#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-১৬
বিছানায় শুয়ে উদয়ের বলা কথাগুলি ভাবছি ..
ভাবনার বেড়াজাল আমায় ঘিরে রেখেছে,
যদি দুটি হৃদয়ের কাছে আসার হয়, তাহলে যত দেরী ই
হোক না কেন, যত দূরেই থাকুক না কেন, যত কঠিনই মনে হোক না কেন, যে কোন পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন,
আল্লাহ তাদের সব সমস্যার সমাধান করে তাদের একসাথে আনবেই ভালোবাসা ভাগ করে নেয়ার জন্য।
উদয়ের ভালোবাসার গভীরতা বুঝার চেষ্টা করছি, লোকটা যা বলছে,
সেগুলি কি তার হৃদয়ের কথা,
নাকি মুখের কথা,
আমাকে খুশি করার জন্য বলছে, ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে, নাকি সত্যিই ভালোবাসে।
এইরকম ভালোবাসার কথা শুনলে যে কোন মানুষ এই কথার মায়াজালে জড়িয়ে যাবে। ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
কিন্তু আমার সে উপায় নেই। আমার ভালোবাসার মনটা মরে গেছে।
তাকেই ভালোবাসা উঠিত যে তোমার হাত সারা জীবনের জন্য ধরে রাখবে। আর তাকেই বিশ্বাস করা উঠিত, যে তোমার বিশ্বাসের মর্যাদা দিবে।
জীবনের গল্পটা ঠিকই আছে শুধু পাল্টে গেছে সময়টা।
পাল্টে গেছে ভালোবাসার মানুষটা। কিছুই বাকি নেই শুরুর প্রত্যাশার, অগাধ চাওয়ার। পরে আছে শেষটায় কেবলি শূন্যতা।
রাতের নিস্তব্ধতা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমায়। একাকীত্ব পেয়ে বসেছে নির্জন রাতে।
কষ্টের বিশাল পাথর চেপে আছে বুকের ওপর। কোন এক অজানা চাওয়া ঘুমাতে দিচ্ছে না। কেন এমন হচ্ছে,
কেন আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না।
মরে গেলেই বোধয় সব সমস্যার সমাধান হতো।
কিন্তু মরতেই বা পারলাম কই। মৃত্যু কাছে এসেও তো ফিরে গেল।
পৃথিবীতে সবাইকে ভালোবাসা যায় না। আবার যাকে ভালোবাসা যায় ,
তাকে ভুলা যায় না,
তার দূরত্ব সহ্য হয় না। আসলে ভালোবাসা হলো একটা মায়াজাল,
এই মায়াজালে যে একবার আটকে যায়, সে আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।
ভালোবাসা শুরু হয় কিন্তু শেষ হয় না। হয়তো কখনো কোন কারণ বশত ভালোবাসার মানুষটা হারিয়ে যায়। তবে ভালোবাসা কখনোই হারায় না।
মনের গভীরেই থেকে যায়।
আর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বেরিয়ে আসে না
পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস।
ভালোবাসা অনেক বড় একটা অধ্যায়,
যা কখনো শেষ হয় না।
কিছু স্বপ্ন চিরকাল স্বপ্নই থেকে যায়।
কিছু উত্তর কখনই মেলে না।
কিছু কথা সবসময় মনের গভীরেই পরে থাকে। কিছু স্মৃতি দু চোখের কূল ছাপিয়ে চোখের জলের বন্যা নিয়ে আসে।
মরেও মরতে পারে না কিছু আশা।
রাত পেরিয়ে ভোর হয়। আবার রাত আসে।
এদিকে একদিন রাতে জিয়ান কল করে। কেমন আছে জানতে চায়।
আমি কেমন আছি সেকথা থাক_ আপনি কেমন আছেন সেটা বলেন।
