কাজল নদীর জলে’পর্ব-৩

0
1181

কাজল নদীর জলে
আফিয়া আপ্পিতা

৩.

চয়নের মাথায় হাত দেয়ার ব্যাপারটায় লজ্জা পায় সুরলা। সে ভেবেছিল, পরিচিত হবে কিন্তু এখন লজ্জায় দাঁড়ানো দায় হয়ে গেছে। তাই মাথা চুলকে হাটা ধরে। সুরলা চলে গেলে চয়ন হাফ ছাড়ে। মাথা থেকে হাত নামায়। সে ভয়ে ছিল এই বুঝি মেয়েটা এসে তার চুল টেনে ধরল! কাল যেভাবে চুল টানাটানি করেছে! ভয় পেয়েছে চয়ন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এইসব মেয়ে থেকে দশহাত দূরে থাকবে। চিবাকে ও নিতুর সাথে মিশতে নিষেধ করবে। মেয়ে দু’টো ভালো না। চিবাটাও খারাপ হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে সামনে আগায় চয়ন। সুরলারা যেই পথে গিয়েছে সে পথে না গিয়ে অন্য পথে যায়। যাতে দেখা না হয়। জগিং শেষে ফেরার পথে আবার দেখা হয়। রেহানা জাহানের সাথে টুকটাক কথা বলে চয়ন। সুরলার সাহস হয় না কথা বলার। সে দ্রুত গতিতে হেটে বাসায় ফিরে আসে। রুমে এসে নিতিকার পাশে শুয়ে পড়ে।

আজ শুক্রবার। নিতিকার অফিস নেই। তাই নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। সুরলা চোখ বন্ধ করে। চোখে ভাসে চয়নের ছবি। মাথায় হাত দিয়ে কিভাবে দাঁড়িয়েছিল! চোখে মুখে একটা ভয়ে আভা দেখা দিয়েছিল তখন। সে কী মায়াবী লাগছিল! ইচ্ছে করছিল, গাল টেনে দিতে। নানান ভাবনা এসে মাথায় ভীড় করে। সুরলার চোখে মুখে লজ্জার আভা দেখা দেয়। মুচকি হাসে সে।

এটা সেটা ভাবতে ভাবতে আনমনেই শব্দ করে হেসে দেয় সুরলা। তার হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নিতিকার। আধো আধো চোখ খুলে তাকায়। সুরলার লজ্জারাঙা মুখ আর প্রাণখোলা হাসি চোখে পড়ে। চোখ থেকে ঘুম উড়ে যায়। পরখ করে সুরলাকে। গায়ে জগিং ড্রেস দেখে বুঝতে পারে মাত্র জগিং থেকে এসেছে। বিনা কারণে এত হাসতে কেন মেয়েটা? জগিংয়ে গিয়ে কী সুরলার প্রেমিক পুরুষের সাথে দেখা হয়েছে! সুরলার হাবভাব ভালো ঠেকে না তার কাছে। জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় ছিলি এতক্ষণ? ”

সুরলা পাশে তাকায়। নিতিকাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিহ্বা কামড় দেয়। এতক্ষণ ভাবনার মাঝে বোনের কথা মাথা থেকে সরে গিয়েছে। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে উঠে বসে। বলে,
“জগিংএ গিয়েছি।”
“একা?”
“না, খালামণির সাথে। প্রতিদিনই তো যাই। তুমি জানো না?”
” প্রতিদিন তো এমন অদ্ভুত আচরণ করিস না। আজ জগিং করতে গিয়ে শুধু জগিং-ই করেছিস নাকি প্রেম টেম ও কিছু করে এসেছিস!”

সুরলা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নিতিকা উঠে বসে। বলে,
“তুই যেভাবে ব্লাশ করছিস। আমার মনে হচ্ছে জগিং পর্বের সাথে প্রেমের পর্ব ও চুকিয়ে এসেছিস। ”
“তেমন কিছু না। ” এড়িয়ে যেতে চায় সুরলা।

নিতিকা হেসে বলে,
“এসব চ্যাপ্টার আমি ইন্টারমিডিয়েটে শেষ করে এসেছি। তাই ভালোই অভিজ্ঞতা আছে আমার। নতুন নতুন প্রেমে পড়লে মানুষ আকাশে উড়ে। বিনা কারণে হাসে, যখন তখন সাজে, সারাদিন আয়না দেখে। সব লক্ষণ তোর সাথে মিলে। সে হিসেবে বলা যায়, তুই প্রেমে পড়েছিস। এবার বল, কাহিনি কী? আর ছেলেটা কে?”

