কেউ কোনোদিন জানবে না পর্বঃ৩

কেউ কোনোদিন জানবে না পর্বঃ৩
#Tasfiya Nur

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে রুহাশা,সাথে তার মায়েরা আর দাদী। সামনে মাথা নিচু করে নতুন বউ ফ্লোরে বিছানো কার্পেটের অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে বিজি এমব একটা ভাব।রায়হান বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে বোনের দিকে।এবার একটু জোড়ে চেচিয়েই বললো,
রুশা বোন তোর গবেষণা হয়ে থাকলে বল নয়তো আমি যেভাবে বউকে নিয়ে এসেছি সেইভাবেই চলে যাবো।
এবার রুহাশা ভাইয়ের কথায় শান্ত চোখে তাকিয়ে ভাই আর সদ্য বিয়ে করা বউকে দেখলো। তারপর সোফা থেকে উঠে এসে ভাই বউয়ের মুখটা হাত দিয়ে তুলে ধরলো নিজের দিকে।তারপর ভাইকে একপলক দেখে নিয়ে ভাই বউয়ের দিকে তাকালো।সবাই রুহাশার এমন ব্যবহারের শুধু চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।রুহাশা একটু গলা পরিষ্কার করার ভঙ্গিমায় কেশে নিয়ে মেয়েটাকে জিগাসা করলো,
তা ভাবী বিয়ে যখন হয়েছে বউ সাজে সাজনি কেন? নতুন বউয়ের একটু তো চিহ্ন করতে যেমন নাকে নোসপিন আর হাতে চুড়ি পরতে।এটা তো বাঙালির ঐতিহ্য।
মেয়েটা শুধু কাঠপুতুলের মতো দাড়িয়ে আছে যেন অনুভুতি হীন।মানে তার না হওয়া ভাবীর তো রাগে তাকে অপমান করা উচিত ছিলো কিন্তু এত আদর নিয়ে কথা বলছে ব্যাপারটা কি? আপাতত এটাই ভাবতে ব্যস্ত সে।
রুশা মেয়েটাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললো,
দেখো আরিফা আহমেদ অদ্রিজা অপরাধ তোমার ভাই করেছিল তুমি না তাই তোমাকে সেই শাস্তি দিয়ে শুধু শুধু আমার ভাইয়ের ভালোবাসা কেন কেড়ে নিবো বলোতো?আর রইলো বাকি কথা মেনে না নিলে ভাইটা যাবে কোথায় যতই জারিজুরি দেখাক না কেন ঘুরেফিরে বাড়িতেই আসবে কারণ ও মুখে না বললেও এটা জানি ভাইয়া সবাইকে কতটা ভালোবাসে।এতটুকু যদি না বুঝি তাহলে কিসের বোন আমি।হ্যা এটা মানছি তোমার ভাইয়ের ছলনায় হয়তো আজ আমি এতটা তিরিক্ষি মেজাজের কিন্তু ঐ যে উপরওয়ালার উনি হয়তো চাননি তাই আমি তোমাদের বাড়ির বউ হয়নি কিন্তু উনি চেয়েছিলেন বলেই তুমি আমার ভাইয়ের পবিত্র বন্ধনে আজ আবদ্ধ হয়েছো তোমাদের অপমান করে উপরওয়ালার ফয়সালাকে অপমান করতে চাইনা।
রুশার কথায় সবার চোখে পানি এসে গেছে। সত্যিই যে পরিস্থিতিটা খুব খারাপ ছিলো তখন কিন্তু আজ সব ঠিক থাকলেও হাসিখুশি রুহাশাটা হারিয়ে গেছে। আগে তার বিরক্তিতে মায়েরা অতিষ্ঠ হতো কিন্তু আজ তার সেসব তো নেই উল্টো কথায় কথায় রাগ। তার কথায় সবাই হাসতো আজ ভয় করে রাগে কি না কি করে এই ভয়ে।
রায়হান তো বিস্মিত হয়ে বোনকে দেখে যাচ্ছে তার বোন তাকে এতটা বুঝে অথচ সে বোনের জীবনে এত ঝড় বয়ে যাওয়ার পরও পাশে থাকেনি কেমন ভাই সে? মনে মনে এটা ভেবে নিজেকে নিজেই ধিক্কার দিলো রায়হান।
কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রুহাশা সবার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।তাই একটু তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
কি হলো তোমরা কি ভুত পেত্নী দেখছো নাকি আজব?আর ভাইয়া শুন তুই একটু ওয়েট কর আমার ফ্রেন্ডরা আসবে ওরা তোকে বর সাজিয়ে দিবে ভাবীকে আমি সাজাচ্ছি আমার জিনিস দিয়ে।তুই সোফায় বসে মুড়ি খা ভাবীকে আমি নিয়ে গেলাম।তোর মতো গলাকাটা রাজহাসের যে এই বয়সে এসে ফ্রেন্ডের অভাব পরছে এটা আমি জানি কারণ সবাই তো আর সন্ন্যাসী না তোর মতো সবার বউ আছে তাই আমার বন্ধু গুলোয় আসুক উপস সরি তোরও তো বউ হয়ে গেলো।
রুশার কথায় হেসে উঠে পরিবারের সবাই। ছোট্ট রুহাশ দাদীর কোলেই ঘুমিয়ে কাদা। রুশার কথার উত্তরে রায়হান বলে,
আমার বউ আমি নিয়ে আমার রুমে যাই তুই যা তো এসবের দরকার নেই।
রায়হানের কথায় আরিফা একটু রায়হানের পাশ ঘেষে ফিসফিস করে বলে,
রুশা আপু যা করতে চায় করতে দেও তুমি আনরোমান্টিকের কোলবালিশ হলেও রুশাপি কিন্তু হেব্বি ফাস্ট চুপ থাকো যা হচ্ছে হতে দাও।জুতার বাড়ি যে পরলো না কপালে এটা তোমার হজম হয়না তাইনা।
রায়হান বউয়ের কথা শুনে সেও ফিসফিস করে বলে,
নিজের বউ আমার এগেইনস্ট এ থাকলে আর কারোর প্রয়োজন নেই আচ্ছা আমি এই যে মুখে আঙুল দিলাম আর নো সাউন্ড আমার।
ওদের ফিসফিস করা দেখে রুশা চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,
এই তোমরা কি ফুসুরফাসুর করো? আর ভাইয়া বিয়ে তো না জানিয়ে করেছিস বাকিটা আমায় সামলাতে দে। আমি নিয়ে গেলাম ভাবীকে আর বড়মা তুমি সাথে আসো ছোটোমা তুমি ভাবীর জন্য রান্না করো কিছু।কি খেয়েছে কখন কে জানে।আমরা যাচ্ছি ভাই তুই থাম আমার ফ্রেন্ডরা বিশমিনিটে এসে যাবে।
রুশা কথা শুনে যে যার মতো কাজে লেগে পড়ে। রুশাও সবাইকে কল করে নেয়।

নিজের ভাবীকে বউ সাজাচ্ছে রুহাশা সাথে হেল্প করছেন মিসেস সায়লা।রান্নাঘরে রান্না করছেন মিসেস শারমিন আর মিসেস মনোয়ারা রুহাশকে সামলাচ্ছেন।রায়হানের রুমে বাসর সাজাচ্ছে রাতুল আর রাত্রিয়া সাথে আছে সাদিফ।অপরাধ করেছিলো ভাই সেই শাস্তি বোনকে কেন দিবে এটা ভেবেই হাতের কাছে যা ছিলো সেই দিয়ে বউকে সাজাচ্ছে রুহাশা।রুহাশার দুই মা আর দাদী ভীষণ অবাকই হয়েছিলো কিন্তু মনে মনে খুশিই হয়েছেন তারা।
বউকে সাজাতে সাজাতেই রুশা তার মাকে বলে উঠে,
শুনো বড়মা কাল কাছের রিলেটিভসদের খবর দিবে পরশু ছোটো করে রিসেপশন দিবো।
রুশার কথায় একটার পর একটা চমক পাচ্ছে তার মা।মনে মনে ভাবছে তবে কি তার মেয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।খুশির জন্য তার মনে হচ্ছে কথায় বেরুবেনা। কোনো রকম শব্দ করে বললেন,
ঠিক আছে মা তুই যা বলিস তাই হবে।
মায়ের কথায় মুচকি হাসে রুশা, নতুন বউয়ের মাথায় দোপাট্টা বেঁধে দিয়ে বলে,
নাও আমার ভাবী রেডি।কিন্তু ভাবী শুনো তোমার পরিবারের সবাইকে কি ইনফর্ম করেছো তুমি এখানে আছো আর বিয়ে করেছো?
