ঘাসেদের ফাগুন পর্ব ১৭

0
311

ঘাসেদের ফাগুন পর্ব-১৭
___________🖌️নাজনীন নাহার
০৪.০৪.২০২২

নারীরা ছয়টি কারণে জাহান্নামে যাবে। এই বিষয়ের উপর ওয়াজ শোনার আমন্ত্রণ জানালেন আমার শ্বশুর আব্বা।
আমি আমার সকল জা ও শ্বাশুড়ি একসাথে মিলে আমার শ্বশুরের রুমে গিয়ে বসলাম তার কেসেট প্লেয়ারে ওয়াজ শুনতে। আমাদের শ্বশুর আব্বা আমাদেরকে এই ওয়াজ শোনাবেন আজকে।

কেসেট প্লেয়ার অন করলেন শ্বশুর আব্বা।
বয়ান শুরু হলোঃ
হুজুর বলছেন,
ছয় প্রকার নারী জাহান্নামে যাবে এটি মুসলিম হাদিস ও রাসুলুল্লাহ সাঃ মেরাজ থেকে এসে বলেছেন যে, ছয় প্রকার নারী জাহান্নামে যাবে।এক হলোঃ যে নারী মাথার চুল খুলে বেপর্দা হয়ে ঘর থেকে বাইরে বের হয় সেই নারী।
দুই হলোঃ যে নারী তার স্বামীকে সম্মান করে না। স্বামীর সাথে তর্ক করে কথায় কথায়।স্বামীর কথায় মর্যাদা দেয় না। আল্লাহর নবী রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন সেই নারী জাহান্নামে যাবে।
তিন হলোঃ যে নারী তার স্বামীকে বাদ দিয়ে পরপুরুষের সাথে হাসি তামাশা করে এমন নারী জাহান্নামে যাবে।
চার হলোঃ যে নারী অপবিত্র থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে অলসতা করে। ফরজ গোসল না করে ঘুরে বেড়ায় তারা জাহান্নামে যাবে। এই পর্যন্ত বলে হুজুর বেশ মজা করে বললেন, বহু নারী আছে ফরজ গোসল বুঝে না। কী আপনারই বলেন ! এইরকম নারী আছে না! উপস্থিত সকলে হুজুরের প্রশ্নের জবাবে সমস্বরে বলে। আছে আছে হুজুর আছে।
পাঁচ হলোঃ যেই নারী মিথ্যা বলে ও গিবত করে এবং কথায় কথায় কসম করে। সেই নারী জাহান্নামে যাবে। কী আপনাদের আশেপাশে এরকম বহু নারী আছে কী নাই। হুজুরের প্রশ্নের জবাবে সবাই বলে, আছে আছে। হুজুর আবারও বলে মিথ্যা কসম করে যেই নারী সেই নারী জাহান্নামে যাবে বুঝলেন!
ছয় হলোঃ যে নারী অন্যের খুশিতে হিংসা করে। আর কারও উপকার করে খোঁটা দেয়। এটা নারীরা কম দেয় না বেশি দেয়! হুজুরের প্রশ্নের জবাবে সবাই বলে, বেশি দেয়।
হুজুর তখন বলে।কথাটা এতো আস্তে বলেন কেন! জোরে বলেন।তখন সকলে জোরে বলে, বেশি দেয় বেশি দেয়।

হুজুর এরপর তার ওয়াজে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত আরবিতে বললেন এবং সাথে সাথে তার বাংলাটা বললেন। হুজুর বললেন,
আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ” কোনো দান সদকা করার পরে খোঁটা দেয়া এটা মস্ত বড়ো অপরাধ। এই দানের চেয়েও মিষ্টি কথার (মানে খোঁটা দেয়ার) পাপ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি। ”
হুজুর বয়ানে আরও মশকরা করে ও নারীদেরকে কটাক্ষ করে এক প্রকার অভিনয়ের ভঙ্গিতে ভেংচি কেটে কেটে বললেন, দেখবেন মহিলারা তার কাজের মেয়েকে কথায় কথায় খোঁটা দেয়। বলে, তোরে কয়দিন আগে একশো টেকা দিলাম।তোর বাপরে দুইশোডা টেকা দিলাম।তোর বাপেরে দেড় টাকা দিয়া লুঙ্গি কিননা দিলাম।
যারা ওয়াজ শুনছেন তাদের মধ্যে একটা হাসির রোল উঠল। কারণ হুজুরের মুখে নারীদেরকে উদ্দেশ্য করে এইরকম কটাক্ষ বয়ানে উপস্থিত পুরুষকুল খুব মজা পেলেন। হুজুর আবারও বললেন, বলেন নারীরা এসব বলে কিনা!
সবাই বলল, বলে বলে।
হুজুর আবারও বললেন, আল্লাহর নবী রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যারা খোঁটা দেয় তারা জাহান্নামে যাবে। হুজুর আবারও বললেন,
তার মানে এই নারীরা জাহান্নামে যাবে।
এরপরে হুজুর আরও বেশি হাসি মশকরার সাথে উৎফুল্ল হয়ে আবারও বলতে লাগলেন,
আর একটা কথা বলে আজকের বয়ান শেষ করি। নারীরা খালি হিংসা করে আর হিংসা করে। অন্যের সুখ দেখে নারীরা কী করে! হিংসা করে। যেমন পাশের বাড়ির কারও স্বামী ভালো কামাই রুজি করে। আর তা নিয়ে নারীরা হিংসায় মরে যায়।আর নিজের স্বামীকে বলে।দেখছনি ওর স্বামী কত ভালো রুজি করে। দেখো ও কেমনে চলে!
এগুলো ছাড়াছার গুনাহ।
এই ধরনের নারী বেহেশতে যাবে না। এই সকল নারীরা জাহান্নামে যাবে। বলেন নাউজুবিল্লাহ!

