এমনও প্রেম হয় পর্ব:-১

0
3452

#এমনও_প্রেম_হয়
#লেখা__ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-১

আমি ফুলে ফুলে সাজানো বাসর ঘরে আধা হাত ঘোমটা টেনে বসে আছি আর নোনা জলে বুক ভাসাচ্ছি।

মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছি একজনকে আর বিয়ে হয়ে বাসর ঘরে বসে আছি অন্য কারো জন্য।

সবই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।

আমার যার সাথে বিয়ে হইছে, তার নাম উদয় আহসান।

সে এখনও ঘরে আসেনি। আমি ঘোমটার ভিতরে কেঁদে কেঁদে নিজের দুর্ভাগ্যের কথাই ভাবছি_____

আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দেয়া হইছে।

আমি একজনকে ভীষন ভালবাসতাম। সে কানাডা গেছে হায়ার স্টাডিজের জন্য।

তার অবর্তমানে আমার বিয়ে হয়ে গেলো সম্পূর্ণ অজানা অচেনা একজন মানুষের সাথে।

এখানে আমার কিছুই করার ছিলো না। আমি সম্পূর্ন বেকায়দা একটা পরিস্থিতির স্বীকার। জীবন বাজী রেখেও ঠেকাতে পারিনি এই বিয়ে।

চলুন একটু অতীতে ফিরে দেখি___

আমার নাম লিয়া।
আমি ক্লাস টেন এ পড়ি।

সবার ভাষ্যমতে আমি বেশ সুন্দরী, দেখতে অনেক সুইট। চঞ্চলা চপলা ষোড়শী কন্যা।

বয়স ষোলো,
স্বাস্থ্য ভালো। পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি উচ্চতা। হাসলে গালে টোল পড়ে। থুতনির ঠিক মাঝ বরাবর টোলের মত ছোট্ট গর্ত। উপরের ঠোট ডান পাশে ছোট্ট একটা কালো তিল। আর আছে একটা গেজ দাত।
হাসলে গেজ দাত বেরিয়ে পড়ে তাতে খুব মিষ্টি দেখায়।
এতে করে চেহারায় আলাদা বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে।

ঢাকার ধানমন্ডিতে আমাদের বাসা। একটা ভালো স্কুলে পড়ি।

আমাদের বাসা আর স্কুলের দূরত্ব খুব বেশি না, ওয়াকিং ডিসটেন্স এ ছিল তাই
পায়ে হেঁটেই স্কুলে যেতাম।

স্কুল টাইমে যাতায়াতের রাস্তায় অনেক ছেলেরা কোন দোকানে, না হয় কোন ফাস্ট ফুডের দোকানে, না হয় কোন লাইব্রেরীতে বসে থাকতো।

কিছু ছেলে খুব ফালতু টাইপের ছিলো। সেই ছেলেগুলি মেয়েদের দেখে শিস দিতো, গান গাইতো। আবার কারো চোখে চোখ পড়তেই, চোখ মারতো, চুমু দেওয়ার মতো করে ঠোঁট পাউট করতো।

কোন মেয়ে বুকের সাথে ব্যাগ ধরে হেঁটে যেতো তখন সেটা দেখে দুষ্ট ছেলেগুলি বলতো, আহারে যদি ঐ ব্যাগটা হতে পারতাম। তাহলে বুকের সাথে মিশে থেকে উষ্ণতা নিতে পারতাম।

এইসব কথা শুনে লজ্জায় রাঙা হতাম। কান গরম হয়ে যেতো। গায়ে কাপুনি ধরত। কিছুটা রাগও হতো।

বিরক্ত লাগতো, লজ্জা লাগতো রাগ হতাম কখনো কখনো। তেরে যেতাম ঝগড়া করতে ওই মেয়ের পক্ষ হয়ে।
তখন কোন ছেলে মাথা নিচু করে থাকতো আবার কেউ জবাব দিতো। বলতো তোমাকে তো বলিনি, তোমার লাগে কেন?

