চলো রোদ্দুরে পর্ব-১১

0
1918

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_11

ইফতিহার আজ সত্যি সত্যি খুব রেগে গেছেন। ছেলে টা যে এতো বেশি অবাধ্য হবে জানা ছিলো না। তবে সে রাগ এতো টাই হাসি সুলভ ভাবে নিবে রাদ তা কেউ ই আঁচ করতে পারেন নি। হাসতে হাসতে যেন পেটে খিল ধরে গেছে। এবার রামিসা ও হেসে ফেলেন। কারন ওনি নিজে ও খুব ভালো করে জানেন ইফতিহার পরিবারের কারো সাথে রাগ দেখাতে পারেন না। আর সে যদি হয় রাদ আর রামিসা তাহলে তো একদম ই নয়। ফোঁস করে দম ফেলেন ইফতিহার। এমন স্ত্রী সন্তান এই প্ল্যানেট এ দুটো নেই। এর জন্য হয়তো বা প্ল্যানেট নাইন এ যেতে হবে। সযত্নে ইফতিহারের কাঁধে হাত রাখেন রামিসা। ক্ষীন রাগার চেষ্টা করলে ও মুখে রাগ ফুটে না। হার মেনে নেন তিনি। রাদের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে ইফতিহার কে উদ্দেশ্যে করে রামিসা বলেন
_যেটা পারবে না সেটা চেষ্টা কেন করো? কখনো ওর ওপর রাগ দেখাতে পেরেছো তুমি? বরং একটু কিছু হলেই ছেলেটা রাগ দেখায়। আর তুমি চুপ চাপ বসে থাকো।

_এক্সাকলি ড্যাড। প্লিজ আর চেষ্টা করো না।

_হুম আর চেষ্টা করবো না। বাট তুমি এতো কেন লেট করলে? সামান্য জিনিস নিয়ে আসতে এতো লেট করে কেউ?

_স্যরি ফর দ্যাট। তোমরা তো জানোই আমি একটু আই মিন অনেক টাই ধীর। কি করবো বলো?

রামিসা উঠে যান। রাদ এখন ইমোশনাল কথা বার্তা বলবে। যাঁর একটার ও ভেলু নেই। বরং সব কিছু তে সিমপ্যাথি নিয়ে নিবে।
রাদের ইমোশনাল কথা বার্তা তে মোমের মতো গলে যান ইফতিহার। রাদের কাঁধে হাত রেখে বলেন
_একদম নয়। আমি জানি আমার বেটা বেস্ট।

_নো ড্যাড আমি বেস্ট নই। সব কাজে পারদর্শী হতে পারি নি।

_সামান্য বাজার নিয়ে এতো মন খারাপ করবে জানলে আমি তোমাকে ফোন ই করতাম না। আসলে তুমি যখন তখন বের হয়ে যাচ্ছো যা আমাকে চিন্তায় ফেলে। কখন তোমার ক্ষতি হয়ে যায় সেটাই ভয়। বি কেয়ারফুল মাই বয়।

ইফতিহারের কথা শুনে রাদ নিজেই ইমোশনাল হয়ে যায়। এতো ভালোবাসা কে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানেই নেই। মনে মনে স্থির করে আজ থেকে বিজনেস এ মনোযোগী হবে। ছেলের গোমড়া মুখ দেখে রামিসা বলেন
_মন টা খারাপ কেন রাদ?

_স্যরি মম , স্যরি ড্যাড। আমি সত্যিই খুব অন্যায় করে ফেলেছি। তোমাদের চিন্তায় রাখা উচিত হয় নি। আর হবে না।

_ইটস ওকে বেটা। তোমার কোনো দোষ নেই। বরং আমরা দোষী।এখন ডাইনিং এ আসো তোমরা।

_বাট মম।

_তোমার মম ঠিক বলছে রাদ। আমরা তোমাকে সব দিলে ও সেভাবে স্বাধীনতা দিতে পারি নি। সারাক্ষন মাথায় ভয় চাপিয়ে দিতে হয়।বাট কি করার বলো?