ওয়াজ শেষ হলো। আমরা সবাই নিশ্চুপ। আমার শ্বাশুড়ি ভয় ও অপরাধ বোধে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। ঘরে বসে থাকা সকলের মুখের অভিব্যক্তিতে একটা অপরাধী ভাব। এবার আমার শ্বশুর কথা বলে উঠলেন। কি বউ মায়েরা! তোমরা কী বুঝলা! তোমরা এগুলো সব মেনে চলবা। তোমরা এগুলো কেউ ভুলেও করবা না। আগামীকাল রাতে তোমাদেরকে আরেকটা ওয়াজ শুনাব। তা হলোঃ নারীর ফিতনা কতটা ভয়াবহ এর উপর ওয়াজ করেছেন উলামায়ে কেরাম।

আমি এতোক্ষণ ওয়াজ শুনছিলাম আর অনেকগুলো বিষয় আমার মন ও মাথার মধ্যে ঘুরছিল।ঘুরছিল বহু প্রশ্নও। ভাবলাম জাহান্নামে যাওয়ার ছয়টি কারণ নিয়ে। কারণগুলোর যায়গায় আমি নিজেকে বসিয়ে দেখলাম। দেখলাম আমি নিজে বাইরে যাবার সময় হিজাব পরে মাথার চুল ঢেকে নিয়ে বাইরে যাই।এমন কি ঘরের মধ্যেও মাথায় কাপড় দিয়েই চলি। তার মানে প্রথম কারণে আমি পাশ করলাম আলহামদুলিল্লাহ।

এবার আসলো দ্বিতীয় কারণ।
যে নারী তার স্বামীকে সম্মান করে না। স্বামীর সাথে তর্ক করে কথায় কথায়।স্বামীর কথায় মর্যাদা দেয় না। আল্লাহর নবী রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন সেই নারী জাহান্নামে যাবে।
বিষয়টি ঠিক আছে। এগুলো করলে আখেরাতে তো জাহান্নামে যাবেই যাবে। দুনিয়াতেও তো জাহান্নামেই থাকবে নারীরা।যদি নারীরা তার স্বামীর ভালো বিষয় তো দূরের কথা স্বামীর অসদাচরণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধেও তর্ক করে। তাহলে তার দুনিয়ার জীবনই জাহান্নাম করে দেয় অধিকাংশ প্রিয় স্বামী। কয়টা নারী আমাদের সমাজে স্বামীর সাথে তর্ক করে বা মর্যাদা না দিয়ে সংসারে শান্তিতে টিকে থাকতে পারে! হয়তো হাতে গোনা দু’চার জন পারতে পারে। তা পারুক।

তবে আমার কাছে মনে হলো। প্রথম কারণটা ছাড়া বাকি সব কারণ তো ছেলেদের জন্যও প্রজোয্য। তাহলে এই ওয়াজে কেন শুধু নারীকে ইনক্লুড করা হলো। আর মজলিসে বসে যে সকল মানুষ ওয়াজ শুনতেছিল তারা তো সকলেই পুরুষ। তাহলে বয়ানকারী কেন একবারও পুরুষদেরকে সতর্ক করলেন না! কেন পুরুষদেরকে নিষেধ করলেন না এই পাঁচটি করণ না ঘটাতে!
কারণ এই ওয়াজের মধ্যকার ছয়টি কারণের মধ্যে প্রথম কারণটি ছাড়া বাকি পাঁচটি কারণে তো পুরুষরাও জাহান্নামে যাবে। তাহলে ওয়াজের হুজুর পুরুষদেরকে কেন ভয় দেখালেন না!

