কাজল নদীর জলে পর্ব-৮

0
1020

কাজল নদীর জলে
আফিয়া আপ্পিতা

৮.
জোড়পুকুর ময়দানে বসার জায়গাটায় পাশাপাশি বসে আছে চয়ন-সুরলা। জগিং করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে, তাই এখানে এসে খানিক ঝিরিয়ে নিচ্ছে। মাঝে কয়েক দিন পেরিয়ে গেছে। এই কয়েকদিনে দু’জনের মাঝে ভালোই সখ্যতা গড়ে ওঠেছে। সকালে জগিং-এ, এবং বিকেলে ছাদের আড্ডা দেয়া যেন রুটিনে পরিণত হয়েছে। সুরলার মনে চয়নের জন্য অনুভূতির মাত্রাও বাড়ছে দিন-কে দিন। তবে চয়নের মাঝে তেমন কোন অনুভূতি নেই, সে তো সুরলাকে প্রতিবেশি হিসেবে ট্রিট করছে আজও।

দু’জনের মধ্যকার নিরবতা ভেঙে চয়ন বলে,
“কিট্টি, তুমি কোন স্কুলে পড়ো? এবার সত্যটা বলবে।”
“আমি স্কুলে নয়, ভার্সিটিতে পড়ি। আই.ইউ.বি-তে।”
চয়ন ভাবে সুরলা মজা করছে। গত কয়েকদিনে চয়ন সুরলাকে স্কুল আর পড়ালেখার কথা বললে সুরলা প্রতিবারই সত্যিটা জানায়। কিন্তু চয়নের মনে হয়, সুরলা তার সাথে মজা করছে। সুরলার ভার্সিটিতে পড়ার কোন সম্ভাবনাই সে দেখে না। চয়ন বিরক্ত ভঙিতে তাকায় সুরলার দিকে। সুরলা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
“আসোলেই আমি ভার্সিটিতে পড়ি। আপনি বিশ্বাস করেন না কেন!”

সুরলার ভাব দেখে হেসে দেয় চয়ন। বলে,” তোমাকে দেখে কে বিশ্বাস করবে যে তুমি ভার্সিটিতে পড়ো? পাগল ও বিশ্বাস করবে না। আচ্ছা, স্কুল বা ক্লাসের কথা বলা লাগবে না। আমি আন্দাজ করতে পারি, তুমি নিতুদের স্কুলে এইটে পড়। নিলয় নাইনে পড়ে। তুমি নিলয় থেকে এক বছর জুনিয়র হবে। আজকাল স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়ে নিজেকে ভার্সিটি স্টুডেন্ট দাবি করে! কী দিনকাল আসছে রে ভাই! ”

সুরলা ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। এই লোককে বিশ্বাস করানো দায়। বিশ্বাস তো করবেই না, উলটো রগড় করবে। সে কথা ঘুরায়,
“আপনি আমাকে ছবি এঁকে দিলেন না কেন?”

সুরলার কথা ঘুরানো দেখে চাপা হাসে চয়ন। একে তো মিথ্যা বলছে, তারউপরে আবার কথাও ঘুরাচ্ছে! হাসি থামিয়ে বলে,
“যাওয়ার আগে এঁকে দিব।”
“কোথায় যাবেন?” ভ্রু কুঁচকে বলে সুরলা।
“আমি এখানে কয়েকদিনের জন্য এসেছি ছুটিতে। আজ অফিস থেকে নেয়া ছুটি শেষ । তাই কাল ফিরে যাব চট্রগ্রাম।”
“কাল অফিস মিস দিবেন?”
“না, চট্রগ্রাম গিয়ে অফিস করব।”
“বাই রোডে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যেতে হলে ৫-৬ঘন্টা তো লাগবেই। সকালে রওনা দিয়ে অফিস টাইমের আগে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারবেন?”

