এমনও প্রেম হয় পর্ব:-১৫

0
975

#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-১৫

রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে চলে আসি,
দরজা লক করতে যাব তখন আম্মু বললো_
দরজা বন্ধ করিস না, আমি হাতের কাজ সেরে আসি।
আমি তোর সাথে ঘুমাবো।

মানে কি আম্মু, কেন?
তুমি জানো না আমি করো সাথে রুম শেয়ার, বেড শেয়ার করতে পারি না।

কেউ সাথে থাকলে আমার ঘুম হয় না।

তারপরও আমি তোর সাথে ঘুমাবো। তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিবো।

আম্মু তুমি যদি আমার সাথে ঘুমাতে আসো তাহলে উদয় ফোন করলে আমি ফোন ধরবো না।
এই আমি বলে দিলাম।

উদয় ফোন করবে, জানলি কেমন করে?

দুপুরের দিকে যখন কথা হইছে তখন বলছে রাতে কল দিবে।

কই আমাকে তো বলিস নি !!

ইচ্ছে করেই বলিনি আর এটা বলার মত বিশেষ কোন কথাও না।

আচ্ছা আমি যাচ্ছি ,
তোর সাথে ঘুমাবো না।

তুই আমার মাথায় হাত রেখে কথা দে আর কোন খারাপ চিন্তা মনে আনবি না।
কথা দে আমায়_,

এই তোমার মাথায় হাত রেখেই কথা দিলাম_
কোন খারাপ চিন্তা মাথায় আনবো না।

উদয় কল দিলে ভালো ব্যাবহার করবি, ভালোভাবে কথা বলবি।

হ্যা ভালো ব্যাবহার করবো, ভালোভাবে কথাও বলবো, তোমাকে কথা দিলাম।
তোমাদের লক্ষ্মী মেয়ে
হয়ে দেখাবো।

আম্মু চলে গেলে আমি ডোর লক করে দিলাম।
বিছানায় বসে
ফেইস বুকে ঢুকে নিউজ ফিডে ঘুরাঘুরি করছি আর টিভি দেখছি।

এর মধ্যেই উদয়ের
কল এলো।
আমার হাত পা কাপছে। আম্মুকে তো বলে দিলাম ঠিক মত কথা বলবো কিন্তু কি কথা বলবো। ওই ব্যাটার সাথে আমার কথা বলতে একদমই ভালো লাগে না।

তখন তো অফিস টাইম ছিলো তাই অল্প সময়েই কথা শেষ করতে
পেরেছিলাম।

কিন্তু এখন কতক্ষন কথা বলবে কে জানে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ফোন রিসিভ করলাম।

হ্যালো ……
আসসালামু আলাইকুম

ওপাশ থেকে
ওয়া আলাইকুম আসসালাম।

কি করছো!
কেমন আছো?
খাবার খেয়েছো ?
তোমার শরীর সুস্থ আছে তো?

একসাথে এতো প্রশ্ন করলে কোনটা রেখে কোনটার জবাব দিবো!

সবার আগে বলো
তোমার মাথা ব্যাথা কমছে কিনা।

হুঁ কমছে।
আপনি কেমন আছেন। আপনার শরীর ভালো আছে!

হুম, এতক্ষণ ভালো ছিলাম না।
এখন তোমার সাথে কথা বলতে পেরে খুব ভালো লাগছে।

তোমার সাথে কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিলাম।

তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে আমার কিছু ভালো লাগে না। ভীষণ রাগ ওঠে।

তোমার সাথে কথা বলার পর,
তোমার কণ্ঠ শুনে
সেই রাগটা উবে গেল।

আপনি বলেছেন রাতে কল করবেন, রাতেই তো কল করলেন তাহলে রাগের কি হলো, আর ফোন তো বন্ধ ছিলো না এখন।

আরে না একটা অফিসিয়াল কল এসেছিলো সেই ব্যাটা কিছুতেই ফোন রাখছিলো না আর আমিও তোমাকে কল করতে পারছিলাম না তাই খুব রাগ হয়েছিলো।

একটুখানি কথা বলার জন্য মনটা খুব আনচান করে।
আমি সারাদিন তোমাকে মিস করি।
সত্যি করে বলো তো,
তুমিও কি আমাকে মিস করো?

