চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-২৬

0
829

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
২৬
.
.
.
.
.
আরহাম শাওয়ার নিয়ে একটা বাথরোব পরে বেরিয়ে এলো।
রুম সার্ভিস ডেকে তার আর রিয়ার ড্রেস ড্রাই করতে পাঠিয়ে দিল সে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো মুছতে মুছতে খেয়াল করল রিয়া রুমে নেই!

নিশ্চয়ই ব্যালকনিতে গেছে, আরহাম তোয়ালে বেডে ফেলে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল রিয়া হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলছে!

আরহাম দরজায় হেলান দিয়ে রিয়াকে দেখতে লাগল। রিয়া তাকিয়ে দেখল আরহাম তার দিকে তাকিয়ে আছে, রিয়া মুখ ভেংচি কেটে হাত মুছতে মুছতে বেতের দোলনায় বসে দোল খেতে লাগল।

আরহাম ধীর পায়ে হেঁটে রিয়ার সামনে গিয়ে বসল বেতের টি টেবিলটায়।

আরহামের ভেজা চুল গুলো দেখে খুব ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে রিয়ার।

আরহামের চুল বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি গুলো তার বুকের পশম ভিজিয়ে রেখেছে!

আরহামের গালেও হালকা হালকা পানির ফোটা জমে আছে!! রিয়া নিজেকে সংযত রাখতে অন্যদিকে তাকালো।

আরহাম রিয়ার নাক ধরে তার দিকে ফিরিয়ে বলল,” তুমি এত্তো কিউট কেনো বলো তো!?

রিয়া দ্রুত চোখের পলক ফেলে কিছু বলার আগেই আরহাম রিয়ার গাল টিপে বলল,” একেবারে বাচ্চা!!

বাচ্চা বলায় রিয়া বেশ ক্ষেপে উঠে বলল, ” আমি মোটেই বাচ্চা না! আমি বড় হয়ে গেছি!!

আরহাম বাকা হেসে বলল, ” কত বড় হয়ে গেছো!? বিয়ে করার মতো !?

বিয়ের কথা শুনে থ হয়ে গেছে রিয়া। ওদিকে কলিংবেলের শব্দ পেয়ে আরহাম দরজা খুলে দেখল রুম সার্ভিস বয় তাদের ড্রেস গুলো ড্রাই করে এনেছে।
আরহাম ড্রেস গুলো নিয়ে দরজা লক করে দিল।

নিজে ড্রেস চেঞ্জ করে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল রিয়া এখনও থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!

আরহাম রিয়ার ড্রেস এগিয়ে দিয়ে বলল, ” চেঞ্জ করে নাও!

রিয়া একবার কটমট করে আরহামের দিকে তাকিয়ে ড্রেস নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ঢুকল।

বেসিনের আয়নায় তাকিয়ে রিয়া নিজেকে বলল,” এ আমি কি করছি!? আমি তো আরহামের থেকে দূরে যেতে গিয়ে ওর আরও কাছে চলে যাচ্ছি!! শুধু শুধুই মেমোরি লস এর ড্রামা করলাম ধুর!! সেই তো আরহামের থেকে দূরেই যেতে পারছিনা!!!
.
.
.
.
.
ঘড়িতে বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজে! আরহাম বাইরে তাকিয়ে দেখল বৃষ্টি থেমে গেছে, ঠান্ডা হাওয়া বইছে শুধু।

সময়ের সাথে সাথে রিয়াকে যেন আগের থেকেও বেশি ভালবেসে ফেলছে আরহাম।

নাহ, তার পক্ষে রিয়াকে ছেড়ে থাকা আর সম্ভব না! এখান থেকে ফিরে যত দ্রুত সম্ভব রিয়াকে বিয়ে করে নেবে আরহাম!!

রিয়া ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে দেখল টি টেবিলের ওপর দুই প্লেট চিকেন স্যুপ নুডুলস রাখা। সিংগেল সোফা দুটোর একটাতে বসে আছে আরহাম।

রিয়াকে বসতে বলতেই রিয়া জিজ্ঞেস করল, ” এখন এসব!?

আরহাম হেসে বলল,” দুপুরে তো ভালো ভাবে লাঞ্চ করতে পারলাম না, আর এখন বিকেল হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম এখন ভারি খাবার না খেয়ে নুডুলস খাওয়াই ভালো। কি বলো!!?

আরহামের কথা শেষ হতে দেরি রিয়া প্লেট নিয়ে খাওয়া স্টার্ট করে দিল।

আরহাম রিয়াকে দেখছে আর মনেমনে বলছে, ” বিয়ের পর বাচ্চা গুলোকে সামলাবো নাকি এই “বাচ্চাবউ”কে সামলাবো!! দেখো কিভাবে বাচ্চাদের মতো করে খাচ্ছে!!!

রিয়া খেতে খেতে খেয়াল করল আরহাম তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে!