আমার মনে প্রশ্ন এলোঃ
একঃ নারীদের মতো পুরুষরা গীবত করলে কী জাহান্নামে যাবে না?
দুইঃ পুরুষরা স্ত্রীকে অযথা অসম্মান করলে কী জাহান্নামে যাবে না?
তিনঃ পুরুষরা নিজের স্ত্রীকে রেখে পরনারীর সাথে হাসি তামাশা করলে সে কী জাহান্নামে যাবে না?
চারঃ যে সকল পুরুষরা দান সদকা করে খোঁটা দেয় তারা কী নারীদের মতো জাহান্নামে যাবে না?
ছয়ঃ যে সকল পুরুষ পুরুষে হিংসা করবে।এবং অপরের স্ত্রীকে নিজের স্ত্রীর সাথে তুলনা করে করে নিজের স্ত্রীকে অপমান করবে তারা কী জাহান্নামে যাবে না নারীদের মতো?

আমার খুব ইচ্ছে হলো প্রশ্নগুলো আমার শ্বশুরকে জিজ্ঞেস করি।কারণ আমাদেরকে তো আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সঠিক বিধান জানতে হবে।

আরও একটি বিষয় আমি খেয়াল করলাম তা হলো। মজলিসের হুজুর ও উপস্থিত সকল পুরুষ খুব হাসি তামাশাভরা উৎফুল্লতায় নারীদের জাহান্নামে যাবার ওয়াজ শুনল। মনে হলো উক্ত হুজুর এবং উপস্থিত পুরুষগণ নিজেদের মা, বোন, কন্যা, স্ত্রী এবং নারী স্বজনদের জাহান্নামে যাওয়ার খবরটায় খুব আনন্দ পাচ্ছে। নিজেদের মা বোন কন্যাদের জাহান্নামের কনফার্মেশন পাওয়ার পরেও তাদের মন ব্যথায় ভারাক্রান্ত হচ্ছে না। তাদের আফসোস হচ্ছে না। বরং তারা উল্লাস করে করে এতে তাদের কী শিক্ষা লাভ হলো জানি না! তবে এটুকু অনুমেয় হলো যে, এই পুরুষগণ শিক্ষা নিয়ে গেলো তাদের ঘরের ও বাহির সমাজের নারীদের জন্য নিজেদের জন্য না। এখন এই সকল পুরুষরা আরও বেশি নারী অত্যাচারী ও নারী অপমানকারী হয়ে বাসায় ফিরল। সব মিলিয়ে আমি আমার শ্বশুর আব্বাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম।
——আব্বা এই জাহান্নামে যাবার ওয়াজটা শুধু আমাদেরকে কেন শোনালেন! আপনার ছেলেদেরকে কেন শোনালেন না?
—-তাদেরকে শুনিয়ে কী হবে! এই ওয়াজ তো নারীদের জন্য সেজো বউ।
—–কে বলেছে আব্বা এই ওয়াজ নারীদের জন্য!
—–কেন! হুজুর বলেছে শুনলে না!
—–আব্বা আমরা আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কথা শুনব! নাকি এই হুজুরের কথা শুনব!
—-হুজুর তো আল্লাহর কোরআনের আর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাদিসের কথাই বললেন।
—– আব্বা এই হুজুর নিজের ও পুরুষদের স্বার্থে ওয়াজ করল। কারণ নারীরা তাদেরকে টাকা দেয় না।টাকা দেয় পুরুষরা। তাই এই সকল একপেশে ও চটকদার বয়ান করে এই ধরনের হুজুররা যুগ যুগ ধরে পুরুষদেরকেই খুশি করে। আর নারীদেরকে হেয় করে।
রুমের সবাই আমার আর আমার শ্বশুরের দিকে অস্থির চোখে তাকাচ্ছে। আমার শ্বশুর একটু রেগে গেলেন।

—–সেজো বউমা তুমি সবসময় বেশি বুঝো।আর বেশি কথা বলো। তোমার মধ্যে একটা বেয়াদবি ভাব আছে।
—–আব্বা আপনি অযথা আমাকে দোষারোপ করছেন। একটু ঠাণ্ডা মাথায় আবারও কেসেটটা বাজান।তারপর মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তখন দেখবেন ওই ওয়াজের হুজুর আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে বেয়াদবি করেছে।
—-ইলোরা। তুমি এসব কী শুরু করলে! তোমার শ্বশুরের মুখে মুখে তর্ক করছ।
—- আহা আম্মা! আপনিও রাগ করলেন! আব্বা আর আপনি আমার বাবা-মা। আমার মুরব্বি। আপনারা আমাদেরকে সত্যটা শেখাবেন।আমরা আপনাদের কাছ থেকে সত্যটা শিখে সেভাবে আমরা চলব এবং আমাদের সন্তানদের শেখাব।
——আমরা কী ভুল শিখাইলাম তোমাগো! বড়ো বউ মেজো বউ তোমরা কও দেখি!
আমার শ্বশুরের কথায় আমার জা’য়েরা আমতা আমতা করে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। তখন আমি আমার কণ্ঠ আরও নরম করে বললাম।
—–আব্বা আম্মা আপনারা শুনেন। এক নাম্বার কারণে হুজুর বললেন নারীর মাথার চুল ঢেকে রাখার কথা। এটা নারীর জন্য অবশ্য পালনীয় ও শিক্ষণীয় ওয়াজ।
দুই নাম্বার বলল স্বামীর সাথে তর্ক করা ও সম্মান না দেয়া। আচ্ছা আপনারাই বলেন তো। এটা তো স্বামীর জন্যও বিধান। শুধু নারীর জন্য না। কারণ স্বামীর সাথে অযথা তর্ক ও অসম্মান করলে একজন নারী যেমন জাহান্নামে যাবে। ঠিক তেমনি স্ত্রীর সাথে এমনটি করলে স্বামীও জাহান্নামে যাবে। অথচ এটা বলল না। না বলে আল্লাহর সাথে বেয়াদবি করল।

আবার দেখুন তিন নাম্বার হলো যে স্ত্রীলোক তার স্বামীকে বাদ দিয়ে পরপুরুষের সাথে হাসি তামাশা করে সে জাহান্নামে যাবে। আব্বা এই কাজটা যদি কোন স্বামীও তাঁর স্ত্রীকে বাদ দিয়ে পরনারীর সাথে হাসি তামাশা করে তাহলে সেই পুরুষও কিন্তু জাহান্নামে যাবে। অথচ দেখেন এই সত্যটা হুজুর না বলে শুধু নারীদেরকে অপমান করে গেলেন।
আব্বা মহান আল্লাহ তায়ালা নারীকে কখনোই ছোট করেননি।নবী করিম সঃ কখনোই নারীকে ছোট করেননি। করেছেন এই সকল ভণ্ড ধার্মিক হুজুর ও ভণ্ড ধার্মিক ফতোবাজরা।

আব্বা আপনি তো যথেষ্ট জ্ঞানী মানুষ। আপনি কেন এদের এই সকল ধোঁকায় পড়বেন! আমার কথা হলো আমরা সকলে মানুষ। আমরা আমাদের ঘর থেকে, পরিবার থেকে নারী পুরুষ পরস্পর পরস্পরের সম্মান করতে শিখব। আমরা মিলেমিশে ভালো থাকব।
আমার শ্বাশুড়ি তখন বলে উঠল।
—- ইলেরা তুমি তো মা খুব দামী একটা কথা বলছ! আমি তো মা এই সকল ওয়াজ শুনতে শুনতে ভয়ে অসুস্থ হয়ে যাইতেছিলাম।
—-আম্মা গো আমাদের আব্বা আমাদেরকে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু আব্বা এখন থেকে আমাদের মতো করে আপনার ছেলেদেরকেও ভালেবাসবেন আর এইসকল ওয়াজ শুনাবেন। বলবেন এর পাঁচটি কারণ নারী পুরুষ সকলের জন্য সমানভাবে পালনীয়।
আমার শ্বশুর আব্বা চুপ করে আছেন। মনে মনে রেগে আছেন কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছেন না।আমি তখন আবারও বলতে শুরু করলাম।

—-আব্বা এই হুজুরের বয়ানের চার পাঁচ ও ছয় এই সবগুলোই নারী পুরুষ উভয়ের জন্য এক। নারী গীবত করলে যেমন জাহান্নামে যাবে ঠিক তেমনি পুরুষ গীবত করলেও জাহান্নামে যাবে। নারী অপবিত্র থেকে ঘুরে বেড়ালে যেমন জাহান্নামে যাবে ঠিক তেমনি পুরুষও অপবিত্র অবস্থায় ঘুরে বেড়ালেও জাহান্নামে যাবে। নারী হিংসা করলে দান করে খোঁটা দিলে যেমন জাহান্নামে যাবে ঠিক তেমনি পুরুষও যাবে। তাই এই সকল ওয়াজ নসিহত নারী পুরুষ উভয়ের শোনা ও মানা উচিত।
আপনি কী খেয়াল করেছেন আব্বা। হুজুর পবিত্র কোরআনের আয়াতের যে অর্থ বললেন ওখানে কিন্তু আল্লাহ নারী শব্দটি বলেননি। বলেছেন কোনো দান সদকা করে খোঁটা দিলে মস্ত বড়ো অপরাধ হবে। তার মানে কথাটা সকলের জন্যই বলেছেন। অথচ হুজুর নারীদের জন্য বলে চালিয়ে দিলেন।
হুজুর বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যারা খোঁটা দেয় তারা জাহান্নামে যাবে। এখানেও তো কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাঃ নারী বলেন নাই।
এবার বলেন এই সকল ওয়াজ মাহফিলে কী একজন সত্যিকারের মোমিন মুসলমানের যাওয়া উচিত!
তারপরে দেখেন কীভাবে হুজুর হাসি তামাশার মাধ্যমে নারীদেরকে কটাক্ষ করে করে কথাগুলো বললেন। এটাও কি উনি ঠিক করলেন! দেখেন আব্বা উনি ছাড়াছার গুনাহের কাজ করলেন।

সেদিনের মতো ওয়াজ নসিহত ও আমার কথোপকথন শেষ হলো শ্বশুর আব্বার সাথে। তবে পরের দিন থেকে আর এই ধরণের এক তরফা ওয়াজের ক্যাসেট আর বাজেতে শুনিনি আমার শ্বশুর আব্বার ঘরে। আর আমাকে আমার জা’য়েরা আগের চাইতে সম্মান ও ভালোবাসায় খুশি মনে সমীহ করে চলতে লাগল। সবচেয়ে খুশি হলো যে মানুষটি সে আমার শ্বাশুড়ি আম্মা। তার চোখমুখ দেখে মনে হলো তিনি এক মহামুক্তির স্বাদ পেয়েছেন। তিনি এতোদিন মনে করতেন এই সকল কাজ করলে তিনি একাই জাহান্নামে যাবেন। এখন জানতে পারলেন তার স্বামীও যদি তার সাথে এই ধরনের আচরণ করে তাহলে তার স্বামীও জাহান্নামে যাবেন। এই যে সম অবস্থান ও সম মানসিকতার আনন্দ তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে।

যুগে যুগে পৃথিবীতে সম অধিকার ও মর্যাদা চাওয়া নারীদেরকে নারীবাদী উপাধিতে ভূষিত করেও এক ধরনের অপমান করা হয়। অথচ মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সঃ নারীদেরকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিয়েছেন। ভণ্ড ধার্মিক হুজুররা ও ক্ষমতাবান স্বাার্থান্বেষী সমাজপতিরা অতীত থেকে বর্তমানে ধর্মের নামে বিভিন্ন জাল বিস্তার করে নারীদেরকে ছোট করে রেখেছে। করছে ঘাসের মতো দলিত মথিত। তারমধ্য থেকেই মাথা উঁচু করে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে শিখে নিচ্ছি আমরা কতিপয় ইলোরা। একটুকরো মানসিক শান্তির জন্য আমরা মেয়েরা কতই না যুদ্ধ করি আমাদের নিকটতম পরিবেশ ও পুরুষটির সাথে।

আমরা আবারও যে যার মতো ঢাকায় নিজেদের সংসারে ডুবে গেলাম। ইফতিকে ঢাকার মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি করালাম। দুই ছেলেকে নিয়ে আমি রিকশা করে রোজ স্কুলে যাই। ইফতিকে মর্নিং শিফটে স্কুলে দিয়ে দুই বছরের ইনতিকে নিয়ে স্কুলের সামনে রোদ ধুলোর মধ্যে একটু ছায়া খুঁজে বসে থাকি। দুই ছেলের জন্য খাবার বানিয়ে বক্সে করে নিয়ে যাই। একটা বড়ো ব্যাগে ওদের খাবার পানি, এক্সট্রা কাপড়, ফল কাটার ছুরি, হাতপাখা কত কী নিয়ে যাই।

এসব শুধু আমি একটা মা করি না অনেক অনেক মায়েরা করে। ঢাকায় স্কুলগুলোর সামনে মায়েদের এক বিচিত্র জীবন। ঘন্টার পর ঘন্টা ভাবিরা, আপুরা গল্প করে সময় কাটায়। কারও শ্বশুর শ্বাশুড়ির অত্যাচারের গল্প। কারও কারও স্বামীর নিপীড়নের গোপন দহন কষ্ট। কেউ কেউ গল্প করতে করতে কেঁদে ফেলছে। কেউ আবার আমার মতো বুকের তলানিতে দুঃখ দহন লুকিয়ে রেখে ঠোঁটের কোনে মিঠে হাসির আল্পনা আঁকছে।
এদের মধ্যেই আছে আবার ভীষণ ভীষণ সুখী মানুষ। খুব ভালো স্বামী আর শ্বশুর শ্বাশুড়ি কারও কারও। কেউ কেউ মাত্র ক’দিনেই খুব খুব বন্ধু হয়ে যায় একে অপরের। আবার কারও কারও মধ্যে হঠাৎ করেই মান অভিমান।
দু’চার জন আবার বুটিকস এর ব্যাবসা করে। তাদের কাছ থেকে প্রায় সকলেই সেলোয়ার-কামিজ কিনে নেয়। কেউ আচার ও শুকনো খাবার বিক্রি করে অর্ডার নিয়ে নিয়ে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার অবসরে কোনো কোনো মায়েরদের কিছু বাড়তি ইনকাম এক আলাদা আনন্দ ও শক্তি এনে দেয় মনে।

আমি প্রায় সবাইকে খুব মনোযোগের সাথে দেখি। আমার কাছে মনে হয় মানুষ দেখা ও মানুষকে কিছুটা বুঝতে পারার মতো আনন্দ ও দহন খুব কমই আছে পৃথিবীতে। কিছু মানুষ খুব সহজেই কষ্ট প্রকাশে ভীষণ উদগ্রীব। কেউ কেউ আবার বেশ যত্ন করে কষ্ট লুকাতে ব্যাস্ত। কেউ অযথাই হেসে লুটোপুটি কেউ হাসে না যে কতকাল!
কারও কারও চোখ মুখই বলে দেয় আনন্দের ছিটেফোঁটা নেই তার মনে। কেউবা আবার বোকা বোকা সুখে জীবন পার করে অনায়াসে। আমি মানুষের এই বিচিত্র জীবন ও মনন দেখি। ভালোবাসি মানুষকে। ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। আমার মনে হয় ওই সেই যেই হোক মানুষটারও আমার মতোই একটি জীবন আছে। আছে অনুভূতি, ইচ্ছে ও চাওয়া। সে ভালো থাকুক। আমিও ভালো থাকি।
আর আমার মধ্যে এই মানবিক অনুভূতিটা আছে বলেই আমি রাশেদকেও তার মতো করে বুঝে চলতে চেষ্টা করি।

ইফতির স্কুল ছুটি হলে আমি ওকে নিয়ে বাসায় এসে ওদেরকে গোসল করিয়ে কিছু খাবার খাইয়ে খেলতে বসিয়ে রান্না করে নেই। এরপর খওয়ানো, ঘুম পাড়ানো।নিজের গোসল নামাজ। সন্ধ্যার পর ইফতির হোমওয়ার্ক ওদের রাতের খাবার সকালের জন্য সব গুছিয়ে রেখে ঘুমানো। এরকম একটা কঠিন ব্যস্ত সিডিউলে আমার জীবন চলতে লাগল। আমার এতে কোনো একঘেয়েমি বা বিরক্তি লাগে না। কারণ আমার সন্তান, আমার স্বামী, আমার সংসার। আমি ভীষণ ভালোবাসে ও আনন্দ নিয়েই তাই সব করি।

আমি দেখেছি আনন্দ নিয়ে ভালোবেসে নিজেদের কাজগুলো করতে পারলে অনেক শান্তি অনেক ভালোলাগা কাজ করে আলহামদুলিল্লাহ। আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। তাই চেষ্টা করি সাধারণ ও সহজ করে জীবন ও বোধ নিয়ে চলতে। তবে অন্যায়গুলো যেমন করতে পছন্দ করি না।তেমনি মানতেও খুব পীড়াদায়ক হয় আমার।

এরমধ্যে রাশেদ একটা ফ্ল্যাট কিনে নিলো। আমরা নিজেদের ফ্ল্যাটে উঠলাম। ইফতি ক্লাস ফোরে উঠল। ইনতিকে আইডিয়াল স্কুলেই ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করিয়ে দিলাম।
এখন কিছুটা অবসর পাই আমি। স্কুলের বাইরেই বসে থাকি। এই সময়টা আমি বই পড়ি স্কুলের আশেপাশের ফুটপাতে বসে বসে। এটাও খুব আনন্দের। নিজের মধ্যে নিজের একটা আনন্দের পৃথিবী বানিয়ে নিয়েছি।
মাঝে মাঝে একা লাগলেও আমি নিজেকে নতুন নতুন বইয়ের নতুন নতুন জগতে ডুবিয়ে রাখি। আসলে আমি আমাকে ভালোবাসতে ও আমার মনের যত্ন করতে শিখে নিয়েছি। আমাদের সকলেরই মূলত নিজের জন্য একটা আনন্দের পৃথিবী তৈরি করে নেয়া উচিত কারও কোনো ক্ষতি না করে। আমি বইয়ের মধ্যে আমার চিন্তার বিস্তার খুঁজে পাই। ঘুরে বেড়াই আদি থেকে অন্তে। ঘুরে বেড়াই সভ্যতা, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, ইতিহাস ও পরিবারতন্ত্রের রন্দ্রে রন্দ্রে। উপভোগ করি জীবন বোধ। বুঝতে শিখি মানুষের মন ও মস্তিষ্কের বিচিত্রতা।

শিখতে থাকি মানবিকতার বিশুদ্ধ বোধের শিক্ষা। দেখি অমানবিকতার বিশ্ব রাজনীতি ও সমাজনীতির প্রহসন। আমার ছেলেদেরকেও তাদের বইয়ের লেখাপড়ার সাথে সাথে শেখাতে থাকি মানবিকতার গুণাবলি। শেখাই জীবন বোধ।

