চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব: ০৪

0
1486

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ০৪
_____________

জোহান স্টিয়ারিং এ হাত রেখে গানের সঙ্গে নিজের গলা মিলাচ্ছে। ওর পাশের সিটেই ক্ষুব্ধ মনে বসে আছে মিতুল। এই বসন্তের মাঝে উইন্টারের গান একদম বিরক্ত লাগছে ওর। চোখ মুখ প্রায় কুঁচকে আছে বিরক্তিতে। কিন্তু জোহান বেশ উপভোগ করছে গানটা। মিতুলের ইচ্ছা করছে এক চাপে প্লে বাটন অফ করে দিতে।

“ব্রেকফাস্ট করেছো তুমি?” জোহানের থেকে হঠাৎ প্রশ্ন এলো।

“না। ব্রেকফাস্ট করার সুযোগ পেলাম কোথায়? তুমি কি সেই সুযোগ দিয়েছো আমায়?” গম্ভীর মুখে বললো মিতুল।

“চলো তাহলে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করি।”
রাস্তায় তিনটা মোড় আসলে ডান দিকে মোড় নিলো জোহান।

বিশ মিনিটের ব্যবধানে রেস্টুরেন্টে এসে গাড়ি পার্ক করলো জোহান। রেস্টুরেন্টে ঢুকতে গিয়ে লক্ষ্য করলো মিতুল নেই সাথে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গেল জোহান। খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেল রেস্টুরেন্টের নেম প্লেটের দিকে হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিতুল। জোহান বিরক্ত হয়ে বললো,
“খাবার না খেয়ে রেস্টুরেন্টের নাম খেয়ে পেট ভরবে না কি? তাড়াতাড়ি এসো।”

জোহানের কথা খেয়াল হতে মিতুল দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো। গ্লাস ডোর অতিক্রম করতেই রেস্টুরেন্টের একজন মেয়ে কর্মচারী মিতুলদের স্বাগত জানালো। বাইরে থেকে দেখে যতটা না বড়ো মনে হয়েছে, ভিতরে তার থেকে অনেক বেশি বড়ো। ঝকঝকে পরিস্কার সব। প্রায় সব টেবিলই মানুষ জনে ভর্তি। সম্পূর্ণ দেয়ালের জায়গা জুড়ে থাকা বিশাল গ্লাসের কাছে একটা টেবিল দেখিয়ে জোহান বললো,
“চলো, ওখানটায় বসবো আমরা।”

জোহানের সামনা সামনি একটা চেয়ারে বসলো মিতুল। প্রথমেই ওর চোখ চলে গেল উইন্ডো গ্লাসের বাইরে। সকালের আমেজটা বড্ড প্রাণবন্ত। মিষ্টি সূর্য রশ্মি ছড়িয়ে আছে। পাতাবিহীন ফুল ভরা গাছ রাস্তার পাশে একরাশ সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সমতল রাস্তা ধরে এগিয়ে চলছে নানান গাড়ি। পথচারীদের আনাগোনা চলছে স্বাভাবিক নিয়মে।
একজন ওয়েটার এগিয়ে এলো অর্ডার নিতে। জোহান মেনু কার্ড দেখে অর্ডার দিতে লাগলো।
মিতুল ভীষণ অবাক হলো। একই সাথে প্রায় ছয় আইটেমের খাবার অর্ডার দিয়েছে জোহান। এত খাবার খেতে পারবে?

“কী হলো? তুমি কিছু অর্ডার করবে না?”

জোহানের কথায় ধ্যান ভাঙলো মিতুলের। মেনু কার্ড হাতে নিতেই চক্ষু চড়ক গাছ। এত দাম!
এত খাবারের ভিতরে কী যে অর্ডার দেবে বুঝতে পারছে না। এ পাতা ও পাতা উল্টে অবশেষে অর্ডার দিলো, পিরি পিরি প্রন আর ফ্রুট স্যালাড।

জোহান কেমন মুখ বাঁকিয়ে বললো,
“মাত্র দুটো খাবার অর্ডার দিলে? আগে তো জানতাম বাংলাদেশি মেয়েরা প্রচুর খায়।”

মিতুল কিছু বললো না। জোহানের কথার জবাব না দেওয়ার চেষ্টা করছে সব সময়।

কিছুক্ষণের ভিতর খাবার চলে এলো। জোহান গরম খাবার ফুঁ দিয়ে একটু ঠান্ডা করে খাচ্ছে।

মিতুলের ফোনে রেশমী আন্টির কল আসলো। মিতুল কল রিসিভ করে সতেজ মৃদু কণ্ঠে বললো,
“গুড মর্নিং আন্টি!”

“গুড মর্নিং। তুমি কি জোহানের সাথে বাইরে বের হয়েছো?”