আমি তোমাকে ছাড়া কেমন আছি সেটা তুমি ভালোভাবেই জানো। কিছুই ভালো লাগে না তোমাকে ছাড়া। বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে পড়তে আসা স্টুডেন্ডদের সাথে তাল মিলাতে একটু হিমশিম খাচ্ছি। শুধু ভালোর মধ্যে এটুকুই জায়গাটা অপরূপ সুন্দর।
চারিদিকে শুধু বরফ আর বরফ। যেনো সাদা চাদরে ঢেকে রেখেছে শহরটা। ভার্সিটির চারপাশেই পাহাড়। মাঝখানে আমাদের ভার্সিটি।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সাথে তাল মিলাতে পারছি না। একগাদা শীতের মোটা কাপড় মাফলার উলেন টুপি হ্যান্ড গ্লাভস পায়ে জুতা পড়ে থাকতে হয়। এটা খুবই বিরক্তিকর। কিন্তু কিছুই করার নেই।
লিয়া তেমন কোন কথা বললো না, চোখের জলে ভেসে শুধু শুনলো জিয়ানের কথা।
এদিকের ঘটে যাওয়া ঘটনা সে জিয়ানকে কিছুই বললো না। বলে কী হবে, শুধু দুঃখই বাড়বে। থাক না কিছু কথা অজানা।
পরে তো একসময় জানবেই।
জিয়ান আপনি আমাকে ফোন দিয়েন না। সময় সুযোগ বুঝে আমি আপনাকে কল করবো। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে।
আচ্ছা আমি কল করবো না। তুমিই নিজের সুবিধা মত ফোন দিও। আমি চাই না তুমি আমার জন্য কোন সমস্যায় পরো।
তোমাকে খুব মিস করি বাঘিনী। তোমার জন্য খুব কষ্ট হয়। মন চায় ছুটে চলে আসি তোমার কাছে। আমাকে ভুলে যেও না। আমাকে মনে রেখো আর আমার হয়ে থেকো।
লিয়া জিয়ান দুজনেই অনেক কাদলো, এই বিরহ ব্যাথা ভালো লাগছে না কারো কাছে।
আরো কিছুক্ষন কথা বলার পর ফোন রেখে দিলো।
লিয়া জিয়ানের কান্না দেখে ভয় পেলো। ওর জন্য জিয়ানের পড়াশুনার যেনো ক্ষতি না হয়ে যায়।
এভাবেই কেটে গেলো কিছুদিন।
উদয় আর লিয়ার
দুজনের দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা হয়,
ভিডিও কলেও কথা হয়।
উদয়ের সাথে আমার সম্পর্ক অনেকটাই
সহজ হয়ে এসেছে । কিন্তু ভালোবাসা হয়নি।
উদয় যখন তখন ফোন দিলেও আর কাপাকাপি শুরু হয় না, কি কথা বলবো তারজন্য মনে মনে রিহার্সেল দিতে হয় না। ওর ফোন আসলে আর বিরক্ত হই না।
বরং ফোন না আসলেই একটু অবাক হই,
ওর কি কোন সমস্যা হলো, ওর কিছু হয় নি তো?
কখনো কখনো আমি নিজেই কল দেই।
ফোন না দেয়ার কারণ জেনে নেই।
আর হালকা রাগ ও দেখাই।
এর মাঝে আমরা দুজন কখনই বাইরে বেড়াতে যাইনি।
উদয়ও আমাদের বাসায় আসেনি।
আমিই বাসায় বলে রেখেছিলাম, যেন উদয়কে এই বাসায় দাওয়াত করে ডাকা না হয়।
আব্বু আম্মু দাদু সবাই বলছে, ব্যাপারটা খুব খারাপ হচ্ছে।
বিয়ে হইছে কিন্তু
আমরা জামাইকে আমাদের বাসায় আনছি না।
এটা ওদের পরিবার কিভাবে দেখছে কে জানে। নিশ্চয়ই খারাপ ভাবছে আমাদের।
পরে ওরা অনেক কথা শুনাবে, ভেবে দেখো একবার, ওদের জায়গায়
আমরা হলে কি করতাম।
এটা লিয়া খুব বাড়াবাড়ি করছে। ধর্মীয় মতে বিয়ে হয়েছে। একজন স্বামী তার স্ত্রীর কাছে আসবে এটাই স্বাভাবিক।
আমরা লিয়ার এই ব্যবহারের জন্য খুব লজ্জায় পড়ে যাচ্ছি।
লিয়ার এক কথা
তুলে নেওয়ার আগে উদয় এই বাড়িতে আসবে না। ফোনে তো রেগুলার কথা হচ্ছে, বাসায় আসতে হবে কেনো?
