#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-১৪
লিয়া নিজের দুর্ভাগ্যের কথা ভাবছে আর
বিয়ের ছবিগুলি
দেখছে।
ভাবছে কত স্বপ্ন ছিলো ছবিতে বরের বেশে থাকবে জিয়ান।
আমার মন্দ ভাগ্যের কারণে জিয়ানের জায়গায় বসে আছে উদয়।
উদয়ের ফোনে বলা কথাগুলো নিয়ে জল্পনা কল্পনা করছে। এই লোকটা কি আমার জন্য এমনই পাগল থাকবে সারাজীবন। তার এই ভালোবাসার পাগলামিতে সাড়া দিবো কিভাবে, আমার তো মন ই টানে না তার দিকে। আমি উদয়কে ভালোবাসি না।
উদয় নামের মানুষটা ভালোবাসার ঝড় হয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার চারিদিক কাপিয়ে দিতে আসছে প্রবল বেগে।
–
–
কেমন করে একে আমি দূরে সরিয়ে রাখবো।
আর কাছেই বা আসতে দিবো কিভাবে?
মন তো সায় দেয় না।
সেতো চায় আমি যেনো তাকে ডাকি ।
সে আমার ডাকের অপেক্ষায় আছে।
এ কোন পেঁচানো লতায় আমাকে জড়িয়ে দেয়া হলো। আমি তো এখান থেকে বের হবার রাস্তা দেখছি না।
–
আমার ভিতরে তো মন নামক জিনিসটা মরে গেছে। এই মরা মনের মধ্যে কি ভালোবাসার ফুল ফোঁটানো সম্ভব।
ভালোবাসা একটি মানবিক অনভুতি এবং আবেগময় একটি অভিজ্ঞতা।
বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশের নাম ভালোবাসা।
উদয় নামক লোকটার জন্য এর কোনটাই তো আমার কাছে নেই।
আমি কোনভাবেই
লোকটাকে ঠকাতে চাই না।
–
–
মানুষ হিসেবে আমি কতখানি ভালো তা আমি জানি না।
হয়তো অনেক সময় ভালোবাসার মানুষগুলির এতো ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারি না।
তবে আমি স্বার্থপর নই, বেঈমান নই।
কেউ আমাকে সীমাহীন ভালোবাসে
আর আমি সেই ভালোবাসার উপযুক্ত মূল্য দিতে পারি না।
এখানেই আমি মানুষ হিসেবে ব্যর্থ।
–
–
নিজের কষ্টগুলো বুকে চেপে রেখেই আমি হাসছি, চলছি কিন্তু অন্তরের ভিতরের দৃশ্যটা অন্যরকম।
অন্তরের ভিতরটা কষ্টে ক্ষত বিক্ষত। সেখানে সারাক্ষণ রক্তক্ষরণ হয় ভীষণভাবে।
কারো সামনে কাদতে পারিনা।
একাকি হলেই বুকের ভিতরের জমাট বাঁধা কান্নাটা দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসে। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি,
কেমন আছি আমি?
ঠিকঠাক কোন উত্তর খুঁজে পাই না ।
নিজেকে খুব এলোমেলো লাগছে।
অন্যকে ভালো রাখতে হলে আগে নিজেকে ভালো থাকতে হবে।
দিন শেষে অনেক অভিযোগ ওঠে মনের ভিতর।
তখন মনে হয় আমি ভালো নেই।
–
–
উদয় আমার জীবনে এসেছে একরাশ নতুন আশা আর নতুন স্বপ্ন দেখাতে আর স্বপ্ন দেখা শেখাতে।
সে সুন্দরভাবে আমার সাথে জীবন কাটাতে
ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
অভিমান আর অপমান দুটোই ফিরিয়ে দেয়া যায়, কিন্তু ভালোবাসা ফিরিয়ে দিবো কিভাবে?
