তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_19
দুই দিন কারো সাথে অভ্র কথা বলল না। নিদ্রার
ও আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যায় নি। ওকে ওর মতোই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু আর না।আমি কি এতটাই খারাপ দেখতে, এতটাই অযোগ্য যে ওর আমাকে মেনে নিতে হবে বলে সবার উপরে এভাবে অভিমান করে আছে। আজকে বাসায় এলে ওর আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। কিন্তু এগারোটা পর্যন্ত বসে থেকে ও অভ্র আজ বাসায় ফিরল না। নিদ্রা ওর নাম্বারে কল দিলো। প্রথমবার ফোন রিসিভ না করলে ও। দ্বিতীয় বার ফোন রিসিভ করে তাড়াহুড়া করে একটা কথা বলে ফোন রেখে দিল।
‘আমার আজ বাসায় ফেরা হবেনা চিন্তা করিস না ঘুমিয়ে পড়।’
নিদ্রা কে কিছু বলার সুযোগ দিল না। নিদ্রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পরল।
ভোর তিনটায় অভ্র বাসায় ফিরলো। নিজের কাছের এক্সট্রা চাবি দিয়ে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিদ্রার আরেক পাশেই ঘুমিয়ে পড়ল। ক্লান্তিতে ও খেয়াল করল না এক পাশে নিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে। না হলে সোফায় ঘুমাতো। রাতে একটা অপারেশন ছিল। ইমার্জেন্সি পেশেন্ট। এজন্য আজকে রাতে আস্তে লেট হয়েছে। আগে থেকে জানা ছিল না এজন্য বাসায় জানিয়ে যাওয়া হয় নি।
বিছানায় মাথা রাখতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল অভ্র। শত রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিলো ওর চোখে। আজানের শব্দে নিদ্রার ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে তাকানোর আগে নিজের কানের কাছে একটা শব্দ পেল। ওর কানের টিপটিপ শব্দ করছে। সাথে যেন কেউ ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আছে। ফট করে চোখ মেলে তাকায়। মাথা উঁচু করে ও চমকে ওঠে। অভ্র ওকে দুই হাতের বাঁধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। একটা শীতল হাওয়ার সারা শরীরে বয়ে যায়। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। এতোক্ষণ অভ্রর বুকের ধুকপুক ওর কানে লাগছিলো।
এসব কি হচ্ছে অভ্র বাসায় আসলো কখন। আর বিছানায় ঘুমালো কখন! ও তো বাসায় আসবে না বলেছিলো।
শত চিন্তা করেও কোন উত্তর খুঁজে পেলো না। অভ্রর ভারী নিঃশ্বাস ওর চোখে পরছে এখন।এতো কাছ থেকে কখনো ওকে দেখবে কল্পনা করেনি।
যেভাবেই হোক এই মুহূর্তটা ও নষ্ট করতে চায়না। পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে অভ্রর দিকে। কি কিউট লাগছে দেখতে। নিদ্রা অভ্রর গালে চুমু দেয় আস্তে করে। ও আবার ওর বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভ্রকে। এখন উঠতেই হবে নামাজের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু ওর উঠতে মন চাইছে না। তবুও খুব সাবধানে নিদ্রা অভ্রর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে যায়। ফ্রেশ হয়ে হয়ে অজু করে নামাজ পড়ে নেয়।
নামাজ শেষ করে। নিদ্রা বিছানায় হাটু ভেঙে অভ্রর পাশে বসে ওর মুখে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
‘ তুই আমাকে কেন ভালোবাসিস না রে অভ্র। তোকে ছাড়া আমি এক মুহুর্তও থাকতে পারবো না। কিন্তু আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।তুই যদি আমাকে মেনে না নিস তাহলে আমি এবার তোর থেকে চলে যাব। বেহায়ার মত তোর কাছে পড়ে থাকবো না। আমার জন্য তুই পরিবারের সবার সাথে মান অভিমান করবি এটা আমি মেনে নিব না।’
নিদ্রার চোখ ছলছল করে উঠলো। ছল ছল চোখের
অভ্রর ঘুমন্ত মুখটা দিকে তাকিয়ে আছে।
শুক্রবার হওয়ায় আজকে শাশুড়ি মার সাথে রান্নাঘরে এসেছে নিদ্রা।
চিংড়ি মাছটা নিদ্রা রান্না করলো। অভ্রর মা সাহায্য করছে। রান্না শেষে সব খাবার ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে রাখলো নিদ্রা কাজের লোকের সাহায্যে।
একে একে সবাই খাবার টেবিলে এসে ভীড় জমালো। অভ্রর বড় ভাইয়ের বউ। আমার আর অভ্রর বিয়ে পরদিন ই বাপেরবাড়ি চলে গেছিল সে কাল এসেছে। এখন বাড়িতে একজন বাচ্চা আছে। আমার কাছে এসে ছোট আম্মু বলে চেঁচিয়ে উঠে। নাতাশা ভাবী রান্নাঘরে একদম যায় না গেলে নাকি তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।
খাবার টেবিলে আমার শশুর মশাই অভ্রর হাতে একটা কাজ এগিয়ে দিলেন। অভ্র কাগজটার দিকে তাকিয়ে অবাক সুরে বলল,
‘এইসব কি আব্বু?’
