তুমি_যে_আমার🥀 Writer_Nondini_Nila Part_18

তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_18

‘আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! সত্যি করে বলুন!’

‘আর একটা কথা বললে, এখানে একটা আছাড় মারবো কিন্তু! বাচাল মেয়ে এতো কথা বলতে পারে।’

‘কি আপনি আমাকে বাচাল বললেন?’

‘বাচাল কে বাচাল বলবা না তো কি বলবো!’

‘আমাকে চোখ বেঁধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন মেরে ফেলার প্লান করেছেন নাকি? বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাকে মারার প্ল্যান করছেন।এখন আবার বাঁচাল বলছেন!’

তূর্য রেগে নিজের হাতের বাঁধন আলগা করে দিলো। বর্ষা গলা জরীয়ে রাখা হাত সরিয়ে নিয়েছিল। এবার তূর্যের হাতের বাধন আগলা করায় পড়ে যেতে নিয়ে ভয় আর জাপ্টে ধরে গলা। আর ভয়ার্ত গলায় বলে,

‘আপনি তো খুব বাজে মানুষ। আমাকে সত্যি ফেলে দিতে চাইছেন!আমি কি আপনার কোলে উঠতে চেয়েছি! তাহলে কেন কোলে নিয়েছেন! আর এখন আবার ফেলে দিতে চাইছেন!’

‘তোমার মুখটা অফ রাখ। না হলে ফেলেই দেবো।’

ভয়ে বর্ষা আর কথা বললো না। ছাদে এনে তূর্য ওকে কোলে থেকে নামালো। বর্ষা ছাড়া পেতেই নিজের চোখের বাধন খুলে দিল তাড়াতাড়ি করে।
চোখ খুলে মৃদু আলোয় বুঝতে পারল ওরা ছাদে আছে। ও সবার আগে আকাশের দিকে তাকাল। খোলা আকাশ! কতদিন পর খোলা আকাশের নিচে আসলো! ওর আর তূর্য এর দিকে নজর নেই। তূর্য পাশের দোলনায় বসে ফোন টিপতে লাগলো। বর্ষা আবছা আলোতে পুরো ছাদ স্ক্যান করছে। খুবই বোরিং একটা ছাদ। একটা ফুল গাছের আকার বিকার ও নাই।ওর নিজের ছাদের কথা মনে পরে গেলো। ওর সমস্ত পছন্দের ফুল গাছ দিয়ে ভর্তি করে রেখেছে ছাদ‌। ছাদে গেলেই মনটা ভালো হয়ে যায় বর্ষার। ফুলের গন্ধে ম ম করে ওর ছাদ‌। এই ছাদে একটা ফুল নাই। খুব মিস করছে নিজের ছাদটাকে। কতদিন ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখা হয়না! কি অবস্থায় পড়ে আছে কে জানে! ওর ফুল গাছে ও ছাড়া কারো হাত দেওয়া নিষেধ।
মন খারাপ হয়ে গেল বর্ষার। ছাদের এক পাশে চলে এলো হাঁটতে হাঁটতে। সেখানে শুধু কয়েকটা ক্যাকটাস গাছ দেখতে পেলাম।বর্ষা রেলিং এ হাত রেখে নিচে তাকালো। জঙ্গলে ঘেরা। মনে হচ্ছে একটা ভূতুড়ে বাড়িতে আছে! চারপাশে শুধু জঙ্গল! এমন জায়গায় কেউ বাড়ি করে। ও ভয় পেয়ে গেলো হালকা। তূর্য এর থেকে অনেক টা দূর চলে এসেছে বর্ষা। কিছুটা এগিয়ে এসে কাছাকাছি হয়ে দাঁড়ালো। মুক্ত আকাশের দিকে তাকাল আজকে জোসনা নাই। কেমন যেন মেঘলা হয়ে আছে আকাশ। এখনতো বৃষ্টির সময় না। তবুও কেন জানি মনে হচ্ছে আজকে বৃষ্টি হবে খুব বৃষ্টি হবে! শাড়ি পরে হাঁটা কষ্টকর তাই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছে। আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে বর্ষা। হুট করে এক ফোঁটা পানি এসে ওর নাকের ওপর পরল। ও ফট করেই চোখ মেলে তাকালো।