মিতুলের বলতে ইচ্ছা হলো,
‘জি না আন্টি, আমি তোমার ছেলের সাথে বের হইনি। তোমার বদমাইশ ছেলে আমাকে তার সাথে বের হতে বাধ্য করেছে।’
কিন্তু বললো,
“হ্যাঁ আন্টি, ওর সাথেই বের হয়েছি।”

“ঠিক আছে। ওর সাথে বেশি ঘোরাঘুরি করার দরকার নেই। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো।”

মিতুল নিস্তেজ গলায় বললো,
“ঠিক আছে।”

রেশমী আন্টি ফোন কেটে দিলেন। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বললেন কেন? অবশ্য ভালোই হয়েছে। এই বদমাইশটার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না।

“তোমার মম আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে বলেছে। একটু পর আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ো।”

জোহান ভাবলেশহীন কণ্ঠে বললো,
“তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে বলেছে তো যাও। আমাকে কেন বলছো? আমি কি তোমার ড্রাইভার? আমি কেন তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেবো? একটা ট্যাক্সি ধরে চলে যাও।”

“একটা ট্যাক্সি ধরে চলে যাব মানে? আমাকে কে নিয়ে এসেছে এখানে? তুমি। তুমি আমাকে নিয়ে এসে এখন বাড়ি পৌঁছে দেবে না?”

“না।”

মিতুলের মাথাটা গরম হয়ে গেল। একটা বাক্যও বললো না আর। এই অহংকারী ফ্যামিলির একটা মানুষের সাথেও যে ও কথা বলে পারবে না, সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।

খাওয়ার মাঝপথে জোহানের মোবাইলে ম্যাসেজ এলো। জ্যাকেট থেকে মোবাইল বের করে ম্যাসেজটা পড়লো জোহান। আবার মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে বললো,
“শোনো, আমার একটা কাজ আছে। আমি চলে যাচ্ছি। তুমি বিল মিটিয়ে দিয়ে সোজা বাড়ি চলে যেও।”

জোহান কথাটা বলে প্রায় দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে।
মিতুল বিস্ময় নিয়ে শূন্য দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা কী করলো? যেখানে চলে যাওয়ার কথা ওর, সেখানে জোহান চলে গেল? আর বিল? বিল ওকে মিটিয়ে দিতে বলছে মানে? এত খাবার অর্ডার দিয়ে, এত বিল বানিয়ে, এখন ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিলো? একেকটা খাবারের যে দাম, এত ডলার এই মুহূর্তে পাবে কোথায় ও? এত ডলার নিয়ে কি বের হয়েছে? মিতুল দ্রুত নিজের ব্যাগ চেক করলো একবার। স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়লো। যাক, ভালো পরিমাণ ডলার নিয়েই বের হয়েছে ভাগ্য গুনে। কিন্তু ওর কাছে যদি পর্যাপ্ত ডলার না থাকতো, তখন কী হতো?

মিতুলের খেতে সমস্যা হচ্ছে। খাওয়ার জন্য একটু নুলেই ছোট ছোট চুলগুলো মুখের উপর পড়ে বেশ ডিস্টার্ব করছে। এমনিতেই এই অচেনা জায়গায়, অচেনা পরিবেশে একার খুব অস্বস্তি লাগছে। তার উপর আবার চুলগুলোর জ্বালাতন। মিতুলের ইচ্ছা হচ্ছে এই মুহূর্তে চুলগুলো ঘ্যাঁচাৎ করে কেটে একেবারে ছোট বানিয়ে ফেলে।
ও কোথাও বের হলে হেয়ার ক্লিপ নিয়ে বের হয়। বাইরে খাওয়া পড়লে বা অস্বস্তি লাগলে নিজের জ্বালাময় চুলগুলো আটকে নেয়। কিন্তু আজকে জোহানের কথা মতো তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে চুলের জন্য কিছুই আনতে মনে ছিল না। আর জোহান যে হঠাৎ করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসবে সেটাই বা জানতো কে?
মিতুল নিজের অবাধ্য চুলগুলো কোনো রকম সামলে এক চামচ খাবার মুখে পুরলো, ঠিক এই মুহূর্তে সামনে আবিষ্কার করলো একটা ছেলেকে। ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকাতেই ছেলেটার সহজ সরল মুখ ধরা দিলো চোখে।
ছেলেটা একটা হেয়ার রাবার বাড়িয়ে দিয়েছে ওর দিকে। মিতুল অবাক হয়ে দেখছে ছেলেটাকে। ছেলেটা বোধহয় এখানের স্টাফ। গায়ে অন্য স্টাফদের মতো পোশাক। মাথা ভর্তি কালো, বাদামি সংমিশ্রণ চুলগুলো পরিপাটি। চোখের মণি ধূসর। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দেখে এক ঝলকেই বোঝা যায় ছেলেটা কানাডার অধিবাসী। কিন্তু ছেলেটা ওর দিকে হেয়ার রাবার বাড়িয়ে দিয়েছে কেন?

