#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২৮.
~
বাইরের প্রকৃতিটা গুমোট আকার ধারণ করে আছে।যেন গাছ-পালা,পাক-পাখালি সবাই অনুর উত্তরের অপেক্ষা করছে।রিহানও খুব আগ্রহ নিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।আর আরাফ তার তো আর তর সইছে না অনুর মুখে ভালোবাসার কথা শুনার জন্য।কিন্তু অনু এখনো নিশ্চুপ হয়ে আরাফের মুখের দিকে কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আসলে সে এতটাই আরাফের মাঝে বিভোর হয়ে গিয়েছে যে এখন তার কি উত্তর দেয়া প্রয়োজন এটাই সে বুঝতে পারছে না।বেশ কিছুক্ষন পর নীরবতা কাটিয়ে অনু মলিন কণ্ঠে বলে উঠে,
”কিন্তু স্যার বাবা যদি মেনে না নেয়?”
অনুর চোখে মুখে এক অজানা ভয় দেখা যাচ্ছে।অনুর কথায় আরাফ মুচকি হেসে বলে,
”মেনে নিবে।”
আরাফের এতো কনফিডেন্ট দেখে অনু আবারো বলে,
”আপনি এত সিউর কি করে হলেন?আর তার উপর আরো একটা সমস্যাও আছে।আপনি আমার স্যার।ভার্সিটির সবাই ব্যাপারটা জানলে কে কোন নজরে ব্যাপারটাকে দেখবে কে জানে।”
আরাফ এখন বেশ বুঝতে পারছে অনু ইচ্ছে করেই কথা ঘুরাচ্ছে।আরাফ চোখে মুখে বিরক্ত নিয়ে বলে,
”সেটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।আপাদত আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।”
আরাফের কথায় অনুর মুখ থেকে দুশ্চিন্তার ছাপটা মিলিয়ে যায়।সে তার ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হালকা হেসে আরাফের মুখের উপর হতে তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।অনুর এখন কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে।আরাফ হয়তোবা বুঝতে পারছে অনুর ফিলিংসটা।তাই সে আর অনুর উত্তরের অপেক্ষা না করে অনু বা হাতটা আলতো করে ধরে সেই ছোট্ট সোনার রিংটা পরিয়ে দেয়।সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত নয়নে অনু তার দিকে তাকায়।কিন্তু আরাফ অনুর সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে উঠে দাঁড়ায়।তারপর মুখে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব এনে বলে,
”আমি জানি অনু তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি।তুমিও যে আমাকে ভালোবাসো সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি;আর এখন এখানে দাঁড়িয়ে তুমি অযথা ড্রামা করতে তাই আর তোমার বলার অপেক্ষা না করে রিংটা পরিয়ে দিয়েছি।”
এইটুকু বলে আরাফ অনুর কিছুটা কাছে এসে দাঁড়ায়;তারপর সে বাঁকা হেসে বলে,
”নাও প্রপোসের কাজটা আমি করে দিয়েছি।এবার তুমি আমাদের বিয়ের ব্যাপারে তোমার বাবার সাথে কথা বলবে;বুঝতে পেরেছো?”
.
অনু হতভম্বের মতো আরাফের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আরাফ এখন আর অনুকে পাত্তা না দিয়ে রিহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।রিহান এতক্ষন নীরব দর্শক হয়ে সব কিছু দেখে গিয়েছে।তার চোখে মুখে বিস্ময়কর ভাবটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।আরাফ রিহানের সামনে গিয়ে তার কাঁধে চাপড় মেরে বলে,
”থ্যাঙ্কস!তোমার জন্যই আমার প্লেন সাকসেসফুল হয়েছে।যদিও তুমি কিছু জানতে না।আমি জানতাম আমার বিয়ের কথাটা শুনলে তুমি সবার আগে অনুকে বলবে;কারণ তুমি অনেক আগেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলে যে আমি অনুকে লাভ করি।যাকগে এখন এসব কথা বাদ দাও।আর রিহান আই এম সরি।আসলে আমি ওই লোকগুলোকে পাঠিয়েছিলাম শুধুমাত্র তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য কিন্তু তারা তোমাকে আঘাত করে বসেছে।তার জন্য আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।”
আরাফের কথা শুনে রিহান হালকা হেসে বলে,
”না না স্যার আপনাকে সরি বলতে হবে না।সেদিন তো আমি ইচ্ছে করেই মারামারি করেছিলাম।সেটারও অবশ্য একটা কারণ আছে।তবে সেটা অনুর জন্য না।আর এটা সত্যি আমি অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলাম যে আপনি অনুকে পছন্দ করেন;কিন্তু সেদিন লোক পাঠিয়ে ভয় দেখানোর পর আমি ভালোভাবে সিউর হয়েছি।আর স্যার যা হয় ভালোর জন্যই হয়;আমি ও আর এসব নিয়ে ভাবি না।তাই আপনাকে ও আর এটা নিয়ে গিলটি ফীল করতে হবে না।”
রিহানের সমস্ত কথা শুনে আরাফ স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে।
.