বৃষ্টি হবে তাহলে আজ অনেকদিন পর এই খোলা আকাশের নিচে এসেছে। আর আজকে বৃষ্টি এই বৃষ্টিতে আজ বর্ষা ভিজবে খুব করে বুঝবে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি ওর জন্য আসছে। ওর এই কষ্টের মাঝে বৃষ্টির ফোঁটা কিছুটা সুখ নিয়ে আসছে।বৃষ্টি মানুষকে বরাবরে আনন্দ দেয় বর্ষার বৃষ্টি খুব একটা পছন্দ না হলে আজকে বৃষ্টির আগমনকে আনন্দ দিচ্ছে ওকে। বৃষ্টি ওর পছন্দ না হ‌ওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে জামাকাপড় ভিজে নষ্ট করে দেয়। এমন অনেক সময় গেছে বৃষ্টির জন্য ওর স্পেশাল দিন তাতে স্পেশাল জায়গায় যেতে পারেনি ঘরে বসে কাটাতে হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে ওর সাজ নষ্ট হয়ে গেছে। সাজগোজ নিয়ে খুব সিরিয়াস বর্ষা। কোথাও গেলে অনেকটা সময় ধরে সাজতে বসে যায়। আর তখন যদি রাস্তায় বৃষ্টি হয় তো ও এক পা বাইরে রাখতে পারে না গাড়ি থেকে। জামাকাপড় ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে যায় আর বিচ্ছিরি একটা কাণ্ড ঘটে।
এই একটা কারনে ওর বৃষ্টি পছন্দ না অসময়ে বৃষ্টি এসে ওকে বিপদে ফেলে।

হাতে টান পরায় চমকে উঠে। তূর্য বৃষ্টি নামতে দেখে দৌড়ে এসে বর্ষার হাত ধরে টেনে সাইটে নিয়ে আসে। কিছু বলে উঠতে পারেনি বর্ষা। এভাবে টেনে আনায় ওর কুচি খুলে গেছে। এতে বর্ষা রেগে সাথে আবার আজ বৃষ্টি তে ভিজতে ইচ্ছে হয়েছে ওর।আর লোকটা কিনা ওকে নিয়ে এলো।
বর্ষা রেগে হাত ঝামটা দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো।

‘আপনি আমাকে টেনে আনলেন কেন এভাবে?’

‘টেনে আনব না তো কি করব বৃষ্টি হচ্ছে ডাকি শোনো না কেন? এজন্যইতো টেনে আনতে হল!’

‘আমি কি বলেছি আমাকে বৃষ্টির মাঝখান থেকে টেনে আনুন। আমিতো বৃষ্টিতে ভেজার জন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম।আপনার বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে নাই আপনি এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন আমাকে ডাক দিতে গেলেন কেন?’

‘হোয়াট এ রাতের বেলা তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে!’

‘হ্যাঁ ভিজবো তো কি হবে!আর আপনার এই টানাটানির জন্য আমার শাড়ি কি হলো? আপনার জন্য আমার শাড়ি খুলে গেছে! কতো সাবধানে শাড়িটা সামলে রেখেছিলাম আর আপনি পুরো লন্ডভন্ড করে দিলেন সহ্য।’

অন্ধকারে শাড়ির কুচি তুলে অন্যদিকে ফিরে বর্ষা শাড়ি গুজে নিল উল্টাপাল্টা করেই।
তারপর আবার ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

পেছন থেকে তুর্য বলে উঠলো, ‘আবার কোথায় যাচ্ছ?’