“বিমানে যাব। সাতটার ফ্লাইট। যেতে সর্বোচ্চ এক ঘন্টা সময় লাগবে। ন’টায় অফিস টাইম। এর আগে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অফিস যেতে পারব। ”
“ওহ, আচ্ছা! বিমানের কথা মাথায় আসে নি আমার।” ভাবুক কন্ঠে বলে সুরলা। চয়ন হেসে বলে,
” পিচ্ছিদের মাথায় এত কিছু আসার কথাও না।”

পিচ্ছি বলায় ভেংচি কাটে সুরলা। তার ভেংচি কাটা দেখে উচ্চৈঃস্বরে হেসে দেয় চয়ন। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুই একজন ফিরে তাকায় চয়নের দিকে। চয়ন হাসি থামায়। সুরলা আবার প্রশ্ন করে,
” চট্রগ্রামে কোথায় থাকেন?”
” সাউথ হলিশহরে থাকি । তুমি যাবে নাকি?” রগড় করে সাধে চয়ন।

সুরলা মনে মনে বলে,
“আমি তো এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি যাওয়ার জন্য। আপনি নিবেন?” মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। মাথা নাঁড়িয়ে নেতিবাচক ইশারা করে। এর মানে সে যাবে না। চয়ন বলে,
” ভালো, পিচ্ছিদের বাবা মা ছেড়ে এত দূর যেতে নেই। ”

পিচ্ছি বলায় রাগ হওয়ার কথা থাকলেও সুরলার রাগ হয় না বরং চয়নের চলে যাবার ব্যাপারটা ভাবতেই মন মলিন হয়ে যায়। সে-ই মলিনতা চেপে বলে,
“আবার কখন ঢাকা আসবেন ?”
” সম্ভবত, ইদের আগে ছাড়া আর ঢাকা আসা হবে না। ”

সুরলা হিসেব মিলায়। এখন চলে মার্চ, রমজান শুরু সম্ভবত জুনে আর ইদ জুলাইতে। মাঝে আরো চারমাস! এতদিন চয়নের দেখা পাবে না সে! কিছু মানুষ আছে, যারা খানিকের মধ্যেই আপন হয়ে যায়। চয়ন ও যেন খানিকের মাঝেই আপন হয়ে গেছে। এই কয়েকদিনে চয়নের সাথে কথা বলে সুরলার মনে হয়, সে এক মূহুর্তের জন্য ও চয়নকে না দেখে থাকতে পারবে না। সুরলার কান্না পায়। রীতিমতো পানির দল চোখে এসে ভীড় জমাতে শুরু করে। সে উঠে দাঁড়ায়। এখান থেকে যেতে হবে, নয়তো চয়নের সামনে লজ্জায় পড়তে হবে তাকে। এক পা বাড়াতেই চয়ন বলে,
“কিট্টি, কোথায় যাচ্ছো?”

সুরলা কান্না চেপে হুডির পকেট থেকে ফোন বের করে বলে, “আম্মু ফোন দিয়েছে।”
চয়ন বুঝতে না পেরে বলে,
“আন্টি অনেকক্ষণ দেখে নি তাই চিন্তা করছে । তুমি যাও। ” চয়ন এখনো মনে করে সুরলা, নিতু-নিলয়ের আপন ছোটোবোন। খালাতো বোন যে সেটা জানে না। সুরলা যখন-ই খালামণি শব্দটা উচ্চারণ করেছে তখন-ই চয়ন অন্য কাউকে ভেবেছে। ব্যাপারটা আন্দাজ করে সুরলা। বলে,
“আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ, কিট্টি!” চয়ন ও বিদায় দেয়। সুরলা চলে যায়। চয়ন আবার জগিং এ মন দেয়।

.
সুরলা মলিন মুখে রেহানা জাহানের কাছে ফিরে যায়। বলে,
“খালামুণি, আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।”
রেহানা জাহান জগিং ছেড়ে থেমে যান। হাত ঘড়িতে সময় দেখেন। সবে সাতটা বাজে। জগিং-এ আসার মাত্র ত্রিশ মিনিট হয়েছে। তাদের ফেরার কথা সাড়ে সাতটা কী আটটা বাজে। এটা সুরলা জানে। তবুও আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরতে চাচ্ছে কেন! রেহানা জাহান সুরলাকে একবার পরখ করেন। সুরলার মলিন চেহারা আর চোখের কোণে চিকচিক করা জল দেখে আৎকে ওঠেন। কী হলো মেয়ের! চেহারার এই হাল কেন!
রেহানা জাহান ভ্রু কুঁচকে বলেন,
“কী হয়েছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন!”
“কিছু হয় নি। ” মিনমিনে উত্তর দেয় সুরলা।

