তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_16
নিদ্রা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওর চাচা ও চাচি । চাচি চিৎকার করে এগিয়ে এসে নিদ্রার গায়ে হাত তুলতে গেল। নিদ্রা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। অভ্র এটা মানতে পারলোনা এমনিতেই এতক্ষণ ধরে এত চেচামেচির যা নয় তাই বলে গালাগালি করছে। ক্রোধে ফেটে পড়ছে অভ্র। ও এগিয়ে এসে নিদ্রার চাচির হাত ধরে ফেলল। নিদ্রা তাকিয়ে সেটা দেখে সরে দাঁড়ালো।
নিদ্রার চাচি তা দেখে অপমানে চেঁচিয়ে উঠলো,
‘ এই ছেলে তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার হাত ধরছ।’
‘আপনি নিদ্রার গায়ে হাত তুলছেন কেন?’
‘নিদ্রা আমাদের বাড়ির মেয়ে আমাদের সম্মান নষ্ট করেছে ও একা একা বিয়ে করে। আর নিদ্রাকে কি করে দোষ দেই। এই বাড়ির ছেলে ওকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে। দেখেছে ধনী বাড়ির মেয়ে অনেক টাকা সম্পত্তির মালিক। সেই মেয়েকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে সম্পত্তির লোভে বুঝি বুঝি সব বুঝি।সেই ছেলে আর ছেলের পরিবার আমাদের বাড়ির মেয়েকে টাকার লোভে হাত করে নিয়েছে। এই বিয়ে তো আমরা কিছুতেই মানবোনা কোথায় ওর স্বামী?’
অভ্র নিদ্রার চাচির কথা শুনে ওর মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ওকে আর ওর পরিবারকে নিয়ে বাজে কথা শুনে আর কপালের ফুলে উঠলো। ওর রেগে একবার নিদ্রার দিকে তাকালো। নিদ্রা অসহায় মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
‘মুখ সামলে কথা বলুন! আপনারা আসার পর থেকে, যা নয় তাই বলে অপমান করছেন। কিন্তু আমরা নেহাত ভদ্রলোক বলে আপনাদের সাথে বাজে বিহেব করছি না। আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি বিয়েটা কিভাবে হয়েছে। কিন্তু আপনারা আমাদের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ইচ্ছেমতো আমাদের অপমান করে যাচ্ছেন।’
‘অপমান করবো না কেন? একটা মেয়েকে বিয়ের পিড়িতে বসে দিলে তার পরিবারের খোঁজ না নিয়ে। তাদের সিদ্ধান্ত জানার প্রয়োজন বোধ করলে না তোমরা। এতেই তো বোঝা যায় তোমরা কতটা লোভী হতে পারো। পরিবারের সাথে কথা বললে এই বিয়ে হত না তোমরা ভালো করে জানো। এজন্য সেই সুযোগ দাওনি।’
নিদ্রা এবার মুখ খুললো, ‘উনারা আমাকে পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করেছিল। আমি বলেছি আমার কেউ নাই।’
নিদ্রার কথা শুনে আর চাচা বলল, ‘কি বললি তোর কেউ নাই। তাহলে আমরা কে তাহলে? ছোট থেকে এত কষ্ট করে মানুষ করলাম আমরা। আর এখন আমরা তোর কেউ না।’
পাশ থেকে নিদ্রার চাচি বললো, ‘দেখেছো কেমন স্বার্থপর মেয়ে! মেয়ের মত মানুষ করলাম। আর এখন বলছে আমরা তার কেউ না। রক্ত কথা বলে ও তো আমাদের রক্তের কেউ না তার প্রমাণ করছে।’
‘হ্যাঁ তাইতো দেখছি কেমন ফাজিল মেয়ে!’
নিদ্রার চাচি নিদ্রার হাত ধরে বলল, ‘এইভাবে কষ্ট দিলি তোকে নিজের মেয়ে ভাবতাম!’
‘কেমন নিজের মেয়ে ভাবতে তাতো আমি জানি। তাই এখন আর নাটক করে লাভ নেই।’
‘দেখেছ কেমন চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলে। আমরা নাকি নাটক করছি। এই নিদ্রা তোর বিয়ে আমরা আরিয়ানের সাথে ঠিক করে রেখেছিলাম সেইটা তো তুই জানতি।’
‘হ্যাঁ জানতাম।’
‘জানা সত্বেও তো এই বিয়ে কিভাবে করলি?’
