চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-২৭

0
810

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
২৭
.
.
.
.
.
আরশি কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা, ভাইকে ডিটেইলসে সব কিভাবে বলবে সে!

ভাইয়েরা তাদের প্রেমের গল্প বোনদের সাথে নির্দ্বিধায় শেয়ার পারে, কিন্ত বোনেরা সহজে শেয়ার করতে পারেনা।

আর ভাই যদি তার বোনের থেকে বড় হয় তাহলে তো আর কথাই নেই!
মাইর আর একটাও মাটিতে পড়বেনা!!

এদিকে আরশির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা আরহাম!!

ফাইয়াযের সাথে তো রিয়ার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে, তাহলে আপু এসব কি বলছে!!!

আরশি কাচুমাচু করে কিছু বলার আগেই মিসেস আয়েশার ডাকে পেছনে ফিরল দুজন।

মিসেস আয়েশা স্মিত হেসে বলল, ” আরহাম! আরশি! ডিনার রেডি করেছি, ডাইনিং এ এসো!!

আরশিও জান বাচিয়ে সেইসাথে চলে যেতে যেতে বলল, ” ভাইয়া তুই ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়! আমি গেলাম!!

আরহাম ইশারায় বোনকে শাসিয়ে বলল, ” যা যা আসছি আমি! কিন্ত এ ব্যাপারে কথা হবে আমাদের!! সব ডিটেইলসে বলবি আমাকে!!!

আরশি একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,” আচ্ছা।
বলেই দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নেমে গেল আরশি।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আফসা আর রিয়া বসে বসে টিভি দেখছে, কিন্ত রিয়ার মাথায় ঘুরছে নানান চিন্তা!

আরহামকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে, আরহামের মনে কি সত্যিই তার জন্য কোনো ফিলিংস আছে!? নাকি আবারও কোনো গেইম খেলছে আরহাম!!?

কিন্ত এবার যাইহোক না কেন আগের ভুল সে করবেনা। ফাইয়াযকে আর কষ্ট দেবে না রিয়া, কিন্ত মন থেকে আরহামকে কিভাবে সরাবে সে!?

আরহামকে তো সে চেয়েও ঘৃণা করতে পারেনা!! না চাইতেও সারাক্ষণ আরহামের খেয়ালেই ডুবে থাকে রিয়া!!!

আফসার ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল রিয়ার, আফসা ভ্রু কুচকে বলল, ” কিরে! কি নিয়ে এতো ভাবছিস!!? কখন থেকে ডাকছি শুনতেই পাচ্ছিস না!!!

রিয়া জোর করে হেসে বলল, ” কই! কিছু না তো!!

আফসা বলল,” যাইহোক সুমু কল করেছিলো, বলল ও কাল সকালে চলে আসবে! বাসায় নাকি অনেক কাহিনী হয়ে গেছে ওর!!

রিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” ওর আবার কি কাহিনী হয়ে গেছে!!!?

আফসা একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, ” আল্লাহ মাবুদ জানে! বাট মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু!!
.
.
.
হটাৎ ফোনের রিংটোন পেয়ে আফসা ফোন হাতে নিয়ে দেখল শোভন কল দিয়েছে!

রেগেমেগে ফোন উল্টো করে রেখে আবার টিভি দেখায় মন দিল আফসা!!

পরপরই আবারও আফসার ফোনটা বেজে উঠল, আফসা এবার ফোনটা সাইলেন্ট করে রিয়াকে বলল,” চল দোস্ত খুব ক্ষিদে পেয়েছে, খেয়ে নিই চল!

রিয়া কিছুক্ষণ আফসার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থেকে বলল, ” আচ্ছা তুই খাবার গুলো গরম করতে যা, আমি একটু পর আসছি!

আফসা আচ্ছা বলে রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে ঢুকল। রিয়া একবার বেডে পড়ে থাকা আফসার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে আবার টিভির দিকে তাকাচ্ছে।

একবার ফোনটা নিয়ে দেখবে! কে এতবার কল দিচ্ছে আফসাকে!!?

ফোন চেক করার কথা মনে আসতেই রিয়া নিজের মনকে শাসাতে লাগল,” অন্যের ফোন এভাবে দেখতে নেই রিয়া!