মা আর মেয়ের কথা এতক্ষণ নিরবে শুনছিলো আরিফা কিন্তু তাকে প্রশ্ন করতেই সে চকিতে থাকায় রুশার মুখ পানে।চোখে পানি পানি ছলছল করছে।রুশা আরিফার চাহনী দেখেই বুঝতে পেরেছে যে পরিবার মানবেনা বলেই আরিফা এই পথ বেছে নিয়েছে। রুশার ভাবতেই ভালো লাগছে যে তার পাগল ভাইকে কেউ এতটা ভালোবাসে যার জন্য সব ছেড়ে এসেছে।আরিফাকে চুপ থাকতে দেখে মিসেস সায়লা প্রশ্ন করেন,
কি হলো মা রুশার কথার উত্তর কেন দিচ্ছোনা?
রুশার মায়ের কথায় থতমত খেয়ে যায় আরিফা, তারপর থেমে থেমে বলে,
আসলে মা আমার বাবা অন্য জায়গায় আমায় বিয়ে দিতে চাচ্ছিলো তাই এভাবে বিয়ে করতে বাধ্য হই আর আমি তো রায়হানকে সেই ভাইয়া আর ভাবীর বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় থেকে চিনি আর আস্তে আস্তে ভালোও বেসে ফেলি সম্ভব ছিলোনা অন্য কাউকে ভালোবাসা বা বিয়ে করা। বাবা রায়হানকে মানতো না কারণ ও কিছুই করেনা তাই আপনাদের ভরষাতেই চলে আসছি সব ছেড়ে। কারোর অত চিন্তাও নেই আমায় নিয়ে কারণ এটা নতুন নয় আমি বাসার বাইরে। আমার ভবঘুরে স্বভাবের জন্য মাঝেমধ্যেই বান্ধবীর বাসায় থাকতাম।আর আজ তো ভাইয়া কাতার থেকে ফিরলো তাই বাসায় সবাই ওকে নিয়েই ব্যস্ত মনে হয় এখন অব্দি ফোনে একটা মেসেজও আসেনি যে আমি কোথায় এটা জানতে চেয়েছে কেউ।
কথাটা বলেই মাথা নিচু করে ফেলে আরিফা।তার কথায় মুখ থমথমে হয়ে যায় রুশার।চারটা বছর পর প্রিয় মানুষটাী কথা শুনে বুকের ভিতর কেমন যেন কষ্ট কষ্ট অনুভূতি হচ্ছে তার।রুশার মুখপানে তাকিয়ে আছে তার মা।ভাবছেন রিজভীর কথায় আবার কি রিয়েক্ট করে মাথাতে এই কথা ঘুরছে।
কিছুক্ষণ মৌন থেকে রুশা বলে,
তোমার মায়ের নাম্বারটা দাও আমি কল করে কথা বলে নিবো।তোমার বাবার তো আমাকে নিয়েও সমস্যা ছিলো আমার ভাই কেন বাদ যায়।
রুশার কথা শুনে চোখে পানি ভর করে আরিফার।মনে মনে ভেবে উঠে,এই এত ভালো মেয়েটাকে কেন তুই ছেড়েছিলি ভাইয়া এখন নিজেও যন্ত্রণায় মরছিস মেয়েটাকেও মারছিস তোকে কখনো মাফ করবোনা কখনো না।একটা হতাশার শ্বাস ফেলে ফোন থেকে মায়ের নম্বর বের করে এগিয়ে দেয় রুশার দিকে।রুশা নাম্বারটা নিয়ে ফেরত দেয় আরিফাকে।ঐ ফাকে রাত্রীয়া এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
হলো তোমাদের? আমরা সব রেডি করে দিয়েছি।
রাত্রীয়ার কথায় তার দিকে তাকায় সবাই। তারপর আরিফাকে নিয়ে খাবার টেবিলে যায়।মিসেস শারমিন খাবার রেডি করে দিয়েছে টেবিলে। খাবারটা শেষ করে রায়হানের রুমে আরিফাকে দিয়ে আসে সাথে ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে আসে ব্যবসার সমস্ত কাগজ।সাথে এটাও বলে আসে,
