজে নেন ইরফান। যা হওয়ার তাই হয়েছে। অন্যায়টা হলো শুধু রুবার বেলায়। কিন্তু অত সহজে আজ ছারা যাবে না। আজ শাহাদাত যা করেছে তার জন্য শাস্তি প্রাপ্য। তিনি নেমে আসেন নিচে। পাথরমূর্তির মতো দাড়িয়ে শাহাদত। সামনে এসেই কষে চড় বসিয়ে দেন। আচমকা এমন হওয়ায় পিছিয়ে যায় শাহাদত। ইরফান কড়া গলায় বলে,

-যে মেয়েটার জন্য আজ তুই বেচে আছিস তাকে রেখে তুই দ্বিতীয় বিয়ে করলি? লজ্জা করেনা? ছিহ্, তোকে আমার ছেলে বলতেও ঘৃনা হয় শাহাদত। কত নিচু মনমানসিকতা তোর।

ঘার তুলে তাকায় শাহাদত। প্রথম লাইন কানে বাজছে তার। এর মানে? আমি ওই নোলা মেয়েটার জন্য বেঁচে আছি মানে কি? প্রশ্ন আসে শাহাদতের মাথায়। শাহাদাত অকপটে বলে,

-এসব কি বলছো তুমি?

-যা বলছি ঠিকিই বলছি! সেদিন ট্রাকের নিচে পড়তে যাচ্ছিলি তুই, নিজের জিবন বাজি রেখে তোকে বাঁচায় রুবা। যার ফল ওর এক পা নষ্ট। আজ তুই যা করলি, এর জন্য একদিন পস্তাবি। আমি তোর বাপ হয়ে বলছি যাকে বিয়ে করেছিস সুখী হওয়ার জন্য সেই তোকে বুকভরা কষ্ট দিয়ে ফেরাবে বলেদিলাম। রুবা কই?

শাহাদতের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে৷ সে ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছে রুবা ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট হওয়ায় ওর পা এমন। কিন্তু তা যে শাহাদকে বাঁচাতে, বুক মোচড় দেয় শাহাদতের। তোলপাড় করা যান্ত্রনা ছিড়ে নেয় বুক! ইরফান নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে চেচিয়ে বলে,

-শাহাদাত, রুবা কোথায়!

অস্ফুটস্বরে বলে শাহাদত,

-চলে গেছে। বের করে দিয়েছি আমি!

ইরফান ক্রোধে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। হাত মুঠো করে রক্তচক্ষু দেখিয়ে বেড়িয়ে যায় বাইরে। মাটিতে ঠেস দিয়ে বসে পড়ে শাহাদত। উপর থেকে সবটা খেয়াল করেও কিছু বললেন না শাহাদতের মা।

_______

রিকশায় বসে আছে রুবা। সে এখন কোথায় যাবে? এই পায়ের জন্য তাকে আজ সবাজ কতই না কষ্ট দিচ্ছে। বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে তাকায়। নিজের বাড়ি দেখতেই রুবা রিকসাওয়ালাকে ডাক দেয়,

-দাড়ান চাচা। আমি এখানেই নামবো।

রিকসা দাড়ায়। রুবা ভারা মিটিয়ে একপা একপা করে এগোয়। কলিংবেল বাজাতেই দোর খুলে দেন রুবার ভাই। সে তখন টিভি দেখছিলো।

-আপু তুই? এত রাতে?

-আব্বু কোথায়?

-ঘরে।

-একবার ডাকবি?

-দাড়া।

সবুজ ছুটে যায় ডান দিকে। রুবা সৃষ্টিকর্তার কাছে চোখ বুজে চায়,যেন তাকে ফিরতে না হয়। এ নিয়ে রুবা তিনবার এসেছে। কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েছেন আশিকুর।কিছুক্ষণের মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে আসেন আশিকুর। দরজায় রুবাকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,

-তুমি এখন, এখানে?

-ও বাড়ি থেকে আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে।

-কি করেছো তুমি!

-সুন্দরী স্ত্রী নই বলে…

মুখের সামনে দরজা লাগিয়ে দিলেন আশিকুর। ভেতর থেকে তা দেখে রহিমা ছুটে এসে পা জড়িয়ে নেয়। হু হু করে কেঁদে ওঠেন,

-কি করছেন? মেয়ে এখন কই যাবে? এমন করবেন না!

-ছাড়ো আমায়। ওর জায়গা হবে না এখানে!

দরজার ওপাড় থেকে রুবা কান্নাজড়িত চিৎকার,

-সুন্দরী না হওয়া আমার দোষ! পা খারাপ এটাও আমার দোষ। শাহাদাত ভাইয়া আরেকটা বিয়ে করে আনলো তাতেও দোষ আমার! চলে যাচ্ছি আমি। একটা মেয়েকে এমন কোলঠাসা করে কেউ ভালো থাকতে পারবে না। চলে যাচ্ছি!

শুনে পিলে চমকে ওঠে আশিকুরের। আরেকটা বিয়ে করেছে মানে? এ নিয়ে রুবা তিনবার এসেছে। কিন্তু প্রত্যেকবার ফিরিয়ে দিলেই সে মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু শাহাদাত আরেকটা বিয়ে করেছে শুনেই তিনি তড়িৎ গতিতে দরজা খোলেন। ওপাড়ে আর পাওয়া গেলো না রুবাকে। ততক্ষণে সে চলে গেছে। কোথাও আর পাওয়া গেলো না তাকে!

এভাবেই কেটে গেলো তিন বছর…

#চলবে..

[আর একটি পর্ব পাবেন। স্যাড ইন্ডিং দিব না ইনশাআল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here