কৌমুদিনী পর্ব-৫

0
1957

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্বঃ পাঁচ


শ্রেয়াস অধীর হয়ে পায়চারি করেই যাচ্ছে অনবরত শাহনেওয়াজ কে পাওয়া যাচ্ছে না৷
রাজ প্রহরীরা বৃষ্টির মাঝেই খুঁজছে তাকে৷ কারণ পুলিশ স্টেশন থেকে বের হওয়ার পর এখানেই শেষ বার এসেছিলো এরপর কোথায় গেছে কেউ জানে না৷ কন্সটেবল ইকবাল সাথে ছিলো৷
রাজ বাড়ি থেকে যাওয়ার পর কোথায় গিয়েছিলো বা যাওয়ার কথা ছিলো তাও জানে না৷
রাফসানের মৃত্যুর তদন্তের খাতিরে বেরিয়ে নিজেই গায়েব৷ অদ্ভুত ব্যাপার৷
বন্ধুর কোনো বার্তা না পেয়ে এই তীব্র বর্ষনের মাঝেই শ্রেয়াস নিজেই ছুটলো বাইরে৷
দেহরক্ষী গুলো বাধ সাধলেও শুনেনি সে৷ শ্রেয়াসের রাগ সম্পর্কে সবাই অবগত তাই আদেশ অনুসারে তাদেরো ছোট নবাবের সাথে বের হতে হলো৷
রাজকুমারি মিফতা আর রাফসানের মৃত্যুর পর এস আই শাহনেওয়াজ নিখোঁজ সব যেন সবার কাছে ধোয়াসা হয়ে উঠছে৷
শ্রেয়াস শাহনাজ এর বাড়িতে এলো কিন্তু এখানে এসে বাড়ি তালাবদ্ধ পেলো৷ যেখানে যেখানে যেতে পারে এই তীব্র বর্ষনের মাঝেও সে সে স্থান গুলো খুঁজলো৷ কিন্তু পেলো না কোথায় যেতে পারে শাহনেওয়াজ?
সব থেকে প্রিয় বন্ধু ছিলো শাহনেওয়াজ শ্রেয়াসে৷ তাকে না পেয়ে যেন তার মন ক্ষুণ্ণ হলো৷
অতঃপর শেষ রাতে ব্যার্থ হয়ে মহলে যাওয়ার জন্য রওনা হলো শ্রেয়াস৷

আজান পরতেই মহলে প্রবেশ করলো শ্রেয়াস৷ তখন সবে চারোদিক থেকে স্বচ্ছ আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে৷ মহলের বাগানের সামনে এসে চার চাকার গাড়িটা থামতেই বাগানের শেষ প্রান্তে চোখ যেতে ভুরু কুচকে এলো শ্রেয়াসের৷ পাশে থাকা রাজ তলোয়ার টি নিয়েই বের হলো প্রহরী গুলো যেন না নামে তার নির্দেশ দিলো৷ মহলের বাগানের শেষ প্রান্তে কেউ রয়েছে মুখ ঢাকা পরনে কালো হুডি নিকাব৷ এ সময় মহলে তো কেউ প্রবেশ করে না তাহলে কে?
দূর থেকে বুঝলো না চোখ মুখ ঢাকা তার হাতে তরোয়াল ও আছে৷ ক্ষতি করতে এসেছে নাকি?
ধীর পায়ে সে ব্যাক্তিটির পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো এদিকটা গাছ থাকায় একটু বেশি আঁধার তাই বুঝতে পারলো না তেমন একটা অবয়ব চেনা চেনা লাগছে৷
পিছন দিয়ে হাত বাড়িয়ে গর্দানে তাক করলো তরোয়াল টা৷ কিছু বলবে সে এর আগেই অপর ব্যাক্তি স্ব-শব্দে হেসে সেই চেনা মিষ্টি কন্ঠে বলে,
“মানুষ দেখলেই আক্রমণ করা আপনাদের রাজ বংশের স্বভাব সুলভ কাজ নাকি জনাব?”
কন্ঠটা এবার স্পষ্ট৷ চিনলো তাকে৷ চেনা কন্ঠ পেয়ে খানিকটা ভরকালো প্রথমে সে৷ এ মেয়ে এখন এভাবে এখানে কি করছে? বাগানের এদিকটায় গাছ বেশি থাকায় অন্ধকার বেশি তাই বুঝেনি৷ আর এ মেয়ে আজ এমন অবস্থায় কেন? মুখে মুখোশও পরেছে৷
সে কিছু বলবে এর আগেই মেয়েটি ফের তোতা পাখির ন্যায় হেসে মসৃন কন্ঠে বলে,
“আপনি শত্রুকে পিছন থেকে আক্রমণ করেন নাকি জনাব? পেছন থেকে আক্রমণ করে নিজেকে ভীর ভাবেন?”
এ মেয়ের কথায় কান দিলো না শ্রেয়াস মেয়েটা বড্ড বাজে বকে তা সে এতো দিনে ঠিক বুঝেছে কিন্তু এ মেয়ে মহলে প্রবেশ করলো কি করে? সবে আজান দিচ্ছে এতোক্ষণ মহলের সব প্রবেশ পথ তো বন্ধ ছিলো৷ এ মেয়েকে রাতে বাড়ির ছাদে দেখে গেছে৷
তরোয়াল টি এখনো একই রকম করে ধরে আছে শ্রেয়াস এবার মুখ খুললো৷ প্রশ্ন ছুড়লো মেয়েটির পানে,
“মেয়ে আপনি মহলে প্রবেশ করেছেন কি করে? আর ছদ্মবেশে মহলে প্রবেশের কারণ কি ? এমন ছদ্মবেশে রাজ প্রহরীর চোখে পরলে নবাবের অনুমতির আগেই আপনার গর্দান যেতো নিশ্চিত৷ ”
চন্দ্রিকা ফের হেসে উত্তর দেয়,
“পাঁচিল টপকে প্রবেশ করেছি৷ আপনার প্রহরী নিদ্রায় ব্যাস্ত আমি তাদের নজরে আসিনি আসবো ও না কখনো৷ মহলের প্রহরী গুলো সময়কাল ইতি হয়ে এসেছে এদের বদলানোর ব্যাবস্থা করুন জনাব৷ ”
এহেন উত্তরে অবাক হলো শ্রেয়াস৷ এ মেয়ে পাঁচিল টপকে মহলে কেন প্রবেশ করেছে? কি কারণে?
শ্রেয়াস বাঁকা হেসে তলোয়ার টা শক্ত করে গলার সামনে ধরে নিজের সাথে মিশালো চন্দ্রিকাকে তাতে পিঠ ঠেকলো শ্রেয়াসের বক্ষে৷ হাল্কা কেঁপে উঠলো ঘার বাঁকা মেয়েটা৷ তাতে ফের ঠোঁট এলিয়ে হাসলো শ্রেয়াস কর্ণদ্বয়ের কাছে ওষ্ঠ নিয়ে ফিসফিসিয়ে ফের বললো,
” প্রহরীর নজরে না এলেও আমার নজরে তো এসেছেন৷ কি শাস্তি দেয়া যায় আপনাকে বলুনতো চন্দ্রিকা?”
কথার ছলেই মুখোশটা ধরে টান দিলো শ্রেয়াস তাতে নিকাবটা সহ উরনাটা হাতে এলো৷ ঝর ঝর করে ছড়িয়ে পরলো কালো কেশ গুলো৷