রিয়া আবার নিজেই বলছে,” আফসানা তো অন্যকেউ না , ও তো আমার বেস্টু! একটু দেখলে কি হয়!!?

রিয়া আবার নিজের মনকে বলল,” আচ্ছা একটুই দেখবি, দেখেই ফোনটা রেখে দিবি প্রমিজ!

রিয়া নিজের সাথে ডিল করে বলল, ” প্রমিজ!!
.
.
.
তাড়াতাড়ি আফসার ফোন হাতে নিতেই টেক্সট এলো শোভনের, রিয়া দেখল লেখা আছে,” প্লিজ আফসানা! কল টা রিসিভ করো!! তোমার সাথে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে!!!

শোভনের এমন আকুতিভরা টেক্সট দেখে অবাক হয়ে গেল রিয়া।

একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ফোনটা আবার জায়গামতো রেখে লক্ষী মেয়ের মতো টিভি দেখায় মন দিল সে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল সুমুর, আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল সে।

মিসেস সালেহা রুমের জানালা খুলতে খুলতে বলল, ” কয়টা বাজে খেয়াল আছে!? যা ফ্রেশ হয়ে আয়!!

সুমু চোখ ডলতে ডলতে বেড থেকে নেমে ফ্রেশ হতে গেল।

গতরাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি সে, সায়নকে কতবার দিল কিন্ত সেও রিসিভ করেনি!

হয়তো সুমু তার কল রিসিভ না করায় এখনও রেগে আছে সুমুর ওপর!!
.
.
.
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখল মিসেস সালেহা খাবার রেডি করে তার রুমেই এনেছে।

সুমু বসে খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল, ” আব্বু কোথায়!?

মিসেস সালেহা গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,” কোথায় আবার! অফিসে!!

সুমু ভাবল, এটাই সময়। মায়ের সাথে সায়নের ব্যাপারটা ডিসকাস করতে হবে। এ
কমাত্র মাইই পারবে বাবাকে বোঝাতে।

সুমু একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল, ” আম্মু! কালকে আমি

সুমুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মিসেস সালেহা বলল, ” শোন, তুই বড় হয়েছিস! আশা করি নিজের ভালোটাও নিজেই বুঝতে শিখেছিস!! গতকাল যে ছেলেটার কথা বললি, কি যেন নাম!?

সুমু খাওয়া রেখে আমতা-আমতা করে বলল, ” সাসায়ন!

মিসেস সালেহা স্মিত হেসে বলল, ” সায়ন তাই তো! তোর যেহেতু ছেলেটাকে এতই পছন্দ, ব্যাপারটা আমি তোর বাবাকে বুঝিয়ে বলবো। তার আগে এটা বল তো, সায়নের সাথে তোর পরিচয় হল কিভাবে!!?

মায়ের কথা শুনে সুমু বেশ স্বস্তি পেলো, এতক্ষণ ভয়ে চোখমুখ শুকিয়ে গেছিলো তার।

সুমু সলজ্জ হেসে বলল, ” আমি যে ছেলেটাকে পড়াই, তার বড় ভাই ও!

মিসেস সালেহা মাথা নাড়িয়ে বলল,” ওহ! তো টিউশনি করতে গিয়ে প্রেম!!

সুমু লজ্জা পেয়ে বলল, ” হুম!

মিসেস সালেহা কিছু একটা ভেবে বলল, ” টিউশনিটা ছেড়ে দে!

মায়ের কথা শুনে চমকে উঠল সুমু, মিসেস সালেহা স্মিত হেসে বলল, ” ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি সায়নকে ছেড়ে দিতে বলছিনা! আমি চাই না তুই আর ঐ ছেলেটার বাসায় যাস!!

সুমু করুন চোখে তাকিয়ে বলল,” কিন্ত আম্মু!

মেয়েকে বাধা দিয়ে মিসেস সালেহা বলল, ” ছেলেটাকে পছন্দ করিস ঠিকাছে, কিন্ত ব্যাপারটা জানাজানি হলে লোকে খারাপ বলবে। আগে তোর বাবার সাথে কথা বলি, তারপর এসব নিয়ে ভাবা যাবে!

