#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
২৮
.
.
.
.
.
বিয়ের কথা শুনে ফাইয়ায বলল,” শপিং করতে কয়দিন লাগে!? একদিন সময় করে গেলেই তো হয়!
মিসেস ফাতেমা ছেলের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল, ” বিয়ের শপিং! তাও আবার একদিনে!! তোদের আর বলে লাভ নেই, রিয়াও সেইম ক্যাটাগরির!! তাই আমরা বড়রা মিলে ঠিক করেছি আজ বিকালে ইরা আপা আর সিরাজ ভাই তোকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে। কাল আমি রিয়াকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো।
ফাইয়ায বাধা দিয়ে বলল, ” কিন্ত আজ বিকালে
ফাইয়াযকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মিসেস ফাতেমা বলল,” আর কোনো এক্সকিউজ আমি শুনবো না ফাইয়ায! আজ যাই হয়ে যাক না কেন, তোকে শপিংয়ে যেতেই হবে!!
ফাইয়ায আর কি বলবে! অগত্যা মায়ের আদেশ মাথা পেতে নিল সে!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরহাম রেডি হয়ে নেমে দেখল আরশি ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।
আরহামকে নামতে দেখে মিসেস আয়েশা বলল, ” এসো আরহাম খেতে বসো।
আরহাম উত্তর না দিয়ে আরশিকে বলল,” আপু তাড়াতাড়ি আয় নাহলে মিটিংয়ে যেতে লেট হয়ে যাবে!
আরশি জেলি মাখানো পাউরুটিটা গালে পুরে বলল,” আমার খাওয়া শেষ! আমি আসছি!!
আরহাম বেরিয়ে যেতেই আরশি এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেতে লাগল।
মিসেস আয়েশা মেয়েকে জিজ্ঞেস করল, “কিসের মিটিং আজকে!?
আরশি ডাইনিং টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল, ” কোম্পানির শেয়ার নিয়ে মিটিং হবে! অবশ্য তোমার এসব না জানলেও চলবে!!
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেল আরশি।
মিসেস আয়েশা কিছু একটা ভেবে কেয়াকে ডেকে বলল, ” আমি অফিস যাচ্ছি, দরজাটা লাগিয়ে দাও।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিয়াকে একগাদা ফেব্রিকস এর ক্যাটালগ দিয়ে গেছে চিত্রা।
সেগুলো চেক করতে করতে হটাৎ কারো ডাক পেয়ে তাকালো রিয়া।
হাস্যজ্বল মুখে তার দিকেই এগিয়ে আসছে রাফাত!
রিয়া স্মিত হেসে বলল, ” জ্বি বলুন!
রাফাত ভ্রু নাচিয়ে বলল, ” আমাকে চিনতে পেরেছো!?
রিয়া হেসে বলল, ” চিনবো না কেন! আপনি তো
বাকিটা বলতে গিয়ে থেমে গেল রিয়া, এই রে!! কি বলল সে এটা!!
সে রাফাতকে কিভাবে চিনবে!!!? উফফ রিয়া উফফ! তুই আসলেই একটা গাধী!!
ড্রামার “ড” ও পারিস না আবার তুই কিনা মেমোরি লসের ড্রামা করছিস!!!?
রাফাত কিছুটা অবাক হয়ে বলল, ” সত্যিই!? তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো রিয়া !!?
রিয়া মাথা চুলকে আমতা-আমতা করে বলল, ” চিনতে পেরেছি! মানে আগে চিনতাম হয়তো! বাট এখন চিনতে পারছিনা।
বলেই রিয়া জোর করে হাসতে লাগল, রিয়ার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা রাফাত।
কোত্থেকে চিত্রা এসে বলল, ” মি. রাফাত! আরহাম স্যার আর আরশি ম্যাম মিটিং রুমে আছেন!