_তোমরা প্লিজ এমন ভাবে বলো না। আমি এবার কেঁদে দিবো।

রাদের কথায় হেসে উঠেন ইফতিহার ও রামিসা। পুরো খান মঞ্জিলে চাঁপা খুশি ছেয়ে যায়। এমন হাজারো ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে এই বাসার প্রতি টা ইটের গাঁয়ে।

দেখতে দেখতে কেঁটে যায় পাঁচ টি দিন। আজ ভোরের এডমিশন টেস্ট। এই কয়েক দিন মেয়েটার সাথে দেখা করতে পারে নি রাদ। তবে ফোনে যোগাযোগ করেছে। পাঁচ টা দিন বিজনেস এ খুব মনোযোগ দিয়েছে যাঁর ফলে ইফতিহার ও সন্তুষ্ট। ব্রেক টাইম চাইতেই হাসি মুখে সম্মতি দিয়েছেন তিনি।হোস্টেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রাদ। গেট দিয়ে ছুটে আসে ভোর। রাদ কে দেখে থেমে যায়। চোখ দুটো ঝল মল করছে। যেন তৃপ্তি পেয়েছে এই চোখ। মৃদু স্বরে বলে
_ডাক্তার সাহেব।

_পিপারেশন কেমন তোমার?

_ভালো।

গাড়ি তে উঠার আগে আরো কিছু টুক টাক কথা হলো দুজনের। ভোরের যতো টা মনোবল ছিলো কলেজ ক্যাম্পাসে এসে তাঁর সব টাই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। রাদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে ওহ। হঠাৎ করেই একটা সাইটে নিয়ে যায় রাদ। যাঁর ফলে কিঞ্চিত ভয় পেয়ে যায়। গলার মাফলার টা টেনে খুলে দেয়। অজান্তেই মুখ দিয়ে বের হয়
_কি করছেন ডাক্তার সাহেব?

_এমন ভাবে মাফলার নিয়েছো মনে হচ্ছে এটা কোনো দোপাট্টা। আমি সুন্দর করে পরিয়ে দিচ্ছি দেখো।

স্বযত্নে গলায় মাফলার পরিয়ে দেয় রাদ। স্কাফ টা টেনে ঠিক করে মেয়েটা। হাসি হাসি মুখে বলে
_এবার ঠিক লাগছে?

_হুম নাও পারফেক্ট।

_ আচ্ছা ডাক্তার সাহেব এখানে কারো গাঁয়ে কলেজ ড্রেস নেই কেনো?

_কলেজ কার্ড নিয়ে আসলেই হয়। কলেজ ড্রেস আছে তবে কেউ সেটা পরে না এমন কি কলেজে ধরা বাঁধা নিয়ম করে ও দেয় নি। বাট সেমিস্টার আর ফাইনাল এক্সামে কলেজ ড্রেস মাস্ট।

প্রাইভেট কলেজ কে নিজের বাসার প্লে গ্রাউন্ডে আয়োজিত ফেয়ার মনে হওয়া টা অস্বাভাবিক নয়। টাকার জোর হলো বড় জোর।

গুটি কয়েক মানুষ ভোর কে দেখছিলো। তাঁতে ও কেমন কেঁপে উঠে ওহ। অর্ধ মাস পেরোলে ও ভয় কে জয় করতে পারে নি। আশ্চর্য জনক হলে ও সত্য রাদ কে এতো টা ভয় লাগে নি। হয়তো তখন মানসিক চাপের মধ্যে ছিলো তাই।

_আমি বাইরে আছি একদম ই ভয় পাবে না। যাহ যাহ কোশ্চেন করবে একদম সোজা সাপটা উত্তর দিবে। আর রাইটিং পার্ট টা কঠিন হয় না একদম ই। সেটা অনায়াসে পারবে তুমি।

_আপনি আসবেন না?

_এক্সাম হলে বাইরের কেউ এলাউ হয়?

_না।

_তাহলে আমি কি করে এলাউ হবো? আমি বাইরেই ওয়েট করছি। তুমি কেবিনে যাও।

মাথা ঝাঁকায় ভোর। কেবিনের দরজা খুলে দেয় দারোয়ান। কিছু টা চিন্তা গ্রস্ত হয় ছেলেটা। মিনিট দুয়েক পর দরজা খুলে ছুটে আসে ভোর। চোখ মুখ কেমন দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। ওয়েটিং চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় রাদ। সঙ্গে সঙ্গে রাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে মেয়েটা। সামান্য আর্তনাদ করে বলে
_দুটো আব্দুর রহমান , দুটো নয় তিনটে আব্দুর রহমান।

_এই ভোর কি বলছো তুমি?