পরের মেয়েকে এনেছিস ভাই এবার একটু কাজ কর তাছাড়া তুই তো বিজনেসের উপরই স্টাডি করেছিস সো আই থিংক কোনো সমস্যা হবেনা আর হলেও আমি আছি। নতুন ভাবে জীবনটা সাজিয়ে নে কোনো অন্ধকার ছায়া না আসুক জীবনে। শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাসটা রাখিস। এটাই তোদের সারাজীবন একসাথে বেধে রাখবে।
রায়হান বোনের কথায় মুচকি হেসে জরিয়ে ধরেছিলো শুধু। রুশাও ভাইকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। সবাই শুধু হাসিমুখে চোখের পানিটুকু মুছে নেয়। ভাইবোনের ভালোবাসার কাছে কখনো কিছুর তুলনা হয়না।দুনিয়ার সেরা সম্পর্ক হয় ভাইবোনের।বাসরঘরে আরিফা আর রায়হানকে রেখে বাইরে বেরিয়ে আসে সবাই।সাদিফ আগেই চলে গেছে সাজিয়ে দিয়ে বউ আছে বলে থাকেনি সে।রাতুল আর রাত্রীয়াকে যেতে দেয়না রুশা রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি রাতুলকে একটা রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে রাত্রীয়াকে সাথে করে নিয়ে যায় নিজের রুমে।রুহাশকে দাদীর কাছেই রেখেছে সে।সবাই শুয়ে পড়লে ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে পা বাড়ায় রুহাশা।ব্যালকনির গ্রিল ধরে আরিফার মায়ের নাম্বার ডায়াল করে ভাবছে সে ফোন দিবে কি দিবেনা। কতটা রাত হয়ে গেছে তাছাড়া আবার টেনশন করবে এটা ভেবেই কলটা করে ফেলে সে।
মায়ের ফোন বেজে উঠতেই মায়ের পাশ থেকে উঠে সোফার সামনে রাখা ছোট্ট টি-টেবিলের দিকে পা বাড়ায় রিজভী। তার বোনের কোনো খোজ নেই প্রেশারটা হাই হয়ে গেছে মিসেস শিরিনের। ডক্টর এসে চেকআপ করে গেছে। এখন তিনি ঘুমাচ্ছেন।ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসা কন্ঠে দুনিয়া যেন থমকে যাচ্ছে রিজভীর।চারটা বছর পরও তার প্রেয়সীর গলার স্বর চিনতে একটুও ভুল হলোনা তার। কথা বলা যেন ভুলে গেছে সে। হাতটা রীতিমতো কাঁপছে, ফোনটা হাত দিয়ে ধরে রাখতে পারছেনা যেন।জারিফা ভাইয়ের এমন নার্ভাসনেস খেয়াল করে এগিয়ে তার দিকে।ফোনের ওপাশ থেকে সালাম দিয়ে রুশা হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। কোনো জবাব না পেয়ে কলটা ঠাস করে কেটে দেয়। জারিফা ফোনটা কানের কাছে নিতেই কলটা কেটে যেতে দেখে রিজভীকে ঝাকিয়ে জিগাসা করে,
কে কল করেছিলো ভাইয়া? তুমি এমন নার্ভাস কেন হচ্ছো?
জারিফার কথায় ঠোট নাড়িয়ে শুধু মৃদু স্বরে বলে,
সে ফোন দিয়েছিলো জারিফা যার থেকে চারটা বছর পালিয়ে বেরাচ্ছি।

চলবে?
(আসসালামু আলাইকুম, ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,আর আমার ফোনটায় একটু সমস্যা হয়েছে স্কীন কাজ করছেনা কাল দুটো পিচ্চি ফোন নিয়ে টানাটানি করে ফেলে দিয়েছিলো যার ফলস্বরূপ ফোন অচল প্রায় কাল হয়তো নাও দিতে পারি গল্পটা সরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here