এক কথায় দুই কথায় ঝগড়া বেধে গিয়ে লোক জড়ো হয়ে যেতো।
শেষে কেউ মধ্যস্থতা করে থামিয়ে দিতো আর ওই ছেলে গুলির দোকানে বসা বন্ধ হয়ে যেতো।

কয়দিন দোকানে ভিড় করা অফ থাকতো। আবার কদিন গেলেই এসে ভিড় জমাতো।

কোন ভালো কাজের জন্য কারো পক্ষে দাড়াতে পারলে কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করতো মনের ভিতর।

সব ছেলে খারাপ তেমনটা না, কেউ কেউ ছিলো খুব ভদ্র টাইপের ছেলে।

সেই ভদ্র ছেলেগুলিকে কোনদিন না দেখলে মন খারাপ হয়ে যেত।

এই মন খারাপের কিন্তু কোন কারণ ছিলো না। এখানে কারো সাথে কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিল না।

এটাকেই হয় তো বলে বয়সের দোষ।

ক্লাসে এইসব নিয়ে বান্ধবীদের সাথে অনেক হাসি ঠাট্টা করতাম। এনিয়ে সবাই খুব মজা করতাম।
জুটি করে দিয়ে মজা করতাম, যে ছেলেটাকে যার পছন্দ হতো তার সাথে।

ক্লাসে এসেই বলতাম ওই তোর রোমিওকে দেখলাম তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

আরেক জনকে বলতাম ওই তোর মজনু তোর জন্য কেদে কেদে হাঁটু ফাটিয়ে ফেলেছে।

আবার আমাকে ওরা কেউ বলতো তোর দেবদাস তোকে না পেয়ে হাতে কোকের বোতলকে মদের বোতল ভেবে নিয়ে বসছে।
তারপর এই নিয়ে আরেক দফা হাসাহাসি।

আমরা কিছু বান্ধবী ছিলাম দুষ্টের শিরমনি। শারমিন, নাফিসা, বেলা, রূপা আর আমি লিয়া।

কোনদিন বৃষ্টির কারণে স্কুলে যেতে না পারলে এই দুষ্টামি গুলি খুব মিস করতাম।

আমরা পাঁচ বান্ধবীর একটা গ্যাং ছিলাম।

দুষ্টামী আর ফাজলামিতে যেমন সেরা ছিলাম তেমনি পড়াশুনায় ছিলাম খুব ভালো।
রেজাল্ট হতো সবার ওপরে। টিচারদের খুব প্রিয় পাত্র ছিলাম আমরা।

পড়াশুনায় ভালো ছিলাম বলে বাবা মা আমাকে খুব বিশ্বাস করতো। আমাকে নিয়ে মনে কোন বাজে সন্দেহ আনেনি।

স্কুলে যাওয়ার সময় বাসা থেকে কোন গার্ড দেওয়া হতো না।
এভাবেই চলছিল আমার জীবন।

আমার আব্বু একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
আমি বেশ ধনী পরিবারের মেয়ে।
আমরা দুই বোন এক ভাই।
আমি বড়, তারপর এক বোন, নাম রিয়া। ভাইটা আমার চেয়ে অনেক ছোট, নাম অর্পণ।

আমি খুব হাসিখুশি চঞ্চল আর ভীষন দুষ্ট একটা মেয়ে। আর কিছুটা একরোখা টাইপের। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবোই।

দুঃখ আমাকে ছুঁতে পারে না।
কোন কষ্টেও আমি দুঃখ পাই না। যেনো দুঃখ নামক কোন ডিভাইস
আমার ভিতরে নাই ।
খাই দাই ঘুমাই পড়াশুনা করি। প্রচুর গল্পের বই পড়ি।
আর রাতে ঘুমানোর সময় গান শুনা আমার প্রিয় অভ্যাস।
টিফিনের টাকা জমিয়ে গল্পের বই কিনে পড়তাম।

লাইব্রেরী থেকে গল্পের বই ভাড়া নিয়েও পড়তাম। যদিও বই ভাড়া দেয়ার সিস্টেম নাই, কিন্তু আমি একই মহল্লার মেয়ে তাই এই সুবিধাটা করে নিয়েছিলাম।

দোকানটা ছিলো মহল্লার এক বোনের হাসবেন্ডের। তাই শ্যালিকা হিসেবে এই সুবিধা আদায় করেছিলাম।

দুলাভাই দোকানে বসতো না। সেখানে সব সময় থাকতো একজন ক্যাবলা কর্মচারী।
ঘণ্টায় দশ টাকা হিসেবে গল্পের বই ভাড়া নিয়ে পড়তাম। শর্ত হলো বই নষ্ট করা যাবে না, পৃষ্ঠা ভাজ করা যাবে না, দাগানো যাবে না। বই কোন রকম নষ্ট হলে বইয়ের মূল্য পুরোটা দিতে হবে।

