জীবন সাথী💜 পর্ব-২৯

0
888

#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২৯.
~
”উফফ দোস্ত তুই এটা কি করে করতে পারলি।আমাদের কাউকে কিছু না বলে তুই ডিরেক্ট এনগেজমেন্ট করে ফেললি?”

ন্যাকামো করে বলে রুমি।অনু কাঁধ থেকে ব্যাগটা বেঞ্চের উপর রাখতে রাখতে বলে,
”দেখ রুমি সব কিছু হুট্ করেই হয়ে গিয়েছে।আমার নিজেরই এখনো অবধি কিছু মাথায় ঢুকছে না;কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

অনুর কথা শুনে রুমি মুখ ভেংচিয়ে বলে,
”হুম আমরা তো জানি তুমি আগে থেকেই তলে তলে টেম্পু চালিয়ে গিয়েছো!অথচ আমরা কিছু বলতে গেলেই রেগে মেগে এক্কেবারে বোম্ব হয়ে থাকতে।কাল রিহান কিছু না বললে তো জানতেই পারতাম না যে এত কাহিনী ঘটে গিয়েছে।”

”কেন রে আমি কি তোদের কিছু বলতাম না?”
.
বিরক্ত নিয়ে বলে অনু।অনু জানে আজ এই বান্ধবী নামক পেত্নী গুলোর কাছ থেকে তার অনেক কথা শুনতে হবে।তাই আগে থেকেই নিজেকে প্রিপেয়ার্ড করে এসেছে।বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর তিহা কিছু একটা ভেবে বলে উঠে,
”আচ্ছা দোস্ত স্যার যে তোকে আগে থেকেই ভালোবাসে সেটা কি তুই বুঝতে পারিসনি?”

”না আমি কি করে বুঝবো?উনি তো সারাক্ষন আমার সাথে রাগ দেখাতেন।আমি তো আরো ভাবতাম উনি বোধ হয় আমার উপর খুব বিরক্ত।আর সেদিন তোদের ডেয়ারের জন্য স্যারকে প্রপোস করে কি শাস্তিটা পেতে হয়েছে।আচ্ছা ওই ধলা বিলাই যদি আমাকে আগে থেকেই ভালোবাসে তাহলে আমি প্রপোস করাই আমাকে শাস্তি দিলো কেন?হুম?”

তিহা চোখ গুলো উপরে করে গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভেবে বলে,
”আমার কি মনে হয় বলতো স্যার তো তোর ব্যাপারে খুব সিরিয়াস আর তুই যে স্যারকে ডেয়ারের জন্য প্রপোস করেছিলি সেটা বোধ হয় স্যার বুঝতে পেরেছিলো;তাই বোধ হয় উনি রেগে যান।”

”হুম বান্ধবী আমারও তাই মনে হয়।স্যার তোর মুখে সিরিয়াসলি আই লাভ ইউ শুনতে চায়;তাই তোর ফেইক আই লাভ ইউ শুনে স্যার রেগে গিয়েছিলো?তা বনু কাল কে নিশ্চই আই লাভ ইউ বলে দিয়েছো তাই না।”
.
দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে রুমি।রুমির দাঁত কেলানো দেখে অনুর এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে টম এন্ড জেরির মধ্যে জেরি যেমন হাতুড়ি দিয়ে টমের সব গুলো দাঁত ভেঙে দেয় তেমনি রুমির দাঁত গুলোও ভেঙে দিতে।অনু জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলে,
”না দোস্ত শুধু আই লাভ ইউ না স্যারকে হেব্বি একটা চুম্মা দিয়ে আসছি।”

”তুই স্যারকে চুমু দিলি কখন আমি তো দেখলাম না।তাহলে কি স্যার যখন তোকে গাড়ি করে তোর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো তখনই লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ সেরে ফেলেছিস নাকি?”

অনুদের বরাবর বেঞ্চটাতে বসতে বসতে কথাটা বলে রিহান।ঠোঁটের কোণে তার দুষ্ট হাসি ঝুলানো।আর এই দিকে রিহানের কথা শুনে অনু চোখ মুখ কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে অনু বলে উঠে,
”হুম এতক্ষন তোরই কমতি ছিল।এখন তুই আসছিস এবার আমার মাথাটা তোরা সবাই মিলে পুরোপুরি পাগল করে দিতে পারবি।”

অনুর কথা প্রতিউত্তরে রিহান দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,
”যায় বলিস না কেন দোস্ত স্যার কি প্লেনটা না করলো কাল।আমি তো পুরাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম স্যারের কর্মকান্ড দেখে।বাট এটা দেখেও ভালো লাগলো যে স্যার সত্যিই তোকে খুব ভালোবাসে।মারাত্মক লেবেলের একটা প্রপোস ছিল;গার্ল ফ্রেন্ড টার্ল ফ্রেন্ড না ডিরেক্ট জীবন সাথী হওয়ার অফার।ভাবা যায়!!”