রিয়া মুখ গোমড়া করে বলল, ” এটা আমার ফেভারিট খাবার, তাই নিজেকে সামলাতে পারিনি!

রিয়ার কথা শুনে আরহাম কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, ” সামলাতে হবেনা, আমি তো আছি তোমাকে সামলানোর জন্য!

রিয়া প্রশান্তি মাখা মুখে তাকিয়ে রইলো আরহামের দিকে।

আরহাম নিজের প্লেট থেকে এক চামচ নুডুলস নিয়ে খাইয়ে দিল রিয়াকে! রিয়াও টুপটুপ করে খেয়ে নিল!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সুমু অপরাধীর মতো চুপচাপ বসে আছে, সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার বাবা মা।

সুমুর বাবা গণি থমথমে গলায় বলল, ” তোর যদি অন্য কাউকে পছন্দ হয়ে থাকে, আমাদেরকে তো বলতে পারতিস! এভাবে ছেলে পক্ষকে তাড়িয়ে কেন দিলি!!?

সুমু আঙুলে ওড়না পেচাচ্ছে আর চুপচাপ শুনছে, সুমুর বাবা আবারও বলল,” আমি তোকে শেষবারের মতো বলছি, যদি কাউকে পছন্দ করিস তো এখনই বল।

সুমুর আম্মু ধমক দিয়ে বলল, ” কি হল! কিছু বলছিস না কেন!? ছেলেটা কেমন চেচাতে চেচাতে দৌড় দিল!! কি বলেছিস তুই ছেলেটাকে!!!?

সুমু আমতা-আমতা করে বলল, ” আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করি, কিন্ত

সুমুর আব্বু ধৈর্য্য হারিয়ে চেচিয়ে উঠলো, ” কিন্ত কি!?

সুমু ভয়ে ভয়ে বলল, ” ও এখনও জব পায়নি!

সুমুর আম্মু ধমক দিয়ে বলল, ” ছেলে কোথায় থাকে, কি করে, ফ্যামিলি কেমন সব ডিটেইলসে বল!

সুমু কাদোকাদো হয়ে একে একে সব খুলে বলল বাবা-মাকে।

সব শুনে সুমুর বাবা গণি ইশারায় স্ত্রীকে বলল,” মেয়েকে এখন ওর রুমে যেতে বলো।

মিসেস সালেহা মেয়েকে রুমে যেতে বলতেই সুমু দ্রুত পায়ে তার রুমে চলে গেল।

মেয়ে চলে যেতেই মিসেস সালেহা বলল, ” ছেলের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড তো খারাপ না, ভালই! বাবা কলেজের শিক্ষক আর মা হাউজওয়াইফ!! ছেলেটা বড়, ছোট একটা ভাই আছে!!!

সুমুর বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” ছেলের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো ঠিকাছে, কিন্ত ছেলে তো এখনও জব পায়নি!

মিসেস সালেহা স্মিত হেসে বলল, ” দেখো ছেলেটা তো এডুকেটেড, চাকরি পেতে আর কতক্ষণ! আর ততদিন নাহয় ওদের এনগেজমেন্ট করে রাখি, চাকরি পেলেই বিয়ে দিয়ে দেবো!!

সুমুর বাবা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল, ” বেশ, কিন্ত তার আগে ছেলের ব্যাপারে ভালোভাবে খোজ খবর নিতে হবে।

মিসেস সালেহা বলল, ” সেসব খোজ খবর তুমি নিও!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে এলো আরহাম আর রিয়া, সন্ধ্যা নামতে বেশি দেরি নেই!

ফোনের রিংটোন পেয়ে রিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখল তার আম্মু কল দিচ্ছে!!

কল রিসিভ করতেই মিসেস ইরা বলল, ” কিরে কোথায় তুই!? অফিস থেকে ফিরেছিস!!?

রিয়ার হাচ্চি পাচ্ছে, কিন্ত এখন হাচলে মা বুঝে যাবে সে বৃষ্টিতে ভিজেছে!

রিয়া কোনোরকমে হাচি আটকে রেখে বলল, ” না, এখন যাচ্ছি! তুমি কি করছো আম্মু!?

মিসেস ইরা বলল,” এই তো, ফাইয়াযদের বাসায় এসেছিলাম বিকালে। একটু পর বাসায় যাবো। তা তুই কবে বাসায় ফিরবি রে!?

ফাইয়াযের কথা বলায় মন খারাপ হয়ে গেল রিয়ার, এতোকিছুর মধ্যে তো ফাইয়াযের কথা সে ভুলেই গেছিলো!

একদিকে বন্ধুত্ব আরেকদিকে ভালোবাসা!! এ কেমন দোটানায় পড়ে যাচ্ছে রিয়া!!!

আমতা-আমতা করে বলল, ” সুমু ফিরলেই চলে আসবো আম্মু!

