এমনও প্রেম হয় পর্ব:-৩৫

0
848

#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-৩৫

লিয়া যেনো আকাশ থেকে পড়লো। রিয়া এসব কি বলছে।

উচ্ছাস ভাইয়া আর আমার বিয়ে নিয়ে ওই বাড়িতে আলোচনা হচ্ছিলো, এটা আমি কি শুনলাম। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এযে সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার।

উচ্ছাস ভাইয়া আমার দেবর, আর দেবরের সাথে বিয়ে ছিঃ ছিঃ। এই ধরনের বিয়ে আমি খুব ঘৃণার চোখে দেখি।
বাবা মা এই বিয়ের কথা মনে আনলো কেমন করে। এমন বিশ্রী কথা ভাবলো কেমন করে।
ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে।

উচ্ছাস ভাইয়া আর আমার সম্পর্ক ভাই বোনের মতো। যদিও আমি সম্পর্কে বড় কিন্তু বয়সে উচ্ছাস ভাইয়া বড়।

তাই সে আমাকে ভাবী হিসেবে সম্মান করতো আবার বোনের মতো মায়া করতো।
সে আমাকে আর রিমি আপুকে কখনো আলাদা করে দেখেনি।
এটা বাবা মাও জানে। তারাও দেখেছে আমাদের সম্পর্কের পবিত্রতা। তাদের মাথা কি নষ্ট হয়ে গেছে।

বাবা মায়ের এই চিন্তাধারা ঘুণাক্ষরেও যদি টের পেতাম তাহলে বাবা মায়ের এই আলোচনা সেখানেই থামিয়ে দিতাম।

বুঝিয়ে বলতাম যে এটা একেবারেই সম্ভব না। তাহলে
আজ রিয়াও এই ঘটনা ঘটাতে পারতো না।

দুজনেই স্টুডেন্ট, কারো পড়াশুনা শেষ হয়নি।

দুজনের পড়াশুনায় এখন ব্যাঘাত ঘটবে।

উচ্ছাস ভাইয়া বিবিএ কমপ্লিট করবে, ইন্টার্নশিপ করবে, এম বি এ করবে তারপর চাকরি করবে। এমনই প্ল্যান ছিল তার।

নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সে উঠেপড়ে লেগেছিলো।

সেই মানুষ ক্যারিয়ার গড়ার মাঝ পথে এসে কি করলো।

আর রিয়া মাত্র ইন্টার পাশ করেছে। ভার্সিটি পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে।

কত পথ এখনও পাড়ি দেয়া বাকি। এতবড় অন্যায় কাজ করার সাহস পেলো কি করে? আমার মাথায় কিছুই আসছে না।

.
আমার শাশুড়ি প্রেম করে বিয়ে করা একদম পছন্দ করে না।

তার ধারণা প্রেম করে শুধু নষ্টা মেয়েরা। ভালো ঘরের মেয়েরা এসব প্রেম পিরিতি করে বেড়ায় না।

যেসব বাবা মা মেয়েদের প্রোপার শাসন করে না কেবল তাদের মেয়েরাই নষ্টামি করে অন্যের ছেলের মাথা চিবিয়ে খায়। টাকা খেয়ে পকেট হালকা করে আর শেষে ছেলেদের জীবন ধ্বংস করে।

ছেলেরা সুযোগ পেলে মেয়েদের ইশারা ইঙ্গিত করবেই। তাই বলে মেয়েদের সেই ইশারায় ঝুলে পড়তে হবে?

একমাত্র নষ্ট মেয়েরাই ছেলেদের ইশারায় সাড়া দিবে।
ভালো ঘরের মেয়ে হলে ছেলেদের ইশারা ইঙ্গিত করার সুযোগই দিবে না। সেদিকে ফিরেও তাকাবে না।

.
উদয়ের কোন এক কাজিন সিস্টার প্রেম করে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে, তা নিয়ে সেদিন সারাদিন আমার শাশুরির মুখে খই ফুটেছে।
ওই মেয়ের স্বভাব চরিত্র নাকি ভালো না। ভালো হলে প্রেম করতো না। প্রেম করে পালিয়ে গিয়ে আবার বিয়েও করে নিয়েছে।

ছিঃ ছিঃ___ বাবা মায়ের শাসনের অভাবে ছেলে মেয়েরা উচ্ছন্নে যায়।

ছোটবেলা থেকে শাসন করলে আজকে মেয়ে এইভাবে মুখে চুন কালি দিতে পারতো না।

আমার মেয়ে এমন করলে গলা টিপে মেরে ফেলতাম। এমন মেয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।

এই ধরনের মেয়েদের জন্য ছেলেরা নষ্ট হয়। বাবা মায়ের মান সম্মান রাস্তার ধুলায় মিশিয়ে দিলো। আরো কত যে কথা বললো সেই মেয়ের সম্পর্কে।

