কিনারে তুই পর্ব : ৪৩

0
2388

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব: ৪৩

বাসায় এসে ইশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।বাসায় কি হচ্ছে ইশা কিছু বুঝতে পারছেনা!উপরে আরিয়ানের রুম থেকে ভাঙ্গচুরের আওয়াজ আসছে।নিচে আরিয়ানের বাবা আর ইশার বাবা সোফায় চিন্তিত মুখে বসে আছে।ইশার মা আর আরিয়ানের মা আরিয়ানের রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে। ইশাকে বাসায় আসতে দেখে ইশার বাবা বলে,

“ইশা কি হয়েছে?আরিয়ান এভাবে রেগে আছে কেনো?”

ইশা ওর বাবার দিকে তাকায়।আসলে কি হচ্ছে ইশা বুঝতে পারছে না।তারপর উপরে আরিয়ানের রুমের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি হয়েছে?”

আরিয়ানের বাবা বলে, “ভার্সিটি থেকে রেগে এসেছে, এসেই রুমে ভাঙচুর শুরু করেছে। তুইতো ভার্সিটিতে ছিলি। কিছু জানিস?”

ইশার মনে পরে ভার্সিটিতেও আরিয়ানের সাথে রেগে কথা বলেছিল। কিন্তু তাই বলে আরিয়ান এতো হাইপার হয়ে যাবে ইশা বুঝতে পারেনি।ইশা তাড়াতাড়ি দোতলায় আরিয়ানের রুমের দিকে যায়।ইশা কে দেখে আরিয়ানের মা বলে,

“ইশা দেখনা ছেলেটা কি পাগলামি করছে।ভার্সিটি থেকে কার সাথে রেগে এসেছে! ”

ইশা দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলে,
“আরিয়ান ভাইয়া প্লিজ দরজা খুলুন।সরি,,আমি জানি তখন আমার ওভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি।প্লিজজজ শান্ত হোন”

ইশার কথা শুনে ইশার মা ইশার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই কিছু করেছিস?”

ইশা মায়ের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে।তখন আরিয়ান দরজা খুলে ইশাকে একটানে ভেতরে নিয়ে গিয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দেয়।ইশার মা আর আরিয়ানের মা হা করে তাকিয়ে থাকে।ইশার মা হেসে বলে,
“নিশ্চয়ই দুটো আবার ঝগড়া করেছে। আচ্ছা ওদের টা ওদের সামলাতে দিন,আমরা যাই?”

আরিয়ানের মা হেসে বলে, “হুমম চল”

আরিয়ানের মা আর ইশার মা নিচে চলে যায়।
এদিকে আরিয়ান ইশাকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে রাগী দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে থাকে। আরিয়ানের চোখ গুলো লাল হয়ে আছে!ইশা একটা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে, “কি কি হয়েছে?”

“কি হয়েছে? তুমি জানো না?”

ইশা মাথা নীচু করে বলে, “সরি”

আরিয়ান কিছু বলে না চুপচাপ ইশার দিকে তাকিয়ে থাকে।ইশা আবার বলে,
“আমাকে এভাবে আনলেন কেনো? আম্মু, বড়আম্মু কি ভাববে?”

“কে কি ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা
বাই দা ওয়ে,তুমি এখানে কেন এসেছো?”

“আপনিইতো আমাকে টেনে আনলে”

“আমিতো দরজার বাইরে থেকে এনেছি। তুমি আমার রুমের সামনে কেনো এসেছো?”

” সরি আমার আপনার সাথে ভার্সিটিতে ঐভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি!”

ইশা এবার আরিয়ানের রুমের দিকে চোখ বুলায়। মনে হচ্ছে যেন কিছুক্ষণ আগে ঘূর্ণিঝড় এসেছিলো! অনেকগুলো কাচের শোপিস ভেঙ্গে পড়ে আছে। বিছানার চাদরটা ফ্লোরে।সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ইস অবাক হয়ে বলে,

“এগুলো কি করলেন?”

“আমার রাগ উঠলে আমি জিনিসপত্র ভাঙচুর করি!”

ইশা আরিয়ানকে সরিয়ে রুমের মাঝখানে এসে বলে,
“দেখেছেন কি অবস্থা করেছেন রুমটার? আপনার কোথাও লাগেনি তো?”

