তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_13
‘এই মেয়ে তুমি এখানে শুয়ে কি করছ?’
কপালে সুক্ষ্য চিন্তার ভাঁজ ফেলে তূর্য আবার বলল,
‘আই তোমার মতলব কি বলতো? পালানোর ফন্দি আঁকছো নাকি?’
বর্ষা ঢোক গিলে তূর্য এর দিকে তাকিয়ে আছে।
‘কি পালানোর চেষ্টা করব? তা তো আমি সবসময়ই করি। পারলে এখনো আমি এখানে থাকতাম নাকি কবেই চলে যেতাম।’
‘কি যেন বলেছিলে তোমার বাপ্পি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে তাই না!’
বর্ষা উঠতে চাইছে কিন্তু তূর্য এমন ওর দিকে ঝুঁকে কথা বলছে দেখে উঠতে পারছে না।
হুট করে তূর্য হাত বাড়িয়ে বর্ষার এক হাত ধরে টান মেরে শোয়া থেকে তুলে ফেলল। বর্ষা আচমকা টানে ভয় পেয়ে তূর্য এর শার্ট খামছে ধরে।
‘এভাবে কেউ টেনে তুলে।’
রেগে বললো বর্ষা আর তূর্য এর থেকে সরার চেষ্টা করল এখন ওর তূর্যের আশেপাশে থাকতে ভয় হয়।সেই দিনের পর এই লোকটা ও কাছে দেখলে ভয় পায়। তূর্য ওর হাত বর্ষার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে। বর্ষার ছটফটে বুঝতে পেরে তূর্য বর্ষাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো,
‘কেউ তুলে কিনা জানিনা আমি তুলি।’
বর্ষা তূর্য এর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো, ‘ আপনার মতো খারাপ লোক এইসবি করবে উফ হাত ব্যথা করছে।’
বলে বর্ষা নিজের হাতে ডলতে লাগলো। তূর্য ভেতরে এসে বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বর্ষাকে কিছু বলবে বর্ষা নিজে বলে ফেললো,
‘ শাওন আপনার এখানে কি করছে? উনিও আপনার লোক তাইনা?’
তূর্য বর্ষার কথায় অবাক হয়ে বলে, ‘ ইউ শাওন কে দেখলে কি করে?’
‘ দেখেছি! বলেন? ওই শাওন, আর আমাদের বাসার ড্রাইভার এরা সবাই আপনার লোক।’
‘হ্যাঁ আমার লোক।’
বর্ষা সোজা তূর্য এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো, ‘ আপনি আগে থেকেই আমার পেছনে এদের লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আমাকে ফলো করার জন্য।’
তূর্য কিছু বললো না। বিরক্ত কর মুখ তাকিয়ে রইলো বর্ষার দিকে।
‘কথা বলছেন না কেন? সত্যি করে বলেন না কেন তুলে এনেছেন আমাকে?’
তূর্য বর্ষার দিকে হাত বাড়িয়ে ওর হাত টেনে পাশে বসিয়ে দিলো বর্ষা হাত সরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।
‘হাত ছাড়ুন। টাচ করবেন না আমাকে। ফাজিল লোক।’
তূর্য হাত ছাড়লো না। জোর করে ওর পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘ হাত ধরায় এত প্রবলেম। আরো কত জায়গায় টাচ করব তখন কি করবে বর্ষা মনি।
বলেই তূর্য মুখ বাঁকা করে হাসলো। বর্ষা নিজের বাম হাত ছাড়ানোর জন্য ডান হাত দিয়ে তূর্য এর হাত সরানোর চেষ্টা করতেছে ছটফট করতেছে।
‘আমার হাত ছারুন। অসভ্য লোক।’
বকা শুনে তূর্য রেগে ওর এক হাতে বর্ষার দুই হাত শক্ত করে ধরে আর এক হাতে বষা গাল চেপে ধরে,
‘ আর একবার আমাকে ফাজিল অসভ্য বললে। অসভ্যতামি করেই অসভ্য হবো মাইন্ড ইট।’
ব্যথায় বর্ষা চোখ জল ভর্তি হয়ে গেছে। তূর্য বর্ষার গাল ছেড়ে দেয় আর বর্ষার এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে বলে,
‘তোমার বাপি মাম্মাকে দেখবে?’
বর্ষা চোখ বন্ধ করে ছিল ওর ভাল লাগছে না এই লোকটার দিকে তাকাতে। তাই ও চোখ বন্ধ করেছিল বাপি কে দেখবে শুনে ও চট করে চোখ মেলল। বিস্মিত চোখে তূর্য এর চোখের দিকে তাকালো।
‘সত্যি! তার মানে আপনি আমাকে বাসায় নিয়ে যাবেন।’
খুশি হয়ে বললো বর্ষা। তূর্য ওর উজ্জ্বল হাসি খুশি মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘ নো। ‘
‘না মানে কি তাহলে বাপি গিয়ে দেখবো কিভাবে?’
হাসিখুশি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেল।
তূর্য নিজের ফোন বের করে বর্ষার দিকে ধরল। বর্ষা ফোনের দিকে তাকিয়ে নিজের বাপি মাম্মা কে দেখতে পেল। ও মাম্মা বলে চিৎকার করে উঠল, মাম্মার মুখে অক্সিজেন মাস্ক।তিনি হসপিটালের বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তার পাশে বাপি বসে আছে তার চোখে জল।
‘মাম্মার কি হয়েছে মাম্মা হসপিটালে কেন?’
