তুমি_যে_আমার Writer_Nondini_Nilapart_12

তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
part_12

নিদ্রা আজ অনেকদিন পর হসপিটাল এসেছে। এক সপ্তাহ পর হসপিটাল এসেছে।স্টাফ রা ওকে দেখে খুশিতে ওর কাছে এসে কনগ্র্যাচুলেশন করতে লাগলো। বিয়ের খবরটা কারো কাছেই গোপন নেই অবশ্য নিদ্রা নিজেও গোপন করে নি। ওর সহকারি যে ডক্টর শাম্মি আফরোজা দুজন একসাথে কাজ করে বেস্ট ফ্রেন্ড বলা চলে দুজনকে। নিদ্রার কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,

‘বলেছিলাম না ভাগ্য দুই সেকেন্ডে পরিবর্তন হতে পারে। আমার কথা মিলল তো তুমি তো বিয়েতে যেতে চেয়েছিলে না। এখন গিয়ে অবশ্যই আর আফসোস হচ্ছে না।বরংচ না গেলে তোমার আরো আফসোস হতো ভালবাসার মানুষকে ফিরে পাওয়ার শেষ আশাটুকু তুমি আর পেতে না।’

কথাটা বলে নিদ্রাকে ছেড়ে ওর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো শাম্মি। নিদ্রা বলল,

‘থ্যাংক ইউ শাম্মি আমাকে ওইভাবে বুঝিয়ে পাঠানোর জন্য। অভ্রকে পাওয়ার পেছনে তোমার অবদান আছে অনেক। তোমার মতো একজন বোনের মত বেস্ট ফ্রেন্ড পাওয়া আমার ভাগ্যের ব্যাপার। আমি সত্যি খুব লাকি।’

‘আমিও খুব লাকি তোমার মত বোন পেয়ে। তুমি খুব ভালো মেয়ে নিদ্রা আর তোমার সাথে অন্যায় আল্লাহ করবে না। তুমি জীবনে অনেক কষ্ট করেছ আর পেয়েছো। সেসবের জন্য তোমার ভবিষ্যতে অবশ্যই এমন ভালো কিছু লেখা ছিল।’

নিদ্রা মুখটা মলিন করে বলল,’আমি শুধু অভ্র কে স্বামী হিসেবে পেয়েছি। কিন্তু ওর ভালোবাসা এখনো পায়নি। ও বর্ষা কে খুব ভালোবাসে এখনো। ওর জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়।’

আমার কথা শুনে শাম্মি রেগে গেলো,

‘কি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চায়? ডিভোর্স কি হাতের মোয়া নাকি?বললেই হলো নাকি।তুমি একদম ডিভোর্স দিবে না যা বলার বলুক বিয়ে করাটা যত সহজ বিয়ে ভাঙ্গা টা এত সোজা না।দুজনের সম্মতি ছাড়া ডিভোর্স হবে না। আর এত তাড়াতাড়ি হবে না কমপক্ষে 3 মাস একসাথে থাকতেই হবে।’

‘হুম।’

‘একবার কাছে পেয়েছো ধরে রাখা জন্য যা করতে হয় করো। মেয়েরা চাইলে একজন ছেলেকে তার প্রেমে ফেলতে পারে। তুমি কি পারবে না? এখন তুমি একজন বাইরের মেয়ে না তুমি একজন স্ত্রী নিজের স্বামীকে নিজের কাছে রাখার জন্য নিজের ভালোবাসা ব্যবহার করো ভালোবাসার পারে সবকিছু করতে।’

‘আমার শাশুড়ি মা মানে অভ্রর মা আমার পাশে আছে। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে ও কি আমাকে ভালবাসবে? আমি কি পারব?’

