ঘাসেদের ফাগুন পর্ব ৮

0
400

ঘাসেদের ফাগুন পর্ব -৮
___________🖌️নাজনীন নাহার
১৮.০৩.২০২২

বড়ো আপা আমার রুমের দরজায় টোকা দিয়ে ডেকে উঠলেন।জামাইকে নিয়ে খেতে আসো।অনেক রাত হয়েছে। শব্দটা কানে আসতেই আমার নতুন স্বামী আমার হাত ছেড়ে দিলেন। আর প্রায় সাথে সাথেই আমাকে আর কিছু না বলে কেমন লজ্জা মাখা মুখে কিছুটা তাড়াহুড়ায় আমার রুম থেকে বেরিয়ে বেরিয়ে গেলেন। বড়ো আপা আবারও আমাকে ডাকলেন।
——-ইলোরা বাইরে আসো। জামাইয়ের সাথে তার ছোট দুই ভাই এসেছে। তোমাকে দেখতে চায়।আসো দেখা করে যাও।
কে শোনে কার কথা!
আমি আমার রুমেই বসে রইলাম। সবকিছু তখনও কেমন এলোমেলো লাগছিল। কিছু ভালো কিছু মন্দ অনুভূতিতে তোলপাড় আমার মন। আমাকে জোর করে আব্বার বিয়ে দিয়ে দেওয়া, আমাকে মায়ের মিথ্যে বলা।আবার স্বামী রাশেদের ভীষণ ভালো ব্যাবহার। সব মিলিয়ে কিছু স্বপ্ন হারিয়ে গিয়ে আবার তা ফিরে আসার সম্ভাবনা। এসব যেন কেমন একটা মিশ্র অনুভুতিতে ছেয়ে ফেলেছে আমায়। একটা অপরিচিত লোককে কেমন আপন মনে হতে লাগল। কেন যেন আমার স্বামী ভদ্রলোকের সাথে আমার আরও একটু কথা বলতে ইচ্ছে হলো। ইচ্ছে হলো নিজের জন্য নিজের লেখাপড়ার জন্য আরও কিছু কথা পাকাপাকি করে নিতে পারলে মনে একটু আরাম পেতাম মনে হয়। কিছুক্ষণ পরেই বড়ো আপার সাথে আমার রুমে ঢুকলো দু’টো তরুণ যুবক। একজন আমার আপন ছোটো দেবর মাসুদ আর একজন খালাতো দেবর জাভেদ। যা আমি পরবর্তীতে তাদের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বড়ো আপা তাদের দু’জনকে আমার রুমে রেখে চলে গেলেন।

হঠাৎ করে দু’জন তরুণ যুবক আমার রুমে চলে আসায় আমি আবার চট করে আমার মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটাটা টেনে নিলাম। তারা নিজেরাই আমাকে সালাম দিয়ে ভাবি বলে সম্বোধন করল।
কী অদ্ভুত!
মনটা বিষিয়ে উঠতে গিয়ে আমাদের সমাজ ও পরিবারের কৃষ্টি ও সম্পর্কের বিষয়গুলো মাথায় এলো। মাথায় এলো আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি এখন কতগুলো নতুন সম্পর্কে ঢুকে গেছি। আমি এখন একজনের স্ত্রী হয়ে গেছি। কারও বউমা, কারও ভাবি, কারও চাচি, মামী কত কী!
রাগ অভিমান কিংবা অভিযোগ কার উপর করব! আমার ভাবনায় ছেদ ফেলল দু’জনার মধ্যে থেকে একজন।
——–আমি মাসুদ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি ইসলামিক স্টাডি নিয়ে।
আমি সামান্য আড় চোখে তাকে একটু দেখে নিলাম।এবার অন্যজন কথা বলে উঠল।
———-ভাবি আমি জাভেদ। আমি আপনার খালাতো দেবর। আমিও ঢাকাতেই থাকি। রাশেদ ভাইয়ার সাথেই বিজনেস করি। আপনি খুব সুন্দর ভাবি। এইজন্যই মাসুদ আপনাকে দেখে গিয়ে আপনার জন্য পাগল হয়েছে। সারাক্ষণ আপনার কথা ওর মুখে। আপনাকে বিয়ে করানোর জন্য রাশেদ ভাইয়াকে পাগল করে ফেলেছে ও। জানেন ভাবি! মাসুদ আমাকে কী বলেছে!
———-জাভেদ তুই থামবি! আসলে ভাবি জাভেদ আর আমি খালাতো ভাই হলেও আমরা খুব ভালো বন্ধু। আমি আপনাকে আপনার কলেজের পথে প্রথম দেখেছিলাম। আমি আপনাকে আমাদের বাড়ির বউ বানানোর জন্য সত্যি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। আপনি জানেন না ভাবি!
আমি রাশেদ ভাইয়াকে রোজ রোজ আপনার কথা বলেছি। ভাইয়া আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমিও ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসি। ভাইয়াকে আপনার পরীক্ষার মধ্যেই একদিন দেখিয়েছিলাম। ভাইয়াও এরপর থেকে আপনার জন্য পাগল হলেন। আমি অনেক অনেক খুশি ভাবি।আজকে আপনি আমার রাশেদ ভাইয়ার বউ।আমার ভাবি।
আমি বুঝে নিলাম আমার স্বামীর নাম রাশেদ। আরও বুঝে নিলাম আমার বিয়ের মূল কারিগর এই মাসুদ। মাসুদের উপর আমার রাগ হলো। কিন্তু কিছুই বললাম না।

