এমনও প্রেম হয় পর্ব:-৪০ শেষ পর্ব

0
2273

#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-৪০
(শেষ পর্ব)

লিয়া কিছুতেই বিয়ে করতে চায়নি। কিন্তু সে কথা জোরালোভাবে ওর আব্বুকে বলার সাহস নেই। আব্বু আম্মুকে সে কষ্ট দিতে চায় না।

রিয়ার ঘটনার পর তো আরো চায় না। রিয়ার ঘটনায় আব্বু আম্মু মনে খুব কষ্ট পেয়েছে।

আব্বু এখনও রিয়ার সাথে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কথা বলে না।

যদিও উচ্ছাস ভাইয়া আর রিয়া মাঝে মাঝে দেখা করে, ফোনে কথা বলে আব্বু পারমিশন দিয়েছে তবে সীমিত সময়ের জন্য।

.
রিয়া সবসময় মন মরা হয়ে থাকে। পড়াশুনা করে, ভার্সিটিতে যায়, টুকটাক ঘরের কাজ করে,
আয়ুশের সাথে খেলে, পড়ায়, ওর দেখাশুনা করে। তারপরও ওর মন উদাস থাকে।

এটা দেখে আমার খুব কষ্ট লাগতো। মায়ের পেটের বোনতো ওর কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না।

তাই একদিন আম্মু আব্বুর ঘরে গিয়ে বললাম,

আব্বু অনেকদিন তো হয়ে গেলো উচ্ছাস ভাইয়া আর রিয়ার যোগাযোগ বন্ধ। দুজনেই কেউ কারো সাথেই যোগাযোগ রাখে না। ব্যাপারটা কি ঠিক হচ্ছে?

.
মিজান সাহেব বললো, কেনো তাতে কি হয়েছে? তোর কাছে বেঠিক কেনো মনে হচ্ছে?

.
না মানে আমি বলছিলাম কি, উচ্ছাস ভাইয়া বি বি এ পরীক্ষা দিয়ে একটা অফিসে ইন্টার্ন করছে। চাকরি হয়ে যাবে হয়তো আর রিয়াও ভার্সিটিতে পড়াশুনা করছে। ওরা দুজনেই ম্যাচিউর। তারপর দুজনেই বিবাহিত।
এখন ওদের এতো কড়াকড়ি করে দূরে সরিয়ে রাখলে, দেখা সাক্ষাৎ করতে না দিলে উচ্ছাস ভাইয়ার মন যদি বদলাতে শুরু করে। তখন কি রিয়ার জন্য ব্যাপারটা ভালো হবে? ওতো মরে যাবে এমন কিছু হলে।

.
আফরোজা বললো সে কথা তোর আব্বুকে কে বোঝাবে।এই মানুষটা একটা পাষাণ, কঠিন হৃদয়ের মানুষ। আমিও বলেছিলাম এই কথা সে শোনেনি।
দৃষ্টির আড়ালে গেলে মনের আড়ালে যেতে সময় লাগবে না। তার ওপর পুরুষ মানুষ।
এমন কিছু হলে বিপদে পড়বে আমার মেয়েটা। ভুল না হয় একটা করেই ফেলেছে, সন্তানতো আমার। ওকে দেখলে কষ্ট লাগে।

আব্বু রিয়া কিন্তু সেদিনের পর একদিনের জন্যও তোমার কথার অবাধ্য হয়নি। উচ্ছাস ভাইয়ার সাথে কোনরকম যোগাযোগ রাখেনি ও।

মিজান সাহেব একটু চিন্তা করে বললো, তোর আর তোর মায়ের ইচ্ছাই পূরণ হোক তাহলে।

সপ্তাহে একদিন কিছু সময়ের জন্য ওরা দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবে।

তবে আমি অনুমতি দিয়েছি এটা ওদের বলার দরকার নেই। তাহলে লাই পেয়ে যাবে। তুই যেভাবে ভালো মনে করিস সেভাবেই কর। তবে শর্ত কিন্তু ওই একটাই সপ্তাহে একদিন অল্প কিছু সময়ের জন্য অনুমতি দিলাম মনে থাকে যেনো।