আমি সব শর্ত মেনে নিয়ে বই ভাড়া নিতাম।
তবে আমি ঘণ্টার হিসেবটা মেইন্টেন করতাম না। আজকে স্কুলে যাওয়ার সময় বই নিতাম আবার পরদিন স্কুলে যাওয়ার সময় সেটা ফেরত দিয়ে অন্য বই নিয়ে যেতাম।
মহল্লার মেয়ে হিসেবে এইটুকু ছার আমার ছিলো।

ক্লাসের পড়া শেষ করে, গল্পের বইয়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তাম।
আমার ভালো লাগে রোমান্টিক গল্প।
হুমায়ূন স্যারের বই পড়তে খুব ভালো লাগতো।
কখনও কিনে পড়তাম, কখনও গিফট পেয়ে পড়তাম। বই পড়তে ভালোবাসি বলে প্রচুর বই গিফট পেতাম।

হুমায়ূন স্যারের অনেক বই পড়ে শেষ করেছি। খুব ভালো লাগতো স্যারের লেখা গল্পগুলি।
কখনো হাসি কখনো কান্না আবার কোনটা ভয়ের, কোনটা আবার সাইন্স ফিকশন।
তো এভাবেই কাটছিলো আমার দুষ্টামি ভরা হাসিখুশি দিনগুলি।

আমি তখন স্কুলে ক্লাস টেন এ পড়ি। ক্লাস টেনের শেষ দিকের কথা।

একটা ছেলেকে আমার যাতায়াতের রাস্তায় রোজ দাড়িয়ে থাকতে দেখতাম।
যাওয়ার সময়ও দেখতাম আবার ফেরার সময়ও দেখতাম। সে একাই দাড়িয়ে থাকতো।
ওর সাথে কোন বন্ধু বা চেলাবেলা কেউই থাকতো না।
ছেলেটার গায়ের রং শ্যামলা।
চেহারাটা মোটামুটি ভাল।
উচ্চতায় পাঁচ ফিট নয়/দশ ইঞ্চি লম্বা হবে।
গায়ের কাপড় চোপড় খুব সাধারণ।
কাউকে ইমপ্রেস করার মত কোন ভাব সে ধরতো না।
কোন ডিস্টার্বও করতো না। শুধু দাড়িয়ে থাকতো।আর চেয়ে চেয়ে আমাকে দেখতো।

প্রথম দিকে আমি বুঝিনি, অনেক পরে আমি বুঝতে পেরেছি ছেলেটা আমার জন্যই দাড়িয়ে থাকে।

তার এই নিশ্চুপ
সরলতাটা আমার ভালো লাগলো। আমি তার প্রতি ধীরে ধীরে দূর্বল হতে থাকলাম।
তাকে কখনো বুঝতে দেইনি আমার দুর্বলতা।

দুজন দুজনকে পছন্দ করতাম কিন্তু কোনদিন কথা বলা হয়ে ওঠেনি।

টেস্ট পরীক্ষা শেষ হলো, রেজাল্ট দিলো। ভালো মার্কস নিয়ে পাশ করলাম।

আর স্কুলে আসতে হবে না। এখন শুধু বাসায় বসে পড়াশোনা করা আর পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নেয়া।

আজ স্কুলের শেষ দিন।
আমাদের ফেয়ারওয়েল ছিলো সেদিন। সবাই জামদানী শাড়ি পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমিও বাদ যাইনি।
আমি একটা নীল রঙের জমিনে সোনালী জরির কাজ করা জামদানী শাড়ি পড়েছিলাম। হালকা সেজেছিলাম। চুলে খোঁপা করে রজনীগন্ধার মালা জড়িয়েছি।

ফাংশনে কেউ গান গাইলো কেউ নাচ পরিবেশন করলো, কেউ মানপত্র পড়ে শোনালো।

আমরা বান্ধবীরা মন খারাপ করে পিছনের সারিতেই বসে রইলাম।
কারণ অনেকদিন আর স্কুলে আসা হবে না। কারো সাথে আর দেখা সাক্ষাৎ হবে না। মাস্তি মজা হবে না।

আমার বান্ধবীরা কেউ আমার বাসার কাছাকাছি থাকে না। সবার বাসা আমার বাসা থেকে উল্টো পথে, একটু দূরে।

আরো একটা কারনে আমার মন খারাপ হয়ে ছিলো সেটা হলো,
আমি আর ওই দাড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখতে পাবো না বলে।

