এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২ #লেখিকা- কায়ানাত আফরিন #পর্ব – ৩

#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা- কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৩
-‘ অফকোর্স বেইব। লিভ টুগেদার জিনিসটা ইন্টেরেস্টিং হবে, তখন তোমায় আর লুকিয়ে লুকিয়ে আমার রুমে আসতে হবে না। তুমি তখন চাইলে তখন লাফালাফি-দাপাদাপি এন্ড চাইলে আমায় কিসও করতে পারবে। আই ডোন্ট মাইন্ড!’

আমার মাথা রীতিমতো চক্কর দিয়ে উঠলো উনার কথায়।লিভ টুগেদার। লাইক সিরিয়াসলি? সাথে সাথেই আমি বলে ওঠলাম,

-‘ অসম্ভব। ‘

-‘ তাহলে কি বিয়ে করতে চাও নাকি?’

উনি ভ্রু নাচিয়ে কথাগুলো বলতেই আমি বোকা বনে গেলাম। এতটুকু সিউর হয়েছি যে উনি আনায় এখানে তুলে নিয়ে এসেছেন অন্যকোনো কারনে। বাচ্চার মা হওয়ার অভিনয়, আমাকে কষ্ট দেওয়ার এগুলো সব ছিলো উনার আমাকে তুলে নিয়ে আসার বাহানা যা সকালে নাহিদ ভাইয়ার কথায় এখন উনার অস্বাভাবিক আচরণ স্পষ্ট টের পেলাম। আমি সাথে সাথে বলে ওঠলাম,

-‘ বুলশিট কথা বন্ধ করুন। আপনার এত ক্যারেক্টার দেখে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি আমি। আর যাই হোক, আপনি আমাকে তুলে নিয়ে এসেছেন অন্যকোনো কারনে। আর সেই কারনটা কি একটু স্পষ্ট করে বলবেন?’

আনভীর হাসলেন কিঞ্চিত। নিজের এলোমেলো চুলগুলো আর একটু এলোমেলো করে বলে ওঠলেন,

– টু মাচ স্মার্ট ইউ আর, আহি।

– সেটার বর্ননা আপনার কাছে শুনতে হবে না। এখানে আমায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্য কি?

উনি আমাতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন এবার। বলে ওঠলেন,

– দুটো কারনে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনটা বলবো আগে?

উনার বাচ্চামো কথায় গা শিরশির করে ওঠলো আমার। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

– দুটোই।

– ফাইন, তোমায় এখানে নিয়ে আসার প্রথম কারন হলো তোমারই বড় বোন রাহি। সিক্রেট এজেন্ট হয়েছে ভালো কথা, মেয়েটা আমার পিছে লেগেছে কেনো? ওর সাহসিকতার কথা এর আগেও বহুবার শুনেছি আমি। বেশ কয়েকবারই বড় বড় নামী-দামী ব্যাক্তিদের সব কালোকর্ম ফাঁস করে দিয়েছে। যেটার সাপোর্ট অবশ্যই করবো আমি৷ বাট তারপর ও যা করেছে সেটার সাথে কখনোই আমি একমত নই।

-ক…ক…কি করেছে আপু?

আনভীর হাসলেন। বলে ওঠলেন,

-আমার ফ্যামিলির পিছে লেগেছে। আমার অতীত, আমার ফ্যামিলি সবকিছু মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে রাহি।

অবাক হলাম আমি। কেননা, এটা সত্য উনি অনেক বড় মাপের একজন সেলিব্রিটি হলেও একটা সাংবাদিকও উনার ফ্যামিলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বের করতে পারেননি। উনারা দুই ভাই। বড় ভাই বাবার সাথেই থাকেন বিজনেসজনিত কারনে। কিন্ত উনার মা কোথায় থাকেন বা এখনও বেঁচে আছেন কি না, বা উনার বাবা ইমতিয়াজ রেজওয়ান এর সাথে উনার মায়ের ডিভোর্স হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে উনি কখনোই মিডিয়ার সামনে কোনো কিছু প্রকাশ করেননি। স্পষ্ট আন্দাজ করা যায় যে উনার ফ্যামিলির সাথে উনার সম্পর্ক তেমন ভালো না। নাহলে উনারা এখানে থাকলে একটা মেয়েকে এভাবে তুলে নিয়ে আসতে কখনোই এলাও করতেন না ।