মিসেস ইরা স্মিত হেসে বলল, ” ঠিকাছে, জলদি আসিস।

রিয়া আচ্ছা বলে কল কেটে দিল, আরহাম বুঝতে পারছে কোনো কারণে রিয়া বেশ আপসেট হয়ে গেছে!

আরহাম গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” আন্টি টেনশন করছে! এখনও বাসায় ফেরোনি তাই!!

রিয়া থমথমে গলায় বলল, ” সুমু কদিনের জন্য বাসায় গেছে, আফসার সাথে আমি থাকছি। তাই আম্মু জিজ্ঞেস করছে বাসায় কবে ফিরবো!

আরহাম মাথা নাড়িয়ে বলল, ” ও আচ্ছা, তাহলে তোমাকে এখন আফসার ওখানে নামিয়ে দেবো তাই তো!

রিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বাইরে তাকালো, আজকে আরহামের সাথে কাটানো সময়টুকু সে কখনও ভুলবেনা!

হয়তো আজকের এই সুমধুর স্মৃতি তার জন্য আজীবন স্মৃতিই হয়েই থেকে যাবে!!

ভাবতেই মাথার ভেতরটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে রিয়ার।

ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে থাকার যে কি কষ্ট তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে রিয়া!

আচ্ছা, জীবনটা এমন কেন!? যা চাই তা পাই না কেন!!? কেন আমার সাথেই এমন হচ্ছে!!!? এতো কেনোর কি কোনো সমাধান নেই!!!!?

রিয়াকে নামিয়ে দিয়ে সোজা নিজের বাসায় গেলো আরহাম।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা বাজে! আরহাম বাসায় ফিরে দেখল আরশির আম্মু মিসেস আয়েশা কেয়াকে কিছু বলছে!!

আরহামকে আসতে দেখে মিসেস আয়েশা খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল,” আরে! আরহাম তুমি এসে গেছো!?

আরহামের মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটল না, সে স্বাভাবিকভাবেই বলল,” হটাৎ আপনি এখানে!!?

মিসেস আয়েশা বুঝল তার এখানে আসায় আরহাম খুব একটা খুশি হয়নি।

কিন্ত সে তা না বোঝার ভান ধরে বলল, ” কি করবো বলো, ছেলেমেয়েরা তো অলটাইম বিজনেস নিয়েই বিজি থাকে! মায়ের কথা তো তাদের মনেই পড়েনা, তাই মা নিজেই চলে এলো তার ছেলেমেয়েকে দেখতে!!

আরহাম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, “আপনার শুধু একটাই মেয়ে আছে মিসেস আয়েশা!

বলেই হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল আরহাম। মিসেস আয়েশা টলমল চোখে সেদিকে তাকিয়ে মনেমনে বলল, ” আরহামের কাছে এর থেকে বেশি আর কি এক্সপেক্ট করবো! নিজের মেয়েই তো আমাকে দেখতে পারে না!!
.
.
.
.
.
আরহাম রুমে ঢুকে দেখল তার বেডের পাশের সিংগেল সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে আরশি!

কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ফিরে তাকালো আরশি, ভাইকে আসতে দেখে অপরাধীর মতো তাকিয়ে বলল, ” আমি জানতাম না মম আসছে! এখানে আসার আগে আমাকে কিছু বলেনি সে!!

আরহাম স্মিত হেসে বলল, ” আমি জানি তুই জানতিস না ! বাদ দে ওসব কথা, তোকে আমার কিছু বলার আছে আপু!!

আরশি অবাক হয়ে বলল,” কি ব্যাপার বল তো, তোকে আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে!

আরহাম সলজ্জ হেসে বলল, ” রিয়া আমাকে ভালবাসে!

আরশি খুশিতে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” সিরিয়াসলি! ভাইয়া তুই সত্যিই বলছিস!!?

আরহাম মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই আরশি বলল, ” তাহলে এবার আর দেরি করা চলবে না! রিয়াকে প্রোপোজ করবি কবে!!?

আরহাম মাথা চুলকে বলল, ” এবার আর রিলেশন নারে, ডিরেক্ট বিয়ের প্রোপোজাল দেবো ভাবছি!!!

আরশির খুশি আর দেখে কে, খুশিতে নাচতে নাচতে বলল,” ইয়ে! রিয়া আমার ভাবি হবে! আমি ওর ভাবি হবো!!

আরশির শেষের কথাটা শুনে বেশ অবাক হয়ে গেল আরহাম, ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” রিয়া তোর ভাবি হবে ঠিকাছে, বাট তুই রিয়ার ভাবি হবি মানে!!!?

আরশি নাচানাচি থামিয়ে লজ্জা পেয়ে বলল,” ওর একটা কাজিন আছে না! ফাইয়ায!! ওকে না আমার খুব পছন্দ হয়েছে রে!!!

ফাইয়াযের কথা শুনে আরহামের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল!

আরহাম হতবাক হয়ে বলল, ” মানে কি! ফাইয়ায!! আর তুই!!! ক্যামনে কি!!!!?
.
.
.
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here