ছায়াকরী পর্বঃ১৯

0
469

# ছায়াকরী
# পর্বঃ ১৯
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

আচমকা তোভিয়ার ওপর থেকে সরে বসে জেহেন। আকস্মিক ঘটনায় চমকিত হয় তোভিয়া। পাতলা চাদর বুকের কাছে টেনে নিয়ে ভীত গলায় বলল—

“কী হয়েছে জেহেন?”

জেহেন চোখ বন্ধ করে নিল। তার কর্ণরন্ধ্রে এক অস্ফুট আওয়াজ ভেসে আসছে। তোভিয়া জেহেনের গায়ে সাথে নেপ্টে গিয়ে বলল—

“কী হয়েছে? কী ভাবছেন আপনি?”

জেহেন ঝট করে চোখ খুলল। তার চোখের রং উজ্জ্বল হলো অচিরেই। গাঢ় শ্বাস ফেলে বলল—

“তুমি বসো, আমি আসছি।”

পাশে থাকা শার্ট গায়ে গলিয়ে নিয়ে দ্রুত উঠে দাড়াল। তোভিয়া ব্যস্তসমস্ত হয়ে বলল—

“কোথায় যাচ্ছেন?”

জেহেন শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে প্রত্যুত্তর করল—

“আসছি আমি। তুমি অপেক্ষা করো।”

অসংবৃত অবস্থায় জেহেনের হাত আঁকড়ে ধরল তোভিয়া। নিজেকে খানিক আবৃত করে নিয়ে বলল—

“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

তোভিয়ার প্রশ্নের বেড়াজাল ভেঙে দিলো জেহেন। গাঢ় স্বরে বলল–

“তুমি বসো।”

তোভিয়া চিন্তিত, নিষ্পেষিত মস্তিষ্কে চেয়ে রইল। জেহেন তটস্থ পায়ে বেরিয়ে এলো কক্ষ থেকে। দরজা থেকে কয়েক কদম এগিয়ে এসে আবার পেছনে ফিরে গেল। দরজা লক করে তোভিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হাঁটা ধরল অধৈর্য পায়ে।

ছুটে এলো ছাদে। জেহেনের শ্বাস ভারী হলো। তার দৃষ্টি বিমূঢ়, চকিত, স্তম্ভিত! ছাদের একপাশে এক দৈ/ত্যা/কা/র ইগল। ভয়ংকর, কর্কশ তার আওয়াজ আর পাখার ঝাপটানি। জেহেন চমকে উঠল। তার মস্তিষ্ক কেমন শূন্য শূন্য লাগছে! জেহেনের বিস্ময় সাত আসমান ছুঁল, যখন সে দেখতে পেল ইগলটির পা ধরে রেখেছে শুভ্র বসনের এক নারী! হতচকিত দৃষ্টিতে জেহেন পাথর বনে গেল! মূর্তির ন্যায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সে। ইগলটির রাগান্বিত, জ্বলন্ত চোখ দুটো যখন জেহেনের উপস্থিতি আবিষ্কার করল তখন তার পাখার ঝাপটানি দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পেল। ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দে বাতাস কাঁপিয়ে ফেলল। নারীটি তার ধৈর্য হারাচ্ছে। লুপ্ত হচ্ছে তার ইগলটিকে প্রতিহত করার ক্ষমতা। ইগলটি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নারীটির দুই হাতের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে। ইগলটির ধা/রা/লো পাখার খোঁচা লেগে যায় নারীটির গালে। তবুও সে অবিচল তার কাজে। জেহেন সচল হলো। সে ছুটে আসতে চাইল। কিন্তু ঘটনা ঘটল অন্য। জেহেনের গতিতে জঙ্গমতা আসতেই ইগলটি নারীটিকে তার অন্য পা দিয়ে আ/ঘা/ত করে উড়ে চলে যায়। বীভৎস চিইইই চিইইইইই আওয়াজের সাথে পাখা ঝাপটানোর আওয়াজ। চোখের পলকেই গায়েব হয়ে যায় দৈত্যাকৃতির ইগলটি। জেহেন থমকে যায়। নিজের মুখে হাত দিয়ে পেছন ফিরে নারীটি। জেহেন বাকহীন। নীল নয়না নারীটিকে দেখে তার কিছু হলো। চাঁদের অবাধ কিরণে নারীটির পূর্ণ অবয়বে বিস্মিত হলো জেহেন। আচম্বিতে ক্ষেপে উঠে তার চিত্ত। জেহেন নাক-মুখ কুঁচকে নারীটির কাছে তেড়ে আসতেই ছাদের অন্য পাশে দৌড়ে যায় সে। জেহেন স্থির হয়। ছাদের বাউন্ডারি দেয়ালের সাথে চেপে দাড়ায় নারীটি। তারপর! তারপর! তারপর… সেই নারীটি নীলচে বলয়ে পরিণত হয়ে পাখিতে রূপ নেয়। আর ফুড়ুৎ করে উড়াল দেয় শূন্যে। জেহেনের বিস্ফোরিত চাহনি। সে বিশ্বাস করতে চাইছে না তার সামনে কী ঘটেছে। অচিরেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো ‘ছায়াকরী’!
,
,
,
কক্ষে প্রবেশ করে জেহেন। বিছানা থেকে ত্রস্তে উঠে আসে তোভিয়া। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল—

