ছায়াকরী পর্বঃ১৭

0
474

# ছায়াকরী
# পর্বঃ ১৭
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

আরশিতে নিজেকে দেখে উচ্ছ্বসিত তোভিয়া। অফ হোয়াইট কালারের গোল জামার সাথে সবুজ রঙের গয়না পরেছে। তার কপালে বড়ো টিকলি। সেই মাথায় অর্ধ ঘোমটা। ঘোমটার আড়াল থেকে শুধু কপালের ওপর শুয়ে থাকা টিকলিটাই দেখা যাচ্ছে। লাজুকতায় আচ্ছন্ন তোভিয়া। অন্তরিন্দ্রিয়ে শত রঙা প্রজাপতিরা এলোমেলো উড়ছে। উত্তুরে হাওয়া যেন তাকে না জানিয়েই ছুঁয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলে বসে নিজেকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করছে। আলতো হেসে ঘুরে দাড়াল সে। পেছনে থাকা অনিতা মোলায়েম হেসে বলল—

“আপনাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে!”

কৃতজ্ঞতার সুরে তুলে বলল তোভিয়া—

“ধন্যবাদ।”

মাথা ঝাঁকিয়ে চোখে হাসল অনিতা। তোভিয়া তার হাত থেকে একটি মোটা চুড়ি খুলে অনিতাকে দিল। নরম কণ্ঠে বলল—

“এইটা তোমার।”

অনিতা খানিক আপত্তি তুলে বলল—

“কিন্ত ছোটো মালকিন..।”

“কোনো কিন্তু না। তুমি এখন যাও। পরে এসো।”

অনিতা সানন্দে তোভিয়ার দেওয়া চুড়ি নিজের হাতে নিল। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো কক্ষের বাইরে। নিজেকে দেখায় ফের মশগুল হলো তোভিয়া। লাজুক চোখ দুটোতে হুটোপুটি খেলছে খুশিরা। পুরুষটা শুধু এখন তার হবে। আর তো কিছু সময়। তারপর! তারপর!
তোভিয়া লজ্জায় মুখ ঢাকে। অযথা তার লজ্জা করে। কাজল ছড়ানো চোখে দুটো হাতের ফাঁক গলিয়ে আয়নাতে তাকেই দেখে যাচ্ছে। চকিতে দেহভঙ্গিমা বদলালো তোভিয়া। জানালার কাছ থেকে অস্পষ্ট শব্দ ভেসে আসছে। সে চমকিত হলো। শঙ্কিত মনে এক পা এক পা করে এগোতে লাগল। পর্দা টানানো। কিন্তু মৃদু হাওয়ায় তা একপাশে সরে আছে। জানারায় লম্বা করে শুধু দুটো গ্রিল বসানো। ইচ্ছে করলেই মাথা বাইরে নেওয়া যাবে। চোর -ডাকাতের তো ভয় নেই। তাই গ্রিলের ফাঁক যথেষ্ট বড়ো রাখা হয়েছে। কাচের পাল্লা লাগানো। যা দুই পাশে স্থির হয়ে আছে। তোভিয়া জানালার কাছে এসে দাড়ায়। বিকেল নেমে এসেছে। সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই করছে ধরণী। আবছা আলোতে মাতোয়ারা বসুমতি। তোভিয়ার মনে হলো জানালার পাল্লা লাগিয়ে দেবে। যখনই তোভিয়া জানালার পাল্লাতে হাত দিলো আচমকা বৃহদাকার পাখার ঝাপটায় ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায় তোভিয়া। অবিশ্বাস্য চোখ দুটো যেন কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে!
পাখার ঝাপটানিতে কাঁচ ভেঙে ঝনঝন করে কিছু মেঝের দিকে, কিছু বাইরে পড়তে লাগল। জল ছেপে এসেছে তোভিয়ার চোখে। আড়ষ্ট চাহনি তার। অধর দিয়ে নির্গত হচ্ছে জোরালো শ্বাস। অনুপল বাদেই একটা বীভৎস মুখ দেখতে পেল তোভিয়া। যার দুই আগুন জ্বলা চোখ তোভিয়ার দৃষ্টিগোচর হতেই সে চিৎকার করে মেঝের বুকে ঢলে পড়ে।
,
,
,
তোভিয়ার মাথার নিচে দুটো বালিশ দিয়ে রেখেছে জেহেন। বাড়ির সবাই চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, বিচলিত। তোভিয়ার চিৎকারে যখন সবাই ছুটে আসে তাকে মেঝেতে আবিষ্কার করা হয়। জেহেন দ্রুত তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ ঢাকার পরেও তোভিয়া জাগ্রত হয় না। নুয়ায়াম ঘামে ভেজা মুখে জেহেনের দিকে চাইতেই সে জানায়, তোভিয়া কোনো কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছে। তেহজীব আসে অনেকটা সময় পর। নুয়ায়াম আর তেহজীব ভাঙা কাঁচ দেখে অবাক হয়। অনিতার চোখ-মুখ শুকনো। জেহেন একাই তোভিয়ার কক্ষে অবস্থান করে। বাকিরা নিচে বসার ঘরে কথা বলছে।