আমি এতো রাতে একা অপরিচিত দু’টো তরুণ ছেলের সাথে আমার রুমে বসে গল্প করছি।বিষয়টি আমার কাছে কেমন ভীষণ অদ্ভুত লাগছে। আমার মা বাবা গতকালও আমাকে বা আমাদের বাড়ির মেয়েদেরকে এভাবে অপরিচিত পুরুষ ছেলেদের সাথে জীবনেও মিশতে দেননি। সেখানে আজকে আমার বিয়ে ঘোষণার সাথে সাথে সব কেমন বদলে গেল।
মনে হলো ধর্ম ও সমাজ একটা বিয়ে নামক শব্দের সম্পর্কে জুড়ে দিয়ে। আমাদের জন্য কত সহজে অপরিচিত পুরুষ আর নারীতে কত কত রকমের সম্পর্কে বেঁধে ফেলে। তাইতে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কেমন নিরাপদ হয়ে গেল কতগুলো পুরুষ আমার জন্য এই দুপুর রাতেও!
আহা!
ভাবছি কত কী চুপচাপ বসে। কী বলব এদের সাথে! কেন বলব! বললে ভুল হবে না তো! নাকি ঠিক হবে! এরা কেমন মানুষ আমি তো সেভাবে জানি না। আমার কেমন অসহায় লাগছিল।
এই মাসুদ ছেলেটার উপর আমার আস্তে আস্তে রাগ বাড়তে লাগল। এই মানুষটাই তাহলে আমার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনল! পরক্ষণেই মনে হলো। আমার স্বামী তো বলেছে আমাকে লেখাপড়া করতে দেবে। আমি ডাক্তার হতে পারব। তাহলে আর সমস্যা কী!

হঠাৎ মাসুদ কয়েকটি চিঠি লেখার প্যাড, কয়েকটি কলম আর ডাকটিকেট লাগানো বেশকিছু হলুদ খাম আমার পাশে রেখে বলল।
———ভাবি এগুলো আপনার জন্য। আমরা আগামীকাল ঢাকায় চলে যাচ্ছি। আমরা চিঠি পাঠাবো আপনাকে। আপনি তখন চিঠির জবাব দিবেন কিন্তু।
আমি হ্যা না কিছুই বললাম না।
আবারও মাসুদ বলল।
———–ভাবি একটা কথা। আমার রাশেদ ভাইয়া কিন্তু খুব ভালো মানুষ। সহজ মানুষ। অনেক কিছু বুঝবে না। আপনি ভাইয়াকে প্লিজ কষ্ট দিবেন না।
আমি জানি ভাবি আপনি এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তালোই সাব ( আমার আব্বা) বলেছেন। আসলে আল্লাহর হুকুম ছাড়া বিয়ে হয় না। তবুও আপনার বিয়ের বিষয়ে যা করেছি আমি করেছি। আমি আপনার ছোট ভাই। আমাকে বকা দিবেন।আমার উপর রাগ করবেন।কিন্তু রাশেদ ভাইয়াকে কিছু বলবেন না প্লিজ।