বলতে গেলে ধরা পড়ে গেছে সুরলা। আর লুকিয়ে লাভ নেই। তাই সুরলা লাজুক হেসে বলে,
“আমার তাকে ভালো লাগে, ভীষণ। তাকে দেখতে ভালো লাগে, তার কথা শুনতে ভালো লাগে। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি তাকে। আর কিছু নয়।”

“আর সে?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে নিতিকা। সুরলা মলিন মুখে বলে,
“সে আমাকে চিনেই না ভালো করে। যা চিনে তাও ভুলভাবে। কোনদিন কথাও হয়নি। ”
“এক তরফা ভালোবাসা?”
“হ্যাঁ। ” মাথা নাড়ায় সুরলা।

নিতিকা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে,
“তোকে দেখে মনে হয়, তুই প্রেমে ডুবে ডুবে জ্বল খাচ্ছিস। তা খোঁজখবর নিয়েছিস কিছু? ছেলে কেমন? গার্লফ্রেন্ড আছে? লাইন ক্লিয়ার না হলে প্রেম হবে? ”

ভ্রুকুটি করে সুরলা। এমনটা তো ভেবে দেখে নি! চয়নের যদি গার্লফ্রেন্ড থাকে! কী হবে? চয়নকে ভুলে যেতে হবে? ভাবতেই গায়ে কাটা দেয় সুরলা। মলিন মুখে বলে,
“আমি তো এত কিছু জানি না। ওর যদি গার্লফ্রেন্ড থাকে? আমার কী হবে!”

বোনের উদ্ধিগ্নতা দেখে হাসে নিতিকা। কাধ চাপড়ে বলে,
” বি পজেটিভ! সিঙ্গেল ও হতে পারে। আমাকে নাম, ঠিকানা বল, আমি খোঁজ নিয়ে দেখি। তারপর বাসায় কথা বলে ভগ্নিপতি বানাবো। অনেকদিন বিয়ে খাই না।”

নিতিকাকে চয়নের নামটা বলতে চায় না সুরলা। চয়নের নাম শুনলে কিনা কী বলে আবার! এড়িয়ে যেতে গিয়ে বলে,
” তোমার খবর নেয়া লাগবে না, আমি খবর নিব। তুমি শুধু উপায়টা বলো। কিভাবে বুঝব যে সে সিঙ্গেল? ”

নিতিকা খানিক ভাবে। তারপর বলে,
” ফেসবুক আইডি চেক কর। যদি রিলেশনশিপে থাকে তবে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিবে কিংবা গার্লফ্রেন্ডের সাথে ছবি দিবে। ”

সুরলা হতাশ গলায় বলে,
“ফেসবুক আইডি নেই।”

“ওর নাম দিয়ে ফেসবুকে সার্চ দে। পেয়ে যাবি।” অভয় দিয়ে বলে নিতিকা। সুরলা হুডির পকেট থেকে হালকা গোলাপি রঙের কাভারবিশিষ্ট ফোন বের করে। লক খুলে। ফেসবুকে গিয়ে সার্চ বক্সে যায়। চয়নের নামটা লিখতে গিয়ে পাশে তাকায়। দেখে, নিতিকা তার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। সুরলা অনুরোধের সুরে বলে,
“আপু তুমি অন্যদিকে তাকাও। তুমি দেখে যাবে।”.

বলে ফোনটা হাত দিয়ে ঢেকে নেয়। সুরলার বাচ্চামোতে শব্দ করে হেসে দেয় নিতিকা। বলে,
” ভয় পাস না আমি তাকাব না। তোর প্রেমিকপুরুষকে দেখব না। মুকিফ ছাড়া অন্য কোন পুরুষের দিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকাই না আমি। কারো প্রতি আগ্রহ নেই আমার। ছোটোবোনের প্রেমিকের প্রতি তো নয়ই। আমি অন্যদিকে তাকালাম। পেলে বলিস।” অন্যদিকে তাকায় নিতিকা।