.
রিয়াও সেই একই ঘটনা ঘটালো। এইজন্য শাশুড়ি মা রিয়াকে ভালোভাবে মন থেকে মেনে নিবে কি না কে জানে।

মা যদি রিয়াকে দেখতে না পারে তবে রিয়া সেখানে থাকবে কিভাবে? উচ্ছাস ভাইয়া বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে থাকবে।

সারাদিন তো শাশুড়ির কাছেই থাকতে হবে ওকে। তখন রিয়া কিভাবে সহ্য করবে শাশুড়ির অবহেলা আর বকাঝকা।

রিয়া নিজেও তো অনেক রাগী, অভিমানী। ভালো মন্দ কিছু বুঝতে চায় না। কোন সমঝোতায় আসতে চায় না। ওর যেটা মনে চায় ও সেটাই করে।

আর ও যেই সিদ্ধান্ত একবার নিবে, তার বাইরে ওকে কেউ নিতে পারবে না।

.
কি থেকে কি হয়ে গেলো। পড়ায়ও মন বসাতে পারছে না লিয়া।

আমাকে নিয়েই যত সমস্যা। সব কিছুতেই আমার দোষ। সব কিছুতেই আমি দোষী না হয়ে ও দোষী। আমার আর ভালো লাগে না কিছু।
এতো টেনশন আর নিতে পারি না।

আব্বু বাসায় আসলে কি করবে বুঝতে পারছি না। লোক জানাজানি হলে মান সম্মান সব যাবে। সবার কাছে ছোট হয়ে যাবো।

রিয়া কি করলো এটা। কাজটা খুব অন্যায় করছে ওরা দুজন।

.
মিজান সাহেব অফিস থেকে ফিরে এলে ফ্রেশ হয়ে নিজের ঘরের বিছানায় আধ শোয়া হয়ে হেলান দিয়ে বসলো।
আফরোজা আস্তে আস্তে সব খুলে বললো তাকে।

মিজান সাহেব শুনে যেনো বসার মধ্যেই আছার খেলো একটা।
হতভম্ব হয়ে গেলো।
কিছুই বলতে পারলো না কিছুক্ষণ।

আফরোজা সেই তখন থেকে কেদেই চলেছে। লিয়ার চাচা চাচী, ফুফুরা জানতে পারলে ছেড়ে কথা বলবে না। সবার কাছে খুব অপমানিত হতে হবে। এই ভয়ে সে বিচলিত।

আব্বুর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে। আব্বুর সামনে যেতেও ভয় করছে।
কারন অঘটনটা যার সাথে ঘটিয়েছে সে আমার দেবর। তাই জবাবদিহিও আমাকেই করতে হবে।

যা ভাবা সেই কাজ, আব্বু আমাকে জোরে জোরে নাম ধরে ডাকলে আমি আব্বুর সামনে এসে দাড়ালাম।

রিয়া আর উচ্ছাস যে ঘটনাটা ঘটিয়েছে এই ব্যাপারে তুই কতটুকু জানিস? নাকি এই ঘটনায় তুইও জড়িত? তোরও সায় ছিল নাকি এতে?

আব্বু সত্যি বলছি আমি এসবের কিছুই জনিনা। জানলে এটা আমি কখনোই করতে দিতাম না। তোমাদের অবশ্যই জানাতাম।

.
আমার মান সম্মান আমার কাছে খুব প্রিয়। সেটা কেউ নষ্ট করলে আমি তাকে ছাড় দেবো না।

আমি এখন রিয়াকে বাসা থেকে বের করে দিবো। সে যখন নিজের রাস্তা নিজেই বেছে নিয়েছে বাকি রাস্তাও চলতে পারবে। এ বিষয়ে কারো কিছু বলার আছে?
আজ এখন থেকে ওর সাথে আমার সম্পর্ক শেষ। রিয়া নামে আমার কোন মেয়ে ছিলো এটা আমি ভুলে যাবো।

.
রিয়া এতক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলো। এবার সে কেদে উঠলো। বের করে দিলে সে কোথায় যাবে? আর নিজের পরিবার ছেড়ে সে থাকবে কিভাবে?

.
রিয়া আর উচ্ছাস ভেবেছিল গোপনে বিয়েটা সেরে রাখবে। এখন কাউকে কিছু জানাবে না।
যার যার ভাবে পড়াশুনা শেষ করবে। আর আগের মতোই দুজনে গোপনে দেখা সাক্ষাত করবে। কিন্তু বিধি বাম একদিন পার হলো না, সবাই জেনে গেলো।

এখন বাড়ি থেকে বের করে দিলে কোথায় যাবে?

উচ্ছাসের বাবা মা যদি বিয়েটা মেনে না নেয়! তাহলে কি করবো তখন?

