ছায়াকরী পর্বঃ১৩

0
445

# ছায়াকরী
# পর্বঃ১৩
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

মহলে প্রবেশ করে জেহেন। তার ক্রোড়ে অচেতন তোভিয়া। সিঁড়ি বেয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছুটে এসেছে নুয়ায়াম। বোনের নিশ্চেতন মুখের দিকে তাকিয়ে ভীত স্বরে প্রশ্ন ছুড়ে—

“কী হয়েছে তোভিয়ার?”

জেহেন ম্লান গলায় বলল—

“দিঘীর জলে পড়ে গিয়েছিল।”

নুয়ায়াম ব্যগ্রতা নিয়ে বলল—

“কী করে সম্ভব?”

জেহেন গম্ভীর চোখে তাকাল। নুয়ায়াম সরে দাড়ায়। তোভিয়াকে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে থাকে জেহেন। তোভিয়ার কক্ষে প্রবেশ করে তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয় জেহেন। গালের দুই পাশে আলতো ধাক্কাতে শুধায়—

“তোভিয়া! তোভিয়া।”

তোভিয়ার কোনো ক্ষতি হয়নি। সে শ্বাস নিচ্ছে অবলীলায়। শুধু তার জ্ঞান নেই। তাড়াহুড়ো করে ভেতরে প্রবেশ করল অনিতা। জেহেন খটমটিয়ে চেয়ে বলল—

“এত দেরি হলো কেন তোমার? কোথায় ছিলে তুমি?”

“ক্ষমা করবেন।”

“যাও পানি নিয়ে এসো। কুসুম গরম পানি। এক্ষুণি যাও।”

অনিতা দাড়াল না। নুয়ায়াম বিভ্রম নিয়ে বলল—

“তোভিয়া ঠিক হয়ে যাবে তো?”

জেহেন একদৃষ্টে তোভিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল—

“হ্যাঁ।”

তেহজীব দরজার কাছে এসে দাড়ায়। ভেতরের পরিস্থিতি বোধগম্য হতেই তার শিরা-উপশিরা টনটন করে ওঠে। সে চলে যায়। অনিতা পানি নিয়ে প্রবিষ্ট হয় কক্ষে। জেহেন উঠে দাঁড়িয়ে বলল—

“পানি দিয়ে ওর শরীর মুছিয়ে দাও। কাপড় বদলে দাও। আমি আসছি।”

জেহেন বিক্ষিপ্তচিত্তে কক্ষ থেকে বের হয়। তার পিছু নেয় নুয়ায়াম। জেহেনের পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলল—

“জেহেন, কী হচ্ছে এসব?”

জেহেন দৃঢ় কণ্ঠে বলল—

“বিবাহ স্থগিত করো। আজ হবে না এই বিবাহ।”

“কিন্তু বেগমরাণি…!”

“তোভিয়া অসুস্থ।”

জেহেন গটগট করে চলে গেল। নুয়ায়াম শান্ত মস্তিষ্কে চেয়ে রইল কিয়ৎপল।
,
,
,
তোভিয়া বসে আছে। উচাটন অন্তরিন্দ্রিয়। টলটলে চোখ। বিষণ্ণ আনন। জেহেনের প্রবেশ ঘটল বিনা ছন্দ পতনে। তোভিয়া তার সিক্ত চোখ প্রশ্বস্ত করে চাইল। জেহেন আনম্র ভঙ্গিতে তোভিয়ার সামনে গিয়ে বসল। পাতলা চাদরটা টেনে দিলো তোভিয়ার গায়ে। তোভিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে প্রশ্ন করল—

“আপনি বিবাহের জন্য কেন নিষেধ করেছেন?”

“তুমি অসুস্থ তোভিয়া।”

“পিছু ছাড়াতে চাইছেন?”

মুচকি হাসল জেহেন। নতমুখে তার হাসির ঝিলিক প্রকট হতে লাগল। তোভিয়া কণ্ঠ কঠিন করে বলল—

“আনন্দ পাচ্ছেন আপনি? আমি ডুবে গেলে খুশি হতেন?”

জেহেন অধর কোণে আলতো হেসে বলল—

“সাঁতার জানতে তুমি।”

তোভিয়া অনুযোগের সুর তুলে বলল—

“আপনাকে বলেছিলাম আমি, কেউ ছিল ওখানে।”

“কে ছিল?”

“জানি না আমি।”

জেহেন শান্ত কণ্ঠে বলল–

“তোমার ভ্রম।”

“না, তা সত্য।”

“মেনে নিলাম। আরাম করো। আমি যাচ্ছি।”

“আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না? বেগমরাণির আদেশ অমান্য করবেন?”

জেহেন সোজা হয়ে বসল। তোভিয়ার থেকে চাহনি সরিয়ে ফেলল। তোভিয়া নিমেষহীন চেয়ে আছে জেহেনের দিকে। সশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলল জেহেন। ভারী বুকে বলল—

“আমি মানুষ নই তোভিয়া। কেন বুঝতে পারছ না! আমার জীবন অনিশ্চিত !”

“আপনি আমাকে ভালোবাসেন জেহেন?”

“পশুদের ভালোবাসতে নেই তোভিয়া। এই জগত আমার নয়।”

“কিন্তু আমি আপনাকে আমার সবকিছু মেনে নিয়েছি।”

জেহেন তাচ্ছিল্যের সাথে বলল—

“জীবন রূপকথা নয় তোভিয়া। তুমি আর আমি বিউটি অ্যান্ড বিস্টের সেই কাল্পনিক চরিত্র নই। উপন্যাসের শেষে আমি অভিশাপ মুক্ত হবো। আমি তোমার মতো মনুষ্য জীবন পাবো। এমনটা ভাবা বোকামি স্বপ্নচারিতা।
ঘুম ভেঙ্গে গেলেই স্বপ্নের রেশ কেটে যায়। আমাকে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও।”

“পারব না আমি।”

জেহেন তোভিয়ার দিকে চাইল। আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে বসল। তোভিয়ার মোহিনী রূপে বশীভূত নয় জেহেন। সে অধর ছোঁয়াল তোভিয়ার অদৃষ্টে। হৃদয়ভেদী কণ্ঠে বলল—

“পারবে তুমি। তোমার ইচ্ছে তোমাকে আমার আসক্তি থেকে মুক্তি দেবে। ভুলে যাও আমাকে তোভিয়া। আমাদের মিলন কখনো হবার নয়।”

ঝমঝমিয়ে কান্নার ঝড় তোলে তোভিয়া। আছড়ে পড়ে জেহেন বক্ষ:স্থলে। আচ্ছন্ন গলায় বলল—

“তাহলে আমার প্রাণ নিয়ে নিন। আমার কোনো অভিযোগ নেই আপনার ওপর। আমার ভালোবাসা যদি আপনার হিংস্রতার কাছে হার মেনে যায়, তাহলে আমার জন্য মৃত্যুই শ্রেয়।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here