‘আরিয়ান ভাইকে শুধুই আমি ভাই ভাবি তাকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা। সেটা আমি হাজার বার তোমাদের বলেছি।কিন্তু তোমরা শোনো নাই।’
‘এখন নিশ্চয়ই আমাদের ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবি এখন তো বর পেয়েছিস, সংসার পেয়েছিস। আমাদের আর কি দরকার এতদিন কেউ ছিলনা আমাদের দরকার ছিল। এই ছিল তোর মনে শেষ পর্যন্ত।’
‘আমি কি তোমাদের বলেছি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। তোমরা যেভাবে আছো সেভাবেই থাকো। আমার কিছু দরকার নাই ঐ সম্পত্তির জন্যই তো তোমরা আমার ওপর এত অত্যাচার করতে ওই সবকিছু আমি তোমাদের দিয়ে দিলাম। ওই সম্পত্তির জন্যই তো তোমরা এতসব কিছু করেছ।’
‘কি বললি আমরা সম্পত্তির জন্য তোর উপর অত্যাচার করেছি। হায় হায় এই মেয়ে কি মিথ্যা কথা বলে!’
নিদ্রার চাচা চাচি নিদ্রার কথা শুনে মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু সম্পত্তির সাথে তো এই মেয়েটাকেও চাই। না হলে ছেলে ওদের কি অবস্থা করবে আল্লাহ জানে। সে তো এখনো জানেই না নিদ্রার বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে নিদ্রা বলতে অজ্ঞান। এখন যদি জানতে পারে নিদ্রার বিয়ে হয়ে গেছে কি হবে এখান থেকে নিদ্রাকে যেভাবেই হোক নিয়ে যেতে হবে।
‘আমাদের সম্পত্তি চায়না আমাদের মেয়ে চায় তুই এই সংসারে সুখে থাকবি না। আমরা জানতে পেরেছি তোর হাজবেন্ড নাকি ওর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তাকে ভালোবাসে। তাকে নাকি কেউ কিডন্যাপ করেছে। এজন্য তাকে বাধ্য হয়ে তোকে বিয়ে করেছে সম্মানের জন্য। ওরা তোকে ব্যবহার করেছে। ওই মেয়ে ফিরে আসলে ওই ছেলে তোকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
অভ্র রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না এগিয়ে এসে বলল, ‘আমার আর আমার পরিবারের নামে আর একটা বাজে কথা বললে আমি আপনাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেব।’
‘ও তার মানে তুমি সেই হাসবেন্ড!!’
‘হ্যাঁ আমি। আর আমি নিদ্রার ফ্রেন্ড আগে তার পর হাজবেন্ড। এটা ঠিক বিয়েটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তাই বল ওকে আমি ছুঁড়ে ফেলব এভাবে বলতে পারেন না আপনি।’
‘কেন বলতে পারবো না তুমি তো তোমার ওই আগের পছন্দ করা মেয়েটা কে ভালোবাসো তার জন্য এখনো দৌড়াদৌড়ি করো। আমরা জানিনা বুঝেছ কিছু। ওই মেয়ে ফিরে আসলে তুমি নিদ্রা কে ছুড়ে ফেলবে না তার কি গ্যারান্টি। আমরা খুব ভালো করে জানি তুমি নিদ্রাকে ভালোবাসো না শুধুই ফ্রেন্ড ভাবো। তো এখন নিদ্রা কে ব্যবহার করছ না।আর এইখানে আমাদের বাড়ির মেয়েকে আমরা এক মুহূর্ত রাখবো না। ও আমাদের যতই অপমান করুক না কেন। আমরা ওর আপনজন। আমরা ওর ভালো চাই। ওকে আজকে আমাদের সাথে বাড়ি নিয়ে যাব আর তোমাদের ডিভোর্স করিয়ে দেবো। এই পুতুল বিয়েতে আমাদের মেয়েকে আমরা রাখবোই না।’