আনভীর আবার বললেন,

– রাহির কাছে একটা পেনড্রাইভ আছে আমার খুবই পার্সোনাল কয়েকটা ইনফরমেশনের। সেটা আমি ফেরত চাই। ওর ঠিকানা আমি জানি তবে সেখান থেকে ওকে আনার একমাত্র হাতিয়ার হলে তুমি। তাইতো তোমায় তুলে নিয়ে এলাম।’

– মানে আমায় ইউজ করে রাহি আপুকে আপনি ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছেন?’

– উমমম……ধরতে পারো। কারন আমি চাইনা ওই পেনড্রাইভটা আন্ডারকভার এজেন্সির হাতে পড়ুক।

উনার প্রতি সন্দেহটা আরও তীব্র হলো আমার। জিজ্ঞেস করলাম

– কি আছে ওই পেনড্রাইভটাতে?

-‘ আছে। খুবই বিশেষ একটা কিছু। যা আমি প্রকাশ করতে চাইনা। আর যে জিনিসটাতে তুমি জড়িয়ে আছো সেটা তো আরও না।’

উনার এই কথাটা রহস্যের বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেললো আমায়। আমি এবার প্রশ্ন করলাম,

-আর দ্বিতীয় কারনটি কি?

আনভীর পকেটে হাত গুঁজে নির্বিকারভাবে বলে ওঠলেন,

-আমি চাই না যে তুমি কারও কাঠের পুতুল হয়ে থাকো। তোমার ওই স্টুপিট চাচা-চাচি , অপূর্ব আর রাহির হাতের পুতুল তো একদমই না।

দু’কদম পেছালাম আমি। কেননা আমি এটাও ভাবতে পারিনি যে রাহি আপুর সাথে সাথে উনি অপূর্ব ভাইয়া আর চাচু-চাচির কথাও জেনে যাবেন। মা’কে ছোটোবেলাতেই হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি। আমার বাবা কোথায়, তাও আমি জানিনা। চাচি শুধু এটাই বলতো যে আমার জন্য নাকি মা চলে গিয়েছে , তাই বাবা আমায় দেখতে চান না। আমি বড় হয়েছি চাচুর কাছেই, আর রাহি আপু বাবার কাছে থাকতো, পরবর্তীতে রাহি আপু আমার সাথে থাকতে শুরু করে। আর অপূর্ব ভাইয়া? ওই মানুষটার কথা আর নাহয় না-ই বললাম। কিন্ত প্রশ্নের জট লেগেছে আমার মনে। রাহি আপুর ব্যাপারে জানা পর্যন্ত তো ঠিক ছিলো। কিন্ত উনি আমার অতীত সম্পর্কে এতকিছু জানেন কিভাবে? আমার তো মনে পড়ছেনা যে আমি কোনোদিন উনাকে আমার পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে এতকিছু বলেছিলাম?

আমি ভীতসতস্ত্র চোখে তাকালাম উনার দিক। বলে ওঠলাম,

-‘ আমার অতীত সম্পর্কে অনেক বেশিই জানেন আপনি আনভীর।’

আনভীর হাসলেন। বলে ওঠলেন,

-‘ আমায় এআরকে বলে ডেকো না তো আর! তোমার মুখে আনভীর নামটাই স্যুট করে। এন্ড আই লাইক ইট! তো কি বলছিলে জানি তুমি? আমি তোমার অতীত সম্পর্কে অনেককিছুই জানি তাইতো? হ্যাঁ জামি। তুমি যা জানো , তার থেকেও অনেক বেশি জানি তোমার সম্পর্কে। ‘

আমি কথা বলালাম না এ ব্যাপারে। মানুষটাকে প্রচন্ড রহস্যময় লাগছে আমায়। উনি যেনো এটাও বুঝে গেলেন। বললেন,

-‘ আমায় রহস্যময় লাগছে তাইতো?’

