এমনও প্রেম হয় পর্ব:-৩৭

0
1191

#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-৩৭

উচ্ছাস হাঁটু গেড়ে বসে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বললো, আমি তোমাদের না জানিয়ে রিয়াকে বিয়ে করেছি। গতকালকে আমরা বিয়ে করেছি।

আমি স্বীকার করছি এটা আমি অন্যায় করেছি। এটা করা আমার উচিত হয়নি।

কিন্তু আমি কাজটা করতে বাধ্য হয়েছি। আমি রিয়াকে ভীষন ভালোবাসি। ওকে আমার জীবন থেকে আলাদা করার কথা ভাবতেও পারি না।তাই ওকে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে রাখতে বিয়ের বিকল্প আমার কাছে আর কিছুই মনে হয় নি। আমার কিছু করার ছিলো না। আমি সম্পূর্নই পরিস্থিতির শিকার।

আমাকে আপনারা সবাই ক্ষমা করে দেন। আমার ভুল হয়েছে।আর কাউকে না হলেও ভাবীকে অন্তত জানানো উচিত ছিলো।

.
মিজান সাহেব বললো,
বেয়াই সাহেব এবার আপনি যা বলার বলেন, আমার আর কিছুই জিজ্ঞেস করার নেই, বলারও নেই।

.
উচ্ছাসের বাবা বললো,
আমার পরিবারে প্রেম করে বিয়ে একেবারেই নিষেধ, এটা তুই জানতি না?

.
জানতাম, কিন্তু আমার কোন উপায় ছিল না। আমি নিরুপায় হয়ে কাজটা করেছি। তোমরা আমাকে এই অন্যায়টা করতে বাধ্য করেছো।

.
আমরা কোন কিছুতে তোকে বাধ্য করিনি। আর তুই আমাদের ছেলে, আমরা তোর জন্মদাতা।আমাদের সব কথা শোনা তোর কর্তব্য। সেটা যখন হয় নি,
এখন তোর আর আমাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না।

আমাদের লজ্জিত করতে আর কিছু বাকি রাখিস নি। আমার মান সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিলি।

তুই আজ থেকে আমাদের কেউ না। আমি তোকে ত্যাজ্য করবো।
আমার বাড়িতে ঢুকা তোর জন্য সম্পূর্ণ নিষেধ। আমার বাড়িতে তোর কোন জায়গা নেই। এই মুহূর্ত থেকে তোকে ছেলে বলে অস্বীকার করছি।

.
উচ্ছাসের মা সমানে কেদে চলেছে।
আমি আত্মীয় স্বজনদের সামনে মুখ দেখবো কিভাবে? আমার উদয় কোনদিন আমার কথার অবাধ্য হয়নি।

ওর মতো নেক সন্তানকে আল্লাহ উঠিয়ে নিলো। আমার বুক খালি করে চলে গেলো সে।
তুই আমাদের মান সম্মান সব ধুলিস্যাৎ করে দিলি। এই জন্যই কি তোকে পেটে ধরেছিলাম?

.
বেয়াই সাহেব আপনার মেয়েকে
ও ভালোবেসে বিয়ে করেছে, এখন ও আপনার কাছে দোষী। কি শাস্তি দিবেন, সেটা আপনিই ঠিক করেন। ও এখন থেকে আমাদের কেউ না।
আমরা এর মধ্যে থাকতে চাই না। এ বিয়েও আমরা মানি না। আর এই ছেলেকেও বাড়িতে জায়গা দিবো না। বিদায় দেন, আমরা এবার যাই তাহলে।

.
মিজান সাহেব বললো, যাই মানে! সমস্যা সমাধান না করে কোথায় যাবেন?

.
ও যদি আমার কেউ হতো তবে অবশ্যই সমস্যা সমাধানের চিন্তা করতাম।

.
আমিও রিয়াকে এখন বাড়ি থেকে বের করে দিবো। কালকেই বের করে দিতে চেয়েছিলাম, শুধু লিয়ার অনুরোধে সে এখানে আছে এখনো।

প্রেমের বিয়েতে আমার কোন সমস্যা নেই। ছেলে মেয়েরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতেই পারে।

আমার সমস্যা হলো ও নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে আমার মান সম্মানের ওপর আঘাত করেছে।

আমার মান সম্মান আমার অনেক প্রিয়। সেখানে কেউ আঘাত করলে আমি তাকে ক্ষমা করি না।

আত্মীয় স্বজন, পাড়াপড়শির কাছে খুব ছোট হয়ে যাবো, যখন এটা জানাজানি হবে।

.
উচ্ছাস তুমি রিয়াকে বিয়ে করেছো ভালো কথা, এখন ওকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও।

.
উচ্ছাস বললো আংকেল আমি এখন ওকে নিয়ে কোথায় যাবো?