‘ পারবে অবশ্যই।’

লাঞ্চের টাইমে সবাইকে নিয়ে পাশের রেস্টুরেন্ট যেতেই হলো নিদ্রাকে। সাথে আছে ডাঃ শাম্মি, ডাঃ জাব্বর ভাই, ও ডাঃ রিতাকে। রিতা খুব একটা নিদ্রাকে পছন্দ করত না। কারণ জাব্বর নিদ্রাকে লাইক করতো। আর রিতা জাব্বর কে পছন্দ করে‌।এজন্য দেখতে পারতোনা কিন্তু এখন যেহেতু নিদ্রার বিয়ে হয়ে গেছে তাই তার সাথে ভাব করার চেষ্টা করছে। রেস্টুরেন্টে সবাইকে বিয়ের ট্রিট দিতে হচ্ছে কারণ বিয়েতে কেউ যেতে পারেনি। নিদ্রা হাসিমুখে সবার সাথে রেস্টুরেন্টে বসে আছে। তখন রিতা ফট করে বলে উঠলো,

‘নিদ্রা তা তোমার হাজব্যান্ড কে ডাকো না এখানে। আমরা একটু পরিচিত হই। আমরা তো তাকে দেখিই
নাই। একটু দেখব আর পরিচিত হবো।’

রিতার কথা শুনে নিদ্রা পরলো বিপাকে।এখন অভ্রকে এখানে কিভাবে ডাকবে। ওরা তো হাজবেন্ড এর সাথে পরিচিত হতে চাইছে। আর অভ্রকে আমি কি করে হাজবেন্ড হিসেবে পরিচিত করাতে ডাকবো। ও জানে আমি ওকে মেনে নেই নি। এখন ডাকলে কেমন দেখা যায়। নিদ্রা চিন্তিত মুখে শাম্মির দিকে তাকালো। শাম্মি ওর চিন্তার কারণ বুঝতে পারছে।

কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিতা বলে উঠে, ‘ কি ব্যাপার নিদ্রা। তোমাকে চিন্তিত লাগছে কেন? হাজবেন্ডের সাথে পরিচিত হতে চাই বলায় নাকি। তুমি কি তোমার হাজবেন্ড এর সাথে আমাদের পরিচিতি করাতে চাও না নাকি?’

শাম্মি বললো, ‘ এসব কি কথা রিতা তা কেন চাইবে? অবশ্য‌ই পরিচয় করাবে। কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে গেছি সেও আমাদের মতো একজন ডাক্তার তাই বললেই আসা যায় না।’

‘ তুমি বলছো কেন আমি তো নিদ্রাকে বলেছি। আর ডাক্তার তাই কি স্ত্রীর জন্য একটু আসতে পারবে না।’

বলেই মুখ বেকালো।

এবার রিতার সাথে জাব্বর ও বলতে লাগলো অভ্রকে আশার জন্য। সবার জরাজরিতে নিদ্রা ফোন হাতে তুলে নিলো চিন্তিত মুখে। রিতা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। নিদ্রা রিতার দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি দিয়ে নাম্বারে ডায়াল করে।

‘ হ্যালো অভ্র।’

‘হ্যাঁ নিদ্রা কিছু বলবি নাকি? এই সময় কল করেছিস?’

নিদ্রা নিজে শুকনো ঠোঁট জিব্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বলে, ‘ওই আসলে বলছিলাম কি তুই কি ফ্রী আছিস?’

‘ফ্রী! কেন বলতো?’

‘না মানে একটু আসতে বলতাম তুই কি একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবি এখন।’

‘এখন! কেন কোন দরকার নাকি? তুই ঠিক আছিস?’

‘আমি ঠিক আছে তুই প্লিজ একটু আয়।’

‘ কোথায়?’

নিদ্রা কিছু বলার আগেই রিতা ফোনটা নিয়ে গেল টান মেরে। নিদ্রা উঠে দাঁড়ালো,,

রিতা হাসিমুখে ফোন নিয়ে বলতে লাগলো,

‘এইযে দুলা ভাই আমরা আপনার শালিকা তাই এখন আপনার সাথে আমরা দেখা করতে চাই তাড়াতাড়ি চলে আসুন রেস্টুরেন্টে। বিয়ের সময় তো না বলেই বিয়ে করে নিয়েছেন এখন আমাদের ট্রিট দিতে হবে।’

রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিয়ে রিতা ফোন কেটে দিল। রিতার এমন অসভ্যের মতো কাজ দেখে শাম্মি এক ধমক দিয়ে ফোন নিয়ে নিদ্রাকে দিলো। নিদ্রার হাতে ফোন দিতেই। ফোন বেজে উঠল, অভ্র ফোন করেছে। নিদ্রা ভয়ে ভয়ে ফোনটা কানে নিল।

‘হ্যালো নিদ্রা নিদ্রা তুই নাকি কে ফোন ধরেছিল আর কি সব বলল?’