না আমি আপনাকে মিস করি বলে মিথ্যে বলা হবে তবে আপনি আমার ভাবনায় থাকেন।

সত্যি বলার জন্য ধন্যবাদ। তুমিও আমায় মিস করবে, আমি তোমাকে বাধ্য করবো মিস করতে।
বলেই হা হা হা করে হাসতে লাগলো।

মনে মনে বললাম ব্যাটা উজবুক এখানে হাসির মত কি বললাম যে হা হা করে অট্টহাসি দিতে হবে।

উদয় বলছে,
আমি যেখানেই যাই, যেদিকে তাকাই,
সবদিকে শুধু তোমাকেই দেখি।
তুমি ছাড়া যেন আমার কিছুই নেই।

কিভাবে আমি তোমাকে বোঝাবো, তুমি আমার কাছে কি!

তুমি আমার হৃদয়ের কতখানি জুড়ে আছো।
তুমি আমার কামনায়,
তুমি আমার বাসনায়,
তুমি আমার সকল প্রার্থনায় আছো।
প্রতি মুহূর্তেই তুমি আমার অন্তরের অন্তঃস্থলে আছো।

আবার মাঝে একটু গানের কলি গাইলো,

আমি আর নেই আমাতে।
তোমার মাঝে হারিয়ে গেছি।

খুব ভালোবাসি তোমায় ।
আমার পিচ্চি বউ।

এতো কথা, এতো ফিলিংস আমি একাই শেয়ার করছি আর তুমি কিছুই বলছো না।

আমি তোমার কথা শুনতে চাই।

কি বলবো,

যা মনে চায় তাই বলো। আমি যেমন তোমাকে পেয়ে আত্মহারা হয়ে যা মনে আছে সব বলে যাচ্ছি, তেমন করে বলো।

আপনি আমাকে পিচ্চি বউ বললেন কেন জানতে পারি?

পিচ্চি বউ বলেছি এইজন্য যে তুমি আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট।
আমি তোমার চেয়ে বারো বছরের বড়। সেই হিসেবে তুমি আমার কাছে পিচ্চি।

পিচ্চি বলাতে রাগ করলে নাকি!

বয়সের এতো ডিসটেন্স আপনার আর আমার মাঝে?
এই বিয়েটা কি মানান সই হলো আপনিই বলুন।

আসলে কি জানো_ আমি পরিবারের বাধ্য ছেলে। সারাজীবন অপেক্ষা করেছি বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করবো বলে।
কলেজ ভার্সিটি লাইফ পাড়ি দিয়েছি কিন্তু একটা প্রেম করিনি। বিয়ের পর বউয়ের সাথে প্রেম করবো বলে। হৃদয়ের সব প্রেম বউটার জন্য ইনটেক রেখেছি।
বলেই আবার হাহা করে হাসলো।
তুমি আমার দাদুর পছন্দ করা মেয়ে। দাদু আর বাবার কথামত তোমাকে বিয়ে করে ফেললাম।

আমার বয়সের জন্য কি তোমার আমাকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে?

আমি কি তেমন কিছু বলেছি? আমি নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা সব আব্বু আম্মুর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

এবার তোমার সম্পর্কে কিছু বলো।

আপনি বলুন আমি শুনছি ,
আমার শুনতেই ভালো লাগছে।


তোমার মায়া ভরা মুখটাকে
সারাজীবন ধরে আমার পাশে বসিয়ে দেখতে চাই।
সেই সৌভাগ্যের অধিকারী হতে চাই ।
দূরে বসে বিয়ের ছবি দেখে দেখে আর সময় কাটতে চায় না। মন ভরে না।
তোমাকে কতখানি ভালোবাসি তা তুমি জানো না।
যেদিকে তাকাই সেদিকেই তোমাকে দেখি।
বাস্তবে আমি তোমাকে দেখতে চাই, ছুঁতে চাই।
বুকে জড়িয়ে ধরতে চাই।
তোমার শরীরের
ঘ্রাণ নিতে চাই।
তোমার শরীরের উষ্ণতার পরশ পেতে চাই।
গোলাপের পাপড়ির মতো তোমার চিকন ঠোঁটের উন্মাদ করা ভালোবাসা পেতে চাই। বিনিময়ে ভালোবাসা দিতে চাই।
যা শুধু তোমারই প্রাপ্য।

কি বলছে লোকটা, লজ্জা শরম কিছু নেই নাকি। শুনেই কান গরম হয়ে যাচ্ছে আর ওপাশে মানুষটা অবলীলায় অকপটে বলে যাচ্ছে সব।

তোমার জন্যই এতকাল জমিয়ে রেখেছি আমার যত প্রেম।
আমার বুকের জমানো ভালোবাসা সব তোমার। ফোনে কথা বলে মন ভরে না। কাছে পেতে চাই, খুব কাছে। বুকের খুব কাছে।
কবে তোমায় কাছে পাবো?