আমি খুব খুশি হয়ে আব্বুর রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
আব্বু আমার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে, আমার কথা রাখার চেষ্টা করে।

সেই আব্বুকে আমি কিছুতেই দুঃখ দিতে পারবো না। কষ্ট দিতে পারবো না।

আব্বু আম্মুকে কষ্ট দিতে না চাইলে আমাকে বিয়েতে রাজি হতে হবে। কিছুতেই আব্বুকে সমাজের লোকের কাছে লজ্জিত হতে দিবো না।

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো জিয়ানের থেকে দূরে সরে থাকতে চাইলে ওকে এই বিয়েতে রাজি হতে হবে।

জিয়ানের সুন্দর জীবনের সাথে আমার এই অপয়া জীবনটাকে কোনভাবেই জড়াতে চাই না।

জিয়ানকে খুব ভালোবাসি। এক সময় আবার হয়তো দুর্বল হয়ে যেতে পারি। তাই ওর থেকে দূরে থাকার একটাই পথ আব্বুর কথা মত তার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে যাওয়া।

.
অনিচ্ছা সত্বেও বেশ ধুমধাম করে আমার বিয়ে হয়ে গেলো।

আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছেলে আয়ুশকে পিছনে ফেলে আমি চলেছি নতুন সংসারে। কি বিচিত্র আমার জীবন। কি যে কষ্ট হচ্ছিলো তখন সেটা ভাষায় বর্ণনার অতীত।

.
উদয়ের বাবা মাও এই বিয়েতে সামিল হয়েছে। তারা আমার নতুন জীবনের জন্য অনেক দোয়া করে বললো, আয়ুশের জন্য কোন চিন্তা করো না। আমরা ওকে সামলে নিবো। ওর জন্য কোন চিন্তা করো না।
.
একমাত্র তুমি ছাড়া এখানে ওর সবাই আছে। তুমি নতুন সংসার নতুন মানুষদের সাথে মিলেমিশে থাকো। তাদের সুখী করো। আমার বাড়িতে যেমন তুমি ঘর আলো করে ছিলে, তেমনি নতুন সংসারেও তুমি তোমার আলোয় আলোকিত করে দিও। নতুন সংসারের সবাইকে আপন করে নিও।

.
আব্বু আম্মু, বাবা মা আমাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে গাড়িতে তুলে দিলো। বিদায়ের সময় জড়িয়ে ধরে সবচেয়ে বেশি কাদলো হেলেন মা। মহিলা আমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসতো।

আমাকে গাড়িতে বরের পাশে বসিয়ে দিলো উচ্ছাস ভাইয়া আর রিয়া।
উচ্ছাস ভাইয়া বললো, আপু আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো। আপনি আমার আর রিয়ার জন্য অনেক করেছেন।

আমার কানে কোন কথাই ঢুকছে না। আমি কেঁদেই চলেছি।

.
গাড়িতে বসে শুধুই কাদছি। আমার আশেপাশে কে আছে , তারা কি বলছে , কি নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে সেদিকে আমার কোন খেয়াল নেই। কে আমার বর , সে কেমন দেখতে , কোনদিকে আমার হুশ নেই।

আমার চোখে শুধু ভাসছে আয়ুশের কান্না করা মুখটা। ওর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আমি আরো বেশি করে কান্না করে যাচ্ছি।

.
গাড়ি কিছুক্ষন চলার পর একসময় এসে থামলো বরের বাড়ি। মুরুব্বীরা এসে আমাকে নামিয়ে নিলো।

বধূ বরণ হলো। মিষ্টি মুখ করানো হলো। এর মাঝে একটি বারের জন্যও মাথা উচু করে চোখ মেলে কিছুই দেখিনি। মাথা নত করে নিঃশব্দে শুধুই কেঁদে চলেছি। টপটপ করে হাতের ওপর চোখের পানি পড়ছে।