“কিছু তো একটা হয়েছে। বল আমায়?” সন্দিহান হয়ে বলেন রেহানা।

সুরলা বাহানার আশ্রয় নেয়,
“হুট করেই মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু হয়েছে। ভালো লাগছে না এখানে থাকতে। আমি বাসায় যাব, তুমি থাকো। ” সুরলা হাটা ধরে। রেহানা ও আসেন পেছন পেছন।

বাসায় ফিরে সুরলাকে রুমে পাঠিয়ে রান্নাঘরে চলে যান। ঝটপট নাস্তা বানিয়ে মেডিসিন আর পানি নিয়ে পা বাড়ান নিতিকার ঘরে, যেখানে সুরলা থাকে। গিয়ে দেখেন, সুরলা জগিং সুট পরেই ঘুমিয়ে পড়েছে। রেহানার মায়া হয়। পাশে গিয়ে বসেন। মাথায় হাত বুলান, কপালে চুমু খান। নাস্তা নিয়ে ফিরে আসেন। মেয়েটা খানিক ঘুমিয়ে নিক, ব্যাথাটা যদি একটু কমে! রেহানা চলে গেলে সুরলা চোখ খুলে ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। এত সে ঘুমের ভান ধরেছে। নাহলে, তাকে বিনা অসুখে ঔষধ নিতে হত। খালামণি তাকে মাইগ্রেনের ঔষধ খাইয়ে মাথা ব্যাথা দূর করতে চায়। এখন সে কিভাবে বলবে, খালামুণি এটা মাথার অসুখ নয়, এটা মনের অসুখ। এই অসুখের কোন ঔষধ নেই। এই অসুখটা কখনো মিষ্টি তো কখনো টক। গত কয়েকদিন ছিল মিষ্টি, আজ থেকে টক। কারণ এখন থেকে ভালোবাসার মানুষটা তার থেকে দূরে থাকবে। যখন তখন দেখা হবে না, ঝগড়া হবে না, হবে না খুনসুটি। ভ্যাপসা টকে ছেয়ে যাবে তার পুরো মনটা। আবার যখন দেখা হবে, কথা হবে তখন অসুখের স্বাদটা মিষ্টিতে পরিণত হবে। কবে অসুখ স্বাধটা মিষ্টি হবে! ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

পুরো দিনটাই মন খারাপের পাল্লা নিয়ে গড়ায়। বিকেল হতেই প্রতিদিনকার মত ছাদে উঠে সুরলা। গালে হাতে দিয়ে ছাদের এক কোণে একটা বেঞ্চে বসে থাকে। মনটা তার ভীষণ খারাপ। কারণটা হলো, চয়নের চট্রগ্রাম চলে যাওয়া। মানুষটাকে দূরে যেতে হবে কেন! এখানে থাকলে কী হয়! ঢাকা শহরে কী চাকরি অভাব আছে। মানুষ অন্য শহর থেকে ঢাকা আসে, আর সে ঢাকা থেকে অন্য শহরে গেছে চাকরির জন্য। চয়ন ঢাকা থাকলে তো তাকে আজ মন খারাপ করতে হতো না। প্রেম শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে যেন, দূরত্ব যে এসে যাচ্ছে! এই কয়েকদিনে কত ভাব হয়ে গিয়েছে দু’জনের! এমন আর কয়েকদিন পেলে সুরলা তার মনের কথা বলে দিতে পারত। আর কয়েকটা দিন না পাওয়ার আক্ষেপ থেকে যায় সুরলার।

