কিনারে তুই পর্ব : ৪১

0
2340

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব: ৪১

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই একসাথে বসে আছে। ইশা একেবারে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে আসে। তারপর ওর বাবার পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। ইশার আসার কিছুক্ষণ পর আরিয়ান আসে। ইশা আর আরিয়ানের মা সবাই সবাইকে নাস্তা দিচ্ছে।ওদের সম্পর্কটা আগের মতো হয়ে গিয়েছে।আগেও ওদের সম্পর্কটা জা কম বোন বেশি ছিল। কিন্তু হঠাৎ আরিয়ানের মায়ের কারণে সবকিছু ওলট পালট হয়ে যায়। এখন সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে।আরিয়ানের মা ইশা মায়ের কাছে আবার ক্ষমা চায়। বড় বোনের মতো কেউ একজন বারবার ক্ষমা চাচ্ছে সেটা ইশার মায়ের কাছে অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। তাই উনি এখন আরিয়ানের মায়ের সাথে যথেষ্ঠ স্বাভাবিক ব্যবহার করার চেষ্টা করে। সবকিছু ভুলে যাবার চেষ্টা করে। আরিয়ানের বাবা খেতে খেতে হেসে বলে,

“আজকে আমার পরিবারটা পরিপূর্ণ লাগছে।কতদিন সবাই একসাথে নাস্তা করিনি”
তারপর আরিয়ানের মাকে বলে,
“তুমি আর হাসিও বসে পড়ো।সবাই একসাথে নাস্তা করবো”

তারপর আরিয়ানের মা আর ইশার মাও টেবিলে বসে পড়ে। নাস্তা শেষে ইশা উঠে পড়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। তখন আরিয়ানের বাবা বলে,

” ইশা আরিয়ানও তো এখন ভার্সিটিতে যাবে। তুমি ওর সাথে চলে যাও”

আরিয়ান বাবার কথায় “হ্যাঁ” বলতে যাবে তখনই ইশা বলে, “তার কোনো দরকার নেই বড়আব্বু। আমি একা যেতে পারবো”

ইশার কথা শুনে আরিয়ানের মুখ কালো হয়ে যায়। আরিয়ানের বাবা বলে,

“মামনি তোর যদি আরিয়ানের সাথে যেতো সমস্যা হয় তাহলে বাড়ির গাড়ি করে যা”

” না বড়আব্বু, আমি এতদিন রিক্সা করে চলাফেরা করেছি। প্লিজ আমাকে গাড়িতে যেতে বলো না।।আমি সাধারন ভাবেই থাকতে চাই”

আরিয়ানের বাবা কিছু বলতে যাবে তখন ইশার বাবা বলে, “আচ্ছা ও যখন চাচ্ছে না,তাহলে থাক ”

“কিন্তু বাড়ির গাড়ি থাকতে ইশা কেন রিক্সায় যাবে?”

“প্লিজ বড় আব্বু একটু বোঝো,আমার এসব গাড়ি ভালো লাগেনা।আমি সাধারণ ভাবে চলাফেরা করতে চাই,গাড়িতে করে ভার্সিটি যাবো না”

“আচ্ছা ঠিক আছে গাড়িতে যেতে হবে না।এদিকে আয়”

ইশা আরিয়ানের বাবার কাছে গিয়ে গেলে আরিয়ানের বাবা ইশার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলে, “এটা তোর”

ইশা অবাক হয়ে বলে, “ক্রেডিট কার্ড?এটা দিয়ে আমি কি করবো!আমার লাগবে না বড়আব্বু”

“কেনো? লাগবে না কেনো?আর এটা আমার টাকা না,এটা তোর বাবার টাকা তুই যেভাবে ইচ্ছা খরচ করিস”

“আমার যা প্রয়োজন তা তো আম্মু এনে দে।শুধু শুধু এসবের কি দরকার?”

“দরকার আছে। আমার কথা শুনবি না? ”

ইশা একবার ওর মায়ের দিকে তাকায়। ইশার মা চোখের ইশারায় নিতে বলে। ইশা হেসে আরিয়ানের বাবার হাত থেকে কার্ডটা নে।আরিয়ানের বাবা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“এবার ঠিক আছে।যাও,,সাবধানে যাবে”

ইশা ওর বাবা-মাকে বলে বেরিয়ে পড়ে।বাড়ির বাইরে এসে একটু দূরে ইশা রিক্সায় উঠলে আরিয়ান এসে ধপ করে ইশার পাশে রিকশায় বসে পড়ে।ইশা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।তারপর বলে,

“আপনি এখানে???”

আরিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, “কেনো আসতে পারি না? আমরা দুজন তো একই জায়গায় যাচ্ছি। তুমিতো গাড়িতে যাবে না তাই আমিই রিক্সা চলে আসলাম”

“আপনার গাড়ি কই?”