আমার কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হলো। এরা সবাই এতো ভালো মানুষ! এতো ভালো হয় শ্বশুর বাড়ির মানুষরা! স্বামী বিনয়ের সাথে কথা বলে। দেবরটাও অতি বিনয়ী। আমার সবকিছু কেমন গোলকধাঁধার মতো কিংবা সুন্দর একটা স্বপ্নের মতো লাগছিল।
এরমধ্যেই বাইরের ঘর থেকে বড়ো আপা রুমে এসে বললেন।
———আপনাদেরকে বাইরে ডাকছে।
ওরা তখন বিদায় নিয়ে চলে গেল। আমি কেমন একটা স্তব্ধতা নিয়ে বসে রইলাম।

আজ আমার বিয়ের একটা প্রি বাসর রাত চলছে। রাত দু’টো পার হয়ে গেছে ঘড়ির কাঁটার। বড়ো আপা আমাকে খাবার খেতে ডাকলেন। আমি কোনো সাড়াশব্দ করলাম না। মা আর আমার মুখোমুখি হতে এলেন না। বড়ো আপার হাতে আমার জন্য প্লেটে করে খাবার ও সাথে গ্লাসে পানি পাঠালেন।
খাবার ঠিক ওভাবেই আমার পড়ার টেবিলের একপাশে পড়ে রইল। আমি আর ঘুমাতে পারলাম না সারারাত। ঘরের পাশের সেই ফাঁসিতে ঝুলতে যাওয়া তেঁতুল গাছটা থেকে থেমে থেমে হুতুম পেঁচাটা ডেকে গেল বাকিটা রাত।
আমার বুকের মধ্যে চলতে লাগল এক দুন্ধুমার ঝড়।