কান্না গলায় বলল বর্ষা। তূর্য ফোন বন্ধ করে নিজের পকেট এ ভরে ফেলল। বর্ষা তাঁ দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল,,
‘ ফোন নিলেন কেন? দিন আমাকে কি হয়েছে মাম্মার দেখতে দিন। বাপি কাঁদছে কেন?’
‘ তোমার মাম্মা তার একমাত্র মেয়ে চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক করেছে।’
‘কিহ?’
‘ ইয়েস।’
তূর্য বর্ষার হাত ছেড়ে দিয়েছে। বর্ষার নিজের হাত দিয়ে তূর্য এর হাত ধরে বলল,,
‘ আমাকে প্লিজ মাম্মার কাছে নিয়ে চলুন। আমি মাম্মার কাছে গেলে মাম্মা সুস্থ হয়ে যাবে।’
‘সরি বর্ষামনি। আমার কাছে রাজি না হলে আমি কিছু করতে পারবো না। আমার শর্তে রাজি হও। কালকেই তোমাকে বাসায় দিয়ে আসব।’
বর্ষার হাত তূর্য এর হাতের উপর থেকে পরে যায়।
‘ আমি পারবো না।ওমন জগন্য কাজে সম্মতি দিতে। আপনি আমাকে মেরে ফেলুন তাও ভালো। না হলে আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দেব।’
তূর্য বর্ষার দিকে ঘোরে আর ওর চোখে চোখ রেখে খুব কাছে গিয়ে বলে,
‘তুমি মরে যেতে চাও ওকে তুমি মরলে কিন্তু তোমার বাবা মাও হয়তো আর বাঁচবে না!তোমার নিখোঁজ হওয়ার জন্যই তাদের এই অবস্থা যদি জানতে পারে তুমি মরে গেছো তাহলে তাদের কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছো?’
‘আর আপনার সত্ত্বে রাজি হওয়ার পর আমি তাদের কাছে কোন মুখে গিয়ে দাঁড়াবো।’
‘তুমি বেঁচে আছো সাথে আছো ভেবে হয়তো তারা ভালো থাকবে! তুমি যদি এখন নিজেই নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করো। তাহলে তুমি শুধু মরে গিয়ে বেঁচে যাবে কিন্তু তোমার বাবা-মা কিন্তু আমার হাত থেকে বাঁচবে না তাদের আমি শাস্তি দিয়ে ছাড়বো। তাদের জীবনটা নরক এ পরিনত করে দেবো।’
‘কি ক্ষতি করেছে আমার বাপি আপনার যে আপনি তাদের এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন। আর আমার জীবনটা নষ্ট করছেন।’
‘সেটা তুমি তোমার বাপিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো। মাকে বাঁচাতে চাইলে আমার কাছে ধরা দাও আর চলে যাও মায়ের কাছে।’
বলেই তূর্য চলে গেলো। দরজার কাছে গিয়ে আবার পেছন ফিরে বলল,
‘শুধু নিজের কথা না নিজের বাবা-মার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিও। তোমার সিদ্ধান্তের ওপর তাদের জীবন নির্ভর করছে।’
বলেই তূর্য এক সেকেন্ড দাঁড়ালো না। চলে গেলো।
শাওন ডাইনিং টেবিলে বসে চিকেন খাচ্ছে। তখন তূর্য নিচে আসে ও চিকেন এ কামড় দিতে দিতে বলে,
‘কিরে রাজি করানো শেষ?’
‘এত ঘাড়তেরা মেয়ে জীবনে দেখি নাই।’
‘হবে হবে চিন্তা করিস না নিজের জন্য না হলে বাবা-মার জন্য হবে।’
‘তুই এখন রেডি হয়ে বসে খাচ্ছিস কোথায় যাবি।’
‘আছে একটু দরকার কতদিন পর বের হব টানা এক সপ্তাহ বিছানায় পড়ে ছিলাম ভাবা যায়।’
তূর্য এর ফোন আসতেই তূর্য চলে আসে নিজের রুমে।
‘হ্যালো বস! এখানকার অবস্থা খারাপ মহিলাটির অবস্থা খুবই খারাপ বাচবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।’
‘ ডাক্তার কি বলেছে?’
‘ডাক্তাররা ঠিকমত বলতে পারছে না তারা তাদের চেষ্টা করছে!’
‘ডাক্তারকে হুমকি দে যত টাকা লাগে দেবো মহিলাটি যেন বাঁচে তার যেন কিছু না হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ে থাক সমস্যা নাই প্রাণে যেন না মরে।’
‘ওকে বস।’
তূর্য এর লোকেরা বর্ষার মা যেখানে ভর্তি আছে সেই হসপিটালে পাহারা দিচ্ছে আর সব খবরা খবর তূর্য কে দিচ্ছে।
তূয চায়না বর্ষা মা মরে যাক তাহলে বর্ষায় কে আর রাজি করানো সম্ভব হবে না। তাকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে।
তূর্য এর লোকরা আবার ফোন দিয়ে বলল, বর্ষার মা জ্ঞান ফেরার পর থেকে নাকি মেয়ের নাম জপে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। তাতে তার কন্ডিশনারও খারাপ হচ্ছে। ডাক্তার বলেছে মেয়ের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত মেয়েকে না দেখা পর্যন্ত নাকি তিনি শান্ত হবেন না। ডাক্তার আবার ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে। বারবার এমন ঘুমের ইনজেকশন দিলে তার লাইফে রিক্স হবে।
তূর্য পায়চারি করে ফোন হাতে বর্ষার রুমে এসে দরজা খুলতে লাগল। হয় বর্ষার মা মরবে না হলে বর্ষা।
#চলবে