কাজি অফিস থেকে আরাফ অনুকে নিয়ে সোজা তার ফিরে আসে।গাড়ি থেকে নামতে গেলেই আরাফ অনুর হাত চেপে ধরে।অনু চোখ ছোট ছোট ওরে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
”কি হয়েছে?”
আরাফ হালকা হেসে বলে,
”এই হাতে রিংটা পরে আছো এটা পড়ে বাসায় গেলে তোমার বাবা মা যদি জিজ্ঞেস করে এটা তোমাকে কে দিয়েছে?তখন কি বলবে?”
অনু ভাব নিয়ে বলে,
”কেন বলবো আপনি দিয়েছেন।বাবাকে বলবো তার আরাফ আজ কি সুন্দর করে আমাকে প্রপোস করেছে।বাবা শুনলে খুব খুশি হবে তাই না।”(মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে)
অনুর কথা শুনে আরাফ ব্রু কুঁচকে বলে
”তুমি কি কোনোভাবে আমাকে ভয় দেখাতে চাচ্ছো!তুমি যদি পি.একে সাহস করে সবটা বলতে পারো সেটা তো আমার জন্যই ভালো।আমার আর কষ্ট করে পি.একে কিছু বলতে হবে না।”
আরাফের কথা শুনে অনু ভেংচি কেটে নিজের হাত থেকে রিংটা খুলে শাড়ির আঁচলে পেঁচিয়ে বেঁধে নেয়।তারপর আরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
”চিন্তা করবেন না।হারাবে না;আমার কাছে যত্ন করে রাখবো।”
আরাফ এক দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।কথা শেষ করে অনু গাড়ি থেকে নামতে গেলে আরাফ আবারো তাকে আটকায়।অনু এবার বিরক্ত নিয়ে আরাফের দিকে তাকায়;কিন্তু আরাফের চোখ মুখ দেখে অনুর বিরক্তিটা হওয়া হয়ে যায়।আরাফের চোখ মুখটা কেমন যেন অন্যরকম লাগছে।আরাফ ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। আরাফের এমন ঘায়েল করা দৃষ্টি যেন অনুর সবকিছু ওলোট পালট করে দিচ্ছে।আরাফ ধীরে ধীরে অনুর দিকে কিছুটা এগিয়ে আসে।এতে করে অনুর নিশ্বাসও ভারী হয়ে উঠছে।অনু কিছুটা পিছিয়ে যেতে গাড়ির জানলার কাঁচের সাথে তার পিঠ ঠেকে;সে পেছন থেকে চোখ ঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে আরাফ তার খুব কাছে।আরাফের সেই হালকা বাদামি চোখগুলো যেন অনুকে খুব করে টানছে।অনু ছোট্ট একটা ঢোক গিলে তার শুকনো গলাটা ভিজিয়ে নেয়।আরাফ অনুর আরো কিছুটা কাছে আসে। একবার অনুর চোখ আর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে কোমল কণ্ঠে বলে উঠে,
”জানো অনু শাড়িতে না তোমাকে একদম বউ বউ লাগছে।ইচ্ছে করছে এক্ষনি বিয়ে করে ফেলি।ইশ!আমার কিউট পিচ্চি বউটা।এত আদুরে কেন বলোতো;তোমাকে দেখলেই যে খুব আদর দিতে ইচ্ছে করে।কি করবো বলোতো;কত দিন নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখা যায়।তোমার বাবাকে বলে তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে;নয়তো কখন আবার কি ভুল করে ফেলি।তাইনা? তুমি কি বলো?”
.
আরাফের কথা অনুর কান অবধি গিয়েছে কিনা কে জানে।সে তো চোখ বন্ধ করে আরাফের শরীরের মিষ্টি সুবাসটার সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে।আরাফ অনুর খুব কাছে আসায় আরাফের শরীর থেকে আবহমান খুব মিষ্টি একটা সুবাস অনুকে পাগল করে তুলছে।অনু চোখ বন্ধ করে সেটাকেই উপভোগ করছে।অনুর কোনো প্রকার রিঅ্যাকশন না পেয়ে আরাফ অনুর কানের কাছ থেকে মুখ এনে অনুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে।তা দেখে মুচকি হেসে আরাফ অনুর নাকের উপর টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিলো।সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেলে তাকায় অনু।তার শরীর হঠাৎ এতটা কেঁপে উঠে যেন তার সারাশরীরে কেউ বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে।অনু রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখ করে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আরাফের এতে কোনো হেলদোল নেয়;এমন একটা ভাব যেন কিছুই হয়নি।আর এইদিকে অনু তো ব্যাপারটা হজমই করতে পারছে না।অনুর হৃৎস্পন্দনটা হঠাৎ করে খুব বেড়ে গিয়েছে।অনু আর এক মুহূর্তও দেরি না করে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে তার বাসার দিকে ছুট লাগায়।আর গাড়ির ভেতর থেকে আরাফ অনুর অবস্থা দেখে পেট চাপড়ে হাসতে আরাম্ভ করে।
.