.
যখন না জানিয়ে দুজনে বিয়ে করেছো তখন মনে ছিলো না এই কথা? তখন তোমার যোগ্যতার কথা ভাবো নি? হুট করে বিয়ের মত এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে?

.
আমি ভেবেছি আমার পড়াশুনা শেষ করে তারপর সবাইকে বলবো। ব্যাপারটা এরকম জানাজানি হয়ে যাবে আমি ভাবিনি।

.
সে সব আমি জানি না, তুমি নিলেও ও তোমার সাথে যাবে, আর না নিলেও ওকে একাই এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। আমি ওকে আমার বাড়িতে রাখবো না। ওর জায়গা এই বাড়িতে আর হবে না। কোন অবাধ্য সন্তানের বাবা আমি হতে চাই না। আমি সমাজে কতটুকু লজ্জিত হবো সেটা শুধু আমিই জানি। ও আমার মনের মধ্যে আর জায়গা পাবে না। ওকে আর আমি দেখতে চাই না। আমার এক কথা, ব্যাস।

.
দরজার আড়ালে দাড়িয়েছিল লিয়া আর রিয়া। বড়রা কথা বলছে তাই ওরা ভিতরে আসেনি। কিন্তু এসব কথা শুনে দরজার ওপাশে থাকতেও পারছে না।

লিয়া দাড়িয়ে দাড়িয়ে ছটফট করছে শুধু।

রিয়া অঝোর ধারায় কেদেই যাচ্ছে। সে কাল থেকে কিছু খায়নি কেঁদেই চলেছে। চোখদুটো লাল হয়ে ফুলে একাকার হয়ে গেছে। দেখলে মনে হবে চোখ উঠেছে।

.
এবার আর থাকতে না পেরে লিয়া দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো, বললো আব্বু শোন, বাবা মা আপনারাও শোনেন, এখানে বাবা মা আর আব্বু আম্মু ছাড়া আর কেউ নেই। ওদের বিয়ের কথা আমরা যদি কাউকে না বলি তাহলে অন্য কেউ জানবেই বা কিভাবে?

ওরা ছেলেমানুষীর ছলে একটা ভুল করে ফেলেছে। ওদের ক্ষমা করে দাও।
.
আমি বলি কি, ওরা যে যার বাসায় থেকে পড়াশুনা শেষ করুক। পড়াশুনা শেষ হলে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে সামাজিক ভাবে আবার বিয়ে পড়িয়ে দিও।

ততোদিন কেউ কারো সাথে কোন দেখা সাক্ষাত করবে না। এতে তোমার মান সম্মানেরও হানি হবে না আর ওর লেখাপড়াও হবে। ওকে পড়ার সুযোগ দাও আব্বু। জীবনে পড়াশুনাটা অনেক জরুরী। প্রতিটা মেয়ের নিজের পায়ে দাড়ানো উচিৎ। জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে হলে পড়াশুনার বিকল্প কিছু নেই।

.
আর মা আপনাকে বলি, উচ্ছাস ভাইয়া পড়ালেখা শেষ করে যখন ভালো চাকরি করবে, তখন আপনাদের অনুমতি নিয়ে, আপনাদের সাথে করেই রিয়াকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যাবে।
তাতে আপনার মনেও কোন প্রেম ঘটিত বিয়ে বিষয়ে সংশয় থাকবে না। ভাইয়াকে দূরে ঠেলে দিয়ে ভাইয়ার পড়াশুনার ক্ষতি করবেন না। তার পরীক্ষা সামনে। আপনাদের সাপোর্ট না থাকলে ভাইয়ার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
উদয় চলে গেছে পরপারে, তাকে ফিরে পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। ওর জন্য কেঁদে লাভ নেই।

রিমি আপু থাকে সাত সমুদ্র তের নদীর ঐপারে। ডাকলেই যখন তখন কাছে পাবেন না।

বাকি রইলো উচ্ছাস ভাইয়া, নিজেদের ইগো বজায় রাখতে তাকে দূরে ঠেলে দিবেন? নিজেদের আত্মাভিমান বজায় রাখতে ত্যাজ্য করবেন? সন্তানের চাইতে মান সম্মান, ইগো বড় হলো আপনাদের কাছে?

কেনো মা?
মানুষ কি ভুল করে না? ওরা ভুল করেছে, শোধরাতে সুযোগ দেন। নিজেদের ভুল শুধরে নিয়ে ওরা আপনাদের মনের মত হবে। সেই সুযোগটা দিবেন না?