চন্দ্রিকা মেয়েটা যেন হঠাৎ শক্তি পেলো এতোক্ষণ তো ভুলেই গিয়েছিলো নিজের হাতে তরোয়াল আছে বাম হস্তের কনুই দিয়ে বাম বক্ষে আঘাত করলো তাতে টাল সামলাতে না পেরে কয়েক কদম পিছিয়েছি গেলো শ্রেয়াস বক্ষে হাত দিলো তার আগে মেয়েটি বাহুতে আঘাত করে দৌড় দিলো৷
দক্ষিন দিকের পাঁচিলের ধারে যাবে এর আগেই শ্রেয়াস প্রশ্ন ছুড়লো,
“আপনি কিন্তু এখনো জবাব দেন নি আপনি মহলে প্রবেশ করলেন আর কেন?”
থামলো চন্দ্রিকা মেয়েটা কানের পিঠে চুল গুজলো এবার সরাসরি ফিরলো শ্রেয়াসের পানে৷ আলো আঁধারে ছোয়ায় মেয়েটার মুখশ্রী দেখে থমকালো শ্রেয়াস এক ধ্যানে তাকিয়েই রইলো এর আগেই মেয়েটি এগিয়ে এলো এ মেয়ের এহেন কান্ডে থতমত খেলো ভরকালো৷ হঠাৎ কেমন হৃদ স্ফন্দন বাড়লো তার৷ হৃদ স্ফন্দন হঠাৎ এমন অবাদ্ধ হচ্ছে কেন? মেয়েটি সুন্দর৷ মন কাড়ার মত সুন্দর নাকি ওর চোখেই সুন্দর লাগছে? মেয়েটার হাসিও নজরকারা, সম্মোহনী৷ যে কেউ সম্মোহিত হবে৷ মুগ্ধ হবে৷
মেয়েটা ফের কাছে পাশে এলো দুরত্ব ঘুঁচলো৷ তাদের মাঝে এখন কিঞ্চিৎ দুরত্ব৷ মেয়েটা ফের চমৎকার হাসলো৷ মেয়েটার হাসিতে ফের হারালো শ্রেয়াস চোখ জোরা হঠাৎই তার রক্তিম হলো৷ মেয়েটার দৃষ্টি তার নেত্রেই৷ “মেয়ে দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো কেন?” জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করলো কিন্তু কি হলো কে জানে করলো না৷ মেয়েটা হাত উচু করে কয়েকটা ফুল সামনে নিয়ে বললো,
“রাজ বাড়ির এই কালো গোলাপ গুলো আমার প্রিয়৷ মহলের বাগান থেকে ফুল ছেড়া নিষিদ্ধ তাই মাঝে মাঝে ভোর বেলা ছদ্মবেশে পাচিল টপকে মহলে প্রবেশ করি৷
তবে অনুমতি প্রাপ্ত আমি৷ রানী মেহনুবা নিজে আমায় অনুমতি দিয়েছে আর মাঝে মাঝে আপনাদের দায়িত্বহীন প্রহরী দের দায়িত্ব জ্ঞান সম্পর্কে খেয়াল রাখতে বলেছিলো তাই এভাবে প্রবেশ করি৷ তবে নবাব এ কথা জানেন না৷”
মেয়েটার কথায় ধ্যান ভাঙলো দৃষ্টি সরালো৷ মেয়ে বড্ড পাজি তার ধ্যান কেড়ে নিতে চাইছে নাকি? আড়ালে আবডালে তার অন্তরের অন্তস্থলে জায়গা করে নিতে চাইছে নাকি?
মেয়েটা অপরাধী ওর কাছে প্রতিবারই অপরাধী এ অপরাধের এক একটা জিনিসের কড়ায় গোন্ডায় শোধ তুলবে৷
সময় তারো আসবে সে পর্যন্ত না হয় অবাদ্ধ ঘার বাঁকা মেয়েটা উরে নিক৷
মেয়েটা হাত থেকে উরনাটা ছিনিয়ে নিয়ে ফের আগের মত বেঁধে নিয়ে কয়েক কদম এগিয়ে গেলো৷ শ্রেয়াস এখনো ঠায় দাঁড়িয়েই আছে৷
চন্দ্রিকা থামলো৷ ফের পেছনে ফিরলো অতঃপর বললো,
“পিছন থেকে আক্রমণ না করে সামনে থেকে আক্রমন করতে শিখুন জনাব৷”
বলে এক মিনিট ও থামলো না মহলের প্রবেশ পথ দিয়েই বেরিয়ে গেলো৷
শ্রেয়াস মৃদু হাসলো৷ পরক্ষনে কিছু মনে পরতেই মুঠোফোন টা নিয়ে কিছু করতে করতে মহলের অন্দরে প্রবেশ করলো৷