আমিতো বিবাহিত ব্যাচেলর হয়েই রয়ে গেলাম।
আমি আমার বৌএর জামাই হতে চাই।
তোমায় অনেক ভালবাসি বউ।
আমার নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি।
তোমায় ভালোবেসে আমার প্রাণও তোমার খাচায় বন্দী করেছি।

এতো ভালোবাসা ভালো না ।
বেশি ভালবাসলে কষ্ট পেতে হয়।
আমি অনিচ্ছাকৃত কোন ভুল করলে তখন ভীষণ কষ্ট পাবেন।

তুমি আমায় কষ্ট দিবে?
আমার তা মনে হয় না।
যারা কাদতে পারে তাদের মন খুব নরম হয়।
আর নরম মনের মানুষ কাউকে কষ্ট দিতে পারে না।
তারা প্রচন্ডভাবে ভালোবাসতে জানে।
তারা নিজের চাইতে অন্যের মনের খবর বেশি রাখে।
কে কিসে কষ্ট পেতে পারে এই ব্যাপারে তারা খুব সচেতন থাকে।
তাদের মনটা থাকে পবিত্র আর সরল।


আপনার মতো করে ভালবাসতে পারবো কিনা জানি না, তবে আমি চেষ্টা করবো আপনাকে ভালো রাখার।

এখন ফোন রাখি?
ঘুম পাচ্ছে খুব।

আরেকটু কথা বলি, তোমার কি সত্যি ঘুম পাচ্ছে?

না, আজ আর কোন কথা নয়।
সকালে অফিস আছে না আপনার? এখন ঘুনিয়ে পড়ুন।
অনেক রাত হইছে।
পরে আবার কথা বলবো।

ঠিক আছে, আমি তোমার সব কথা শুনবো, মানবো।
আমি তোমার শাসন তোমার ভালোবাসা সব চাই ।
তুমি আমায় শাসন করে আমার ভুলগুলি শুধরে দিও, আর ভালোবেসে মন ভরিয়ে দিও।
আপাদমস্তক আমি তোমার সবটুকু চাই । আরো অনেক কথা বললো।
ভালো থেকো আমাকে মনে রেখো।
আর তোমার এই বুড়ো বরকে ভালোবেসো।
গুড নাইট বলে ফোন রেখে দিলো।

ফোন রেখে শুয়ে পরলাম।
ভাবনার এক মহাশূন্যে হারিয়ে গেলাম। মন যা চায় না তাই করতে হচ্ছে। মনের সাথে লড়াই করতে করতে আমি ক্লান্ত।
আমার আব্বু আমার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বয়সের একটা লোকের সাথে কিভাবে আমার বিয়ে দিলো, এটা কেমন করে পারলো তারা!
আমি কি এতোই বোঝা হয়েছিলাম তাদের কাছে। এর সাথে তো আমার মন মানসিকতাই মিলবে না। কেমন করে আমি এই সংসার করবো?
আমি ষোল আর সে আটাশ বছরের। বয়সের ব্যাপক ব্যবধান আমাদের দুজনের মধ্যে। আমাদের মধ্যে প্রেম হওয়া কি সম্ভব?

উদয়ের বলা কথাগুলো ভাবছি,
যদি দুটি হৃদয়ের কাছে আসার হয়,
তবে যত দেরীই হোক না কেন, যত দূরেই থাকুক না কেন,
যত কঠিনই মনে হোক না কেন, যে কোন পরিস্থিতিতে থাকুক না কেন,
আল্লাহ তাদের সব সমস্যার সমাধান করে,
একত্রে আনবেই
ভালোবাসাবাসি
ভাগ করে নেয়ার জন্য।
আমার বেলায়ও কি তাই হচ্ছে!

(বানানের ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন)

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here