বাসার ভেতর ঢুকতেই হাজারটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় অনুকে।তার মধ্যে প্রথম প্রশ্নটা হলো;এই শাড়ি টারি পড়ে সেজে গুঁজে অনু কোথায় গিয়েছিলো?গিয়েছিলো তো গিয়েছিলো তার ফোনটা কেন সাথে নেয়নি?
রাহেলা বেগমের কড়া গলার প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অনু।এখন মা বাবাকে কি বলে বুঝ দিবে সেটাই বুঝতে পারছে না অনু।সত্যিটা তো এখনি বলা যাবে না তাহলে এখন সে কি বলবে?অনুকে চুপ থাকতে দেখতে দেখে রাহেলা বেগম আবারো অনুকে প্রশ্ন করে;তবে এবার তার সাথে আরো একটা প্রশ্ন যোগ হয় আর সেটা হলো;’তোকে এই শাড়ি কে দিয়েছে;আমি তো এর আগে তোর কাছে এমন কোনো শাড়ি দেখিনি!তাহলে কে দিলো তোকে!”
.
অনু হালকা করে একবার মায়ের মুখের দিকে তাকায়;তার মায়ের মুখের অবয়বটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য।তার মায়ের অমন চোখ মুখ কুঁচকানো রাগি ফেইসটা দেখে অনুর সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে;এই দিকে যার জন্য এই মহাবিপদে পড়েছে তারও দেখা মিলছেনা।অনু মনে মনে ভাবছে;’উফফ ওই ধলা বিলাইটা কই?গাড়ি থেকে নেমে আসতে এতক্ষন লাগে?এই বিপদ থেকে তো একমাত্র এই ধলা বিলাইই আমাকে বাঁচাতে পারবে!কিন্তু এ এখনো আসছে এ কেন?’
.
অনু বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে আর কথা গুলো ভাবছে।এত প্রশ্ন করার পরও অনুকে চুপ থাকতে দেখে রাহেলা বেগমের রাগটা যেন আরো বেড়ে যায়;তাই সে অনুর মাথায় চাটি মেরে শক্ত করে বলে,
”কিরে কি ভাবছিস কিভাবে আমাকে মিথ্যে বলা যায়!খবরদার যদি একটাও মিথ্যে বলেছিস!সত্যি সত্যি বল এগুলো তোকে কে দিয়েছে আর এইসব পড়ে তুইবা কোথায় গিয়েছিলি?”
এবার অনু কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে আরাফ বলে উঠে,
”আন্টি আমি বলছি আপনাকে সবটা।আসলে অনু এতক্ষন আমার সাথেই ছিল। আর এই শাড়িটাও আমিই ওকে দিয়েছি।আসলে কয়দিন পর তো অনুর বার্থডে তাই আগেই গিফটটা করে ফেললাম।আর অনু যে শাড়িটা আজই পড়বে সেটা আমি জানতাম না।তাই ওকে শাড়ি পড়া দেখে মনে হলো এর সাথে এক গুচ্ছ নীল চুড়ি খুব মানাবে তাই ওকে চুড়ি কিনতেই আমার সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম।
তাড়াহুড়োই বোধ হয় ও আপনাদের না বলেই বেরিয়ে গেছে;আর ওর তো বোধ হয় চুরি খুব প্রিয়।চুরির কথা শুনতেই যেনো সব ভুলে গেছে সে!আর এখন চুরি পেয়ে বুঝতে পারছেনা আপনাকে কি বলবে।”
আরাফের সব কথা শোনে রাহেলা বেগমের বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।তাই তিনি আর কথা না বারিয়ে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
”এটা তো আমাদের বলে গেলেই হতো।অযথা টেনশন করছিলাম এতক্ষন।যা এখন রুমে গিয়ে এসব চেঞ্জ কর।আর আমি তোর বাবাকে কল বলে দিচ্ছি সবটা।উনিও তুই কোথায় গিয়েছিস সেই টেনশন মাথায় নিয়ে বাজারে গিয়েছেন।”
এইটুকু বলে তিনি আরাফের মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,
”বাবা শাড়িটা কিন্তু খুব সুন্দর হয়েছে।”
প্রতিউত্তরে আরাফ হালকা হাসে।তবে সে মনে মনে বলে;
‘পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য আপনার এই মেয়ের সৌন্দর্যের কাছে ফিকে মনে হয় আন্টি।”
চলবে,,
(আল্লাহকে ভয় করো;পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)
- {আসসালামু আলাইকুম।কাল গল্প দিতে না পারায় আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত😥।অনেকেই ইনবক্সে মেসেজ দিয়েছো গল্প কেনো দেয়নি!আসলে কালকে গল্প লেখার মতো সময় করে উঠতে পারেনি;তাই আজকে তাড়াতাড়ি দিয়ে দিলাম।আর আজকের পর্বটা কেমন অবশ্যই জানাবে।ধন্যবাদ💜}