#টিট_ফর_ট্যাট
#Alisha_Anjum
#পর্ব_১০
দৌড়ে রুমে এসে দাড়িয়ে গেলাম। নীরব ল্যাপটব নিয়ে বিছানায় মগ্ন। আমি কোনো ভাবনা মাথায় আসার সুযোগ না দিয়ে ছুটে গিয়ে পাশ ঘেঁসে দাড়ালাম তার। আমার উপস্থিত বুঝি নীরব উপলব্ধি করলো। মাথা তুলে ভ্রু কুঁচকে চাইলো আমার দিকে। আমি তার দৃষ্টির বিপরীতে ধপ করে বসে পরলাম তার কাছে। যদিও ভেে এসেছিলাম তার বুকে মাথা রাখবো কিন্তু সঙ্কোচ আর দ্বিধায় পেরে উঠলাম।
— কি হয়েছে?
নীরবের প্রশ্নে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কি বলবো? একটু ভেবে থতমত ভাব কাটিয়ে বলে উঠলাম
— ঘুমাবো।
— তো ঘুমাও। তবে ডিনার করে ঘুমাও।
— করবো না। খিদে নেই।
মুখ ভার করে বললাম। নীরব আমার কথায় ভ্রকুটি করলো। ধমকাতে গিয়েও হঠাৎ চুপ হলো। কোল থেকে বিদঘুটে, বিরক্তিকর জিনিসটা নামিয়ে পূর্ণ দৃষ্টিতে চাইলো আমার দিকে। আমি গুটিসুটি মেরে বসলাম। সে বলল
— নিলীমা? আমি কি তোমার আপন না? এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আপনের মধ্যে একজন হলো স্বামী। তুমি কি এখনো আমার সাথে ফ্রি হতে পারো নি?
নীরবের কথায় আমি একপলক চাইলাম তার দিকে। হঠাৎ করে তার বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে ফেললাম। তার পিঠে হাত রেখে টিশার্ট আঁকড়ে ধরে বললাম
— আমি কাল বাসায় যেতে চাই।
নীরব আগলে নিলো আমায়। আলতো বাঁধনে জরিয়ে নিয়ে বলল
— ঠিক আছে। রেখে আসবো।
আমি তার বুকে মুখ রেখেই মুচকি হাসলাম। নিলীমা তো বোকা নয়? কেন কাঁদবে সে? তার হাসার দিন। সে হাসবে। হৃদের হৃদয়ে এখন হিংসা হয়। দগ্ধ হয় হৃদয় আমায় দেখলে। এটা কি আমার জন্য খুশির খবর নয়?
ভাবছিলাম নীরবের মুখে মাথা রেখে। ভাবনার মাঝে নীরব বলে উঠলো
— চলো ডিনার করবে। পড়া তো পড়লেই না আজ।
আমি আমার হাতের বন্ধন দৃঢ় করলাম নীরবের কথায়। আমি খাবো না। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললাম
— আমি এখন ঘুমাবো খাবো না।
— না খেলে মাইর দেবো। চলো।
আমি আবারও জেদ নিয়ে বললাম
— না।
— আচ্ছা শোন একটা মজার কথা বলি। গত শুক্রবারে জুৃার খুদবায় কি বলেছে জানো? স্বামীর কথা যদি বউ না শুনতে চায় তাহলে বউকে দিয়ে পা টেপাতে হয়। বউরা নাকি পা টিপতে পছন্দ করে না। আর তুমি যদি আমার কথা না শোনো তাহলে আমার পা টিপে দিতে হবে। রাজি?
আমি ঝট করে মাথা তুললাম স্বামী নামক শেয়ান লেকটার বুক থেকে। কি চালাক রে বাবা। আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। নীরব আবার বলে উঠলো
— স্বামীর কথা না শুনলে আল্লাহ পাপ দেয়।
কথাটা অত্যন্ত সরলভাবে বলে আমার স্বামী উঠে পরলো বিছানা থেকে। আমি না উঠলে আমার পা টিপতে হবে? কথাটা ভাবতেই তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে পরলাম নীরবের পেছন পছন। পারবো না আমি পা টিপতে।
.
দেখতে দেখতে আমার আর নীরবের বিয়ের দশ দিন পেরিয়ে গেছে। গতকাল বাবার বাড়ি গিয়েছিলাম। বাবা এসে নিয়ে গিয়েছিল। আজই আবার নীরব গিয়ে নিয়ে এসেছে।
— নিলীমা একটা চমক আছে!
বইয়ের উপর চোখ রেখে ঝিমোচ্ছিলাম আর ভাআনায় তলিয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখনই নীরব বিছানা থেকে কোনো এক চমকের কথা বলে উঠলো। আমি ঘুমে মুখ হা করতে করতে জানতে চাইলাম
— কি চমক? কিসের চমক?
নীরব বিছানা থেকে নেই এগিয়ে এলো পড়ার টেবিলের নিকট। আমার পাশাপাশি দাড়িয়ে বলল
— চোখ বন্ধ করো। আমি না বলা পর্যন্ত খুলবে না চোখ। ঠিক আছে?