রিহানের আপ্লুত কণ্ঠের কথা শুনে রুমি আর তিহা অসহায়ের মতো মুখ করে একসাথে বলে উঠে,
”ইশ!আমরাও যদি কাল থাকতে পারতাম।”

ওদের চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওরা কালকে থাকতে না পারায় খুব আফসোস করছে।ওদের আফসোসটা আরো বাড়িয়ে দেয়ার জন্য রিহান সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে উঠে,
”আরে তিহা রুমি তোরা নিজেরাও জানিস না তোরা কি জিনিস মিস করেছিস।উফফ এমন প্রপোস তো আজ কাল ফিল্মেও হয় না।আর তোরা কি জানিস কাল অনু নীল রঙের শাড়ি পড়া ছিল আর ঐটা নাকি স্যারেরই দেওয়া।আর স্যার একটা অফ হুয়াইট কালারের পাঞ্জাবি পড়া ছিল।ও দুজনকে কি যে লাগছিলো না।তোরা দেখলে বুঝতে পারতি।”
.
রিহানের কথা শুনে রুমি আর তিহা রাগি চোখে অনুর দিকে তাকায়।ওদের তাকানো দেখে অনু ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
”কি ব্যাপার আমার দিকে এইভাবে কেন তাকিয়ে আছিস?”
তিহা কড়া গলায় বলে,
”আমাদের থেকে আর কি কি লুকিয়েছিস বলতো?স্যার তোকে শাড়ি দিয়েছে সেটাও তুই আমাদের বলিসনি।কেনোরে?আমরা কি এখন তোর খুব পর হয়ে গিয়েছি?”

তিহার কথা শুনে অনু বিরক্তি নিয়ে বলে,
”উফফ তিহু তোর এইসব সেন্টিমেন্টাল কথা বন্ধ করতো।স্যার আমাকে পরশু শাড়ি দিয়েছিলো তাও ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফেরার পথে।সেদিন নিজেই অনেক কনফিউশনে ছিলাম স্যারের কিছু কথা শুনে;তাই তোদের কাছে কিছু বলার কথা ভুলে গিয়েছিলাম।আর কাল তো এত কাহিনী ঘটলো।তোদের সাথে তো আর দেখাও হয়নি আর সবতো ফোনেও বলা যায় না তাই ভাবলাম আজ ভার্সিটি এসে তোদের সব বলবো।রিহান না বললেও আমি তোদের সব বলতাম।তোরা জানিস না তোদের সাথে সব কথা শেয়ার না করতে পারলে আমার পেট কামরায়।”
.
অনুর কথা শুনে রুমি ঠোঁট উল্টিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরাফ ক্লাসে ঢুকে পড়ে।আরাফকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে আরাফকে সালাম দেয়।কাল বাসায় ফেরার পর থেকে অনু আরাফের সাথে কোনো কথা বলেনি;ইনফেক্ট ভালো করে তাকায়নি পর্যন্ত।আসলে সেটা রাগ কিংবা অভিমানে না বরং লজ্জা আর সংশয়ের কারণে।কেন যেন আরাফের দিকে তাকাতে অনুর খুব লজ্জা লাগছে।তবে না তাকিয়েও থাকতে পারছে না।কতক্ষন না তাকিয়ে থাকবে।এখন আর না পেরে অনু একবার আড় চোখে আরাফের দিকে তাকায়;আরাফের দিকে তাকাতেই অনু খেয়াল করে আরাফ অনুর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।অনু কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে তার ব্যাগ থেকে আরাফের দেওয়া রিংটা বের করে নিজের হাতে পরে নেয়।তা দেখে আরাফের ঠোঁটের কোণেও মিষ্টি একটা হাসির রেখা ফুটে উঠে।আরাফ সবাইকে বসতে বলে ক্লাস নেওয়া শুরু করে।

ক্লাসের মাঝখানে,,

”দোস্ত দেখ স্যার তোর দিকে তাকিয়ে আছে।”