রাফাত মাথা নাড়িয়ে রিয়াকে বলল, ” আচ্ছা, তাহলে পরে কথা হবে।
রিয়া দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল, ” জ্বি অবশ্যই! এখন যান, ওনারা ওয়েট করছে!!
রাফাত চলে যেতেই দুম করে চেয়ারে বসে পড়ল রিয়া, আরেকটু হলেই রাফাতের সামনে ধরা পড়ে যাচ্ছিলো সে! ভাগ্যিস চিত্রা এসেছিলো!!
চিত্রা দাত কেলিয়ে রিয়াকে বলল,” ক্যাটালগ গুলো চেক করা কমপ্লিট রিয়া ম্যাম!?
রিয়া উত্তর না দিয়ে ক্যাটালগ গুলো চেক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
উত্তর না পেয়ে চিত্রা মুখ ভেংচি কেটে গটগট করে চলে গেল সেখান থেকে !
.
.
.
.
.
এ.আর. কোম্পানির অফিসের সামনে এসে দাড়ালো একটা প্রাইভেট কার।
এক এক করে কার থেকে নেমে দাড়ালো ইকরা আর তার বাবা ইকবাল হাসান।
অফিসের চারতলায় এসে সোজা মিটিং রুমের দিকে যেতে লাগল তারা।
ইকরা যেতে গিয়ে খেয়াল করল রিয়া বেশ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে!
মনেমনে বলল, ” আমি শিওর আরহাম এই মেয়ের জন্যই আমাকে এক্সেপ্ট করছে না!! ওয়েট রিয়া ওয়েট, একবার আরহামকে কনভিন্স করে নিই, তারপর আমার প্রথম কাজ হবে তোকে এখান থেকে বিদায় করা!!!
রিয়ার সাথে চোখাচোখি হতেই সামনে তাকিয়ে গটগট করে চলে গেল ইকরা।
রিয়া ভ্রু কুচকে তাকালো ইকরার দিকে, মনেমনে বলল, ” ডাইনীটা আবার এখানে এসেছে! নিশ্চয়ই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে মিটিং হবে!! কেন জানি মনে হচ্ছে একটা ঝামেলা হবে আজকে!!!
.
.
.
.
.
হটাৎ একজন মধ্যবয়সী মহিলাকে আসতে দেখে রিয়া তাকালো।
স্যুট প্যান্ট পরে চুল গুলো বান করে রেখেছে! দেখে মনে হচ্ছে কেমন যেন বিদেশি বিদেশি ভাব!!
অফিসের সব স্টাফরা উঠে সালাম দিতে লাগল তাকে। চিত্রা এসে মহিলাকে সালাম দিয়ে বলল,” কেমন আছেন ম্যাম!? আপনি হটাৎ অফিসে!!? আপনার কি কিছু লাগবে!?
মহিলা সালামের উত্তর দিয়ে বলল,” আ’ম ফাইন! বাই দ্যা ওয়ে চিত্রা!! মিটিংয়ে কি সবাই এটেন্ড করেছে!!!?
চিত্রা স্মিত হেসে বলল, ” জ্বি ম্যাম, সবাই এসেছে। মিটিং চলছে এখন!
মহিলা কিছু একটা ভেবে বলল, ” ওকে আমি আসছি।
বলেই মিটিং রুমের দিকে গেল মহিলা। চিত্রা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল সবাই মহিলাকে নিয়ে কানাঘুষা করছে!
রিয়া তার এক কলিগকে জিজ্ঞেস করল, ” এই মহিলা কে!? এনাকে সবাই এত রেসপেক্ট করছে যে!!?
চিত্রা সবাইকে ধমক দিয়ে বলল, ” কি হল! এভাবে কি কানাঘুষা করছো তোমরা হ্যাঁ!? কোনো কাজ নেই নাকি তোমাদের!? যাও! যে যার কাজে যাও!!
সবাই যে যার কাজে লেগে পড়ল, চিত্রা এসে পাশে বসতেই রিয়া ফিসফিস করে বলল, ” ম্যাম! কে এই মহিলা!?