.
ওরা দুজন আপনাদেরই ছেলে মেয়ে। ওদের এখন পথে নামিয়ে দিলে ওরা কোথায় যাবে? দুইটা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। এতো বড় ভুল করবেন না। পরে আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

নিজেদের সম্মান আর ইগোর জন্য ছেলে মেয়েদের জীবন নষ্ট করবেন না।

.
মা বাবা আপনাদের দুজনকেই একটা কথা বলি,
আমার জন্য মনে কষ্ট নিবেন না। এখানে রিয়া আর উচ্ছাস ভাইয়া জড়িত না থাকলেও আমি উচ্ছাস ভাইয়াকে বিয়ে করতে কখনোই রাজি হতাম না।

কারন উচ্ছাস ভাইয়াকে আমি সত্যিই আপন ভাইয়ের চোখে দেখি। এই জায়গাটা আমি কখনোই নষ্ট করবো না। সারা জীবন আমরা ভাই বোনের সম্পর্কটা ধরে রাখতে চাই।

এখন ওদের ক্ষমা করে দেন। বাবা মা হয়ে যদি সন্তানকে ক্ষমা না করেন তাহলে ওরা কোথায় যাবে।

.
মিজান সাহেব বললো,
ঠিক আছে আমি তোর কথা মেনে নিলাম। উচ্ছাস যদি কোনদিন যোগ্য হয়ে আসতে পারে সেদিন আমি ভেবে দেখবো, উচ্ছাসের কাছে রিয়াকে দেয়া যায় কি না।

কিন্তু রিয়া যদি আমার কথা অমান্য করে উচ্ছাসের সাথে যোগাযোগ রাখে সেদিন আমি আর কারো কোন কথা শুনবো না। সোজা বাড়ি থেকে বের করে দিবো। আমি এক কথার মানুষ এটা তোরা ভালো করেই জানিস।

.
রিয়া তোমার কথা শুনবে আব্বু। লিয়া রিয়াকে দরজার ওপাশ থেকে ভিতরে এনে বললো,
এই রিয়া আব্বুকে কথা দে। আব্বুর সব কথা শুনবি। আব্বুর কথার বাইরে এক কদমও চলবি না।

.
রিয়া কাদতে কাদতে কথা দিলো সে আর উচ্ছাসের সাথে কোন রকম যোগাযোগ রাখবে না। আব্বুর ইচ্ছার বাইরে কিছু করবে না।

.
উচ্ছাস রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। ওর বুঝতে বাকি রইলো না যে রিয়া কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রিয়ার এই অবস্থা দেখে উচ্ছাসের কলিজা ফেটে যাচ্ছে। হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হলো।

ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে রিয়াকে জাপটে জড়িয়ে ধরতে। ওর কষ্টগুলো নিজের করে নিতে। ও যেনো ভালো থাকে। যত কষ্ট যত ঝড় আমার ওপর দিয়ে যাক তবুও আমার রিয়া ভালো থাকুক। আমার ভুলের জন্য আজ রিয়া অশান্তি ভোগ করছে।
এখন না হয় কেঁদে কেঁদে কিছুটা মন হালকা করবে। কিন্তু আমার থেকে যখন বাড়ির বড়রা ওকে আলাদা করে দিবে তখন ও থাকবে কিভাবে?

.
উচ্ছাস ভাইয়া এবার আপনি বাবা মাকে কথা দেন। বাবা মায়ের মনে কষ্ট দিয়েছেন, সেজন্য ক্ষমা চেয়ে তাদের কথা মেনে নেন।

.
কোন উপায় না দেখে উচ্ছাসও কথা দিলো যে সে আর রিয়ার সাথে কোন রকম যোগাযোগ রাখবে না। কাদতে কাদতে বললো একথা।

বলেতো দিলো যোগাযোগ রাখবে না, কিন্তু রিয়াকে না দেখে ওর সাথে কথা না বলে থাকবে কিভাবে, বাঁচবে কিভাবে?

.
চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো উচ্ছাস।

.
লিয়া ভাবলো পরেরটা পরে দেখা যাবে, আপাতত সমুহ বিপদ কেটে গেছে দেখে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। ওর বোন আর দেবর কেউ ঘর ছাড়া হয় নি।

.
শাশুড়ি মা হেলেন লিয়াকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাদলো।
তোমাকে আমি ধরে রাখতে পারলাম না। তুমি আমার অনেক প্রিয়। তোমাকে আমি খুব পছন্দ করি, খুব ভালোবাসি মা।
তুমি ভালো থেকো, খুশি থেকো সবসময়।

.
মা আমি কোথায় যাচ্ছি! আমি তো সবসময় আপনাদের মাঝেই থাকবো। আমিও আপনাদের অনেক ভালোবাসি শ্রদ্ধা করি। আমি সবসময় আপনার আদরের মেয়ে হয়েই থাকবো। রাখবেন তো আমায় আপনার মেয়ের মত করে?

(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here