আমি নিশ্চুপ।

-‘ উমমম্, তোমার রহস্যময়তা তো তাহলে দূর করতে হয়। সিম্পলভাবে তোমায় দ্বিতীয় কারনটা বুঝাই। আমি চাই তুমি তোমার চাচি-চাচু আর ওই অপূর্ব থেকে দশহাত দূরে থাকো। সেই সাথে রাহি থেকেও। তোমায় ইউজ করে রাহিকে খুঁজে বের করবো আমি ঠিকই তবে কখনোই তোমায় ওর কাছে যেতে দিবো না। আর তাই তোমায় ছোট্ট একটা শর্তে রাজি হতে হবে।’

-‘ক…কি শর্ত?’

-ওইযে নাহিদ তখন বললো না, আমার বেবির মা হওয়ার অভিনয়। সিম্পল টাস্ক। আমার সো কল্ড ফ্যামিলি চাচ্ছে যে উনার এক পরিচিত একজনের সাথে আমার বিয়ে করিয়ে দিতে। বাট আমি ইন্টেরেস্টেড না। আমার বাবা তো বাবাই। যে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য ছেলেকে মিডিয়াতে ঠেলে দিতে পারে, সে ছেলেকে বিক্রি করতেও দু’বার ভাববে না। আর বিয়ের ধারে কাছেও থাকতে চাই না আমি। তাই ছোট্ট একটা অভিনয় করতে হবে তোমায়। আমার বাবা-আমার ভাই আর ভাবিকে বলতে হবে যে তুমি ম্যারিড এন্ড আমি তোমার হাজবেন্ড। তোমার গর্ভে আমার সন্তানও আছে। তাহলে বাবা আর এগোতে সাহস পাবে না। বাকিসব আমি ম্যানেজ করবো। ‘

মানুষটার কথাগুলো শুনে ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছি আমি। বললাম,

-মাথার তার নির্ঘাত ছিড়ে গিয়েছে আপনার আনভীর। আপনার কি মনে হয়, আমি যে প্রেগনেন্ট না এ সত্যটা উনারা ক’দিন পর জেনে যাবেন না? আর আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি আপনার শর্তে রাজি হবো?

-‘তোমার কাছে আর কোনো চয়েস নেই আহি। হয়তো হ্যাঁ বলো, নয়তো এভাবেই আমার কাছে বন্দী থাকো। কারন এই টাস্কটা তোমাকেই সম্পূর্ণ করতে হবে।

-‘কিন্ত আমিই কেনো? আপনি যেভাবে কথা বলছেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আমার সবকিছু জানেন আপনি। তাহলে এটাও তো জানার কথা যে আমি অপূর্ব ভাইয়ার……….’

-‘ফিওন্সে, তাই তো?’

আমি মাথা নাড়ালাম। উনি বললেন,

-‘অপূর্ব সাথে তোমার যা আছে সবই জোড়পূর্বক। ইভেন ওর সাথে তোমার এনগেজমেন্টও হয়েছে জোরপূর্বক। এমন একটা মানুষের সাথে আমি তোমায় থাকতে দিবো? জাস্ট ইম্পসিবল! লিসেন, আমার দেওয়া টাস্কটা তোমায় করতে হবে মানে করতেই হবে। এন্ড সি, এটাই তোমায় নিয়ে আসার মুখ্য উদ্দেশ্য।’