_তিন জন , ঐ খানে তিনজন

_হ্যাঁ তিনজন তো কি হয়েছে?

_ম্যাথ স্যার তিনজন ম্যাথ স্যার।

ভোরের কথা টা প্রথম দিকে বুঝতে না পারলে ও পরে বুঝতে পারে। এতো প্রেসারে এটা মাথায় ই ছিলো না। কেবিন থেকে তিনজন স্যার ই বেরিয়ে আসেন। ওনাদের দিকে তাকিয়ে রাদের চোখ দুটো ওহ যেন ঝলসে যায়। মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলে
_আমি ওকে নিয়ে রেস্ট রুমে যাচ্ছি স্যার। আসলে ওহ ভয় পেয়েছে। বুঝতে পারে নি।

_ইটস ওকে। যাও তুমি আমরা অপেক্ষা করছি।

_থ্যাংকস।

ভোর কে নিয়ে যেতে থাকে রাদ। আড়চোখে আবারো তাকায় ভোর। তিন টে মানুষ একদম এক চেহারা আবারো ভয় পেয়ে যায়। এমন টা তো ভূতের হয়। তিন জনের ছদ্মবেশ ধারন করে। তাছাড়া জ্বীন ভর করলে এমন টা দেখা সম্ভব। তবে ওকে কি জ্বীন ভর করেছে?

_পানি খাও।

_উহুহ।

_অনেক ভয় পেয়েছো?

_হুম।

_আচ্ছা দেখি তাকাও তো আমার দিকে।

রাদের দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টি মেলে তাকায় ভোর। চোখে মুখে এখনো আতঙ্ক। তবে এতো টা ভয় পাওয়া কিছু টা ফোবিয়ার মতো মনে হলো। হঠাৎ করেই ডুকরে কেঁদে দিবে তা ভাবতে ও পারে নি ছেলেটা। ভোরের কান্নার গতি বেড়ে গেল। রাদের হাত ধরে বলল
_আমাকে জ্বীনে ভর করেছে ডাক্তার সাহেব। আমি এখন আর বাচঁবো না।

_জ্বীন! এই মেয়ে কি সব বলছো।

_আমি ঠিক ই বলছি। আমাকে দুষ্টু কোনো জ্বীন ভর করেছে।

_স্টপ ক্রাই। কি বাচ্চা দের মতো আচারন করছো। আবার বলছো জ্বীন ভূত, শান্ত হও।

_আমি সত্যি বলছি। ঐ খানে তিনজন ম্যাথ প্রফেসর ছিলেন।

মুখ চেপে হাসে রাদ। এতোক্ষন ওর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে থাকলে ও এবার পাশে বসে। ভোর এখনো কেঁদে চলেছে।নিজের আদুরের হাতের স্পর্শ দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। শাহাদাত আঙুলের সাহায্যে চোখ মুছিয়ে বলে
_এতো ভীতু হলে চলে? শোনো মেয়ে, ভয় পাওয়া টা স্বাভাবিক ছিলো বাট কান্না করা টা একদম ই বেমানান।

_কিন্তু

_কোনো কিন্তু নয়। শোনো আগে, কি শুনবে তো?

_হুম।

_তিন জন ম্যাথ প্রফেসর দেখেছো তাই তো?

_হুম।

_প্রথম প্রথম আমার অবস্থা ও খারাপ ছিলো। দুজন হলে ও চলতো, কিন্তু তিনজন কে দেখে ভরকে গিয়েছিলাম। আসলে ওনারা ট্রিপল। আর ভাগ্য ক্রমে তিন ভাই ই একই কলেজে আছেন। প্রায় সব স্টুডেন্টস রাই গুলিয়ে ফেলে। আমি ও গুলিয়ে ফেলি কে কোন স্যার। তাই কলেজে সবাই মাথায় নিয়ে নিয়েছে অধ্যক্ষ তিন জন। আর তাছাড়া কে কখন অধ্যক্ষ হিসেবে ঢুকে যাচ্ছে বোঝা ও যায় না। তিন জন কেই অধ্যক্ষ গননা করা হয়। একটু অদ্ভুত তাই না?