সুরলা যখন গাল ফুলিয়ে ভাবনার জগতে বিচরণ করতে ব্যস্ত তখন পেইন্টিং পেপার হাতে পাশের ছাদে পা রাখে চয়ন। আজ সে বাসা থেকেই এসেছে। হাতে কোন পেইন্টিং হোল্ডার নেই। এর অর্থ, আজ সে আঁকাআঁকি করবে না।
পেইন্টিং পেপার হাতে ছাদে এসে প্রথমেই চোখ রাখে পাশের ছাদে। চোখ বুলিয়ে কাউকে খুঁজে। চোখে পড়ে না। তারপর হাতে পরা ঘড়িতে সময় দেখে। চারটা বেজে বিশ মিনিট। প্রতিদিন তো এই সময়ে ছাদেই থাকে কিট্টি, আজ এলো না কেন! রেলিঙের দিকে পা বাড়ায়। নিতুদের ছাদের কূল ঘেঁষে দাঁড়ায় চয়ন। উঁকিঝুঁকি মারে এদিক-ওদিক। চোখে পড়ে কোণায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা সুরলার দিকে। চয়নের হাসি পায়। মেয়েটা এতই ছোট যে তাকে চোখে পড়েনি! এক কোণায় কিভাবে গালে হাত দিয়ে বসে আছে, দেখো! সাদা ক্যাট প্রিন্ট শার্ট-প্যান্ট, মাথায় বব কাট চুলের উপর ক্যাট শেইফ হেয়ার ব্যান্ড। দেখতে ছোটো-খাটো একটা বিড়াল ছানার মতই কিউট লাগছে! এই মেয়েকে ‘কিট্টি’ নাম দিয়ে ভুল হয় নি, অনুধাবন করে চয়ন। কিন্তু মন খারাপ কেন কিট্টির! ছোট মানুষ সম্ভবত কেউ বকেছে। তাই এমন মন খারাপ করে বসে আছে, আন্দাজ করে চয়ন। হাতের পেইন্টিং পেপার পেছনে লুকিয়ে হাক ছাড়ে,
“এই কিট্টি?”

‘কিট্টি’ডাক শুনে বাস্তবে ফিরে আসে সুরলা। চয়ন ডাকছে তাকে! সামনে তাকায়। চয়নকে তাদের রেলিঙের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। চয়ন ডাকে,
“এই দিকে আসো?”

সুরলা বিনাবাক্যে পা বাড়ায়। ছাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ায়। বলে,
” হ্যাঁ, বলুন?”
“মন খারাপ? ”
“না।”
“পিচ্ছিদের মিথ্যে বলতে নেই। সত্যটা স্বীকার করো, কেউ বকেছে?”
“কেউ বকেনি।”
“তাহলে মন খারাপ কেন?”
“এমনি।” মলিন মুখে জবাব দেয়। চয়ন আর ঘাটে না। কেউ কোন কিছু বলতে না চাইলে তাকে জোর করা উচিত নয়। সে বলে,
” সম্ভবত, আমার কাছে তোমার মন ভালো করার ঔষধ আছে।”
চয়নের কথা শুনে ‘আমার সাথে নিয়ে যাবেন?’ প্রশ্নটাই মনে জাগে। এটাই তো তার মন ভালো করার ঔষধ। চয়ন কী তার মনের কথা জেনে গিয়েছে! চমকে তাকায় সুরলা। তোতলিয়ে বলে,
“ক্কী ঔষধ? ”

চয়ন পেছনে লুকানো হাত সামনে আনে। হাতে থাকা পেইন্টিং পেপার বাড়িয়ে দেয় সুরলার দিকে। বলে,
” এটাই। দেখো তো ভালো লাগে কি-না! মন খারাপের মাত্রাটা কিছুটা হলেও কমে কি-না!”