ওর নাম জিয়ান।
কখনো জিয়ানের সাথে আমার কোন কথা হয়নি। শুধুই চোখে চোখে চাওয়া চাওয়ি
এর বেশি কিছুই না ।
আমি ওর নামও জানতাম না।
স্কুলের শেষ দিন ফেয়ারওয়েল ফাংশন শেষ হলে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন ও হঠাৎ আমার সামনে এসে আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দেয়।
তারপর ও দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে যায়।

কাগজটা ফিরিয়ে দেয়ার সময়টুকুও ছিলো না। কাগজটা হাতে গুজে দিয়েই ফুড়ুৎ করে চলে গেলো।

ঘটনার
আকর্ষিকতায় আমি একদম হতবিহ্বল। বোকা বনে গেলাম যেনো।

কাগজটা হাতে ধরতেই আমার হাত পা কাপুনি ধরলো। কারন এই ধরনের ঘটনার সাথে আমি পরিচিত না।

এটা কি হলো, ছেলেটা এটা কি করলো!
কি করবো কাগজটা ফেলে দিব? না কি নিজের কাছে রাখবো। এই কথা ভাবছিলাম।
ঠিক এমন সময় আমার পাশের বাসার এক আন্টির সাথে দেখা হলো, উনি কোথায় যেন গেছিলো সেখান থেকে ফিরতেছিল।

আমি আন্টিকে দেখেই কাগজটা লুকিয়ে ফেললাম।

আমাকে দেখেই উনি বলে, বাহ লিয়া তোমাকে তো দেখতে বেশ লাগছে। কোথাও গিয়েছিলে? নাকি যাচ্ছো এখন।

স্কুলে বিদায় অনুষ্ঠান ছিলো আণ্টি। সেখান থেকেই বাসায় ফিরছি।

আণ্টি আর আমি একসাথেই বাসার দিকে হাঁটা ধরলাম।
আমার আর কাগজটা ফেলে দেয়া হলো না।

বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে পড়তে বসলাম।

আমি সেই কাগজটার কথা বেমালুম ভুলেই বসে আছি।

আমার ফোন বেজে উঠলো। আমি ফোন নিতে ব্যাগে হাত দিতেই মোবাইলের সাথে সেই কাগজটা বেরিয়ে এলো।

তখন আমার সেই চিরকুটের কথা মনে হলো।

ফোন করেছে নাফিসা। ওর সাথে কিছুক্ষন পড়া নিয়ে আজকের ফাংশন নিয়ে কথা বললাম।

হাতের মুঠিতে চিরকুটটা খুলতে ভয় লাগছে। আবার আকর্ষণও হচ্ছে। কি লেখা আছে এতে। খারাপ কিছু নাতো!
কারণ বাজে কিছু লেখা থাকলে আমার কাছে ওর ভাবমূর্তি নস্ট হবে। আর আমি সেটা চাই না। অবশেষে
চিরকুটটা খুলেই ফেললাম।

জিয়ান মাহমুদ,
ফোন নাম্বার………….

ব্যাস এইটুকুই লেখা।
আর কিছুই লেখা নেই।
আমি কাগজটা ভালোমত উল্টে পাল্টে দেখলাম, না আর কিছুই লেখা নেই।

আমি তখনই জানলাম যে ওর নাম জিয়ান।
মোবাইল নাম্বারটা জিয়ান স্যার নামে সেভ করে নিলাম। যাতে কেউ দেখলে স্কুলের স্যারের ফোন নাম্বার মনে করে।

তারপর কাগজটা ছিড়ে বিনে ফেলে দিলাম।

জিয়ানের আমার সাথে যোগাযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
আমি স্কুলেও যাই না।
কোচিং এ ও যাই না। বাসায় দুজন টিচার রাখা হইছে।
তারা বাসায় এসে পড়িয়ে যান।

আর আমার মোবাইল নাম্বারও সে জানে না।
যোগাযোগ করলে আমাকেই করতে হবে।

সে কোথায় থাকে, বাসা কোথায়, কি করে, দেশের বাড়ি কই, ফ্যামিলিতে কে আছে এসব কিছুই জানি না।

আমি নিজেও যে তার প্রতি কিছুটা দূর্বল, সেটা অস্বীকার করবো না। আমারও ওই মানুষটাকে একটু একটু ক ভালো লাগে।

কল দিবো কি দিবো না ভেবে ভেবে মনের সাথে লড়াই করছি। কোন সিদ্ধান্তে এখনও আসতে পারিনি।