অনেক রাত হইছে বলে আমাকে ঘরে দিয়ে আসলো ননদ আর জা সম্পর্কের মেয়েরা। এদের কাউকেই আমি চিনিনা।

আমাকে ঘরে নিয়ে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে তারা চলে গেলো। আমি তাদের গল্পের নীরব শ্রোতা।

আমি চুপ চাপ বসে আছি। একটু পর একটি মেয়ে এসে কিছু খাবার ফলমূল দুধ রেখে গেলো টেবিলের ওপর।

.
রাত তখন অনেক। খুব বেশি কান্না করার ফলে মাথাটা ধরেছে।

আমি একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরলাম। একটু পর দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। আমি আরো গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলাম। কোন নড়াচড়া করলাম না।

দরজা লক করে এসে কেউ খাটের ওপর বসে আমার বাহুতে হাত রাখতেই আমি চট করে উঠে বসে হাঁটুতে মুখ গুজে দিলাম।
দুহাত দিয়ে ভাজ করা দুই হাঁটু জড়িয়ে ধরে রাখলাম। হাত পা কাপছিলো ভীষণভাবে।

নতুন মানুষটা কেমন হবে কে জানে? লোকটা কাছে এসে বসলো, আমার হাত টেনে নিয়ে হাতে হাত রাখলো। আমার আঙ্গুলের ভিতর তার হাতের আঙ্গুল রেখে কিছুক্ষন খেলা করলো। আমার হাতের তালুতে তার হাতের তালু ঘষলো আস্তে করে। হ্যান্ডসেক করার মত করে হতে হাত ধরে হালকা করে চাপ দিচ্ছিলো।

এরপর আমি টের পেলাম আমার অনামিকায় একটা আংটি পড়িয়ে দিলো। আংটি পড়ানো হাতে চুমু খেলো। আমি কেপে উঠলাম। কেমন যেনো লাগলো, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।
আমার জীবনে আমি আর কাউকে চাইনি তাই কেমন যেনো লাগছিলো।

তারপর আমার মাথার ঘোমটা সরিয়ে দিয়ে, তার দুই হাত দিয়ে আমার মুখ উঁচু করে ধরলো।

বললো, মাশা আল্লাহ !
চোখ খোল তাকাও আমার দিকে। আমার চোখে চোখ রাখো। আমি তোমাকে প্রাণ ভরে দেখতে চাই।

.
আওয়াজটা খুব পরিচিত মনে হলো।
আমি মুখ তুলে লোকটার দিকে তাকালাম।

একি এতো জিয়ান। কিভাবে সম্ভব! এবার আমি সত্যি খুব ভয় পেলাম।

আপনি এখানে কেন? আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে কোথায়?

আপনি এখান থেকে যান। আপনাকে যদি কেউ এখানে দেখে আমার বদনাম হবে। প্লিজ যান এখান থেকে।

.
আপনার থেকে দূরে থাকার জন্য আমি এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। আর এখানেও আপনি!

আমার খুব অস্বস্থি লাগছে, আপনি বেরিয়ে যান এ ঘর থেকে বলেই কান্না জুড়ে দিলাম।

.
জিয়ান হাসতে হাসতে বললো, তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে আমি আসতে নিষেধ করে দিয়েছি। মেরে ভাগিয়ে দিয়েছি। সে এখানে আর কখনোই আসবে না। সে তোমাকে আমার কাছে দিয়ে চলে গেছে। এখন থেকে তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে সারাজীবন। তুমি শুধুই আমার।

কি বলছেন এসব যা তা। আপনি যান নাহলে আমি চিৎকার করবো। যাবেন নাকি চিৎকার করবো?