পেইন্টিং পেপার হাতে নেয় সুরলা। চোখ বুলিয়ে ভ্রু কুঁচকায়। পেইন্টিং-এ ও সেই দিনের কথা টেনে আনবে ভাবে নি সে। চয়ন তাকে যেই পেইন্টিং পেপার দিয়েছে, তাতে দু’টো মেয়ের ছবি আঁকা। দৃশ্যটা এমন যে, সে কারো চুল ধরে টানছে। যার চুল ধরে টানছে, সে তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। সেইদিনের মত। সুরলা চয়নের দিকে তাকিয়ে রাগত কন্ঠে বলে,
“এটা কী এঁকেছেন!”
“তোমার ছবি! তুমিই তো বলেছিলে, তোমার ছবি এঁকে দিতে। ”
“তাই বলে এমন ছবি এঁকে দিবেন!”
“পেইন্টিং-এ আমি একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছি। ”

সুরলার মন খারাপের মাত্রাটা বেড়ে যায়। সে ভেবেছিল, চয়নের দেয়া পেইন্টিং সে নিজের কাছে আগলে রাখবে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে, এটা তার ভালোবাসার মানুষের দেয়া প্রথম উপহার। উপহারময় থাকবে ভালোবাসার চিহ্ন। কিন্তু এই উপহারটায় ভালোবাসার চিহ্নের বদলে তার ঝগড়ার চিহ্ন আছে। এই উপহার কেউ দেখলে তাকে ঝগড়াটে উপাধি দিবে। বিশেষ করে নিতুর চোখে পড়লে, সে ঢোল বাজিয়ে সবাইকে দেখাবে, ফেসবুকে আপলোড করে দিবে। সবাই তাকে নিয়ে মজা করবে। ভেবেই খারাপ লাগে। পেইন্টিংটা ফেরত দিতে চায়। হাত বাড়াতে গিয়েই চোখ যায়, দৃশপটের নিচের ক্যাপশনে। পেইন্টিংটা কাছে এনে চোখ বুলায়। তাতে লেখা, “চুলাচুলিতে গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত কিট্টি এবং তার হাতে শিকার হওয়া নিরিহ কন্যা নিতু।”

লেখাটাতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে খিলখিল করে হেসে দেয় সুরলা। মন খারাপের ধাপটা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। সে হাসতে থাকে। সুরলার হাসি স্বস্তি দেয় চয়নকে। সে বলে,
“যাক, মন খারাপের মাত্রাটা কিছুটা হলেও কমেছে। এভাবেই হাসিখুশি থাকবে। তোমাকে মলিন মুখে পঁচা দেখায়। ”

সুরলা হাসি থামায়। কৃতজ্ঞ সুরে বলে,
“প্রথমে পেইন্টিংটা দেখে মন খারাপের মাত্রাটা বেড়ে গিয়েছিল, তবে ক্যাপশন পড়ে তা কেটে গিয়েছে। ক্যাপশনটা ফানি ছিল। চুলাচুলিতে কেউ গোল্ড মেডেল পায়?”
“যদি আয়োজন করা হয় তবে তুমি পাবে, আমি নিশ্চিত। ” বলে হাসে চয়ন। সুরলা বলে,
“ধন্যবাদ, তবে ভালো ছবি এঁকে দিলে খুশির মাত্রা আরো বেশি হত।”

জবাবে চয়ন হাসে। কিছু ব্যাপার গোপন থাকাই ভালো। পরে চমকে দেয়া যায়। সে কথা এড়িয়ে বলে,
“আজ যাই, ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যেতে হবে। ভালো থেকো। আর দেখা হয় কি-না জানি না। তবে দোয়া করি, সবসময় ভালো থেকো, মন দিয়ে পড়ালেখা কোরো আর বড়ো কিছু হও।”

‘বিদায়’শব্দটার এক পুলকি কষ্ট এসে পড়ে সুরলার মনে। ইচ্ছে করে না বিদায় দিতে, তাও দিতে হয়। সে অনিচ্ছাটাকে চেপে মৃদু হেসে বলে,
“ভালো থাকবেন আপনি ও। ঢাকায় এলে দেখা হবে।”
“আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।”

বলে বিদায় নেয় চয়ন। সুরলা চেয়ে থাকে চয়নের পানে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here