‘হানিমুন টিকেট!’
‘এটা দিয়ে কি করব?’
‘কি করে মানুষ হানিমুনের টিকেট দিয়ে! তোদের বিয়ে হয়েছে কতদিন হয়ে গেলো। বাসায় আছিস কোথাও বেড়াতে যাওয়া হলো না। তাই আমাদের সবার পক্ষ থেকে এটা তোদের জন্য গিফট।’
‘হোয়াট আমি কোথাও যেতে পারবো না!আর এই বিয়েটা আমি যেহেতু মানি না তাহলে হানিমুনে যাওয়ার প্রশ্ন কেন আসছে?’
‘কি বললি তুই?’পাশ থেকে অভ্রর মা চেচিয়ে উঠলো।
‘আম্মু আমি…
‘কালকে তুই আমার মাথা ছুঁয়ে কি প্রতিজ্ঞা করেছিস! তারপরে তুই এই কথা কিভাবে বললি! বিয়েটা কি তোর ছেলেখেলা মনে হয়।’
‘কিন্তু আম্মু আমি তো বর্ষা….
‘ওই মেয়ের কথা আমি শুনতে চাইনা। কোথায় না কোথায় আছে! এখন অব্দি বাড়ি আসে নাই। কে না কে তুলে নিয়ে গেছে। সেই মেয়ের জন্য তুই বসে আছিস। মেয়েটার ভালো চাই। মেয়ে যত তাড়াতাড়ি ফিরে আসুক বাসায়। তাই বলে তাকে আমি আমার ঘরের বউ করব না। তোর বিয়ে হয়ে গেছে। তাই আমার বাড়ির বউ এক মাত্র নিদ্রাই থাকবে। এটা আমার শেষ কথা।’
অভ্র চুপ করে বসে আছে খাবার খাচ্ছে না। নিদ্রা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্র খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল। কারো খাবারের ভালো মতো হলো না। আমার জন্য এই পরিবারটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সবসময় অশান্তি লেগেই আছে। নিজের সুখের জন্য আমি অভ্রর ঘাড়ে জোর করে চেপে বসে থাকতে পারিনা।
সবাই চলে গেছে শুধু বসে আছে বড় ভাবি নাতাশা। তিনি খুব আয়েশি ভঙ্গিতে খাবার খেয়ে যাচ্ছে। এই সবে তার তোয়াক্কা নাই বললেই চলে। নিদ্রা হাতের ওল্টা পিঠ দিয়ে চোখ মুছে রুমে চলে এলো। রুমে এসে অভ্রর সামনাসামনি গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,
‘তোর সাথে আমার কিছু ইমপর্টেন্ট কথা আছে!’
‘হ্যাঁ বল!’
অভ্র মাথা তুলে কথাটা বললো।
‘ডিভোর্স লেটার তাড়াতাড়ি তৈরি কর আমি আজকে চলে যাব। ওই বাসায়।ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিস আমি সাইন করে দেবো। সারাদিনের এসব ঝামেলা আর ভাল লাগেনা। আমার জন্য তোর জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেলো।’
‘এখানে তোর তো কোন দোষ নাই। আমার পরিবারই তো তোর সাথে আমার বিয়ে টা দিলো জোর করে। আর এখন আমাদের এই মিথ্যে বিয়েটাকে সত্যি করতে বলছে। আমি কিছুতেই ওদের বুঝাতে পারছি না। আমি যদি মানার চেষ্টা করি ও তুই তো আমাকে মানতে পারবি না। তুই তো শুধু আমাকে বন্ধু ভাবিস। আমার পরিবারের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।’
‘আচ্ছা অভ্র তোকে একটা কথা বলি।’
‘বল।’
‘তুই কি বর্ষা কে ভুলে আমাকে তোর স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারিস না। বন্ধু বলে কি আমরা স্বামী-স্ত্রী হতে পারি না। আমরা কি সংসার করতে পারিনা! দুই বন্ধু কি হাসবেন্ড ওয়াইফ হয়ে তাদের সংসার সাজাতে পারে না।’
‘কি সব বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছিনা!’