সুরলা ফোন আড়াল করে রেখেই চয়নের নাম লিখে সার্চ দেয়। চয়ন নামে হাজারটা আইডি আসে। হাজারটা আইডির মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির ছবিযুক্ত প্রোফাইল পায় না। আন্দাজ করে, চয়নের আইডি ভিন্ন নামে। হতে পারে সেটা চয়নের ভালো নাম! কিন্তু ভালো নাম তো জানে না সুরলা। সবার থেকে চয়ন নামটাই শুনেছে। আন্দাজে সুরলা সার্চ করতে থাকে, চয়ন ইসলাম, চয়ন আহমেদ, চয়ন চৌধুরী। কোন বংশীয় পদবি বাদ রাখে না। কিন্তু চয়নের আইডি পায় না। আবারও হতাশ হয়। ফোন রেখে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। নিতিকা পাশ না ফিরে জিজ্ঞেস করে,
“পেলি?”
“না। আমি ওর যেই নাম জানি ওই নামে সার্চ দিলাম। এল না। সম্ভবত অন্য নামে খোলা আইডি।” গম্ভীরমুখে জবাব দেয় সুরলা। নিতিকা পাশ ফিরে তাকায়।

“ভালো নাম জানিস না?” নিতিকার প্রশ্নে মাথা নাড়ায় সুরলা। নিতিকা কপাল চাপড়ে বলে,
“প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস অথচ তার নামটা অবধি জানিস না! বুদ্ধু! তোর দ্বারা প্রেম হবে না। ”

“আপু একটা বুদ্ধি দাও, প্লিজ! মুকিফ ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক শুরু করার সময় আমি তোমাকে কত সাহায্য করেছি, ভুলে গেছ!” পুরোনো কথা মনে করিয়ে দেয় সুরলা। নিতিকা বলে,
“সেই জন্যই তো এতক্ষণ আমি তোকে সাহায্য করছিলাম। না হলে কবেই খালামণিকে কল দিয়ে জানিয়ে দিতাম। ”
“উপায় বলো।” কথা বাড়াতে চায় না সুরলা। নিতিকা চট করেই বলে,
“ওর পরিচিত কারো আইডি থাকলে ঘুরে দেখ, লাইক কমেন্ট পাবি। আর না হয়, তাদের ফ্রেন্ডলিস্ট চেক কর। ”

সুরলা খানিক ভাবে। চয়নের পরিচিত কে হতে পারে! মনে পড়ে তার খালামণিদের পরিবারের সবাই তো চয়নের পরিচিত। ফ্রেন্ডলিস্টে থাকতে পারে। এক এক করে খালামণি, খালু, নিতু, নিতিকা, নিলয় সবার আইডি চেক করে। চয়ন নামের কোন লাইক কমেন্ট চোখে পড়ে না। আবার ও নিরাশ হয় সুরলা।

ভাবতে বসে। ভাবনায় আসে নিলয়ের বন্ধু রবিন। কাজিন হিসেবে চয়নের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকার কথা। ভেবেই নিলয়ের আইডি চেক করে। এবার সে খুঁজছে রবিনের আইডি। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যায়। ঘুরতে গিয়ে চোখ আটকায় রবিনকে ট্যাগ করা একটি পোস্ট এ। ঝটপট রবিনের আইডি চেক করে। স্ক্রল করে নিচে নামতে থাকে। একটা গ্রুপ ফটোতে চোখ যায়। কারো বিয়েতে বর কনের সাথে দশ পনেরোজন ছেলে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে। তারমধ্যে রবিন ও আছে। ছবিটা ভালো করে পরখ করে সুরলা। এক কোণায় দাঁড়ানো নীল ব্লেজার পরা চয়নকে চোখে পড়ে। ছবিটা সেভ করে রাখে। পোস্টটাতে প্রায় বিশজনকে ট্যাগ করা হয়েছে। সুরলা একে একে সবার আইডি চেক করে। ট্যাগ লিস্টের শেষে থাকা নামটায় চোখ আটকায়। ‘ জুবায়ের আরেফিন চয়ন। ‘
গোটা গোটা ইংরেজি অক্ষরে লেখা নামটা দু’বার বিড়বিড় করে। আনন্দে চিলকে উঠে মন। সে পেয়েছে। ঝটপট প্রোফাইল ঘুরে। সন্দেহ করার মত কিছুই পায় না। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস -সিঙ্গেল, দেয়া। প্রোফাইলে চিবা ছাড়া কোন মেয়ের সাথে ছবি নেই। নানান জায়গায় ঘুরতে গিয়ে ছবি পোস্ট করেছে। কোথাও মায়ের সাথে, কোথাও বোনের সাথে, কোথাও বন্ধুদের সাথে। অন্য কোন মেয়ের অস্তিত্ব নেই সেখানে। সুরলার সরল মন বলে, চয়ন সিঙ্গেল। লাফিয়ে উঠে সে। খুশিতে জড়িয়ে ধরে বোনকে। বলে উঠে,
“আপু আমার মনে হয় সে সিঙ্গেল। ”