-‘ তাহলে আপনিও শুনে রাখুন। আমি এই শর্তে কখনোই রাজি হতে পারবো না। অপূর্ব ভাইয়াকে আপনি ভয় না পেলেও ভয় পাই আমি। আমি জানি, ওই মানুষরূপী পিশাচগুলো আমার কিশোরকালটা কিভাবে জাহান্নাম বানিয়েছে মা মারা যাওয়ার পর। তাই বলছি প্লিজ! যেতে দিন আমায়। আমি হ্যাপি আছি, আনন্দে আছি। আমায় যে অপূর্ব ভাইয়া মেডিক্যালে পড়তে দিয়েছে এটাই আমার জন্য অনেক। আমার ইন্টার্নশিপ কমপ্লিট। এখন একজনের সুপারিশে এসিসট্যান্ট ডক্টর হিসেবে হসপিটালে জয়েন হচ্ছি। আমি চাইনা যে আপনার জন্য আমার এই স্বপ্নটুকু চুরমার হয়ে যাক। ‘

উনি নির্বিকারভাবে বললেন,

-তো আমি কি বলেছি তোমার স্বপ্ন পূরণ হবেনা? তুমি জাস্ট আমার শর্তে রাজি হয়ে যাও। আগের মতোই ফ্রিডম পাবে তুমি। আর বারবার যেতে দিন , যেতে দিন এসব কি? এখন তো আমরা লিভ ইন করতে চলছি তাই না?

বলেই দুষ্টু হেসে এগিয়ে আসতে থাকলেন আমার দিকে। উনার এমন চাউনি দেখে ভড়কে গেলাম আমি। পেছাতে থাকলাম আস্তে করে। বললাম,

– ‘এভাবে…এভাবে এগোচ্ছেন কেনো আপনি আনভীর?’

-‘ এটা আমার রুম, আমি চাইলে যা খুশি করতে পারি, এগোতেও পারি, আবার পেছাতেও পারি। তোমার কি?’

থামলেন না উনি। আমি অস্বস্তি সুরে বললাম,

-‘ দ…দেখুন, কাছে আসবেন না প্লিজ!’

-‘ উফফ! বারবার এসব যেতে দিন, কাছে আসবেন না বলো না তো? তুমিই তো মাত্র বললেন যে তুমি আমার শর্তে রাজি হবে না? তাহলে সেটাকে নাহয় বাস্তবেই রূপান্তর করি?

-‘ দ…দেখুন….’

-‘ পেছাতে থাকো বেবিগার্ল! আমিও দেখতে চাই তুমি কতকক্ষণ আমার শর্তে রাজি না হয়ে থাকতে পারো।’

উনার মুখে ‘ বেবিগার্ল’ ডাকটি শুনে রাগে গা রীতিমতো শিরশির করছে আমার। একপর্যায়ে উনি একেবারেই কাছাকাছি এসে পড়লেন উনি। দুষ্টু হেসে জগিং আউটফিটের চেন খোলায় হাত দিতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। সাথে সাথেই বলে ওঠলাম,

-‘ আমি…..আমি রাজি আছি আপনার শর্তে আনভীর। প্লিজ এবার দূরে সরুন।’

উনি হেসে নিজের আউটফিটের চেন পুরোটাই খুলে ফেললেন৷ বললেন,

-‘ ভয় পেও না। এমন কিছুই করবো না তোমার সাথে। আমি তো জাস্ট দেখতে চেয়েছিলাম যে….’

বলেই ঠোঁট কামড়ালেন উনি। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠলেন,

-‘ ডার্টি মাইন্ডেড বেবিগার্ল! ‘
.
.
.
.
~চলবে…..ইনশাআল্লাহ!

গল্পটায় আনভীর ক্যারেক্টার নিয়ে অনেকটাই কনফিউজড সবাই। সিজন ১ এর কনফিউশন থেকেও হয়তো অনেক বেশি। তাদের সবার উদ্দেশ্যেই বলছি, সব ক্লিয়ার হবে। তবে তা হবে একটু সময় নিয়ে। এক পর্বে এসব কিছুই ক্লিয়ার করা সম্ভব না। একে একে বাকি চরিত্রগুলোও তুলে ধরবো আগামী পর্বগুলোতে। তাই ধৈর্য নিয়ে পড়ার অনুরোধ থাকবে। আপনাদের নিরাশ করবো না ইনশাআল্লাহ।

ভুলক্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here