আর তোমরা যদি আমার কথা না শুনে ওকে বাড়িতে ডাকো তাহলে আমি বাড়ি থেকে কোথাও চলে যাবো।
আমার এই কথা শুনার পর আর কেউ উদয়কে দাওয়াত করে আনার সাহস করে নাই।
ভয় পাইছে আবার কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলি।
উদয় একদিন অভিমান করে আমাকে বলছিলো,
তোমাদের বাসা থেকে আমাকে কেউ ইনভাইট করেনি,
আনতেও কেউ যায়নি।
এমনকি দাদুও আমাকে আসতে বলেনি।
কেউ আমার মনের কথা বুঝেনি।
আমারও যে বউর কাছে যেতে মন চায়, সেটা কেউ ভাবেনি।
বউয়ের সান্নিধ্য
পেতে মন চাইছে,
কেউ বুঝার চেষ্টা করেনি সে কথা।
আমি ভেবেছিলাম,
বিয়ের পরদিনই বোধয় আমাকে নিতে আসবে।
কিন্তু কেউ আমাকে আমার বউয়ের কাছে পৌঁছে দেয়নি।
আমি এর শোধ তুলবো মনে রেখো। তুলে নেয়ার পর আর বাবার বাড়ি যেতে দিবো না। তখন বুঝবে কেমন লাগে।
হাসতে হাসতেই বলছিল, বউ থাকতেও আমি
চিরকুমার …হা হা হা
উদয় অনেকবার বলছে বাইরে কোথাও মিট করার কথা,
আমি রাজি হইনি।
উল্টো বাসায় আসতেও নিষেধ করেছি,
বলেছি আপনাদের বাসায় আমাকে তুলে নেওয়ার আগে আমরা সামনাসামনি
কখনোই দেখা করবো না।
এই কথা শুনে,
ও প্রথমে একটু রাগ হয়ে বলেছিল, তুমি পাষাণ। তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।
আমি যতটা ভালোবাসি তার ছিটেফোঁটাও তুমি আমাকে ভালোবাস না।
তোমার জন্য আমার মনে যতটা ফিলিংস আছে, তোমার মধ্যে এর বিন্দু পরিমাণও
আমি দেখতে পাচ্ছি না।
আমাকে কাছে পেতে চাইলে তাড়াতাড়ি বউ তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
হুম, সেটাই করতে হবে দেখছি। আমি সেই ব্যবস্থাই করবো। তোমাকে খুব কাছে পেতে মন চায়।
আপনার সাথে আমার বিয়ে হইছে, আপনি আমার স্বামী।
আপনার সাথে আমাকে সারাজীবন
থাকতে হবে, এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
আমাকে আপনাদের বাসায় তুলে নেওয়ার আগে, আপনাকে নিয়ে এই বাসায় এক ঘরে থাকা আমার একেবারেই অসম্ভব।
আমি লজ্জায়ই মরে যাবো তাহলে ।
উদয় বললো, তোমার কথাই ঠিক …..
তোমার আমার দেখা হবে আমার বাসায়,
আমার বিছানায়, সাজানো বাসর ঘরে। অনেক ভালোবাসাবাসির হবে সেই রাত।
(বানানের ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন)