ঘাসেদের ফাগুন পর্ব ৫

0
1570

ঘাসেদের ফাগুন পর্ব -৫
_________🖌️নাজনীন নাহার
১২.০৩.২০২২

হিল্লা বিয়ের প্রথম রাতে ঘরের দরজাটা বন্ধ হয়ে কুপিটা নিভে যাওয়ার পরে ভয়ের তীব্রতায় মাথায় চক্কর দিয়ে দাদি যখন বমি করে ঘর ভাসিয়ে দিল। তখন তার হিল্লা বিয়ের স্বামী নিজ হাতে ঘরের বমি পরিষ্কার করল। এরপর হাতমুখ ধুয়ে এসে ঘরের এক কোনে ছালার উপর শুয়ে শুয়ে দাদিকে উদ্দেশ্য করে সেই স্বামী বলল।
————– মাগো আমারে আপনে মাফ কইরা দিয়েন।ছুডুকালের থাইকা আমার বাপ মা আছিলো না। আপনারেই আমি হারাডাকাল মায়ের লাহান দেখছি। আপনারে আমি কুনু বেইজ্জত হইবার দিমু না। আপনে কাইন্দেন না। আইজকা যা হইছে তা আমি বুঝি না। আমি বুঝি আপনে আমার মায়ের লাহান।আপনারা আমার মনিব। আপনাগো উপকারে আমি আইবার পারলেই আমার জেবন ধইন্য। হুনেন মা, আমি কিন্তু টেকার লাইগা বা ডরে পইড়া রাজি হই নাই। আমি রাজি হইছি আমার মায়ের ইজ্জত জানি অন্য মাইনসের হাতে না যায়। আমি শিক্ষিত মানুষ না। তয় মায়ের জাতের ইজ্জত রাইখবার লাইগা এই জেবনডাও দিবার পারুম।
আমারে আপনে মাফ কইরা দিয়েন মা। লেহা পড়া না জানা এই আমি খালি আমার আল্লাহ রাসুলরে চিনি। এই হগগল তালাকও বুঝি না।হিল্লাও বুঝি না। হগলতের হগগল কিছু বুঝন লাগত না মা। কয়ডা দিন ধইরা আমি অনেক ডরাইছি আপনেরে লইয়া। আইজকা আমার হগগল ডর গেছে গা মা। আমি কাইলকা বেহান বেলা হুজুরের লগে কতা কইয়া দূর দেশত চইল্লা যামু। আপনে আমার মা।আপনারে কইলাম। যাতে আপনার মুনে কুনু ডর না থাহে।
মুনের মইধ্যে কুনু ডর রাইখেন না মা। সমাজটা মাইনসে খারাপ বানাইয়া ফালাইছে। আপনারা মায়ের জাত। আমরা হগগলতে আপনাগোরে ঠিক মতন সম্মান দিবার পারি না। আপনে আমারে মাফ কইরা দিয়েন মা। মাফ কইরা দিয়েন।

সকাল বেলা কাজি সাহেবের পরীক্ষায় পাশ করল গাবুর লোকটা। এরপর সকলের সামনে দাদিকে তালাক দিয়ে। তখনকার সমাজপতিদের নির্ধারিত নিয়ম পালন করে নিজের থাকার ঘরে গিয়ে সারাটাদিন দরজা বন্ধ করে রাখল। এরপর রাতের অন্ধকারে সেই যে গ্রাম ছাড়লো তারপর থেকে আর কেউ তাকে দেখেনি কোথাও।

এদিকে তালাকের ইদ্দত পালন শেষে দাদার সাথে দাদির আবারও বিয়ে হলো। এরপর তারা কতটা সুখে শান্তিতে সংসার করেছে তা তারা আর আল্লাহ জানে। কারণ এরপর থেকে সেই দাদি আর ঘরের বাইরে দিনের আলোতে বের হয়নি কোনোদিন। দাদি কারও সাথে আর কথা বলেনি। নিজের মেয়েরা ও ছেলের বউয়েরা মাঝে মাঝে তার কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করত। সে তার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে শক্ত হয়ে বসে থাকত।
যে স্বামীর কাছে স্ত্রীর বৈধতা পাওয়ার জন্য দাদি হিল্লা বিয়েটাও মেনে নিয়েছিল।সেই স্বামীকে আর কোনোদিনও স্পর্শ করেনি। একবারও কাছে গিয়ে স্বামীর মুখটা দেখেনি।
দাদির দহনগুলো কতটাই না তীব্র ছিল। ছিলো মারাত্মক অপমানের যে তিনি দুনিয়ায় কোনো মানুষের সাথে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আর কোনো কথা বলেনি। নিজের সন্তানের কাছেও কখনও নিজের দুঃখ দহন প্রকাশ করেনি।

তার ঘরের পূর্ব দিকের মাটির পিড়া কেটে তার জন্য পায়খানা প্রশ্রাবের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছিল পেছনের খালের সাথে যুক্ত করে। দাদি শুধু রাত হলে বাইরে বের হতো। অন্ধকারের মধ্যেই পুকুরে গিয়ে গোসল করত। নিজের জন্য ঘরের মটকায় বউঝিরা পানি তুলে রাখত। ছেলের বউদের দেয়া খাবার একটু আধটু খেতো আবার খেতো না। কয়েক বছর এভাবে কাটানোর পরে এক রাতের আঁধারে দাদি নাকি গোসল করতে গিয়ে পুকুর জলে পড়ে মরেছিল। যেখানে দাদিকে তার ভালোবাসার আর বিশ্বাসের পুরুষটাই ঘাসের মতো পিষে ফেলল। সেই দাদির জীবনে আর কোনো সম্মানের ফাগুন আসে কী করে!

কেউ বলে দাদি আত্মহত্যা করেছিল।কেউ বলে দুর্বল শরীরে হয়তো অন্ধকারে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল পানিতে। তারপর শাড়িতে পেঁচিয়ে মারা গেছে। দাদি তার নারী জীবনের সর্বোচ্চ মূল্যটা এক জীবনে দিয়ে গিয়েছিলেন। এভাবে যে কত কত নারী জীবনে বেঁচে থেকেও মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে! কত নারী যে অন্যের পাপের শাস্তি নিজে ভোগ করে! যুগে যুগে যে কত নারী ভুল সমাজের ও ধর্মের ভুল ব্যবহারের বলি হয়েছে! এখনও হচ্ছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু হওয়া বৈষম্য থেকে এই উত্তর আধুনিক যুগেও নারীর সত্যিকারের মুক্তি মেলেনি। আদৌ মিলবে কিনা তা কে জানে!

আমার সেই দাদির মৃত্যুর প্রায় একশো বছর পরেও আজ আমি ইলোরা রাশেদ এ কীসের শাস্তি ভোগ করছি! এ কী আমার নারী জন্মের শাস্তি!
আপনি বা আপনারা কেউ কেউ হয়তো ভালো আছেন। আপনি বা আপনারা কেউ কেউ হয়তো মানুষ জীবন পেয়েছেন। কিন্তু আমি পাইনি। আমি ও অনেকেই নারী জন্মের অভিশপ্ত জীবনই পেয়ে এসেছি। তাইতো এমন নির্মম দহন আমার!

জন্মটা আমি মানুষ হিসেবেই নিয়েছি।গঠনে আমি নারী জন্মই পেয়েছি। সমাজ নারীকে ব্যবচ্ছেদ করেছে বহুবার। ধর্মের অপব্যবহারে কিছু পুরুষ নারীকেই করেছে অসহায়। আজকেও কেন আমার নারী জন্মে এমন অভিশাপ! তাহলে কী আমার নারী জন্মটাই হয়ে আছে আজন্ম পাপ! অনেকেই তেড়ে এসে বলবেন একথা ভুল একথা মিথ্যে। বুকে হাত দিয়ে বলুন তো।ক’জন নারী পায় সত্যিকারের মানুষ জন্মের স্বাদ!
তর্কের খাতিরে তর্ক না করে। সত্যটা একবার দেখুন নেড়েচেড়ে। কথায় কথায় নারীকে টেনে এনে মুখে মুখেই চরিত্র হরণ করেন। নারী দুর্বল, নারী অনিরাপদ!
কেন তবে তা পুরুষরা নয়!
পুরুষের ভয়ে পুরুষের রোষে কেন নারী অনিরাপদ রয়!
নারীর জন্য অনিরাপদ পৃথিবী কে বানালো বলুন!
সে কী ঈশ্বর স্বয়ং!
নাকি পুরুষ নরপশু যাদের বলা হয়!
সব পুরুষ সমান নয় জানি।
তবুও নারীরা কেন এতো ভয়ে মরি!
কেন ঘরে বাইরে, পথে ঘাটে, শহরে নগরে পুরুষকে নারীর এতো ভয়!
আপনি তুমি তোমরা কেউ কেউ যদি হও উত্তম পুরুষ। তাহলে একটা একটা করে নরপশু ধরো হে উত্তম পুরুষ!
আজ আপনারাই করুন ক্ষয় এই নরপশুদের অত্যাচারের জয়!

হাস্যকর লাগে হে উত্তম পুরুষ!
আমার বাবাটা যখন আমায় নিয়ে ভয় পায় নিজ পুরুষ জাতে।
ভাইটা, স্বামীটা, বন্ধুটা ছেলেটাও ভয় পায় মা’কে নিয়ে, বোন, স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে।
কার ভয় পায় বলুন তো!
কে সে রাক্ষস পুরুষ!
কে সে শয়তান!
কে তবে জুজু এই ধরায়।
খুঁজে বের করুন মহাশয়।

লজ্জা লাগে না!
লজ্জা করে না বলতে একথা যে সব পুরুষ এক নয়!
কেন এক নয়! এই নষ্ট ও ভ্রষ্ট পুরুষদের দায় নেবে কে বা কারা?
এখানে কেন আপনাদের মুখে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আসে না!
কতকাল নারী পুরুষের ভয়ে গুটিয়ে থাকবে নিজে নিজে।
কতটা পথ পেরুলে বলো! নারী মুক্তির পথটি পাবে।

রে রে করে তেড়ে আসে পুরুষ,
কণ্ঠ মেলায় তাদের সাথে কিছু নারীও!
বলে আজকাল কী আর সেই দিন আছে!
মাথা গুঁজে কাঁদে নারী পুরুষের কাঁধে!
আছে,
আছে বলেই ঘরে ঘরে আজও কন্যা, জায়া, জননীরা নিগৃহীত হয়ে নিরবে নিভৃতে কাঁদে।
তারপরও কেন পুরুষ পতির হাতেই পৃথিবীর শক্তি প্রিয়!
আমি নারীবাদী নই,
নই আমি বিধর্মী বা ধর্ম বিশ্চ্যুত কোনো মানুষ।
আমি মানুষবাদী আমি মানবতাবাদী। আমিও ধার্মিক মানুষ হে বিশ্বজন।
আমি স্রষ্টাকে মানি, সৃষ্টিকে মানি,
আমি জন্ম মানি, মৃত্যু মানি।
তবুও আমার কেনো এতো ভয়!

তবুও আমি কেনো ভয় পাই বীভৎস পুরুষ, ভয়ঙ্কর সমাজ আর বীভৎস মস্তিষ্কের বলয়!
আমি কেনো ভয় পাই নরপশু ও নরপতিদের বিষাক্ত নখের আঁচড়।
তাদের বিষাক্ত মনের অন্দরে আমি নারী কেন গুটিয়ে বাঁচি এখনো!

আমারও তো একটা জন্মগত অধিকার ছিলো। আমারও তো কোনো স্বপ্ন দেখার অধিকার ছিলো। আমিও তো আমার বাবা-মায়ের আদরের সন্তানই ছিলাম। আমারও তো একটা দারুণ মেয়েবেলা ছিলো।ছিলো দারুণ সুন্দর আনন্দের একটি জীবন। আমিও তো স্বামী সংসারের জন্য তিইশটি বছর নিজেকে উজার করে দিয়েছি। দিয়েছি নিজের ভালোলাগা ভালোবাসা থেকেই।
আমরা মেয়েরা স্বামী সংসারটাকে বড্ড বেশি আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। অধিকাংশ মায়েরা ছোটবেলা থেকেই শেখাতে থাকে তার কন্যা শিশুকে। তোমাকে শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে। তাদের সাথে এডজাস্ট করে চলতে হবে। একটি মেয়ের জীবনে স্বামী সংসারটাই সব। শ্বশুর বাড়ির সকলের সাথে মানিয়ে চলতে হবে।মুখে মুখে তর্ক করা যাবে না। ভালো ব্যবহার করবা বুঝে চলবা ইত্যাদি।
কৈ রে মা একটু রান্না ঘরে আয়। কিছুই তো রান্না করতে পারিস না। শ্বশুর বাড়ির ভাত খাবি কী করে! মা রে এতো রাগ ভালো না। শ্বশুর বাড়ি কিন্তু এসব চলবে না।বিয়ের আগেই নিজের মিজাজ ঠিক করো। পরের বাড়ি কিন্তু এতোসব সইবে না।

এত্ত বড়ো হয়েছ।এখনও নিজের ঘরটা, বিছানাটা একটু গুছিয়ে রাখতে শিখো নাই। বিয়ের পরে কীভাবে চলবা! শ্বশুর বাড়িটা যে পরের বাড়ি এটা জন্মের পর থেকে ভুক্তভোগী নারী মা তার কন্যাকে শেখাতে থাকে।
অথচ সংসারের ছেলেটাকে বড়ো করতে করতে কিন্তু মায়েরা বলে না যে। বাবা তোমার জীবনে একটা মেয়ে অন্য বাড়ি এবং অন্য পরিবেশ থেকে বউ হয়ে আসবে। মেয়েটাকে তোমার খুব ভালো ভাবে মানিয়ে নিতে হবে। বউটার মন মর্জি মতো একটু তাকে মেনে নিও। অযথা তার সাথে তর্ক করো না। মেয়েটা তোমার ঘরে স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আসবে। তোমার ঘরে আসার পরে কিন্তু এটা তারও ঘর হবে। নিজের স্ত্রীকে সম্মান দিও বাবা। এগুলো কিন্তু বলে না।শেখায় না।
আর শেখালেও ক’জন শেখায় বলুন!

আসলে আমরা মেয়েরা জন্ম থেকেই জটিল কিছু নিয়মের মধ্যে পড়ে যাই। তাইতো নিজের জীবনের সকল স্বপ্ন কোথায় হারিয়ে যায়। ছোটবেলায় মা গান শেখায়, নাচ শেখায়। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন বুনে দেয় মগজে। আবার সেই বাবা-মাই ভালো পাত্র পাওয়ার উছিলায় লেখাপড়ার মাঝপথে বিয়ে দিয়ে দায় সারে।
আমি ইলোরর অবস্থাটাই দেখুন। বাবার বাড়িতে তেমন কোনো অভাব ছিলো না। বাবা-মা চাইতেন লেখাপড়া করে আমি ডাক্তার হব। আমি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ফাস্ট ডিভিশনে পাশ করার পরেও আমাকে একরকম জোর করে আমার বাবা বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমি পাগলের মতো কাঁদছিলাম সেই দিন।মায়ের আর বাবার পা ধরে মিনতি করেছিলাম। আমাকে এখন বিয়ে দিয়েন না আব্বা। মা আমার কান্না থামানোর জন্য এক পর্যায়ে আমাকে বলেছিলেন,
________তোকে এখন বিয়ে দিব না সোনা। তুই কাঁদিস না মা। আমি তোর বাবাকে বোঝাব।তুই লেখাপড়া করবি।

মায়ের কথায় আমার সেদিন কান্না থামল।আমি আমার মা’কে বিশ্বাস করলাম। অথচ আমার বাবা ছেলেপক্ষের সাথে স্থানীয় কাজি অফিসে গিয়ে আমার কাবিন করে ফেললেন। মানে আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন। তিন মাস পরে আমাকে শ্বশুর বাড়িতে তুলে দিবেন। অথচ আমি কিছুই জানলাম না। আজ থেকে তেইশ বছর পূর্বে। আমার বাবা আমার অভিভাবক হিসেবে নিজে দস্তখত করে আমার বিয়ে সম্পন্ন করলেন আমার অনুমতি না নিয়ে।
আচ্ছা আমাকে বলা হয়েছে এটা নাকি ইসলামের আইনে আছে! বাবা তার কন্যা সন্তানকে নিজে দস্তখত করে অভিভাবক হিসেবে বিয়ে সম্পন্ন করতে পারবেন! আমি ইলোরা একজন ভুক্তভোগী। আমি ইসলাম ধর্মের আইনকানুনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই। প্লিজ আপনারা কী কেউ বলতে পারবেন আমার বাবা এটা কী ঠিক করেছিলেন?
আমার মা ইসলামের আইনের কথা বলেছিলেন আমাকে। বলেছিলেন ইসলামী আইনে নাকি এভাবে কন্যার অভিভাবক পিতা নিজে সম্মতি দিয়ে ও দস্তখত করে নিজের কন্যাকে বিয়ে দিতে পারেন। এটা কী ঠিক বলেছিলেন আমার মা? এটা কী ঠিক করেছিলেন তারা?
আপনাদের মধ্যে যারা ইসলামের আইন বিষয়ে এবং এই আইনটির বিষয়ে সঠিক ভাবে জানেন। আমি একজন ভুক্তভোগী ইলোরা তাদের কাছে জানতে চাচ্ছি।প্লিজ আমাকে সঠিক আইনটি ও বিষয়টি বলুন প্লিজ।

আমার মতো এইরকম কী অন্য কারও সাথে ঘটত?
আপনাদের কারও জীবনে ঘটেছে?
তাহলে আমার জীবনে কেন আর কীভাবে ঘটল!
কেন আমার বাবা-মা আমাকে ধর্মের আইন বলে আমার উপর আমার জীবনের এতো বড়ো একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলেন? আমার পবিত্র ধর্ম ইসলামে কি সত্যি এইরকম বিধান আছে?
আমার প্রিয় মা ও বোনেরা। আপনাদের কাউকে কী আপনাদের মতের বিরুদ্ধে আপনার পরিবার বিয়ে দিয়েছে?
আমাকে দিয়েছে। আর আমি আজকে আমার বিয়ের তেইশ বছর পরেও তার খেসারত ভোগ করছি। আবারও আজকে আমাকে আমার স্বামী শ্বশুর ধর্মের ও সম্মানের দোহাই দিয়ে আমার কাপড়ের ডিজাইন করার মতো একটা কাজকে থামিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমাকে মারধর করছে।
এখন বলুন কেন?
কেন করছে এগুলো?
আর এটা কী শুধু আমার সাথেই হচ্ছে?
আমার স্বামী শ্বশুর আমার সাথে যা করছে।তারা কী ধর্মকে অপব্যবহার করে আমার উপর এই অত্যাচার করছে? আমাদের পবিত্র ধর্মকে কী তারা অপমান করছে না?
অযথা স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে তারা কী আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামকে অপমান করছে না?
এই কথাগুলো আমি সকলের সামনে বললাম বলে কী অন্যায় করে ফেললাম?
ঘরে ঘরে এদেরকে কে থামাবে বলুন! ওনারা তো শিক্ষিত।

আমার বাবাও সেই তেইশ বছর পূর্বে মোটামুটি ভালোই শিক্ষিত ছিলেন। তখনকার সময়ের তিনি এইসএসসি পাশ ছিলেন। মা ছিলেন ক্লাস এইট পর্যন্ত লেখাপড়া করা।
তাহলে কেন তারা এমনটি করলেন! কেন যুগের পর যুগ নারীরাই ভুক্তভোগী হয়ে আসছে!

সেদিন প্রকৃতির বুকে বিকেলের শেষ আলোটা নিভে গিয়েছিল। মাগরিবের আজান হচ্ছিল। আব্বা বেশ কিছু মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে বাড়ি আসলেন। আমার বড়ো বোন তার ছোট ছোট দু’টো ছেলে বাচ্চা নিয়ে গত ছয় মাসেরও বেশি সময় যাবত আমাদের বাড়িতে ছিলেন। বড়ো আপার গায়ের রং কালো। এসব নিয়ে বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়িতে তাকে অনেক নিগৃহীত করা হতো। সে সব পরে বলছি।তবে শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর সাথে ঝামেলা হওয়ায় বড়ো আপা আমাদের বাড়িতেই তখন অবস্থান করছিলেন। তিনিই প্রথম আমার কাছে এসে বললেন। ——-তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। আব্বা মা’কে বলছে শুনলাম।
আমি শুনে হাসলাম। বড়োআপার মুখে কথাটা শুনে আমার বিশ্বাসই হয়নি। আমি তার কথায় পাত্তা দিলাম না। বড়ো আপা আবারও আমাকে বললেন।
———-বললেন তুমি গিয়ে দেখে আসো। আব্বা তোমার বিয়ের কতগুলো মিষ্টি নিয়ে এসেছে।মা এখন তোমার বিয়ের মিষ্টি সকলের ঘরে পাঠাবে।
কথাটা শুনে আমার মাথাটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেল! তবুও আমি কথাটা বিশ্বাস না করে এক দৌড়ে মায়ের কাছে গেলাম।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here