“আজকে গাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না। আজকে একটু প্রিয়তমার সাথে রিক্সায় যাই”

আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে একটা চোঁখ টিপ দে। ইশা রাগে ফুঁসছে। রিক্সা থেকে নেমে যেতে নিলে আরিয়ান ইশার হাত ধরে আটকে দেয়।তারপর রিকশাওয়ালাকে বলে,

“মামা দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? যান..”

রিক্সা চলতে শুরু করলে ইশা আর কিছু বলে না চুপচাপ বসে থাকে। একসময় আরিয়ান ইশার কোমড়ে হাত রাখে।ইশা অবাক হয়ে আরিয়ানের।দিকে তাকায়।আরিয়ান সেভাবেই বসে আছে। ইশা ওর কোমরে রাখা আরিয়ানের হাতে জোরে চিমটি দেয়।কিন্তু আরিয়ানের এতে কোনো পরিবর্তন ঘটে না, উল্টো হাসছে।ইশা আবাক হয়ে বলে,

” এই আপনি কি ব্যাথা পায় না নাকি?

“না গো ডার্লিং, তোমার ছোঁয়ায় তো আমার অনেকক ভালো লাগে”

ইশা ওর কোমর থেকে আরিয়ানের হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে, ” ছাড়ুন আমাকে”

আরিয়ান আরো শক্ত করে ইশার কোমর জড়িয়ে ধরে।ইশা এবার কান্না করে দে। আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে থতমত খেয়ে যায়। এত সামান্য একটা ব্যাপার ইশা কান্না করে দেবে আরিয়ান ভাবতে পারেনি। আরিয়ান ইশার কোমর ছেড়ে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে বলে, “কাঁদছো কেনো জান?”

ইশা কাঁদতে কাঁদতে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, “আমাকে জান বলবেন না”

ইশার কথা শুনে আরিয়ান হেসে দেয়।তারপর বলে, “আমার জান টাকে জান বলবো নাতো কি বলবো?”

“কে আপনার জান হুম?”

“তুমি..”

ইশা ঠোঁট ফুলে আরিয়ানের দিকে তাকায়।এবার আরিয়ান বলে, “হয়েছে আর বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলাতে হবে না”

“আমি বাচ্চা না হুহ”

“হ্যাঁ তুমি তো বাচ্চা না অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।বিয়ে করলে এখনই বাচ্চার মা হয়ে যেতে পারবে!”

ইশা আরিয়ানের দিকে একটা রাগী লুক দে।আর এইদিকে আরিয়ান হেসে লুটুপুটি খাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর রিক্সা ভার্সিটি এসে পৌঁছালে ইশা তড়িঘড়ি করে নেমে পড়ে।তারপর আরিয়ানকে বলে,

“আপনি ভাড়া দিবেন।আমি গেলাম, টাটা..”

তারপর আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ইশা ভার্সিটি ভিতরে ঢুকে যায়।আরিয়ান ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “আমার পাগলিটা”

ইশা ভার্সিটির ভেতরে কিছুটা যেতেই কারোর সাথে ধাক্কা খায়! সামনে তাকিয়ে দেখে রাইমা কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।ইশা রাইমাকে দেখে বিরক্তি নিয়ে বলে,

“এভাবে রাস্তার মধ্যে খাম্বার মত দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”

রাইমা এক লাফে ইশার পাশে এসে বলে,
“খাম্বা না আমি তো স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে।তুই আর আরিয়ান ভাইয়া একসাথে এক রিকশায়?”

“তো কি হয়েছে? তুই তো জানিস এখন আমরা এক বাড়িতে থাকি”

“কিন্তু তাই বলে রিক্সায় কেনো?”

ইশা হাঁটতে হাঁটতে বলে, ” চল বলছি তোকে”

রাইমাও ইশার সাথে হাঁটা শুরু করে।রাইমা হাঁটতে হাঁটতে বলে, “কালকে বাড়িতে গিয়েছিস?”

” হুম, জানিস আমাদের বাড়িটা না অনেক সুন্দর।তোকে একদিন নিয়ে যাবো”

রাইমা কোমরে হাত রেখে বলে, ” একদিন?কেনো দুইদিন যেতে পারিনা?”

ইশা হেসে বলে, ” দুইদিন কেনো,তুই যখন ইচ্ছা তখন যেতে পারিস”

“আচ্ছা এখন বল তোরা একসাথে?রহস্যটা কি?”