চিত্রা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, ” ইনি হলেন মরহুম আশফাক স্যারের সেকেন্ড ওয়াইফ! মানে আরশি ম্যামের আম্মু!! উনি সুইডেনে থাকেন!!!
রিয়া মাথা নাড়িয়ে বলল, ” ও আচ্ছা!
মনেমনে বলল, ” কিন্ত আরশি আপুর সাথে তো কোনো মিলই নেই দেখছি!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আফসানা একবার ড্রেস গুলো চেক করছে আবার গ্লাসের বাইরে তাকিয়ে শোভনকে দেখছে।
ঘড়িতে বেলা সাড়ে এগারোটা বাজে, আফসানা সেই সকাল সাড়ে নয়টায় এসে দেখল, বুটিক হাউজের সামনে ঘুরঘুর করছে শোভন।
আফসানার সাথে কথা বলতে গেলে আফসানা না দেখার ভান করে ভেতরে চলে এসেছে।
কিন্ত শোভন সেই থেকে বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে, হয়তো তার অনেক আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে! আহারে বেচারা!!
কিন্ত তাতে আফসানার কি!? যাই হয়ে যাক কিছুতেই শোভনের সাথে কথা বলবে না সে!!
শোভনকে আরেকবার দেখে মনেমনে বলল, ” সারাদিন দাড়িয়ে থাকতে চাও তো থাকো!! সারাদিন তো চেম্বারে বসেই থাকো, আজ নাহয় দাঁড়িয়ে থাকবা!!!
.
.
.
.
.
এদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শোভনের হাটুর মালা খুলে পড়ার মতো অবস্থা।
বিড়বিড় করে বলল, “দূর! প্রেম মানুষে করে!!? পান থেকে চুন খসলেই এদের দিকে আর তাকানো যায়না!!! দিব্যি সিংগেল ছিলাম ভালো ছিলাম!! কিন্ত মনটা তো ছ্যাচড়া!! প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে সে!!! এখন হাবুডুবু খেতে খেতে এমন অবস্থা যে আমার অক্সিজেন ফেইল হয়ে গেল প্রায়!!!
ফুটপাত দিয়ে যেতে থাকা লোকজন শোভনকে একা একা বিড়বিড় করতে দেখে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে! অনেকে তো মিচকিমিচকি হাসছেও!!
শোভন সেদিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মনেমনে বলল, ” বাহ আফসানা বাহ! কামাল কার দিয়া তুমনে, এবার তো আমাকে লোকে পাগল ভাবতেও বেশি দেরি করবেনা!!!
শোভন ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল বেলা এগারোটা বিয়াল্লিশ বাজে।
বুটিক হাউজের সামনে তাকিয়ে আবার বলল, ” আর মাত্র তিন মিনিট ওয়েট করবো! এই তিন মিনিটে হয় তুমি এসে আমার সাথে কথা বলবে!! নাহয় আমি
নাহয় কি করবে একটু ভেবে শোভন বলল, ” নাহয় আমি আর মাত্র পনেরো মিনিট ওয়েট করবো! আর সেটাই হবে আমার লাস্ট ওয়ার্নিং!!
বলেই একটা ভিলেন মার্কা হাসি দিল শোভন।
.
.
.
.
.
আফসার এবার বেশ খারাপ লাগছে, বেচারা সেই কখন থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। শেষে অসুস্থ না হয়ে পড়ে!!
বুটিক হাউজ থেকে বেরিয়ে এলো আফসানা, শোভন হাটছে আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
হটাৎ কেউ সামনে এসে দাড়াতেই চমকে উঠল শোভন।
আফসানা চোখমুখ খিচিয়ে বলল, ” রোড সাইড রোমিও সেজেছেন নাকি!? এখানে এমন কাকতাড়ুয়ার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন!?