চিৎকার করবে? করো, কেউ আসবে না তোমার চিৎকার শুনে। ভিলেন স্টাইলে হা হা হা করে হেসে উঠলো।

.
লিয়া যেই না চিৎকার করতে যাবে, জিয়ান ওর মুখ চেপে ধরলো। কি করছো, হচ্ছে কি এসব? পাগল হলে নাকি?
মান ইজ্জত মারবে নাকি আমার? চিৎকার করছো কেনো?

আমার সাথেই তোমার বিয়ে হয়েছে। আমিই তোমার বর। যখন আয়নায় মুখ দেখানো হলো তখন সেখানে আমাকে দেখনি?

না তো কখন আয়না দেখালো?

ও আয়না দেখায়নি!? বলেই হেসে ফেললো। ভুলে গেছিলো বোধয় সবাই। আসলে আমিই বিয়ের আসরে আয়না চ্যাপ্টার করতে নিষেধ করেছি।

আচ্ছা আয়নার দরকার নেই এখন সরাসরি আমার চোখে চোখ রাখো।

লিয়ার বিস্ময়ের ঘোর এখনও কাটেনি। বড় বড় চোখ করে তাকায়। এটা কিভাবে সম্ভব?

বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে কেঁদে ফেললো। আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।

জিয়ান লিয়ার চোখ মুছে দিয়ে কপালে একটা গভীর চুমু খেলো।

.
ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসার পরশে আমার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো।

কি বলছেন এসব, কিভাবে সম্ভব এটা? আমার তো এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না।

.
আমি জিয়ানকে সরিয়ে দিয়ে নিজেও সরে বসলাম। বাজে কথা রাখেন। আমি এসব বিশ্বাস করি না।
আপনার আমার সম্পর্কের কথা অন্য কেউ না জানলেও আম্মু জানে আর নাফিসা জানে।

আম্মু আমাকে কিছুই বলেনি,আর নাফিসাতো পুরা অনুষ্ঠান জুড়ে আমার সাথেই ছিলো। ওতো আমাকে কিছুই বলেনি আপনার কথা।

.
জিয়ান বললো,
তোমার কাছে গোপন রাখার জন্য আমিই বলেছিলাম।

.
বিয়ে পড়ানোর সময় কাজী সাহেব আপনার নাম বলেনি।
অন্য কি যেনো একটা নাম বলেছিল।

.
ইশরাক আজোয়াদ বলেছিল তাই তো? এটা আমার আসল নাম, আর ডাক নাম জিয়ান। কোনদিন জানতে চাওনি তাই আমার ভালো নাম কখনো বলা হয়নি।

আমি সবাইকে নিষেধ করেছিলাম বলতে, তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে।

তুমি মুখ তুলে তাকালেই আমাকে তোমার পাশেই বসা দেখতে পেতে।

.
থাক, না দেখছো একদিকে ভালোই হইছে, বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছো না, আর বিয়ের আগে দেখলে হয়তো বিয়েটাই হতে দিতে না। সব ভন্ডুল করে দিতে। তোমাকে আর পাওয়া হতো না আমার।

দেখে ভালো লাগছে আমার বাঘিনী আগের মতোই আছো, একটুও বদলাও নি।

লিয়ার ফোনে একটা কল আসে। লিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নাফিসার কল।

.
সরি দোস্ত এমন বিশেষ রাতে মোহনীয় ক্ষণে ডিস্টার্ব করার জন্য। কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। খুব জানতে ইচ্ছা করছিলো তোর বাসর কেমন কাটছে মনের মানুষের সাথে?
কি উপহার দিলো স্পেশাল নাইটে?

ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসার পাশাপাশি গিফটও আদায় করে নে। বলেই হেসে ফেললো।

.
আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম, নাফিসা তুই আমাকে অন্ধকারে রাখলি কিভাবে? সব জেনেও তুই আমাকে কিছুই বললি না। কিভাবে পারলি এটা করতে। তোর সাথে কোন কথা নেই।
ফোন রাখ তোকে পরে দেখে নিবো।

.
আচ্ছা গুড নাইট।ওপাশ থেকে মিষ্টি হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সাথে ভাইয়ার হাসির আওয়াজও আসছে।
লজ্জায় আমি শেষ।

.
কাজটা ঠিক হয়নি জিয়ান। আমি আপনার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আর সেই আপনি বর বেশে আমার সামনে।

আমি আপনার সেই বাঘিনী নই। যে লিয়াকে একসময় ভালোবাসতেন , সে লিয়া মরে গেছে। আর যে লিয়া আপনার সামনে বসে আছে, সে একজন বিধবা মহিলা, এক বাচ্চার মা।

.
এবার তুমি বাজে
কথা বলছো। মরুক তোমার দুশমন।

ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এখন তুমি আর বিধবা নও। আমার বিয়ে করা বউ তুমি। কয়েক ঘণ্টা আগেই বিয়ে হয়েছে আমাদের।

আমার সদ্য বিয়ে করা বৌকে তুমি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারো না।

আমার বউকে আমি খুব ভালোবাসি। আর এই ভালোবাসা আজকের না, সেই ছোটবেলার ভালোবাসা। এই বউটাই হচ্ছে আমার সেই ছোট্ট ভীতু হরিণীটা।

.
তোমার অতীত জেনেই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। আমার কাছে তুমিই মুখ্য বিষয় , তোমার অতীত না।

এতদিন তোমার আশেপাশে থেকেছি, আড়াল থেকে দেখেছি। সামনে আসিনি।

প্রেয়সীকে চোখের সামনে দেখেও কাছে আসতে না পারার যে কি কষ্ট সেটা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।
ভালোবাসি তোমায়, খুব ভালোবাসি। আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে কিস করলো।

.
আমার মাথায় কিছুই আসছে না। সবকিছু আমাকে খুলে বলেন।
আমার আব্বু আম্মুকে
কি বলে রাজি করিয়েছেন।

আর এতো বড় একটা ব্যাপার সবাই আমার কাছে গোপন করলো কিভাবে?

.
তোমার আমার বিয়েটা অনেক খানি এগিয়ে দিয়েছে নাফিসা। ওকে অনেক ধন্যবাদ। আর ওকে স্পেশাল ট্রিট দিবো আমি, সাথে গিফটও পাবে।

ফেইসবুকে নাফিসার সাথে আমার কথা হতো। আর যা কথা হতো সব তোমাকে নিয়ে।

.
কয়েক মাস আগে আমি দেশে এসেছিলাম তখন তোমাকে সাদা কাপড় পড়া মলিন মুখে দেখেছি।
সেই থেকেই মনের মধ্যে একটা খটকা লেগেছিলো।

তখন থেকেই নাফিসাকে নক করতে শুরু করলাম।

তোমার সব খবর ও আমাকে পৌঁছে দিতো। তুমি কেমন আছো, কি করছো, কখন কোথায় যাচ্ছো সব ইনফরমেশন আমি নাফিসার কাছ থেকে পেতাম।

তোমার বিয়ে হয়ে গেছে এই খবর শোনার পর তোমাকে হারিয়ে আমি পাগলপ্রায় হয়ে গেছিলাম। অনেক সময় লেগেছে ডিপ্রেশন কাটাতে।

তারপর পরীক্ষা শেষ হতেই ওখানেই একটা চাকরি পেয়ে যাই। দেশে ফেরার ইচ্ছাই ছিলো না। কার জন্য ফিরবো। যাকে নিয়ে স্বপ্ন সাজিয়েছি সেতো অন্যের ঘরে চলে গেছে। আমার মনটা যে ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে।

মনকে বুঝিয়ে নিয়েছিলাম দেশে আর ফিরবো না। প্রয়োজনে আব্বু আম্মুকে কানাডা নিয়ে যাবো। এখানে আমার তো আর কেউ নেই। আব্বু আম্মু ছাড়া।

.
আবার তোমাকে নিজের করে পাবো তাই হয়তো ভাগ্য আমাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলো কয়েক মাস আগে।