এই ঝড়টা নতুন জীবনের ঝড়।ঝড় নতুন সম্পর্কের। নিজের লেখাপড়ার ও ছোটবেলা থেকে মন ও মস্তিষ্কের অন্তপুরে গড়ে উঠা স্বপ্ন হারানো বা ফিরে পাবার ঝড়।
ভোরের দিকে মনে হয় একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।হঠাৎ অনবরত বাই সাইকেলের ঘন্টা বাজার শব্দ আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিল। ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং। একটু থেমে থেমে শব্দ হচ্ছে বারংবার।
কে এই শব্দ করছে!
আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা স্কুলের সেই ছেলেটা না তো! যে আমাকে প্রথম ভালোবাসার চিঠি দিয়েছিল! যে আমাকে সাহস করে বলেছিল ভালোবাসি! সেই ছেলেটার কথা মনে পড়ল। হুড়মুড় করে উঠে আমার রুমের জানলা খুলে বাড়ির পাশের সরু রাস্তায় তাকালাম। তাকিয়ে দেখি একটা ছয় সাত বছরের বাচ্চা ছেলেকে তার বাবা বাইসাইকেল চালানো শেখাচ্ছ। বাচ্চাটা বার-বার সাইকেলের বেলটা বাজাচ্ছে। ওনারা আমাদের পাশের বাড়ির জাকির চাচা ও তার ছেলে রাদিদ। জাকির চাচা ঢাকায় থাকেন। দুই তিনমাসে বাড়ি আসেন। হয়তো ঢাকা থেকে রাদিদের জন্য সাইকেল নিয়ে এসে ওকে চালানো শেখাচ্ছেন।
আমি জানলাটা বন্ধ করে দিলাম। মনটা কেমন আবারও ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ভাবলাম আমার অবচেতন মনে কেন বারংবার সেই ছেলেটাকে খুঁজছে গতকাল থেকে! কেন খোঁজে! হঠাৎ বিয়ে হয়ে যাওয়া সকল মানুষের মনের মধ্যে কী আমার মতোই অদ্ভুত অদ্ভুত অনুভূতি হয়! নাকি সব উল্টো পাল্টা ভাবনা আমারই হচ্ছে! সবসময় নিজের লেখাপড়া নিয়ে এতো বেশি ব্যস্ত থাকতাম যে। বড়ো আপা মেজো আপার বিয়ে হয়ে যাবার পরে তাদের পরিবর্তনগুলো আমি ভালোভাবে খেয়ালই করিনি।
মাথাটা খুব ব্যথা করছে। ঘড়ির কাঁটায় বেলা এগারোটা সাইত্রিশ। ঘর ছেড়ে বাইরে এলাম। কেউ আমার সাথে কথা বলছে না।আমিও কারও সাথেই কথা বলছি না। একটা সান্ধ্য বিকেল আর একটা রাত।কেমন সব পাল্টে দিলো আমার। আমার হাত, পা, মন ও শরীরটা গতকালের তুলনায় খুব ভারি হয়ে গেল মাত্র উনিশ ঘন্টার ব্যবধানে। মনে হচ্ছে আমার শরীরে বুঝি দশ বিশ কেজি ওজন বেড়ে গেছে।বয়স বেড়ে গেছে আমার অনেক।
আমি আবার ঘরে ফিরে এলাম।গোসলের কাপড় গামছা নিয়ে পুকুর ঘাটে চলে গেলাম।এরপর পুকুর জলে নেমে ডুবে ডুবে খুব সময় কাটিয়ে গোসল করে এলাম। আমার কেমন মনে হচ্ছে বাড়িতে কেউ মারা গেছে। কিছু নাই হয়ে গেছে আমার ও আমাদের।
হঠাৎ আমার খুব ক্ষুধা অনুভব করলাম। খাবার ঘরে গিয়ে প্লেটে ভাত তরকারি নিলাম। খাবার মেখে মুখে দিতেই মুখটা খুব তেতো স্বাদে ভরে উঠল। জোর করে সামান্য একটু ভাত খেয়ে পানি খেয়ে চলে এলাম নিজের রুমে। পড়তেও ইচ্ছে করছে না।
বিকেলে আমার বান্ধবী পারভীন আর আল্পনা এলো। ওরা দু’জন আমার রুমের দরজা ঠেলে আমার কাছাকাছি আসতেই আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম।ওরা একটু হলেও আমার কষ্টটা বুঝল। আমার সাথে কেঁদে কেটে একাকার করে দিল। নাক টানতে টানতে আমাকে অনেক রকম শান্তনা দিয়ে ওরা চলে গেল।
এমন চুপচাপ আর মনমরা ভাবেই চারটাদিন কেটে গেল।
পঞ্চম দিন বড়ো আপা আমার হাতে তিনটা হলুদ খাম দিলেন চিঠির। আর মুখে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন।
——–তোমার চিঠি। নতুন জামাই পাঠিয়েছে। মা বলেছে চিঠি পড়ে চিঠির উত্তর লিখে দিতে। আগামীকাল আব্বা বাজারে যাওয়ার সময় নিয়ে গিয়ে পোস্ট অফিসে দিয়ে আসবে।
কী অদ্ভুত জীবন!
অদ্ভুত জন্ম আর অদ্ভুত বাবা-মা! আমার সবকিছু নির্ধারণ করে দেয় বাবা-মা! আমি যেন নিজে কিছুই বুঝি না।বুঝব না !
চিঠিগুলো টেবিলের উপরই পড়ে রইল রাত অবধি। আমি চিঠিগুলো খুলে দেখিনি। আমার ইচ্ছেই হচ্ছে না চিঠিগুলো খুলে দেখতে।
ঘুমাতে গিয়ে মনে পড়লো আমার স্বামীর কথা। সে তো বলেছিল আমার ডাক্তার বউ।
ধড়মড় করে উঠে বসলাম। হ্যারিকেনের টিমটিমে আলোটাকে একটু বাড়িয়ে নিলাম।

চিঠি তিনটি হাতে নিয়ে দেখলাম তিনজনের নাম ও ঠিকানা লেখা। প্রথমেই মোঃ রাশেদ নামের খামটা খুললাম।