অনুর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে রুমি।রুমির কথা শুনে অনু বইয়ের উপর থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে ধড়ফড়িয়ে আরাফের দিকে তাকায়।কিন্তু না আরাফ তো মনোযোগ দিয়ে বই পড়াচ্ছে।এটা দেখে অনু বুঝতে পারে রুমি তার সাথে মজা করেছে।অনু দাঁতে দাঁত চেপে রুমির দিকে তাকিয়ে দেখে সে মুখ টিপে হাসছে।অনুর রাগে রুমির হাতে জোরে একটা চিমটি দেয়;সঙ্গে সঙ্গে রুমি আউচচ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে;চিৎকারটা একটু জোরে দেওয়ায় আরাফ বইয়ের উপর থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে তাদের দিকে ব্রু কুঁচকে তাকায়।আরাফের তাকানো দেখে অনু আর রুমি সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে ফেলে।তারপর এমন একটা ভাব করে বইয়ের দিকে তাকায় যেন এতক্ষন তারা বই পড়তে পড়তে উল্টিয়ে ফেলছিলো।আরাফ ওদের দিকে কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবার বই পড়ানোতে মনোযোগ দেয়।
.
সন্ধ্যার দিকে লিভিং রুমে সবাই বসে চা কফি খাচ্ছে।আরাফ তার চার কাপটাই হালকা করে চুমুক দিয়ে সেটা পাশে রেখে পি.একে উদ্দেশ্য করে বলে,
”পি.এ আমি তো এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছি।তো আমি চাচ্ছি যে এখন আমি আমার ফ্লাটে চলে যেতে।সেখানে সব কিছুই আছে।আমার কোনো অসুবিধা হবে না।”

আরাফের চলে যাওয়া কথা শুনার সাথে সাথে অনুর মুখটা মলিন হয়ে যায়।পারভেজ সাহেব চার কাপটা পাশে রেখে গম্ভীর মুখে আরাফকে বলে,
”না আরাফ তোমার এখান থেকে কোথাও যাওয়া হচ্ছেনা।তুমি আমাদের সাথে এখানেই থাকবে।”

”এটা কি করে হয় পি.এ;অনেক দিন হয়ে গিয়েছে এবার তো আমাকে যেতে দাও।এভাবে কতদিন তোমাদের সাথে থাকবো বলো?”

”যতদিন না তোমার বিয়ে হচ্ছে ততদিন।”

পি.এর কথা শোনে আরাফ আর অনু দুজনেই তার মুখের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায়।’বাবা স্যারের বিয়ের কথা কেন বলছে?বাবা কি তাহলে স্যারের জন্য কোনো মেয়ে ঠিক করে রেখেছে।অনু চোখ মুখ ছোট করে কথা গুলো ভাবছে’।আরাফ একবার অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে অনুর চোখে মুখে গভীর চিন্তার ছাপ পড়েছে;আরাফেরও তাই!সে চিন্তিত মুখে পি.একে বলে,
”পি.এ হঠাৎ বিয়ের কথা কোথ থেকে এলো।”

পি.এ হেসে বললো,
”সব কিছুই এমন হঠাৎ করেই হয় বুঝেছিস বাবা?আজ হসপিটালে গিয়ে আনোয়ারের সাথে তোর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে এসেছি।ইনফেক্ট মেয়ের ছবিও দেখিয়ে দিয়েছি।আনোয়ারের তো মেয়ে খুব পছন্দ হয়েছে।বলেছে তোর মতামত নিয়ে তাড়াতাড়ি শুভ কাজ সেরে ফেলতে।এখন শুধু তোর রাজি হওয়ার পালা।”
.
কথাটা বলে পি.এ তার শার্টের পকেট কারো একটা ছবি বের করে আরাফের দিকে বাড়িয়ে দেয়।অনু তাদের থেকে কিছুটা দূরে থাকায় ছবির মধ্যেকার মেয়েটাকে দেখতে পায় না।আরাফ আলতো করে ছবিটা হাতে নেয়;আরাফ অবাক চোখে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে;বেশ কিছুক্ষন ছবিটার মধ্যেকার মেয়েটাকে দেখে আরাফ আড় চোখে অনুর দিকে তাকায়;অনু ছলছল চোখে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে।পারছেনা এক্ষনি সে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদে।আরাফ অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হাতের ছবিটা আবার পি.এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
”পি.এ তোমার পছন্দই তো আমার পছন্দ।তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে আমি তাতেই রাজি।”

আরাফের কথা শুনা মাত্র পি.এ হাসি মুখে বলে উঠে,
”আলহামদুলিল্লাহ!”

আর ঐ দিকে অনু আর না পেরে দৌড়ে নিজের রুমে এসে ভেতর থেকে দরজা আটকিয়ে দেয়।তার বুকটা ধুক ধুক করে কাঁপছে।আরাফ কি করে রাজি হয়ে যেতে পারলো।বাবা তো আর জানে না ওদের ভালোবাসার কথা কিন্তু আরাফ যে কিনা কালকে অনুকে প্রপোস করে আজ তার বাবার কথায় বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো!কি করে পারলো এমনটা করতে?আরাফের কাছে কি তার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেয়?কথাগুলো ভেবে দু হাত দিয়ে মুখ চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে দরজা ঘেসে বসে পরে অনু!!আরাফকে হারানোর ভয় তাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরছে।আরাফকে কি তবে সত্যি সত্যি হারিয়ে ফেলবে সে??

চলবে…
(আল্লাহকে ভয় করো;পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here