“কোথায় গিয়েছিলেন আপনি? দরজা কেন বন্ধ করেছেন?

জেহেন জবাব দিলো না। সে নির্বিঘ্নে এসে বিছানায় বসল। তার পাশে এসে বসল তোভিয়া। উৎকণ্ঠিত গলায় পূর্বের চেয়ে দ্বিগুন আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল—

“কথা বলছেন না কেন? কোথায় গিয়েছিলেন?”

জেহেন কোমল চোখে তাকাল। মেয়েটা ভয়ে কেমন হয়ে আছে! জেহেন ঘাড় কাত করে মায়ময় চুমু খেল তোভিয়ার গালে। মৃদু হেসে বলল–

“কোথাও না।”

জেহেনের এক হাত তার পকেটে পুরে রাখা। তা বের করে আনল সে। তাতে একটি চেইন আছে। তোভিয়ার সামনে ঝুলিয়ে ধরল সেই চেইন। ঝুলে পড়ল চেইনটির লকেট। চকচক করছে তা। তোভিয়া বিভ্রম নিয়ে তাকাল। ক্ষীণ স্বরে বলল—

” এটা কার জেহেন?”

জেহেন অনুদ্বেগ মেজাজে তা তোভিয়ার গলায় পরিয়ে দেয়। ভ্রূ কুঞ্চন করে তোভিয়া। সহস্র প্রশ্নের ডালি সজ্জিত হতে থাকে তার মনকুঠিরে। জেহেন চোখের তারায় মায়া রেখে বলল—

” এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য। সামলে রেখো। হু?”

তোভিয়া ভেবে পায় না। একটা লকেট কেন তাকে এত সামলে রাখতে হবে? তবে সে রাখবে। অর্ধাঙ্গীর দেওয়া প্রথম উপহার। সে সযত্নে আগলে রাখবে। তোভিয়া মোমের মতো বিগলিত হয়। মাথা রাখে জেহেনের বাজুতে। অভিমানী গলায় বলল—

“এভাবে ছেড়ে গেলেন কেন আমাকে?”

জেহেন সহজ গলায় বলল—

“আর হবে না। আজকের মতো ক্ষমা করো।”

“আর কখনো ক্ষমা করব না আপনাকে।”

জেহেন আলতো চুমু খেল তোভিয়ার কপালে। সে নিজেকে বিছানায় এলিয়ে দিলো। নিজের দুই হাতের ভাঁজে মাথা রাখল জেহেন। তার দৃষ্টি অস্পষ্ট সিলিং এ। তোভিয়া আনম্র হয়ে বিছানায় শুয়ে মাথা রাখল জেহেনের বুকে। জেহেন ছোট্ট করে প্রশ্ন করল—

“তোমার সত্যিই আমাকে ভয় করে না?”

তোভিয়া বিনা সময় ব্যয়ে বলল—

“না।”

“যদি কখনো আমার কিছু হয়ে যায়?”

“তার আগে যেন আমার প্রাণহরণ হয়।”

জেহেনের বুক চিরে বেরিয়ে এলো শব্দহীন দীর্ঘশ্বাস। তোভিয়া আলগোছে জেহেনের শার্টের বোতাম আলগা করছে। মাথা উঠিয়ে নিজের নরম ঠোঁটের সংসর্গ আঁকতে থাকে জেহেনের অনাবৃত বুকে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here