একটা জল ছাপের মসৃণ কাগজে লেখা চিঠি। তবে রশেদ সাহেবের হাতের লেখার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। মনটা একটু খারাপ হলো আমার নিজের স্বামীর হাতের লেখার অবস্থা দেখে। তবুও আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম। হাতের লেখা দিয়ে আর কী করব! মানুষটা আমাকে লেখাপড়া করালে তার সব ভালো আমার কাছে। চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম।

প্রিয়তমা আমার,
প্রথমেই আমার ভালোবাসা নিবা। আশা করি ভালো আছো। আমরা ঠিকঠাক মতো ঢাকায় এসে পৌঁছেছি।

এই পর্যন্ত পড়ে বুঝলাম। স্বামী আমার যথেষ্ট ফর্মাল। মনে পড়লো স্কুল কলেজের পরীক্ষার খাতায় বাবাকে টাকা পাঠানোর আবদার জানিয়ে লেখা বা বন্ধুর কাছে বেড়াতে যাবার ফর্মাল সব চিঠিগুলোর কথা। যাই হোক আমি আবার চিঠিতে ফিরলাম।

তোমার জন্য মনটা কেমন করছে। নিজের খেয়াল রেখো। তোমার লেখাপড়ার কী অবস্থা! ভালোভাবে পড়াশোনা করো। ভালো থেকো ইলোরা। চিঠির উত্তর দিও।
ইতি
তোমার রাশেদ

আমার আর কী লাগে! এই অন্ধকার রাতেও চারিদিকে কেমন আলো ফুটতে লাগল। আমার স্বামী মানে রাশেদ ভদ্রলোক আমার লেখাপড়ার খবর নিয়েছে। আমাকে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে বলেছে। আর কী চাই আমি। আমার খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো খুশির কান্না। বাবা-মাকে ঘুম থেকে তুলে বলতে ইচ্ছে করল।
———দেখেন আব্বা, দেখেন মা। আমার লেখাপড়া আপনারা থামাতে পারলেন না। আমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ। আমি ডাক্তার হব। ধন্যবাদ আব্বা আমাকে বিয়ে দিয়ে খুব ভালো করেছেন।
তা আর বলা হলো না। মনের সব কথা সব অনুভব মানুষ তার প্রিয়জনদের কাছেও প্রকাশ করতে পারে না।আমিও পারলাম না।
তবে খেয়াল করলাম আমার মনের আলোর সাথে পাল্লা দিয়ে আমার সামনে রাখা হ্যারিকেনের আলোর তীব্রতাও যেন বেড়ে গেলো হাজার গুন। অনেক বেশি আলো ছড়িয়ে পড়লো পুরোটা ঘরময়। আমার গতদিনের সব কষ্ট সব দুঃখ এক নিমিষেই হারিয়ে গেল। আমার খুব বাঁচতে ইচ্ছে হল। ভদ্রলোককে এখন কাছে পেলে আমি তাকে নিয়ে একটা নদীর কাছে চলে যেতাম।একটা পাহাড়ের কাছে চলে যেতাম। পৃথিবীকে চিৎকার করে জানিয়ে দিতাম আমি খুব ভালো আছি পৃথিবী। আমার খুব আমার স্বামীর জন্য মায়া হতে লাগল। আমি চিঠিটা নিয়ে দু’হাতে আমার বুকের মধ্যে চেপে ধরে রাখলাম। পৃথিবীটাই কেমন স্বর্গের মতো আনন্দ সুখের মনে হতে লাগল আমার।

আমি এবার আরও দু’টো চিঠির খাম সাথে সাথে খুলে ফেললাম। হালকা নীল রঙের জলছাপের কাগজে আমার দুই দেবর মাসুদ ও জাভেদের দু’টো চিঠি আমার সামনে। মাসুদ আর জাভেদের চিঠিতেও অনেক ভালোবাসা আর মায়া ছড়ানো। মনটা ভীষণ ভালো হয়ে গেল। আমি সাথে সাথে চিঠির প্যাড ও কলম নিয়ে বসে গেলাম জীবনের প্রথম ভালোবাসার চিঠি লিখতে আমার স্বামী রাশেদকে।

প্রিয় রাশেদ,
আমার…………

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here