১০
সূর্যটা তখন নিজের আলো ছড়াতে ব্যাস্ত৷ আজ বিভাবসু রুক্ষ হয়ে আছে কে জানে তার কি হয়েছে৷ যে এতো রুক্ষ মেজাজে আছে৷ সোনার ন্যায় ঝলকানো আলোক কিরণের তেজে কুচকে আসছে মুখ চোখ৷
শ্রেয়াস তখন চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে বারান্দায় আরাম কেদারা খানায় বসে আয়াশি ভঙ্গিতে৷ পুলিশ শাহনেওয়াজ কে খোঁজার কাজে নিয়জিত আছে আজকের মধ্যে পেয়ে যাবে৷ মোবাইল ট্রেস করে লোকেশন জানতে পেরেছে এতো দিন মুঠোফোন বন্ধ ছিলো শাহনেওয়াজ এর আজ সকাল থেকেই মুঠোফোন টা খোলা পেয়েছে৷
পুলিশ বেরিয়ে পরেছে রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না তাই চিন্তা বেশি৷ কিন্তু এইটুকু সংবাদ যে পাওয়া গেছে এতে শ্রেয়াস কিঞ্চিৎ স্বস্তি পাচ্ছে৷
সামনের দোতলা বারান্দাটায় হঠাৎ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেয়েটি সর্বোক্ষণ ঘোমটা ছাড়াই থাকে ও থাকলেই নিজেকে কেন আড়াল করেই এটাই বুঝে পেতো না এতো দিন৷
হঠাৎ কি হলো কে জানে মেয়েটা চেচিয়ে উঠলো আর্তনাদ শোনা গেলো এখান থেকেই তাতে শ্রেয়াস উঠে দাঁড়ালো সে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে এর আগেই হন্তদন্ত হয়ে রাজ প্রহরী ঢুকলো কক্ষে বিনা অনুমতিতে৷ তাতে শ্রেয়াস কিছু বলবে ঠিক তখনই রাজ প্রহরী বলে,
“এস আই শাহনেওয়াজ কে পাওয়া যায়নি ছোট নবাব৷ সেখানে কন্সটেবল ইকবালের বিধস্ত লাশ পাওয়া গেছে৷”

চলবে,

[আগের পর্বে আমার একটু ভুল হয়েছে গল্পের ধাপ সংখ্যা ৬এর পর ৭ না দিয়ে ৮ দিয়ে ফেলেছিলাম৷ কাল ৬,৭,৮ হতো আমি ৯ দিয়ে ফেলেছিলাম তাই আজ ফের ৯ দিলাম ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here