“আর বলিস না.. আসার সময় বড়আব্বু বললো আরিয়ানের সাথে আসতে।আমি বললাম আসবো না তখন বলছে বাড়ির গাড়ি করে আসতে।তুই তো জানিস আমার এসব ভালো লাগেনা।তারপর রিক্সা উঠেছি তখন ওই উজবুকটা এসে রিক্সায় উঠে পড়লো!আমি কি করবো?”

রাইমা হাততালি দিয়ে বলে, “হাউ রোমান্টিক!”

ইশা রাইমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে, “তোর রোমান্টিক মনে হচ্ছে?ফাজিল মেয়ে একটা”

ইশার কথা রাইমা কানেও নে না।ও তো নিজের ভাবনা ভাবতে ব্যাস্ত।কথা বলতে বলতে ওরা ক্লাসে চলে এসেছে।ইশা গিয়ে একটা ফাঁকা বেঞ্চে বসে। রাইসার ইশার পাশে বসে বলে,

“আঙ্কেল এখন কেমন আছে?”

” হ্যাঁ ভালো, নিয়মিত এক্সারসাইজ আর ওষুধগুলোর ঠিকঠাক মতো খেলে সুস্থ হয়ে যাবে?এখন তোর কথা বল”

রাইমা ইশার।দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার আবার কি বলবো?”

“এতদিন আব্বু অসুস্থ তাই তোদের লাভ স্টোরি কথা শোনা হলো না।তা কেমন চলছে সবব..?”

রাইমা আমি একটু লাজুক মুখে বলে, “ভালো”

ইশা গালে হাত দিয়ে বলে, ” ওমা লজ্জা পাচ্ছিস নাকি?”

“যাহ..”
রাইমার লজ্জা মাখা মুখ দেখে ইশা জোরে হেসে দে।

.
রাত্রে ইশা বসে বসে পড়ছে।আগের বাসা থেকে সব বইখাতা নিয়ে এসেছে।নতুন জায়গায় ইশার একটু অসুবিধা হলেও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। ইশা পড়ছে তখন কেউ পর রুমে নক করে।ইশা ভাবে হয়তো ওর আম্মু বা বড়আম্মু এসেছে তাই যেভাবে ছিল সেভাবেই গিয়ে দরজা খুলে দে।দরজা খুলে দেখে আরিয়ান দাঁড়িয়েছে।
ইশা একবার নিজের দিকে তাকায়।ওর গায়ে ওড়না নেই!একটা হালকা গোলাপি রঙের থ্রি পিস পড়ে আছে।ইশা তাড়াতাড়ি করে রুমে এসে চেয়ারের পাশ থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে দে।আরিয়ান প্রথমে ইশাকে ওইভাবে দেখে একটু থতমত খেয়ে যায়।তারপর ইশার তড়িঘড়ি দেখে হেসে দে।ইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হাসছেন কেনো?আর আপনি আমার রুমে এই সময়ে?”

আরিয়ান রুমে ঢুকেই ইশার বেডে দুপাশে হাত ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে।ইশা চোখ বড় বড় করে আরিয়ানকে দেখছে।আরিয়ান ইশাকে বলে,

“মাথাটা খুব ধরেছে।একটু টিপে দাও তো”

“আমি আপনার মাথা টিপে দেবো?আপনার মমের কাছে যান”

“মম,ড্যাড তো শুয়ে পরেছে আর এখন মাথা ব্যথা না কমলে আমার ঘুম আসবে না তাই তোমার কাছে আসলাম”

ইশা মুখ ঘুরিয়ে বলে, “আমি পারবো না”

“তাহলে আমিও যাবো না”

“আচ্ছা জ্বালা তো।আপনার কি কমনসেন্স নেই এত রাতে একটা মেয়ে রুমে এসেছেন!”

“অন্য মেয়ে তো না,আমার ভালোবাসার রুমে এসেছি”

ইশা কোমরে হাত রেখে বলে, “এই আপনি যাবেন?”

“না তো সোনা!!মাথা টিপে দাও”

ইশা বিরক্তি নিয়ে পড়ার টেবিলে বসে।কিছুক্ষণ পর আরিয়ানের দিকে তাকায় আরিয়ান বেডে শুয়ে এক হাতে মাথা হেলান দিয়ে ইশাকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
ইশা উপায় না পেয়ে চেয়ার থেকে উঠে এসে আরিয়ানের পাশে বসে।ইশার বসতে দেরি কিন্তু আরিয়ানের ইশার কোলে মাথা রাখতে দেরি না।আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে
ইশা অন্যদিকে তাকিয়ে আরিয়ানের মাথায় হাত রেখে মাথা টিপতে থাকে।আর মনে মনে বলে,

“আল্লাহ!এই অসহ্যটা কি প্রতিদিন আমাকে এভাবে জ্বালাবে!!”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here