_ আপনার কথা মতো ওনারা এক মায়ের তিন সন্তান। সেটা ও আবার এক সঙ্গে। আমার মাথা ঘুরছে ডাক্তার সাহেব।

মাথা চেপে ধরে ভোর। পানি এগিয়ে দেয় রাদ। মেয়েটা যেন একটু তেই ভয় পেয়ে যায়। দুজনেই কিছুক্ষন থম মেরে থাকে। সময় চলে যাচ্ছে দেখে রাদ বলে
_মনে করবে কলেজের অধ্যক্ষ তিন জন ই। কে কোন টা সহজে ধরা যায় না। আর সব থেকে প্যারা ময় ওনারা এক রকম স্টাইল আর এক রকম কস্টিউম পরে।

_ওহহ।

_আর হ্যাঁ তবে একটা টেকনিক শিখিয়ে দেই খেয়াল রাখবে তিন জনের মধ্যে যে বেশি লম্বা সে হলো ম্যাথ এর প্রফেসর। আর ভ্রু এর উপর সামান্য কাঁটা দাগ সে হলো কলেজের অধ্যক্ষ।

_আর আরেকজন।

_আরেক জন , উফফ ওহ হ্যাঁ আরেক জন এর কথার স্টাইল কিছু টা মেয়েলি সে হলো সহ অধ্যক্ষ।

_মেয়েলি?

_হুম।

জোরে হেসে উঠে ভোর। এতোক্ষন পর যেন সমস্ত ভয় টা কেটেছে। ভাবা যায় একই কলেজের তিন টি বিশাল পদে রয়েছে ট্রিপল ভাই।মেয়েটা তো ভেবেছিলো জ্বীন ভূতে ধরেছে ওকে। অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দুজনেই। এবার মৌখিক এক্সাম টা দিতে পারলেই হলো।

কেবিন থেকে বের হয়েই চাঁপা হাসি তে ভেঙে পরে ভোর। ওর হাসি দেখে রাদ বলে
_হাসছো কেন?

_আপনার কথা অক্ষরে অক্ষরে সঠিক ডাক্তার সাহেব। আমি দেখেছি একজন স্যারের কন্ঠ টা কিছু টা মেয়েলি। একটুর জন্য হেসে ফেলে নি।

_হায়রে তুমি সেগুলো নিয়ে পরে আছো? সব উত্তর করতে পেরেছিলে?

_বারো টা প্রশ্ন করেছে আট টা পেরেছি।

_আচ্ছা সমস্যা নেই। ছয় টা হলেই পাস মার্ক দিয়ে দেয়। আধ ঘন্টার এক টা এক্সাম হবে। শুধু মাত্র এম সি কিউ বুঝেছো?

_হুমম।

_মনোযোগ দিয়ে দাগাবে। কোনো ভুল যেন না হয়।

_আচ্ছা মনে রাখবো।

_আর শোনো।

_হুম।

রাদের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় ভোর। মেয়েটার হাস্য উজ্জল মুখ টা দেখে শান্তি অনুভব হয়। নিজ দায়িত্ব পালনে বেশ সর্তক রাদ। জান যাবে তবে মান যাবে না। ভোর হলো ওর মান। যাকে হারাতে দিবে না কখনোই।
_কিছু বলবেন?

_ওহহ হ্যাঁ। যদি ভালো ভালো এক্সাম টা শেষ করতে পারো চকলেট দিবো।

_এহহ আমি চকলেট খাই না। বাচ্চা নই আমি।

সোজা সাপটা জবাবে কিছু টা ভরকে যায় রাদ। ওর বন্ধু মহলের সব গুলো মেয়ে চকলেট বলতে অজ্ঞান। আর এ দিকে ভোর উল্টো। মাথা চুলকোতে থাকে রাদ।যাক মেয়েটার মধ্যে ইউনিক কিছু আছে তবে। ভোরের নাম ধরে ডাকে এক্সামিনার, এক পলক তাকিয়ে ছুটতে লাগে মেয়েটা।যেতে যেতে বলে
_দোয়া করবেন ডাক্তার সাহেব।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here