আমি মনে করি আমি একজন মা। মায়ের অনেক অনেক দায়িত্ব। বাবার অবশ্যই দায়িত্ব আছে। তবে আমদের সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থায় মায়ের সঙ্গ ও সান্নিধ্য পায় বেশি সন্তানরা। তাই মূল শিক্ষক মা। আমিও চেষ্টা করি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই আমার সন্তানদের মধ্যে মানবিকতার বোধ তৈরি হোক। আমার সন্তান তার সহপাঠী ও বন্ধুদেরকেও মানবিক হতে শেখাক। আমার পুত্র সন্তানটি শুধুমাত্র একজন পুরুষ হয়ে বড়ো না হয়ে একজন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠুক। আমার ছেলে তার সহপাঠী, বন্ধু ও কাজিন সিস্টারদেরকে মানুষ হিসেবে সম্মান ও সহযোগিতায় নিরাপদ সম্পর্কে বাঁধুক।

আমার ছেলে কখনোই যেন কোনো মেয়েকে অসম্মান না করে। বাজেভাবে টিজ না করে। আমার ছেলে ও ছেলের সহপাঠীরা কেউ যেন ধর্ষক না হয়।ভবিষ্যতে এরা কেউ যেন ভণ্ড বা প্রতারক প্রেমিক ও স্বামী না হয়।চেষ্টা করি আমার ছেলেদের সাথে বন্ধুর মতো বোঝাপড়ায় আর ভালোবাসায় ওদের আগলে রাখতে। আমার কাছে মনে হয় আমরা সকলেই যদি নিজেদের সম্পর্ক থেকে ও ঘর থেকে এভাবে সন্তানের মানসিক ও বোধের গঠনটায় পরিশীলন করে দেই। তাহলে সমাজ, সংসার ও সম্পর্কের মধ্যে সহনশীলতা, মানবিকতা ও সম্মান বাড়বে।

আমার ছেলে দু’জনকে স্কুলে দিয়ে যে সময়টা আমি বসে থাকি। ওই সময়টাকে আরও একটু কাজে লাগানোর জন্য আমি আমার বাচ্চাদের স্কুলের কাছেই একটা কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে গিয়ে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের সাথে কথা বলে সেই স্কুলের বাচ্চাদের সময় দিতে লাগলাম। চাইল্ড সাইকোলজি ও বিহেভিয়ারের উপর আমি বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করতে লাগলাম ভলান্টিয়ার হিসেবে। এক পর্যায়ে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আমাকে তার স্কুলে জয়েন করতে বললেন। এবং আরও এক পর্যায়ে আমাকে মোটামুটি রাজি করিয়ে ফেললেন। আমারও মনে হলো বেশ তো আমার চমৎকার একটা ভালোলাগার কাজও হলো সাথে একটা ভালো সেলারিও পাবো।

আমি প্রিন্সিপালকে ফাইনাল কথা না দিয়ে বললাম আমাকে আমার হাসবেন্ডের সাথে কথা বলতে হবে। দেন আমি আপনাকে জানাচ্ছি।
সময়ের পরিক্রমায় আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার রাশেদের মন মানসিকতার কলুষিত দিকটি। আমার মনে হয়েছিল এমন একটা শিক্ষামূলক আর মানুষ গঠনের মতো মানবিক কাজটা করার জন্য রাশেদ আমাকে নিশ্চয়ই সাপোর্ট দেবে।