সুমু মায়ের কথায় সায় দিয়ে বলল, ” ঠিকাছে আম্মু, তুমি যেমনটা বলবে।

কিন্ত মনেমনে বলল, ” টিউশনি অফ করে দিলে সায়নের সাথে দেখা করবো কিভাবে!? আগে তো ওকে জানাতে হবে যে বাসায় ওর ব্যাপারে আমি বলে দিয়েছি!! নাহ এখান থেকে ফিরেই আমাকে আগে সায়নের সাথে দেখা করতে হবে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ফাইয়ায, মাথার মধ্যে নানান চিন্তা ঘুরঘুর করছে তার।

রিয়ার সাথে এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে আর সে কিনা দিনদিন আরশির প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে!

এসব কি হচ্ছে তার সাথে! রিয়াকে ধোকা দিচ্ছে সে!! একদিকে আরশি আরেকদিকে রিয়া!!!

নিজেকে এইমুহূর্তে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে ফাইয়াযের।

কিন্ত সে তো রিয়াকে ভালবাসে সেই ছোট থেকেই। তাহলে আরশির প্রতি হওয়া এই ফিলিংস টা আসলে কি!?

আরশিকে দেখলেই থমকে যায় ফাইয়ায, মনে হয় যেন আশেপাশে কেউ নেই শুধু আরশি আর সে ছাড়া!

মনে হয় যেন, তার চারপাশে বিশাল ফুলের বাগান, তারমাঝে সবচেয়ে সুন্দর ফুলটা আরশি!!

সাধ্য থাকলে ফাইয়ায সময়টাকে সেখানেই থামিয়ে দিতো। তারপর এভাবেই আরশির সাথে কাটিয়ে দিতো সারাটা জীবন!!!

আরশির সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে এমন অনেক আজগুবি চিন্তাভাবনায় প্রতিনিয়ত হাবুডুবু খাচ্ছে ফাইয়ায!

আরশির টেক্সট এলেই যত দ্রুত সম্ভব রিপ্লাই করে সে, কল রিসিভ করতে না পারলে দেখা মাত্রই কল ব্যাক করে ফাইয়ায!!

শুধু আরশির কন্ঠ শোনার জন্য!!! এসব কি নিতান্তই তার ছেলেমানুষী নাকি অন্যকিছু!!!!?

জীবনে রিয়া ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি ফাইয়ায।

কিন্ত আরশিকে দেখলে সে চোখ ফেরাতেই পারেনা!! তাহলে কি সে আরশির প্রেমে পড়ে গেছে!!!?
.
.
.
.
.
মায়ের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল ফাইয়াযের, মিসেস ফাতেমা এসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “কিরে এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছিস কেন!? মাথাব্যথা করছে নাকি!!?

ফাইয়ায মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” না ঠিকাছি। তুমি কিছু বলবে!?

মিসেস ফাতেমা ছেলের সামনের সিংগেল সোফায় বসে বলল, ” এই মাসে বিয়ের প্রোগ্রাম, কত কাজ বাকি। অথচ এখনও শপিং করা হল না! সেসব নিয়ে না তোর আর না রিয়ার কোনো মাথাব্যথা আছে!!

বিয়ের কথা শুনে ফাইয়ায বলল,” শপিং করতে কয়দিন লাগে!? একদিন সময় করে গেলেই তো হয়!

মিসেস ফাতেমা ছেলের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল, ” বিয়ের শপিং! তাও আবার একদিনে!! তোদের আর বলে লাভ নেই, রিয়াও সেইম ক্যাটাগরির!! তাই আমরা বড়রা মিলে ঠিক করেছি আজ বিকালে ইরা আপা আর সিরাজ ভাই তোকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে। কাল আমি রিয়াকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো।

ফাইয়ায বাধা দিয়ে বলল, ” কিন্ত আজ বিকালে

ফাইয়াযকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মিসেস ফাতেমা বলল,” আর কোনো এক্সকিউজ আমি শুনবো না ফাইয়ায! আজ যাই হয়ে যাক না কেন, তোকে শপিংয়ে যেতেই হবে!!

ফাইয়ায আর কি বলবে! অগত্যা মায়ের আদেশ মাথা পেতে নিল সে!!
.
.
.
.
.
(চলবে)
বিঃদ্রঃ এই কয়দিন বিজি ছিলাম, কেন সেটাতো সবাই জানেন। তো কাল থেকে ইনশাআল্লাহ রেগুলার গল্প পাবেন 😇

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here