নিতিকা বিজ্ঞের মত মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“যা বেটা জিলে আপনি জিন্দেগী। ”

সুরলা বোনকে ছাড়িয়ে এলোমেলো হয়ে নাচতে ব্যস্ত হয়ে যায়। নিতিকা হাসে। এ মেয়ে আর বড় হল না। বাচ্চাই রয়ে গেল! এ নাকি আবার প্রেম করবে! ভাবতেই হাসি পায় তার। মেয়েটা একবারেই বোকা। যে যা বুঝায় তাই বুঝে নেয়। আচ্ছা, কেউ যদি ওর সরলতার সুযোগ নেয়? যদি ভুল মানুষের পাল্লায় পড়ে তখন! ভয় হয় নিতিকার। সিদ্ধান্ত নেয় সুরলার আগে ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিবে সে। যদি খারাপ রিপোর্ট পায় তবে ফিরিয়ে আনবে সুরলাকে। প্রেম করা খারাপ না, তবে ভুল মানুষের সাথে প্রেম করা খারাপ। জীবনটা তছনছ হয়ে যায়। মোহে পড়ে এগিয়ে শেষে আর পিছু হাটতে পারে না। সুরলার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। আবেগী বয়স ছাড়িয়ে বাস্তবতা বুঝার বয়সে এসেছে। এই বয়সে প্রেমে পড়ার আগে মানুষ দশবার ভাবে।তারপর আগায়। কিন্তু সুরলার বয়স হলেও ম্যাচুরিটি আসে নি। অবুঝ রয়ে গেছে এখনো। নিতিকার মনে হয় সুরলা নিলয় থেকে ও অবুঝ। তাই তো ভয় হয়। বোনকে আগলে রাখতে চায় সব বিপদ থেকে।

নানান ভাবনা মাথায় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। এদিকে সুরলা নাচ থামিয়ে চয়নের আইডি ঘুরছে। চয়ন সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহ করছে। চয়ন ডি ইউ থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। তা সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ছবি দেখে বুঝতে পেরেছে। বর্তমানে চট্রগ্রামের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছে। চয়নের কয়েকটা ছবি সেভ করে নিয়ে দেখতে থাকে। আর লজ্জার লাল গোলাপি আভা টানে দু’গালে। রেহানা জাহান ততক্ষণে নাস্তা তৈরি করে নিয়েছেন। টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে সবাইকে ডাকেন। সবাই গিয়ে হাজির হয়। খেতে বসে সিদ্ধান্ত হয় সবাই লাঞ্চ বাইরে করবে। সিদ্ধান্ত মুতাবেক সবাই বেরিয়ে পড়ে বারোটা নাগাদ। লাঞ্চ সেরে ঘুরে ফিরে বাসায় ফিরে বিকেল চারটায়। এসে ফ্রেশ হয়েই ছাদে চলে যায় সুরলা। পাশের ছাদে উঁকিঝুকি মেরেও চয়নের দেখা পায় না। আজ কী তবে আসে নি! হয়তো এসেছে। পেইন্টিং করে চলে গিয়েছে। হতাশ হয়ে ফিরে আসে বাসায়।

সন্ধ্যায় পড়তে বসে নিতুর মনে পড়ে তার একটা নোট চিবার কাছে রয়ে গেছে। সেই নোটটা এখন লাগবে তার। কাল স্যারকে পড়া দিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেয় এখুনি গিয়ে নিয়ে আসবে। যেহেতু পাশের বিল্ডিংয়ে চিবাদের বাসা তাই সমস্যা হবে না। কিছুক্ষণের মাঝেই ফিরে আসতে পারবে না।মাকে বলতেই মা একা ছাড়ে না, সুরলাকে সাথে পাঠায়। চয়নের কথা ভেবে রাজি হয়ে যায় সুরলা। বেশ কয়েকবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে রওনা দেয়। চিবাদের বাসার গেট পেরিয়ে সিড়ির কাছে যেতেই চয়নের দেখা পায় সুরলা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here