একদিন বাচ্চাদেরকে ওদের রুমে ঘুম পারিয়ে রেখে আমাদের ঘুমানোর ঠিক আগে আমি রাশেদের সাথে আমার জবে জয়েন করা নিয়ে কথা তুললাম।
—-রাশেদ ইফতির স্কুলের পাশেই যে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলটা আছে। ওটাতে আমি জয়েন করতে চাই টিচার হিসেবে।
—–মানে! তোমাকে কী ভীমরতিতে ধরেছে! এই বয়সে তুমি চাকরি করবা! তাও আবার এইসএসসি পাশ দিয়ে!
শাহেদের কণ্ঠে ভীষণ কটাক্ষ। কিন্তু আমি ভীষণ শান্ত।
—-আসলে ওদেরকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি যে সময়টা স্কুলের সামনে বসে কাটাই। ওই সময়টাই ওখানে দেব। ছোট বাচ্চাদের চাইল্ড সাইকোলজি ও বিহেভিয়ারের উপর ক্লাস নেব। আমার এইসএসসি পাশেই হবে।
——বাঃ তুমি তো দেখছি বহুদূর এগিয়ে গেছ! নিজে নিজেই চাকরির ব্যবস্থা করে ফেলছ। নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছ। তাহলে এখন আবার আমাকে জানাচ্ছ কেন!
—– তুমি আমার স্বামী। তোমাকে জানাতে হবে না!
—-এইটা আগে হুশ ছিলো না তোমার!
—- আহা আমি তো ওনাদেরকে কথা দেইনি। তোমার সাথে কথা বলেই আমি ওনাদেরকে ফাইনাল করব।
রাশেদ এবার গলাটা একটু নামিয়ে বেশ প্রেমভাব কণ্ঠে এনে বলল।
—- আচ্ছা বলো তো তোমার চাকরি করতে হবে কেন! আমাদের কী খাওয়া পরার অভাব আছে! মেয়ে মানুষের অযথা চাকরি করা ভালো না।
—– এখানে অযথা হবে কেন রাশেদ! টাকার জন্য আমি কাজটা করতে চাই না। আমি চাই এমন একটা ভালো সাবজেক্টে আমি বাচ্চাদের পড়াতে পারব। এতে আমার আত্মতৃপ্তিটা বাড়বে। আমি তো রাস্তায় বসেই এই সময়টা শুধু শুধু কাটাই। একটা ভালো কাজে লাগবে সময়টা।
—-ইলোরা আমি চাই না তুমি চাকরি করো। ভালো মেয়েরা চাকরি করে না।
—-এসব তুমি কী বলছ রাশেদ! আমাদের বাচ্চাদের স্কুলেও তো অনেক মহিলা টিচার পড়াচ্ছেন। আমার স্কুলেও কত মহিলা শিক্ষিকা ছিলেন। আর এরা সকলেই অনেক ভালো মানুষ।
—-তুমি ভেতরের খবর কতটুকু জানো! মেয়ে মানুষের চাকরি মানেই বসের সাথে বিছানায় যাওয়া।
—-ছিঃ রাশেদ! তুমি একজন শিক্ষককে অপমান করছ। একজন নারীকে তুমি অপমান করছ।
—– খুব ভালো করেছি। ফালতু কথা বলতে আসছ! বেলাল্লাপনা করার সুযোগ খুঁজতেছ তুমি নিজের জন্য। মনে করেছ আমি এসব বুঝি না!
রাশেদের গলা বেশ উঁচুতে।
—- আস্তে কথা বলো রাশেদ। আমরা একটা বিষয় কেবল আলোচনা করছি।
—-বা….আলোচনা করছ তুমি! খাচ্ছ দাচ্ছ ভালো, ভালো বাসা, ভালো কাপড়। তাতে তোমার পোষায় না! এখন চাকরি করে বেটাদের সাথে রঙোলীলা করতে হবে তার। এইসব আমি একদম হতে দিব না। চাকরি করলে মাইয়ারা কখনোই ভালো থাকে না। তোমাকে আমি নষ্টামী করতে দিব না।
—-তুমি অযথাই এতো নোংরা কথা বলছ রাশেদ। এটা একটা বাচ্চাদের স্কুল।
—-আরে ওই! তোমার ঘটনা কী হ্যাঁ! স্কুলের মালিকের সাথে কী তোর পিরিত শুরু হয়ে গেছে! নষ্টা মেয়ে মানুষ! তোর চরিত্র কোনোদিনও ভালো হবে না। ঘরের বেটায় হয় না তোর। তোর এখন বাইরের বেটাদের লাগবে।
—-ছিঃ রাশেদ! ছিঃ!
তুমি অহেতুক এতো নোংরা কথাগুলো আমাকে বললে। স্কুলের প্রিন্সিপাল একজন মহিলা।
—দেখো গিয়ে ওই মহিলাও চরিত্রহীন। বাইরের বেটাদের সাথে শোয়ার জন্য তুমি চাকরি করতে চাও।তুমি কী মনে করছ! আমি বুঝি না!
——রাশেদ তুমি আমাকে যতই নোংরা কথা বলো বলতে থাকো। আমি জানি আমি কী! আমি চাকরিটা করব। তোমার মতামত নিয়েই আমি জয়েন করতাম।কিন্তু তুমি আমাকে নোংরা কথাগুলো বলে আমার সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ় করে দিলে। আমি অযথা তোমার সাথে তর্ক করতে চাই না। আমি চাই তোমার মন মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির বদল হোক। মেয়েদেরকে সম্মান করতে শেখো। কারণ তোমাকে দেখে দেখেই তোমার সন্তান বড়ো হবে ও মনুষ্যত্ব শিখবে। আমি চাই না তোমার সন্তান একজন অমানুষ হয়ে গড়ে উঠুক। আমি চাই তোমার আমার সন্তান একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক।

কথা ক’টা বলেই আমি রুমের লাইট অফ করে বিছানায় যাচ্ছিলাম। রাশেদ এক রকম হুঙ্কার দিয়ে বিছানা থেকে উঠে আসল। আর উঠে এসে……

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here