–
–
কিছু স্বপ্ন চিরকাল থেকে যায়।
কিছু উত্তর কখনই মেলে না।
কিছু কথা সবসময় মনের গভীরেই পরে থাকে। সেই কথা কাউকে বলা যায় না।
কিছু স্মৃতি চোখের পানির কারণ হয়।
ভুলা যায় না কিছুতেই। কিছু আশা কখনোই মরে না। কিন্তু পুড়িয়ে মারতে তার জুড়ি নেই।
–
–
আজ মিজান সাহেব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এলো ।
কাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ছাদে গেল।
সবাই একসাথে বসে গল্প করবে বলে।
কাজকর্মের ব্যাস্ততার কারণে
অনেকদিন বাচ্চাদের সময় দিতে পারেনি।
আজকে সময় বের করে সবার সাথে আড্ডা দিতে, গল্পগুজব করতে খোলা ছাদে নীল আকাশের নিচে বসেছে।
আজকের আকাশটা খুব পরিস্কার। আকাশে অনেক নীলচে তারা দেখা যাচ্ছে। আজ বোধয় পূর্ণিমা। আকাশের বুকে মস্ত বড় গোল একটা চাঁদ সারা আকাশে আলো বিলিয়ে দিচ্ছে। চাঁদের আলোয় ছাদটা আলোকিত হয়েছে। সবাই সবাইকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
লিয়ার গল্পে কোন মনোযোগ নেই। সে একদৃষ্টিতে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অতি গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলছে। মনের কষ্ট সে কাউকে দেখাতে চায় না।
মিজানুর রহমান লিয়ার মাকে বলছে চা নাস্তা তৈরি করে ছাদে চলে আসতে।
একসাথে বসে খাবে আর বাচ্চাদের সাথে গল্প করবে।
লিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, কিরে মা এতো চুপচাপ কেন তুই? কি এতো ভাবছিস?
কিছু না আব্বু, আকাশটা দেখতে খুব ভালো লাগছে।
আচ্ছা এখন বল তোর শরীর কেমন আর গলা ব্যাথা কি কিছু কমেছে?
ঠিক মত ওষুধ খেয়েছিলি তো?
লিয়া বললো, গলার ব্যাথা পুরাপুরি সারেনি। খাবারও খেয়েছি, ওষুধও খেয়েছি।
গুড, নিয়ম মেনে চললে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবি।
তারপর ওর আব্বু সবার ছোট বেলার গল্প করলো।
ছোটবেলায় কে কেমন ছিলো, কে কতটা দুষ্টু ছিলো, কে কতটা রাগী ছিলো।
সবাই শুনে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।
মিজান সাহেব বললো, লিয়া ছিলো সবচেয়ে শান্ত। কখনো জেদ করতো না, কিছুর জন্য বায়না ধরতো না। শুধু গল্পের বই পেলেই খুশি।
আর রিয়া ছিল ভীষণ রাগী আর জেদী। যেটা তার পছন্দ হতো সেটা রিয়ার চাইই চাই।
রিয়া একবার রেগে গিয়ে কান্না আরম্ভ করলে ওকে সহজে থামানো যেত না। কেঁদে কেঁদে চেহারা লাল করে ফেলতো।
লিয়া বললো, আব্বু ওতো এখনও অনেক রাগী, তাইনা !!
এই কথা শুনে আবার সবাই হেসে উঠে।
রিয়া বললো আমাকে পচানো হচ্ছে? আমি রেগে গেলে কিন্তু কেঁদে ফেলবো।
এই কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। এইতো প্রমাণ পেয়ে গেলাম।
সবার স্কুলের প্রথম দিনের স্মৃতি কথা মনে করে অনেক খুশি হলো।
সবাইকে নিয়ে পহেলা বৈশাখ এর দিন ঘুরতে যাওয়া, শিশু পার্কে, জাদুঘরে ঘুরতে গিয়ে কি কি আনন্দ করছে সবাই সেইসব দিনের গল্প করছে ওরা।
রিয়া ছোট বেলা থেকেই নতুন নতুন ড্রেস কিনতে অনেক পছন্দ করতো, আর কিনে না দিলেই কেদে মার্কেট মাথায় তুলতো।
অর্পণের ছোট বেলায় পছন্দ ছিলো রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি আর পিস্তল। আর এখন বড় হয়ে শুধু গেমস খেলে, বললো লিয়া।
আর লিয়া কিনে নিয়ে আসতো বই।
ছোট বেলা থেকেই ও বই পোকা।
বইয়ের মধ্যেই ছিল ওর সব আনন্দ। বললো আফরোজা হাতে ট্রেতে করে কয়েক পদের নাস্তা আর চা নিয়ে এলো।
সবাই খাচ্ছে আর গল্প করছে।
অনেকদিন পর পুরা পরিবার একত্রে বসে গল্পে গল্পে কাটিয়ে দিলো সন্ধ্যাটা।
অনেক আনন্দে কাটলো সময়টা। অনেক রাতে ওরা ছাদ থেকে নেমে এলো।
লিয়া মনে মনে ভাবছে রাতেই তো উদয় ফোন দিবে।
কি কথা বলবো ওর সাথে।
মনে মনে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলো।
আল্লাহ আমার মন শান্ত করো, আমার কারণে কেউ যেনো কষ্ট না পায়।
আমি ভালো নেই,
তাই বলে আমার জন্য কেউ যেনো জীবনের আনন্দ হারিয়ে না ফেলে।
আমাকে যেনো অভিশাপ না দেয়।
(বানানের ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন )
(চলবে)