অভ্র কি বলে বুঝতে পারছে না।এটাতো ঠিকই ও নিদ্রাকে ভালোবাসে না কিন্তু বন্ধু হিসেবে খুব ভালোবাসে। পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব ওদের। অভ্র খুব ভালো করে জানে নিদ্রার চাচা চাচি কতটা খারাপ। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ও বাসা নিয়ে থাকে একা আলাদা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখে না বললেই হয়।তারা নিদ্রার সাথে যোগাযোগ করে শুধু ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর সময় কারণ কোন ব্যাংকে নিদ্রা কে ছাড়া টাকা দেবে না। ওর বাবা সেই ব্যবস্থাই করে গেছে মেয়ের জন্য। নিদ্রার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সব সম্পত্তি এতিমখানায় নামে চলে যাবে। এজন্য নিদ্রার কোনো ক্ষতি তারা চায় না। তারা চায় নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে। ছেলেটাও খুব একটা সুবিধাজনক না। নিদ্রা তাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারেনা। বিয়ে তো দূরে থাক। এখন ও কি করবে ও তো বর্ষাকে ভালোবাসে। নিদ্রা কে ও ডিভোর্স দেবেই। মহিলা তো ঠিকই বলেছে আমরা তো নিদ্রাকে শুধু ব্যবহার করছি। কিন্তু এখন যদি তাদের সাথে নিদ্রা কে যেতে দে তাহলে ওর সাথে অমানবিক অত্যাচার করবে আর জোর করে আর সেই ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারে। আমাকেই নিদ্রা কে বাঁচাতে হবে।
‘এইটা ঠিক আমি বর্ষাকে ভালবাসতাম। কিন্তু নিদ্রা এখন আমার স্ত্রী। ওর সমস্ত দায়িত্ব আমার আর উপর সম্পন্ন অধিকার আমার আছে। তাই ওকে আপনি এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না।’
‘তুমি বললেই হলো নাকি! আমরা আমাদের বাড়ির মেয়েকে নিয়ে যাবই।আজ বাদে কাল তুমি ওকে যে ছেড়ে দেবে সেটা আমরা ভালো করেই জানি তাই এখন এত ঢং করে লাভ নাই।’
নিদ্রা এখন আর কথা বলতে পারছনা। কিছু বলার ভাষা নাই ওর। অভ্র যে ওকে ডিভোর্স দিবে সেটা জানে। তাই চাচীর কথা এখন ওর ভালো লাগছে এখানে থেকে কি হবে? অভ্র তো ওকে সত্যিই ডিভোর্স দেবে। চেষ্টা করছে অভ্রর মনে জায়গা করতে কিন্তু আজ দশ দিন ধরে এই বাসায় আছে এক মুহুর্ত ও অভ্র ওকে সেভাবে দেখেনি।সব সময় বর্ষা কে ভাবে ওর দিকে ফিরে ও তাকায় না। চাচির কথায় তো ফলবে কিছুদিন পর ডিভোর্সী হয়ে বের হতে হবে ওকে।
অভ্র ও নিশ্চুপ এখন।
ওর চোখে জল চিকচিক করছে। কান্না গলায় এসে ঠেকেছে। পরিবারের সবাই অনেক কথা বলছে চাচার সাথে চাচি অভ্রকে কি যেন বলছে অভ্র নিশ্চুপ। তখন অভ্রের মা এসে ছেলের হাত টেনে আড়ালে নিয়ে কি যেন বলতে লাগলো। অভ্র নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। নিদ্রা তাকিয়ে আছে সেদিকে।ওর সামনে দাঁড়িয়ে চাচি কি যেন বলছে ওর কানে যাচ্ছে না কথাগুলো। ও এক দৃষ্টিতে অভ্র আর অভ্রর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কি কথা বলছে তিনি হঠাৎ অভ্ররের এক হাত নিজের মাথায় নিয়ে কি জানি বলে ঠেলে আবার সবার সামনে নিয়ে এলো।
এবার অভ্র যা বলল তা শুনে আমি আমাকে চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম। এই সব কিছুর পেছনে যে আমার শাশুড়ি মার হাত আছে তা আমি ঠিক ধরতে পারলাম। তার মুখে প্রশান্তির হাসি। অভ্র মুখ কালো করে বললো,
‘ আমি নিদ্রাকে কখনো ডিভোর্স দিব না। নিদ্রা কে আমি স্ত্রীর মর্যাদা দেবো। আমি দ্বিতীয় বিয়েও করব না। আপনাদের সামনেই বলছি। তাই এখন আর আমার স্ত্রীকে নেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।’
বলেই অভ্র গটগট করে চলে গেলো। নিদ্রার চাচা- চাচি হা করে অভ্রের কথা গিললো। এসব কি শুনছে এই ছেলেতো পাল্টি খেলো।
এখন নিজের ছেলেকে বুঝাবে কি করে!
তাদের দুজনের মুখে চিন্তার ছাপ পড়ল। নিদ্রা নিজের শাশুড়ি মাকে জড়িয়ে ধরলো খুশিতে। এত খুশি বাবা মা মারা যাবার পর প্রথম হলো।
‘মা আপনি না থাকলে এটা কখনো সম্ভব ছিল না। থ্যাংক ইউ সো মাচ। আই লাভ ইউ সো মাচ মাদার।’
#চলবে……..