তখনই নাফিসার কাছে জেনেছি আয়ুশের বাবা বেঁচে নেই।

আমার তখন দেশে থেকে যাওয়ার কোন স্কোপ ছিল না। কোম্পানি থেকে বারবার ফিরে যাবার চাপ দিচ্ছিলো।
নাহলে আরো কিছুদিন দেশে থেকে তোমার মুখোমুখি হতাম।

আবার ভাবলাম সামনে তোমার এইচ এস সি পরীক্ষা, তোমাকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না।

তাই কানাডা ফিরে গেলাম। ফিরে গেলাম ঠিকই কিন্তু প্রতিনিয়ত তোমার খোঁজ রেখেছি।

ফাইনাল পরীক্ষার পর তুমি কম্পিউটার ক্লাসে যেতে, আমি আড়াল থেকে তোমাকে দেখতাম। কিন্তু সামনে আসতাম না।

ফোন করতাম, তুমি রিসিভ করতে না। যদিও বা রিসিভ করতে আমি হ্যালো বলার সাথে সাথেই লাইন কেটে দিতে। তুমি আমাকে ইগনোর করতে। তাই আর সামনে আসিনি। সামনে আসলে তোমার আর গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্সটা কমপ্লিট হতো না। তাই আড়াল থেকেই তোমায় দেখতাম। ভাবতাম তুমি যেভাবে থাকলে ভালো থাকবে সেভাবেই থাকো। তাই সামনে এসে বিরক্ত করিনি।

.
আমি বুঝে গেলাম তোমাকে পেতে হলে আমাকে অন্য রাস্তা ধরতে হবে।

তখন অন্য রাস্তা খুঁজতে থাকলাম। আর রাস্তা পেয়েও গেলাম।

নাফিসার সাথে পরামর্শ করলে ও কথায় কথায় বললো, তোমার আম্মু আমাদের সম্পর্কের কথা জানে। এই কথা জানার পর আমাকে আর পায় কে?

তুমি যেই টাইমে কম্পিউটার ক্লাসে যেতে তখন একদিন আমি খুব সাহস করে তোমাদের বাসায় গিয়ে উঠি। আমার পরিচয় দেই। আমাদের পূর্বের ভালোবাসার সম্পর্কের কথা বললাম। তোমাকে বিয়ে করতে চাই এই কথাও সরাসরি বললাম।

.
আণ্টি বললো, তুমি আমার বিধবা মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছো কেনো?

চাইলেই তুমি আনম্যারেড অনেক ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে।

আমি আনম্যারেড একটা মেয়েকে বিয়ে হয়তো করতে পারবো কিন্তু তাকে ভালোবাসতে পারবো না। কারণ আমি শুধুই লিয়াকে ভালোবাসি।

তুমি যে বিধবা একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাও যার একটা বাচ্চাও আছে, এই কথা তোমার বাবা মা জানে? তাদের বলেছো তোমার মনের কথা?

.
আমি বললাম, তারা জানে। এখন আপনারা যদি লিয়ার সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজি থাকেন তাহলে আমি আমার বাবা মাকে সাথে নিয়ে আসবো।

আণ্টি আমার ঠিকানা আর ফোন নাম্বার রেখে দিলেন। আর বললো, আমি লিয়ার আব্বুর সাথে আলাপ করে তোমাকে জানাবো।

আরো বললো, তোমার আংকেল যদি তোমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হয় তাহলে তুমি মন খারাপ করিও না বাবা।

আমিও চাই আমার মেয়ের জীবনটা আবার হাসি খুশিতে ভরে উঠুক। ওর বেরঙ জীবনটা রঙিন হোক।
কিন্তু লিয়ার আব্বুর কথার ওপর আমরা কেউ কথা বলি না। সে মত দিলেই বিয়ে হবে নচেৎ হবে না।

.
এই ব্যাপারে তোমাকে যেন কিছু না জানায় তাই তাকে অনুরোধ করলাম। উনি বললেন ঠিক আছে লিয়া এই ব্যাপারে কিছু জানবে না।