ছেলেটা মিতুলকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
“তোমার খেতে সমস্যা হচ্ছে। এটা দিয়ে নিজের চুল বাঁধো।”

মিতুলের হৃদয়ের অজানা কোনো জায়গায়, থেকে থেকে এক মিষ্টি সুর বেজে উঠলো। এই প্রথম…কানাডায় আসার পর এই প্রথম কোনো মানুষকে ভালো লাগলো ওর। কী ভালো ছেলে! দেখতেও কী সুইট! দেখে মনে হচ্ছে শুভ্র এক গোলাপের পাপড়ি। মিতুলের চোখ সরাতে মন চাচ্ছে না। ইচ্ছে হচ্ছে আজীবন তাকিয়ে থাকুক ওই মুখপানে। ওই ধূসর চোখের মায়াতে হারিয়ে যাক আপোষে।

ছেলেটা একদৃষ্টিতে মিতুলকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ডাকলো,
“ম্যাম!”

মিতুল শুনতে পেল না ছেলেটার ডাক। ছেলেটা আবার ডাকলো,
“ম্যাম…”

মিতুল এবার নিজের হুঁশে ফিরলো। দ্রুত নিজেকে সংযত করলো। ইশ কী করছিল? নির্লজ্জের মতো ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিল? হায় আল্লাহ! ছেলেটা কী ভাববে ওকে?
ছেলেটা নিজের হাতের রাবারটা দেখিয়ে বললো,
“এটা নাও।”

মিতুল ছেলেটার হাত থেকে হেয়ার রাবারটা নিলো। নেওয়ার সময় অনুভব করলো ভীষণ অদ্ভুত এক অনুভূতি। এই অনুভূতি অপরিচিত মিতুলের কাছে। আগে কখনও এরকম অনুভূতির সন্ধান পায়নি ওর মন।

_________________

মধ্যরাত। বাড়িটা স্বাভাবিক অর্থেই নীরব। ঘুমে তলিয়ে যাওয়া বাড়ি এখন পাতালপুরীসম। কিন্তু এই পাতালপুরীতে এখনও একজন জেগে আছে।
‘প্রথম দর্শনে প্রেম’ এই কথাটাকে বরাবরই গাঁজাখুরি বলে মনে হয়েছে মিতুলের। কিন্তু আজ বুঝলো, না গাঁজাখুরি নয়। এটা সত্য। সে প্রমাণ ও নিজে। মনের ভিতর এক মিষ্টি মধুর অনুভূতির উপস্থিতি সারাক্ষণ বিরাজ করছে। এই অনুভূতির ব্যাখ্যা জানে মিতুল। অবুঝ মেয়ে নয় ও। এই অনুভূতি সহজেই পড়ে ফেলতে পেরেছে। এই অনুভূতি প্রেমের! হ্যাঁ, প্রথম দেখাতে প্রেমে পড়েছে ও। সেই ধূসর, মায়াবী চোখের প্রেমে পড়েছে। পৃথিবীর সব মায়া যেন ওই চোখেতেই সমর্পণ করেছিল।
বসন্তের বাতাস ঠিক যেন মিতুলের হৃদয় পর্যন্ত ছুঁয়ে গিয়েছে। মিতুল টের পাচ্ছে ওর অনুভূতি গভীর থেকে আরও গভীরতায় হারাচ্ছে।
কালো হেয়ার রাবারটা মিতুল ব্রেসলেটের মতো হাতে পরে রয়েছে। রাবারটার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হেসে ফেললো। প্রথম অনুভূতির কাছ থেকে প্রথম পাওয়া উপহার! মিতুলের কাছে এ তো উপহার নয়, এটা একটা ভালোবাসা! মিতুলের এই মুহূর্তে গান গাইতে মন চাইছে। কী একটা গান যেন সেই থেকে মনে ঘুরঘুর করছে, কিন্তু গানের কথাগুলো স্পষ্টতর ধরা দিচ্ছে না। মিতুল মনে করার চেষ্টা করছে। কী যেন গানটা? হ্যাঁ, মনে পড়েছে। মিতুল গুন গুন করে গেয়ে উঠলো,
“প্রেমে পড়েছে মন, প্রেমে পড়েছে
অচেনা এক মানুষ আমায় পাগল করেছে…”