‘বললাম না আমি বৃষ্টিতে ভিজবো আর আপনি আমাকে বাধা দিবেন না। কারন আপনি বলেছেন আমাকে কিছু সময় নিজের মতো কাটাতে দিবেন।’

তূর্য আর কিছু বলতে পারলো না বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। বর্ষা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে ছাদের মাঝখানে গিয়ে দুই হাত মেলে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করছে, লাফালাফি করছে। চিৎকার করছে। বৃষ্টিকে এভাবে অনুভব করা হয়নি কখনো বর্ষার। আজ এই বৃষ্টির পানিতে ভিজে কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত কষ্ট ভুলে গেছে। প্রাণ খুলে হাসছে বর্ষা। বৃষ্টির টিপটপ শব্দ আর সাথে বর্ষা প্রাণখোলা হাসির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে ছাদ। বর্ষা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। তূর্য পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে‌। বৃষ্টির মধ্যে একটু পর পর অন্ধকার পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠছে ছোট ছোট বাজ পরায়। আর তাতে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে বর্ষা শরীরের প্রতিটা ভাঁজ। ওর শরীরে পাতলা শাড়ি বৃষ্টির পানিতে ভিজে শরীর এর সাথে লেপ্টে আছে। আলোকিত হতেই তা স্পষ্ট ভাবে তূর্য এর চোখে ধরা দিচ্ছে। ঘোর লাগা চোখে তূর্য তাকিয়ে আছে। বর্ষাকে এভাবে দেখে তূর্য ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। ঘোরের মধ্যে ও মৃদু পায়ে হেঁটে বর্ষার একদম নিকটে চলে আসে।

কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে বর্ষা চমকে উঠে। চোখ মেলে নিজের খুব কাছে তূর্য কে দেখে। তূর্য ওর দিকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বর্ষা তা দেখে ঢোক গিলে। ওর বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। তূর্য ওর এক হাত বর্ষার শাড়ি ভেদ করে কোমর ধরেছে। আরেকহাত বর্ষার গালে।

‘ক ক কি করছেন? তোতলাতে তোতলাতে বললো।

তূর্য ওর আঙুল বর্ষার পাতলা ভেজা ঠোঁটের উপর রেখে বলে, হুশশ

বর্ষা চুপ করে যায়। নিজের ঠোঁটের ওপর তূর্য এর হাতের স্পর্শে ওর সারা শরীর কেঁপে ওঠে। তূর্য বর্ষার ঠোট থেকে হাত গলা পর্যন্ত টেনে নামিয়ে আনে। বর্ষা শক্ত করে ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার ঠোঁট কামড়ানো দেখে তূর্য এক সেকেন্ড সময় নেয় না বর্ষার অধরে নিজের অধর নিতে।

বর্ষা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্তব্ধ হয়ে। তূর্য ওর ঠোটে একের পর এক চুমু খেয়েই যাচ্ছে। না কিছু বলতে পারছেন না সইতে পারছে। তূর্য বর্ষার থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে বর্ষার ঠোট কামড়ে ধরে। ব্যথায় বর্ষা চোখ কুঁচকে ফেলে। আর বাধ্য হয়ে ওকে ও সাড়া দিতে হয়। বৃষ্টির মধ্যে দুজন দুজনের অনেক টা কাছে চলে আসে। তূর্য ওর ঠোট থেকে সরে আসতেই বর্ষা ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। আর হাঁপাতে লাগে।

তূর্য এগিয়ে এসে বলে, ‘ নিজের প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে গেছো নাকি? তোমার নিজে থেকে কাছে আসার কথা ছিল।’

‘আমি কিছুই বলিনি!’

‘তাহলে সরিয়ে দিলে কেন?’

‘আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।এতো সময় কেউ নেয়।’

‘হোয়াট।’

‘হুম’

তূর্য মাথায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার এখন শীত লাগছে। ও জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে বৃষ্টিতে আছে।
তূর্য ওর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো ও বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে।

‘এখন কাঁপছো কেন ভেজার শখ মিটে গেছে নাকি?’

বর্ষা কিছু বলল না। তূর্য ও কিছু আর কিছু না বলে ভেজা শার্টটা ঝুঁকিয়ে নিলো। বৃষ্টির বেগ বেড়ে চলেছে। বর্ষা দিকে তাকিয়ে থাকা যাচ্ছে না খুব বাজেভাবে আকর্ষণ করছে মেয়েটা ওকে। ও আর এক মুহূর্ত নষ্ট না করে। এগিয়ে এসে বর্ষাকে কোলে তুলে হাঁটা দিলো রুমের দিকে।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here