কয়েকদিন পর ফোন করে আংকেল তার অফিসে আমাকে ডেকে নিয়ে ঠিকমত ইন্টারভিউ নিলো।
আমি কি করি, কোথায় থাকি, বাসা কোথায়, গ্রামের বাড়ি কোথায়, ভাই বোন কজন, বাবা কি করে, মা কি করে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ইত্যাদি ইত্যাদি।

তারপর কয়েকদিন পার হয়ে গেলো। আমি টেনশনে আধ মরা হয়ে যাচ্ছিলাম। যদি না করে দেয় আমি তাহলে বাঁচবো না। প্রাণে মারা যাবো।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম শ্বশুর মশায় যদি তার মেয়েকে দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো। তবুও বাঘিনী আমার খাচায় বন্দী করবো।

হঠাৎ ফোন করে আংকেল বললো, আমি যেনো আমার বাবা মাকে সাথে নিয়ে তোমাদের বাসায় আসি।

তারপর আব্বু আম্মুকে নিয়ে যেদিন তোমাদের বাসায় গেলাম, সেদিন আণ্টি তোমার ভাই বোন সহ তোমাকে তোমার বড় মামার বাসায় পাঠিয়ে দেয়। মনে আছে?

এসবই ছিলো আমাদের প্ল্যান।
এই বৈঠকে নাফিসাও আমাদের সাথে ছিলো। সেও আমাদের প্ল্যানে জড়িত ছিলো।

আমরা ওইদিনই বিয়ের সব কথা সেরে ফেলি এমনকি বিয়ের ডেটও ফিক্স করে ফেলি।

রইলো তোমার ছেলে আয়ুশের কথা। ওকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। আর আব্বু আম্মুরও কোন সমস্যা নেই।

কিন্তু তোমার আব্বু একেবারেই মানা করে দিয়ে বললো, আয়ুশকে তারা কোনমতেই দিবে না। তাদের কাছেই রাখবে।

এই হলো তোমার আমার সারপ্রাইজ বিয়ের ইতিকথা।

.
লিয়া বললো, আপনার বাবা মা কিভাবে রাজি হলো আমার মত বিধবা প্লাস এক বাচ্চার মাকে ছেলের বউ করতে!

.
আমি তাদেরকে তোমার কথা সব বলেছি। তোমাকে পছন্দ করি, ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না, যে কোন ভাবে তোমাকেই চাই এই কথাও বলেছি। তারপর তারা রাজি হয়েছে।

.
লিয়ার কাছে আসল কথা চেপে গেলো জিয়ান। ওর বাবা মাকে রাজি করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

আব্বু আম্মু দুজনেই জিয়ানের সাথে তুমুল লড়াই করেছে।

জিয়ান বলেছে যদি লিয়ার সাথে বিয়েতে তোমরা রাজি না হও তাহলে আমি কানাডায় ফিরে যাবো, আর কোনদিন দেশে ফিরবো না। তোমাদের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য আমি সবসময় পালন করে যাবো কিন্তু দেশে আর ফিরবো না। এ দেখাই তোমাদের সাথে আমার শেষ দেখা।

আমি লিয়ার সাথে সুখে থাকবো জেনেও তোমরা আমার সুখের কথা ভাবছো না। আমি তোমাদের না জানিয়েও লিয়াকে বিয়ে করতে পারতাম, কিন্তু সেটা আমি করিনি। তোমাদের দোয়া নিয়েই আমি নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছিলাম।

লিয়া খুব ভালো মেয়ে। ওকে দেখলেই তোমাদের পছন্দ হবে। ওর ফ্যামিলি ভালো, বংশ ভালো।
.
আমি চাই, এই সম্পর্ক না করার আগে একবার লিয়াকে তোমরা দেখো। আমি ওকে খুব ভালোবাসি। আমার জন্য হলেও তোমরা রাজি হও।