মিতুল গান গাইতে গাইতে জানালার দিকে এগিয়ে এলো। আজকে জোৎস্না রজনী। জোৎস্নার শুভ্র আলোর মায়ায় জড়িয়ে আছে পুরো বাড়ি। লন জোৎস্নার আলোয় দৃশ্যমান। মিতুল গুনগুন করতে করতে রুম থেকে বের হলো। চলে এলো বারান্দায়। বারান্দা চাঁদের আলোয় মোহনীয়। ঝিরিঝিরি বাতাস পরম আদরে ছুঁয়ে দিচ্ছে। বাতাসের সাথে ফুলের সুবাস আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। আহ, কী সুঘ্রাণ! মিতুল বড়ো করে নিঃশ্বাস নিলো।
বারান্দার টবে থাকা ফুলে হালকা হাত বুলিয়ে দিলো। এগোতে এগোতে বারান্দার শেষ প্রান্তে চলে এলো মিতুল। আর এসেই থমকে গেল। থেমে গেল ওর গুনগুনানি। দীর্ঘ লম্বা বারান্দার শেষ প্রান্তে দাঁড়ালে বাড়ির পিছনের গার্ডেন দেখা যায়। মিতুল শুধু গার্ডেনই নয়, সেই সাথে দেখতে পেল একটা ছায়া মূর্তি!
মিতুলের হাত পা জমে গেল। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল ভয়ের স্রোত। ওখানে ছায়ামূর্তিটা কীসের? ভূতের নয়তো? ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে মিতুলের, তবুও ওর কৌতূহল দমে না। মিতুল ভালো করে দেখার চেষ্টা করলো ছায়ামূর্তিটা ঠিক কার। ভূতের? না মানুষের? ছায়ামূর্তিটা ওক গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে বিশাল আকৃতির কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। কী ওটা? গিটার? দূর থেকে দেখলেও বোঝা যাচ্ছে, ছায়ামূর্তিটা ওক গাছে হেলান দিয়ে হাতে থাকা গিটার বাজিয়ে চলছে অনবরত। আচ্ছা, ভূত কি গিটার বাজাতে পারে? একটু ভাবলো মিতুল।
না, মনে হচ্ছে পারে না। ভূতের এত ভালো গুন থাকে না কি?
ওক গাছের নিচে চাঁদের আলো প্রবেশের সুযোগ পায়নি পুরোপুরি। তবুও কিছুটা আলো ছুঁয়েছে ওক গাছের নিচের জমিন। আর সেই আলোতেই দেখা যাচ্ছে ছায়ামূর্তিকে। দেহের গড়ন দেখে মনে হচ্ছে, ছায়ামূর্তিটা ছেলে।
মিতুল গিটারের সুর শুনতে পাচ্ছে না, তবুও মনে হচ্ছে গিটারে স্যাড সুর বাজছে।
মিতুলের মনে হলো কোনো এক দুঃখী ছেলে গিটারে দুঃখী সুর তুলছে এই নিস্তব্ধ জোৎস্না রাতে। মিতুলের হঠাৎ মায়া হলো ছেলেটার জন্য। কেন হলো জানে না। আচ্ছা, ছেলেটা কে? এ বাড়িতে আরও কোনো মানুষ থাকে না কি?
ছায়ামূর্তিটাকে নড়তে দেখা গেল। বোধহয় ওক গাছের নিচ থেকে বাইরে বের হবে এবার।
হ্যাঁ, ঠিক তাই। ছায়ামূর্তি ওক গাছের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো। ছায়ামূর্তির উপর চাঁদের আলো পড়েছে এখন। দেখা গেল, চাঁদের আলোতে গিটার নিয়ে একটা ছেলে এগিয়ে চলছে। মিতুল সচকিত চোখ মেলে চাইলো। মুখ দেখা যাচ্ছে না ঠিক। মাথা নিচু করে হাঁটছে। মাথা উঁচু করলে বোধহয় মুখ দেখা যাবে। ছেলেটা হঠাৎ মাথা উঁচু করলো। মিতুল অগাধ কৌতূহল নিয়ে ওঁৎ পেতে আছে ছেলেটার মুখ দেখার জন্য। চাঁদের মিষ্টি আলো ছেলেটির মুখে পড়েছে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না ছেলেটির মুখ। কিন্তু ঝাপসা ভাবে দেখেও ছেলেটিকে চিনতে সমস্যা হলো না মিতুলের। মিতুল বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করলো,
“জোহান!”

জোহান চাঁদের আবছা আলো গায়ে মেখে এগিয়ে চলছে। এক পা, দু পা করে ক্রমশ চলছে ও। এগিয়ে যেতে যেতে জঙ্গলের ভিতরের দিকে চলে যাওয়া সোজা সরু রাস্তায় চলে গেল। হেঁটে চললো সরু রাস্তা ধরে। কিছুক্ষণের মধ্যে জোহানের শরীর হারিয়ে গেল জঙ্গলের গাঢ় অন্ধকারে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here