নাফিসাকে জানালাম বিষয়টা।
ও বললো কল করে দেখ কি বলতে চায়। খারাপ কিছু বললে ফোনের মধ্যেই গালির ঝড় তুলে দিবি। গালি দিয়ে কান পচিয়ে দিয়ে নাম্বারটা ব্লক করে দিবি।

সে রাতে আর জিয়ানকে কল করা হলো না।

পরদিন বিকেলে ছাদে উঠে জিয়ানকে কল করলাম।

সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করলো।
মনে হলো আমার ফোনের জন্যই মোবাইল হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলো যেনো।

ওপাশ থেকে হ্যালো বলার পর শব্দটা শুনে আমার বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়ে গেলো। কেমন যেনো ভয় ভয় অস্থিরতা মেশানো একটা অনুভূতি হতে লাগলো। গলা দিয়ে কথা সরছে না। সব কথা ফিরে যাচ্ছে লজ্জায় সংকোচে।

হ্যালো, আমি আমি আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম আমি লিয়া।

জিয়ান বললো, thanks কল করার জন্য।

আমি নিশ্চুপ,

কি কথা বলবে না? আমি যে কাল থেকে তোমার কলের অপেক্ষায় ছিলাম সেটা কি তুমি জানো?

ভেবেছিলাম তুমি হয়তো কল করবে না।
অথবা আমার ফোন নাম্বার লেখা কাগজটা ফেলে দিয়েছো।

কাল থেকে কি যে অস্থির ছিলাম! তোমার কল পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। মনে খুব শান্তি পাচ্ছি। স্বস্তি ফিরে পেয়েছি।

কিছুতো বলো__
আমি তোমাকে সেই কবে থেকে ভালোবাসি, তুমি কি তা জানো?

তোমাকে এক নজর দেখার জন্য ঘণ্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতাম।

যেদিন তোমাকে না দেখতাম সেদিন আমি রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারতাম না।

আমি কিছুই বলতে পারলাম না, ফোন কানের সাথে চেপে ধরে রাখলাম।

কিছু বলো, আমি তোমার কথা শুনতে চাই।

গলায় খুব শক্তি সঞ্চয় করে বললাম, আপনি কি আমাকে অনেক আগে থেকেই চিনতেন?
আমাকে ফলো করেন?
কবে থেকে চিনেন আমাকে?

আরে আরে এতো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার জবাব দিবো!

আমি তোমাকে ওইদিন থেকেই দেখি যেদিন তুমি ঐ বদমাইশ ছেলে গুলিকে ধোলাই দিচ্ছিলে। ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লেগেছিলো।

তার মানে আপনিও ওদের দলের একজন ছিলেন?

নাহ মোটেও না, আমি দোকানে গেছিলাম ফ্ল্যাক্সি করতে, তখন দেখেছিলাম তোমার রুদ্র মূর্তি।

কি বলেন এসব, আমি সামান্য উচিত কথা বলেছিলাম মাত্র আর কিছুনা।

হুম এতগুলি ছেলের মাঝে তুমি একাই সব মেয়ের পক্ষে লড়ে যাচ্ছিলে।

এটা অনেক সাহসের ব্যাপার। অনেকেই এই সাহসটা দেখায় না বলে আমাদের সমাজের মেয়েরা হেনস্থা হয়।

আরো অনেক কিছু বললো। ওর চিন্তাধারা অনেক উন্নত। আমি ওর গলার স্বরে মুগ্ধ।

ওর কথায় কি যেনো ছিলো। আমি মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনে গেলাম। মনে হলো ও যেনো আমার জনম জনমের চেনা পরিচিত কেউ।

ওর কথার
আওয়াজের মধ্যে কি যে মাদকতা ছিল আমি বলে বোঝাতে পারবো না। এতদিনকার দুর্বলতা প্রেমে রূপ নিল।

আমি প্রেমে পড়লাম,
ভীষণভাবে জিয়ানের প্রেমে পড়লাম।

ফোনে ফোনেই দুজনে দুজনের প্রেমে মত্ত।

দেখা করার কোন সুযোগ নেই। ফোনেই প্রতিদিন কথা হতে লাগলো।
সদা হাস্যময়ী আর গল্প পাগলী লিয়া কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে।
সর্বক্ষণ সে জিয়ানের ভাবনায় ডুবে থাকে।

জিয়ানও লিয়াকে অনেক ভালোবাসে ।
এই ভালোবাসার শেষ পরিণতি কি হবে সেটা আমরা কেউ জানি না।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here