চোখ পিটপিট করছে তোভিয়া। চোখের পল্লব মেলে ধরতেই দেখতে পেল সেই পুরুষকে। তোভিয়া জোরপূর্বক নিজের আঁখিপল্লব প্রশ্বস্ত করে বলল—

” আপনি?”

জেহেন চোখে হেসে বলল—

“আমি। কেমন লাগছে এখন?”

তোভিয়ার সেই ঘটনা মনে পড়লে। সে দ্বিধান্বিত, শঙ্কাগ্রস্ত নয়নে জানালার দিকে তাকাল। ব্যস্ত হয়ে বলা শুরু করল—

“আপনি জানেন ওখানে…।”

তোভিয়ার ওষ্ঠাধরের মাঝ বরাবর আঙুল রাখে জেহেন। নরম হেসে বলল—

“কোনো কথা না। আরাম করো। পুরো রাত বাকি রয়েছে তোমার কথা শোনার জন্য?”

তোভিয়া সংকোচ নিয়ে বলল—

“বিবাহ হবে তো জেহেন? আমি ঠিক আছি।”

জেহেন নিচু হলো। অপ্রত্যাশিত ঘটনার অবতারণা করল সে। তোভিয়ায কপালে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল—-

“বিবাহ হবে। আর আজই হবে। তুমি এখন আরাম করো। আমি যাচ্ছি।”

“কোথায় যাচ্ছেন? আরেকটু বসুন না!”

“বড়ো বেগমের কক্ষে যাব।”

তোভিয়া ভীতসন্ত্রস্ত। চোখ ভর্তি ভয় নিয়ে উঠে বসতে চাইল। জেহেন দিলো না। তোভিয়া ভয়কাতুরে গলায় বলল—

” আম্মির কক্ষে কেন যাবেন? তিনি আপনাকে…।”

“শিষ! সতর্ক থাকব আমি। আজ আমাদের বিবাহ। বড়ো বেগমকে বলে আসি, তার পদ্মকুমারী আমি আমার করে নিচ্ছি।”

তোভিয়া মাথা নত করল। অধর জুড়ে লাজুক হাসি খেলে গেল তার।
,
,
,
জেহেন করিডর দিয়ে যেতেই নিশ্চিত করল, বাড়ির সকলের উপস্থিতি বসারকক্ষে। সে এসে দাঁড়াল রাদিয়াতের কক্ষের সামনে। মৃদু ধাক্কার যোগে ভেতরে প্রবেশ করল। আলো-আঁধারের খেলা চলছে। রাদিয়াত বিছানার ওপর বসে আছেন। তিনি চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছেন। জেহেন কোনো শব্দ করল না। সে নিরুত্তাপ পায়ে আলমিরার কাছে গেল। তা খুলে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল। কিন্তু সবকিছুর মাঝে জেহেনের কান আর নাক সতর্ক। কোনো শব্দ বা ঘ্রাণ প্রকট হতেই সে টের পেয়ে যাবে। রাদিয়াত বুঝতে পেরেছেন জেহেনের উপস্থিতি। সেদিন হা/ম/লা করার সময় সুযোগ বুঝে জেহেনের পকেটে চিরকুট ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। যাতে কিছু লেখা ছিল। সেই মতো জেহেন এসেছে। তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস নিতে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here