ইশা একবার আরিয়ানের দিকে চোখ বুলায়।আরিয়ানের কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হয় না।আরিয়ান একটু ভাব নিয়ে বলে,

“তুমি কি ভেবেছো আমি ফিল্মের নায়কের মতো আয়নায় ঘুসি মেরে হাত কাটবো আর তুমি আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিবে?
কিন্তু আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারি, আসবাবপত্রের ক্ষতি করেছি নিজের না।আর এটাতো একটু ট্রেইলার ছিলো তোমাকে আনার জন্য”

“আপনি একটা অসহ্য” বলে ইশা আর একমুহূর্ত দেরী না করে আরিয়ানের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর উপর থেকে নিচে চেঁচিয়ে বলে,

“বড়আম্মু তোমার ছেলের রুমটা এসে দেখে যাও,কি অবস্থা করেছে!”

আরিয়ানের মা নিচ থেকে চেঁচিয়ে বলে, “আবার রুমটাকে লন্ডভন্ড করেছে?ওই ছেলেকে নিয়ে আর পারিনা!”

রাতে ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই চুপচাপ খাচ্ছে।ইশা অবাক হয় দুপুরে এতবড় একটা কান্ড হলো কিন্তু কেউ তার জন্য আরিয়ানকে বকাঝকা করে নি।আরিয়ানের বাবা-মাকে দেখে মনে হচ্ছে এগুলো স্বাভাবিক!আগেও হয়তো আরিয়ান রেগে গেলে এভাবে ভাঙচুর করতো!ছেলেটা তো আচ্ছা পাজি!!!

.
পরদিন সকালে ইশা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রিকশার অপেক্ষা করছে।ও বারবার পেছনে তাকাচ্ছে। আরিয়ান না আবার এসে পড়ে! এটা পেছন থেকে চোখ সরিয়ে আবার সামনে তাকায় তখনই আরিয়ানের গাড়ি ইশার সামনে ব্রেক করে।ইশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরিয়ান ওর হাত টান দিয়ে গাড়িতে বসে ডোর লক করে দেয়। ইশা রাগী স্বরে বলে,
“কি করলেন এটা?আমি আপনার গাড়ীতে যাবো না”

আরিয়ান ইশার কথার জবাব না দিয়ে গাড়ি স্ট্যার্ট দে। ইশা আরেকটু রাগী স্বরে বলে,

“এই আপনাকে বললাম না আমি আপনার গাড়িতে যাবো না। গাড়ি থামান”

আরিয়ান একবার ইশার দিকে তাকিয়ে গান ছেড়ে দে। ইশা অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে।এখানে ওর কথার উত্তর না দিয়ে আরিয়ান গান ছাড়ছে! ইশা হাত করে দাঁত কিড়মিড় করছে। ওর খুব রাগ আছে কিন্তু এখন আরিয়ানকে কিছু বললেও শুনবেনা।ইশা জানে এই ছেলেটা খুব জেদি!

অনেকক্ষণ পরে ইশা খেয়াল করে গাড়ীটা ভার্সিটির রাস্তায় না গিয়ে অন্য দিকে যাচ্ছে!ইশা অবাক হয়ে বলে, “এই,, আমরা কোথায় যাচ্ছি? ”

এবারও আরিয়ান নিশ্চুপ! ইশা রাগী দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায় কিন্তু আরিয়ানের কোনো ভাবান্তর নেই। একমনে ড্রাইভ করেই যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর আরিয়ান গাড়ি থামায়। ইশা গাড়ি থেকে জানালা দিয়ে বাইরে চোখ দে।
বড় বড় অক্ষরে “কাজী অফিস” লেখা দেখে ইশার চোখ বড় বড় করে তাকায়।ইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

“আমরা এখানে কেনো এসেছি?”

ততক্ষণে আরিয়ান গাড়ী থেকে নেমে পড়েছে। তারপর ইশার পাশের দরজা খুলে দেয়।ইশা এবার প্রচুর বিরক্ত হয় আরিয়াল ওকে কিছু বলছে না!ইশা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” আপনি কি বলবেন আমরা এখানে কেনো এসেছি?”

এবার আরিয়ান মুখ খোলে ইশার হাত ধরে হাটতে হাটতে বলে, ” চলো”

ইশা কিছু একটা ভেবে হাসি দিয়ে বলে,
“ও আপনার কোনো বন্ধু বুঝি পালিয়ে বিয়ে করছে?আগে বলবেন তো! পালিয়ে বিয়ে দেখতে না আমার সেই মজা লাগে। এই শুনেন আমি কিন্তু সাক্ষী হিসেবে সাইন করবো, ওকে?”