জিয়ানের বাবা কিছুটা রাজি হলেও ওর মা সহজে রাজি হয়নি।

.
জিয়ানের মা বললো, আত্মীয় স্বজন,পাড়াপড়শি সবাই কি বলবে? সবাই খোঁচা দিয়ে কথা বলবে, আর কোন মেয়ে কি ছিলো না দেশে, এমন স্কলার ছেলের জন্য বিধবা মেয়েকে বিয়ে করাতে হলো।

এই ছেলের জন্য কত সুন্দর আর যোগ্য মেয়ে আনতে পারতেন।

আমাদের হাতেই তো কত লোভনীয় প্রস্তাব ছিল।একবার বললেই হতো, উপযুক্ত মেয়ের লাইন লাগিয়ে দিতাম।

তখন আমাদের মুখটা কোথায় থাকবে? এই বলে জিয়ানের মা কাদতে লাগলো।

.
জিয়ান ঘরে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলো। কানাডা ফিরে যাবে বলে সব রেডি করছে, কাপড় গুছাচ্ছে।

.
এসব দেখে ওর মা চরম অনিচ্ছা সত্ত্বে এই বিয়েতে মত দিলো। কোন মাই ছেলের ওপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। সন্তানের সুখেই বাবা মায়ের সুখ।

.
জিয়ান ওর আব্বু আম্মুকে বললো, তাহলে একদিন গিয়ে লিয়াকে দেখে এসো।

.
জিয়ানের বাবা বললো, তুই যখন পছন্দ করেছিস, তখন আর দেখতে হবে না। একবারে বিয়ের ডেট ঠিক করতে যাবো। সেভাবেই ওই বাড়িতে জানিয়ে দে।

এ ভাবেই সব হয়েছে তোমার আমার সারপ্রাইজ বিয়ে।

.
এবার তো কাছে এসো বাঘিনী। অনেক সাধনার পর আমি তোমাকে নিজের করে পেলাম। আমাকে কষ্ট দেয়ার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। আজ এক এক করে সব কিছুর প্রতিশোধ নিবো।

.
লিয়া জিয়ানের দিকে চেয়ে হেসে ফেললো। বললো কি শাস্তি দিবেন? বলেন শুনি।

এখনও আপনি আপনি করে দূরে সরিয়ে রাখবে? একটু রাগ দেখিয়ে বললো_
যাও ঘুমাও, আমাকেও ঘুমাতে দাও।

লিয়া বললো আচ্ছা আর রাগ দেখাতে হবে না। তুমি করেই বলবো।

লিয়া নিবিড় ভাবে জিয়ানের বুকে মিশে গেলো। সারাজীবন এভাবে ভালোবাসবে তো?
আমাকে একা করে দিয়ে হারিয়ে যাবে না তো?

হারালে তোমাকে নিয়েই হারাবো। একা একা হারালে মজা হবে না।

হেসে ফেললো লিয়া। আপনি অনেক দুষ্টু হয়েছেন।

আবার আপনি?

ওকে সরি আর বলবো না। এখন থেকে শুধু তুমি তুমি তুমি করেই বলবো।

জিয়ান লিয়ার ঠোঁট দখল করে নিলো। ওরা দুজন ভালোবাসাবাসির রাজ্যে হারিয়ে গেলো।

.
দেরিতে হলেও ওদের ভালোবাসা সার্থক হলো। বেঁচে থাকুক ওরা একে অন্যের ভালোবাসা বুকে নিয়ে। সুখে থাকুক ওরা চিরদিন দুজন দুজনকে ভালোবেসে। আর কোন কষ্ট যেন ওদের জীবনে না আসে। সুখী হোক লিয়া আর জিয়ান জুটি।

সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন।

(সমাপ্ত )

বি:দ্র: আমার আইডিতে আমার গল্পের পেইজের লিংক দেয়া আছে। সবার আগে গল্প পেতে সবাই লাইক আর ফলো করবেন আশা করি। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here