নিদ্রা সবার মাঝখান থেকে সরে এসে অভ্র কে বোঝানোর চেষ্টা করল। অভ্র বলল আসছে আমি।
নিদ্রা হাফ ছেড়ে বাঁচলো অভ্রের কথা শুনে। সবার সাথে এসে বসলো হাসিমুখে।

‘সবার আড়ালে কি কথা বললে গো নিদ্রা?’

রিতার কথায় নিদ্রা কিছু বললো না। শুধু বললো অভ্র আসছে।

খাওয়া-দাওয়া শেষ হ‌ওয়ার পর অভ্র আসলো। অভ্রের আসতে আধা ঘন্টা লাগল। ইমারজেন্সি কোন পেশেন্ট ছিলনা এজন্য তাড়াতাড়ি আসতে পেরেছে‌। সবার সাথে ভাল ব্যবহারই করল অভ্র। নিদ্রা তাতে খুবই খুশি হলো। রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে অভ্র বললো,

‘ তিনটা তো বেজে গেছে এখন যেতে পারবি।’

‘আমার তো পাঁচটা পর্যন্ত থাকতে হবে!’

‘বলে দেখতো যাওয়া যাবে কিনা। তাহলে একসাথে বাসায় ফিরতাম এই আরকি!’

‘একসাথে? তুই কি আর হসপিটালের যাবিনা।’

‘না একেবারে চলে এসেছি। এখন বাসায় যাব।’

‘আচ্ছা চল দেখি। ‘

হসপিটাল থেকে ছুটি নিতে পারল নিদ্রা। দু’জনে একসাথে বেরিয়ে পড়লো। বাসার উদ্দেশ্যে।

.

এই শাওন এখানে কি করছে? উনি তো সেই লোকটা। লাস্ট কয়েক দিন উনি আমাদের ফলো করেছে। যেখানে যেতাম ওনাকেই দেখতে পেতাম উনাকে।
যেভাবেই হোক উনি আমাদের সামনে আসতোই।আরে এসেই হেসে কথা বলতো আমার ফ্রেন্ডদের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করতো।আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের সবার কথা ছিল উনি আমাকে পছন্দ করেন। পরে আমাদের সবার আশা মিথ্যে করে দিয়ে উনি তিশা কে প্রপোজ করে বসে।

সে লোকটা এখানে কি করছে? কিডন্যাপার লোকটার সাথে শাওন এর কি সম্পর্ক? তিশার সাথে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। এই শাওন কে আমার প্রথম থেকেই ভালো লাগতো না। সন্দেহ লাগতো। কিন্তু পরে যখন তিশা কে প্রপোজ করল তখন সন্দেহটা চলে গেছিল। সবাই ভেবেছি এজন্য হয়তো ফলো করতো‌। তিশা পছন্দ করে বিধায়। এখন তো মনে হচ্ছে আমাকে নজরে নজরে রাখার জন্য ফলো করতো।
এসব কি হচ্ছে পাগল হয়ে যাবে আমি। দরজার কাছে এসে আমি শুয়ে পরলাম। নিচ দিয়ে উঁকি দেবো তাই। আমি মাথা ফ্লোরের সাথে লাগিয়ে তাকিয়ে আছি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না। তখন খট করে দরজা খুলে গেল আমি ছিটকে উঠলাম। আমি ফ্লোরে শুইয়ে থেকেই উপরে তাকালাম আমার দিকে বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে লোকটা। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি। এই লোকটাকে এখন‌ই আসতে হলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here