ইশার কথা শুনে আমি আরিয়ান হাসে।ইশা ভিতরে ঢুকিয়ে দেখে রিহান আর আরিয়ানের কয়েকটা বন্ধু আছে।
জারা এখানে নেই।জারা এখন আরিয়ানকে জ্বালায় না। একদিন জারা আরিয়ানের কাছে ন্যাকামো করতে এসেছিলল তখন আরিয়ান জারাকে ইচ্ছা মতো কথা শুনিয়ে দিয়েছে।জারা এখন আর ভয়ে আরিয়ানের কাছে আসে না।তাছাড়া ওর বয়ফ্রেন্ডের অভাব নেই!

ইশা সবাইকে দেখছে ও বুঝতে পারছে না এখানে কার বিয়ে!আরিয়ান ভেতরে ঢুকে বলে,
“সব রেডি?”

রিহান এগিয়েছে এসে বলে, “হুম.. এখন শুধু সাইন করার পালা”

“পেপার কই?”

কাজী আরিয়ানের এদিকে পেপার এগিয়ে দিলে আরিয়ান ফটাফট সাইন করে দল।ইশা ভাবছে আগের তো স্বামী স্ত্রীর সাইন করে আর এখানে সাক্ষী আগে সাইন করলো কেনো!
আরিয়ান ইশার দিকে পেপার আর পেন এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ইশা এখানে সাইন করো”

ইশা চিন্তিত মুখে বলে, “কিন্তু আগে তো হাসবেন্ড ওয়াইফ সাইন করে আমরা কেনো আগে করবো?আর কার কার বিয়ে হচ্ছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা!”

রিহান তখন হাসি মুখে বলে,
“কার আবার!তোমার আর আরিয়ানের”

ইশার মাথায় ঠাস করে বাজ পড়ে!ওদের বিয়ে মানে?ইশা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায় আরিয়ানের কোন ভাবান্তর নেই।সেভাবেই গম্ভীর মুখে বলে, “সাইন করো”

ইশা আরিয়ানের থেকে একটু দূরে গিয়ে বলে, ” সাইন করো মানে?এখানে কি মজা হচ্ছে নাকি আর আমাদের বিয়ে মানে?”

“আমাদের বিয়ে মানে আমাদের বিয়ে!সাইন করো”

” কি কখন থেকে সাইন করো সাইন করো করেছেন। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না”

বলেই ইশা চলে যেতে নে তখন আরিয়ান ইশার নিজের হাত ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ” সাইন না করে তুমি এখান থেকে এক পাও বাইরে যেতে পারবেনা”

ইশা এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে, “রিহান ভাইয়া প্লিজ আমাকে বাঁচান”

“বাচাঁও মানে?আরিয়ানকে কি তোমাকে মেরে ফেলেছে নাকি? বিয়েই তো করছে ”

“আপনি আমার সাথে বেইমানি করছেন?দেখবেন আমিও আপনার আর রাইমার বিয়ে হতে দেবো না”

রিহান বলে, “ইশা আমি তোমার বিয়েতে হেল্প করছি আর তুমি আমার বিয়ে ভাঙ্গার চিন্তা করছো?”

“হ্যাঁ করছি।কারন আপনার বন্ধু আমাকে জোর করে বিয়ে করছে আর আপনি আমাকে সাহায্য করছেন না”

ওদের কথার মধ্যে আরিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে,
“এই তোরা থামবি? রিহান তোর বিয়ের কথা পরে বলিস আগে আমার বিয়েটা হতে দে”

ইশা আরিয়ানের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে, “দেখুন এভাবে মা-বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করা ঠিক হবে না।প্লিজ আমাকে যেতে দিন ”

আরিয়ান ইশাকে আরো শক্ত করে ধরে বলে, “বাবা-মার সামনে বিয়ের কথা বললে তুমি রাজি হবে?”

“ইশা মুচড়ামুচড়ি করছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।ও কি বলবে নিজেই বুঝতে পারছে না
আরিয়ান আবার বলে, “বলো, তুমি রাজি হবে?”

ইশা মাথা নীচু করে বলে, “না,, আমি আপনাকে বিয়ে করবো না”

আয়ারিয়ান একটা হাসি দিয়ে বলে, ” এই জন্যই তো।এখানে আনলাম”

ইশা কাঁদো কাঁদো হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।তারপর কিছু একটা ভেবে ব্যাগ থেকে ফোন হাতে নিলে আরিয়ান এসে ইশার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে
নে।তারপর ফোন অফ করে দেয়।ইশা পারে না এখনই কান্না করে দে!!!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here