উচ্ছাস নিজেও তো একজন স্টুডেন্ট। কোন ইনকাম সোর্স নেই। আমার দায়িত্ব সে নিবে কিভাবে?

রিয়া নানান ভাবনায় আর ভয়ে কেদেই চলেছে।

.
মিজান সাহেব ভীষন রেগে আছে। তার চোখ রাগে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। কপালের দুপাশের শিরা ফুলে উঠেছে সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

অবস্থা বেগতিক দেখে লিয়া খুব সাহস করে বললো,

আব্বু রিয়াকে বাসা থেকে বের করে দেয়া কোন সমাধান না। ও ছোট মানুষ একটা ভুল করে ফেলেছে। ওকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি বলি কি তুমি কালকে আমার শ্বশুর শাশুড়িকে উচ্ছাস ভাইয়া সহ আসতে বলো। আলাপ করে দেখো, তারা কি বলে। আমি নিশ্চিত এই ব্যাপারটা তারাও জানে না। আলাপ আলোচনা করে দেখো কি হয়।

তখন না হয় ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিও কি করবে।

.
তাহলে ঐ বাড়িতে ফোন কর এখনই। তাদের আসতে বল, আর উচ্ছাসকে যেনো অবশ্যই নিয়ে আসে।

লিয়া ফোন করে তাদের আসতে বলে। হঠাৎ ডাকার কারণ জানতে চাইলো তারা।

লিয়া বললো, আব্বু আপনাদের সাথে কথা বলতে চায়।

উচ্ছাস ভাইয়াকেও সাথে নিয়ে আসতে বলেছে।

তারা আসবে আর উচ্ছাসকেও নিয়ে আসবে বললো।

উচ্ছাসের বাবা মা খুব খুশি হলো। তারা ভাবলো, আমরা যা মনে মনে ভাবছি, হয়তো তারাও একই বিষয় নিয়েই ভাবছে।

লিয়া আর উচ্ছাসের বিয়ের ব্যাপারে বোধয় কথা বলতে চায়।

.
লিয়া রিয়ার চোখ মুছে দিয়ে ওকে সাথে নিয়ে মিজান সাহেবের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

নিজের ঘরে গিয়ে বোনকে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিয়ে থাকলো।

.
এদিকে জিয়ান দেশে ফিরে এসেছে কয়েক দিন হলো। ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেছে অনেক আগেই। রেজাল্টও হয়ে গেছে। ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করেছে। ক্যাম্পাস থেকেই জব অফার পেয়ে জবে ঢুকে পড়েছে। হেলদি সেলারি দিচ্ছে কোম্পানি ওকে।

.
কোর্স কমপ্লিট করে দেশে ফেরার কথা থাকলেও জিয়ান দেশে ফিরে আসেনি। সেখানে সে চাকরিতে ঢুকে পড়েছে। সেলারীও খুব ভালো পাচ্ছে।

জিয়ান দেশে ফিরতে চায়নি। ওখানেই সে ভালো আছে।

চাকরির পাশাপাশি আরো স্টাডি করতে চায়। দেশে ফিরে এসে কি হবে। শুধু শুধু মন খারাপ হবে।

জিয়ান ওর বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তারা কেঁদে কেঁদে নিয়মিত ছেলেকে ফোন করতো দেশে ফিরে আসতে বলতো। কিন্তু জিয়ান সে কথা কানে তোলেনি।

শুধু এক কথাই বলতো অফিস থেকে ছুটি পাবো না এখন। অফিসে কাজের অনেক চাপ। ছুটি দিবে না।

ভিডিও কলে তো আমরা প্রায় রোজই কথা বলছি। তাহলে তোমরা এতো অস্থির হচ্ছো কেন?

ছুটি পেলে অবশ্যই দেশে গিয়ে কয়েকদিন থেকে আসবো তোমাদের কাছে।

.
জিয়ানের বাবার টাকার অভাব নেই। তারা বেশ সলভেন্ট তবুও জিয়ান প্রতিমাসে হেলদি একটা এমাউন্ট পাঠায় বাবার একাউন্টে।

কিছুদিন পর জিয়ানের কাছে ফোন গেলো, ওর বাবা বললো তোর মায়ের শরীর খুব খারাপ। সারাক্ষণ শুধু তোর কথা বলে। তোকে দেখতে চায়। যদি পারিস শেষবারের মত দেখে যা।

.
মায়ের অসুখের কথা শুনে জিয়ান আর স্থির থাকতে পারলো না। দেশে ফেরার মনস্থির করলো।
বাবাকে বললো, আমি আসছি যত দ্রুত সম্ভব।

জিয়ানের মা সত্যিই খুব অসুস্থ। ছেলের জন্য কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে গেছে। অনেক দিন ছেলে দেশে ফিরে না। একমাত্র সন্তানকে না দেখে আর থাকতে পারছিল না।

(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here