‘কিছু না। যে বোঝেনা তাকে আর জোর করে বোঝানোর চেষ্টা না করাটাই ভালো। তুই আমার উপর খুব বিরক্ত হয়ে গেছিস তাই না?’
‘তোর উপর বিরক্ত হব কেন?’
‘হয়েছিসই তো। দুইদিন কার সাথে কথা বললি না। এমনকি আমার সাথেও কথা বললি না।’
‘আমার মন মেজাজ খারাপ ছিল! তাই কারো সাথে কথা বলিনি! মা কিরকম শুরু করেছে দেখতে তো পাচ্ছি।’
‘হ্যাঁ।’
‘তুই আজকে সত্যি চলে যাবি?’
‘যেতে তো হবেই। আমি এখানে থাকলে আরো ঝামেলা হবে। সবাই খালি তোকে আমায় মেনে নিতে বলবে। আর তোর রাগ হবে।তার থেকে ভালো আমি চলে যাই তুই সবাইকে বলে দিস আমি এই বিয়েটা থেকে মুক্তি চাই। তাহলে আর তোকে কেউ জোর করতে পারবে না।বর্ষা ফিরে আসলে তুই তোর ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সুখে থাকিস।’
‘তোর পরিবার ও তো জেনে গেছে বিয়ের কথাটা। তোর ঝামেলা হবে নাতো।’
‘কি আর হবে। তারা তো আমাকে নিয়ে যেতে এসেছিল। ফিরে গিয়ে বলব তাদের কথা রাখতে চলে এসেছি।’
‘এমনিতেও তারা তাকে সহ্য করতে পারে না। যদি তোর ওপর অত্যাচার করে।’
‘করলে করবে তাতে তোর কি? সেসব আমি বুঝি নেব তোর আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।’
নিদ্রা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আর কখনো অভ্রর সাথে যোগাযোগ করবেনা যোগাযোগের পথ রাখবে না। ওকে দেখে আর নিজের ভেতরে যন্ত্রণাটা বাড়াতে চায় না। অভ্র মাকে যেভাবেই হোক বোঝাতে হবে।তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছে মেয়ের মত ভালবেসেছে কিন্তু আমি তার মেয়ে হয়ে থাকতে পারলাম না আমার কপাল খারাপ।
‘শোন!’
‘বল কি বলবি?”
‘বলি তুই আজকে যাইস না। আজ থেকে যা কালকে আমি তোকে ড্রপ করে দিয়ে আসবো।’
‘তার কোন প্রয়োজন নাই। আমি একা যেতে পারবো ?’
‘এভাবে কথা বলছিস কেন? তুই কি আমার উপর রেগে আছিস?’
‘রেগে নাই!আমি একাই যেতে পারব! তোর শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না।’
‘তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোকে আমি কতটা ভালোবাসি তুই তো জানিস। আমি তোকে নিজে পৌঁছে দিয়ে না আসলে আমার খুব চিন্তা হবে প্লিজ দোস্ত।’
‘তুই কি সত্যিই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড?’
‘কি বলছিস?’
‘এমনি বললাম আসলে বেস্ট ফ্রেন্ড তো বেস্ট ফ্রেন্ডই মনের খবর জানে তুই আমার মনের সব খবর জানিস?’
‘মনের খবর বলতে?’
‘কিছু না।’
‘মনের খবর বলতে কি জানিনা আমি বল আমাকে।’
অভ্র এগিয়ে এসে নিদ্রার দুই কাঁধে হাত রেখে প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘এমনি মজা করলাম সব কথা সিরিয়াসলি কেন নিস?’
‘তোর কথাটা আমার একদম মজা মনে হয় নি।’
‘তাহলে কি মনে হয়েছে?’
‘মনে হয়েছে সত্যি তোর মনের কিছু কথা আমি জানিনা! বল না কি আমি জানিনা আমি তোর মনের কথা। আমি তোর সাথে সব শেয়ার করি! তাহলে তুই কেন লুকিয়ে রাখছিস?’
‘আরে আমি মজা করছি আমি ও তো সব বলি।(সরি তোকে মিথ্যে বলার জন্য।)’
‘আচ্ছা মজা অনেক হয়েছে। আজকে তুই যাচ্ছিস না এটাই ফাইনাল। আমি তাকে কালকে দিয়ে আসবো।’
‘কিন্তু….
‘এটা আমার শেষ কথা আর তুই আমার সাথে কথায় পেরে উঠবিনা ভাল করেই জানিস।’
‘হুম।’
#চলবে…..