সুন্দর ঠোঁট জোড়ায় চাপা হাসি চেপে রেখে সে শর্ত দিলো আমায়। আমি ঘড় এদিক ওদিক করে তার শর্ত মেনে নিলাম। যথারীতি চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলাম বইয়ের উপর। নীরব বুঝি চলে গেল আমার সম্মুখ থেকে। সেকেন্ড দুই পর আলমারি খোলার ক্যাটক্যাট আওয়াজ এলো কানে। এতক্ষণ কৌতুহল না থাকলেও এখন একটু উঁকি দিলো মনে। কি হতে পারে? আমার ভাবনা চিন্তার দু মিনিটের মাথায় নীরবের কন্ঠ।
— চোখ খোলো।
অনুমতি পেয়ে চোখ খুললাম। সামনে তাকাতেই আমার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেলো। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে একবার নীরবের দিকে চাই তো একবার তার হাতের ওড়নার দিকে। নীরব হাঁটুগেড়ে বসে আছে আমার সম্মুখে। হাতে একটা ধবধবে সাদা ওড়না। তাতে দু একটা আয়নার মতো পাথর চকচক করছে। আমি হা হয়ে তাকিয়েই আছি। হঠাৎ এমন কেন? মানে নীরব?
— আচ্ছা নিলীমা তোমার সমস্যা কি একটু বলবে? মানে স্বামী শখ করে একটা জিনিস দিচ্ছে আর তুমি হা করে তাকিয়েই আছো। মুখ বন্ধ করো! আমার কাছে আসলেই মনে হয় তুমি জগতের সবচেয়ে বড় গাধা হয়ে যাও।
নীরবের ধমকাধমকিতে টুপ করে দু চোয়াল এক করে নিলাম। থতমত খেয়ে হাত বাড়ালাম ঝলমলে ওড়নাটা নেওয়ার আশায়। কিন্তু আচমকা আমার আশায় জল ঢেলে দিয়ে নীরব পিছু হটালো নিজের হাতটা। আমার মুখ আবারও হা হয়ে গেলো। কি হলো? নীরব দেখি কিছু একটা ভেবে উঠে দাড়ালো। আমাকেও টেনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল
— আমি একটু ওড়নাটা পড়িয়ে দেই?
আমি তার এতসব কান্ডে শুধু অবাকের উপর অবাক হচ্ছি। আজ তার হলোটা কি?
— আজ আপনার কি হয়েছে? াঅন্য রকম একটা মুডে আছেন। জেরিন আপুর সাথে যেমন করেছেন তেমন করেছেন।
আমার কথায় নীরব মুচকি হাসলো। ওড়নাটা মেলে আমার মাথার ওপর দিয়ে পরিয়ে দিতে দিতে বলল
— তুমি ডায়েরি পড়েছো? জেরিন এসব পছন্দ করতো না। কিন্তু আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমার চোখে একটা মেয়ে তখনই বেশি সুন্দর হয় যখন সে খোলা চুলের উপর মাথায় ঘোমটা দেয়। চোখে হালকা কাজল দেয়। হাতে চুড়ি পরে আর মুখে লাজুক হাসে।
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে নীরব আমার চোখে চোখ রেখে মুচকি হাসলো। আমিও যেন হঠাৎই লজ্জায় রঙিন হয়ে উঠলাম। নীরব আমার মাথায় ওড়নাটা সুন্দর করে পড়িয়ে চলে গেলো ড্রেসিং টেবিলের কাছে। ঝটপট একটা কাজল নিয়ে আবার চলে এলো আমার কাছে। হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল
— নিলীমা তোমার চোখ দুইটা অনেক সুন্দর। অন্যরকম সুন্দর। টানাটানা, ডাগর ডাগর না বটে কিন্তু দারুণ।
কথাটা বলে আমার চোখ বন্ধ করার আদেশ দিলো। আমি অতিশয় ভদ্র মেয়ে হয়ে চোখ বন্ধ করলাম। কিন্তু অবাকতা আর কিছুতেই যাচ্ছে না। চোখে কাজল পরানো শেষ হলে নীরব চোখ খোলার হুকুম দিলো না। উল্টো চোখ বন্ধই রাখতে বলল। আবার কোথাও উধাও হয়ে গিয়ে মিনিট খানক পর ফিরে এলো। বলল
— চোখ খোলো।
আমি অনুমতি পেয়ে চোখ খুললাম। দেখি আমার চোখের সামনে ছোট একটা পাথর ঝলমলিয়ে খেলছে। আমি এবার যেন অবাকে অবাকে হার্ট অ্যাটাক করবো। হিরের নাকফুল! আমি এবার অবাকতা কিছুতেই দমিয়ে রাখলাম না। গড়গড় করে বললাম
— এসব কি হচ্ছে? আপনি এতোসব জিনিস কিনলেন কখন?
— তুমি যে কাল বাসায় গিয়েছিলে তখন। ভাবলাম বউকে কিছুই দেওয়া হয়নি। সেই একসাথেই তো থাকতে হবে। শুধু শুধু ভালো না বেসে কি হবে? জীবন সুন্দর। একে সুন্দর না করতে পারলে আমি কেমন মানুষ?
নীরবের কথায় আমার মনে এক ঝাঁক ভালোলাগা উড়ে এলো। ভেসে উঠলো তার কথার সত্যতা। ঠিকই তো। আমিও তার বউ। সে আমার স্বামী। আমারও কি উচিত নয় সব ভুলে তাকে আপন করে নিয়ে সুখী হওয়া? আর দশটা সুন্দর স্বমী স্ত্রীর মতো সুখের খাতায় সাইন করা?
আমি হঠাৎই আবার তৃতীয় বারের মতো বেকুব হলাম। আবারও চিরচেনা নির্লজ্জ প্রসঙ্গ টেনে এনে বললাম
— আচ্ছা আপনার ঠোঁট এতো সুন্দর কেন? জেরিন আপু কেন আপনার ঠোঁট নিয়ে চিঠি লিখলো না? আচ্ছা আপনিও তো জেরিন আপুকে অনেক চিঠি দিয়েছন। আমার নামে একটা চিঠি লিখবেন?
চলবে……
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আচ্ছা গল্পের স্যাড এন্ডিং ভালো হবে নাকি হ্যাপি এন্ডিং)