শোভন আমতা-আমতা করে বলল, ” কাক ধরতে এসেছি!
শোভনের কথা শুনে বেশ ভড়কে গেল আফসা, শোভন থতমত খেয়ে বলল, ” না মানে, তোমাকে ধরতে! ধূর!! মানে বলছিলাম যে!!!
আফসা তাড়াতাড়ি শোভনের মুখ চেপে ধরল, নাহলে আরও কি কি বলতো আল্লাহ জানে!
আফসার হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠল শোভন!!
আফসার বেধে রাখা চুল হালকা ঢিল হয়েগেছে , সামনের কাটা চুল গুলো বেরিয়ে এসে আছড়ে পড়ছে তার চোখেমুখে!!!
সেই চুলের সুগন্ধে কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে শোভনের!!!
আফসা দাতে দাত পিষে বলল, ” আপনার যা বলার পরে বইলেন। আমি টাইম আর লোকেশন টেক্সট করে দিবনি।
বলেই দ্রুত পায়ে বুটিক হাউজে ঢুকল আফসা, শোভন সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সায়ন আর সুমু একটা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে।
সায়ন বেশ শান্ত হয়ে বসে আছে, কিন্ত এই শান্ত চেহারার পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক রাগ আর অভিমান! যা সুমুর অজানা নয়!!
সুমু বাসা থেকে প্র্যাক্টিস করে এসেছে সায়নকে ঠিক কি কি বলবে।
কিন্ত সায়নের সামনে আসতেই সব গুলিয়ে গেছে তার। সায়ন একটু পরপর জ্যুসে চুমুক দিচ্ছে আর আড়চোখে সুমুকে দেখছে!
সুমু শেষমেশ অতিষ্ঠ হয়ে বলল,” এই! তুমি এই সাউন্ড করে খাওয়াটা বন্ধ করবে!!?
সায়ন এবার আরও রেগে গিয়ে জোরে জোরে শব্দ করে জ্যুস খেতে লাগল!
সুমু দাত কিড়মিড়িয়ে বলল, ” আচ্ছা হয়েছে! মাফ করো আমাকে!! আমাকে সেদিন দেখতে এসেছিলো তাই কল রিসিভ করতে পারিনি!!!
সুমুর শেষের কথাটা শুনে ভিষম খেলো সায়ন, সুমু তাড়াতাড়ি উঠে সায়নের পিট চাপড়াতে লাগল।
সায়ন কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলল, ” মানে!? কে দেখতে এসেছিলো তোমাকে!!? কেমন দেখতে শয়তানটা!!!? কিসে জব করে হ্যাঁ!?
সুমু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ” ছেলে দেখতে মাশাল্লাহ! আমাদের এলাকারই ছেলে!! একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে!!!
সায়নের চুপসানো মুখটা সুমুর শেষের কথাটা শুনে কিছুটা শান্তি পেলো।
সুমুর হাতটা ধরে সায়ন বলল,” তোমাকে সেদিন অতবার কল দিয়েছিলাম কেন জানো!?
সুমু জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো, সায়ন স্মিত হেসে বলল, ” আমার জব হয়ে গেছে সুমু! একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে আইটি অফিসার হিসেবে!!
সুমু খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল, ” সিরিয়াসলি!?
সায়ন মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল, ” কালকেই জয়েনিং!!
সুমু খুশিতে সায়নকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” আমি জানতাম তুমি জব পেয়ে যাবে সায়ন! আব্বু আম্মুকে তোমার কথা বলে তাহলে ভালই করেছি বলো!!
সায়ন চমকে উঠে বলল, ” মানে!? কি বলেছো আংকেল আন্টিকে!!?
সুমু সলজ্জ হেসে বলল, ” আমাদের সম্পর্কের কথা!!
সুমুর কথা শুনে সায়ন কাদোকাদো হয়ে বলল, ” কিন্ত কেন!!!!?
.
.
.
.
.
(চলবে)