তুমি_যে_আমার🥀 Writer_Nondini_Nila Part_4

তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_4

অভ্র ও নিদ্রা বিছানায় দুপাশে বসে দুজনে দুই দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে। নিদ্রার পরনে মেরুন রঙের শাড়ি হাতে স্বর্নের বালা, কানে ঝুমকা, গলায় হাড়, মুখে ভারি সাজগোজ। একটু আগে ওদের বৌভাতের অনুষ্ঠান হয়েছে। কনে কিডন্যাপ হয়েছে কিন্তু বরের বিয়ে থামেনি। সেই আসরে নিদ্রা আর অভ্রর বিয়ে হয়েছে। নিদ্রা অভ্রর মায়ের কাছে থেকে ওই কথা শোনার পর নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে পাবার শেষ লোভটা সামলাতে পারেনি। কিন্তু অভ্র অনেক ভাবে চেষ্টা করে বিয়েটা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য কিন্তু সবার এক কথা।
মানসম্মানের জন্য হলেও এই বিয়ে করতেই হবে।
জোর করে বিয়ে দিয়েই ছাড়ে।

অভ্র ঘাড় ঘুরিয়ে নিদ্রার পিঠের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ এসব কি হয়ে গেলো নিদ্রা!’

নিদ্রা অভ্রের কথা শুনে ওর দিকে তাকালো।

অভ্র আবার বললো, ‘ সবাই মিলে তোকে আর আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলো। জানি তুই সবার কথা ফেলতে পারিস নি তাই বাধ্য হয়ে করেছিস বিয়েটা।আমরা দুজন দুজনকে শুধু বন্ধু ভাবি এর থেকে বেশী কিছু না। আর আমি শুধু বর্ষাকেই ভালোবাসি। মাঝ খানে তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলো সবাই। আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি রে। সবাই নিজেদের কথা ভেবে তোকে ব্যবহার করলো। কিন্তু আমি এই সম্পর্ক রাখবো না। আমরা ডিবোর্স নিয়ে আলাদা হয়ে যাবো খুব তারাতাড়ি।’

নিদ্রা অভ্রের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অভ্র সম্পূর্ণ কথা শেষ করে থামলো। নিদ্রা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ ডিবোর্স দিবি কবে?’

‘কাল আমি উকিলের সাথে কথা বলতে গেছিলাম তিনি বললো তিন মাসের আগে ডিবোর্স হবে না। আমি জানি তোর এখানে থাকতে কষ্ট হবে। তুই ও আমাকে শুধু বন্ধু ভাবিস। বিয়েতে এসে এমন ঘটনা তোর জন্যে ও কষ্টের। তুই চাইলে এখানে তিন মাস থাকতে পারিস আর না হলে চলে যেতে পারিস। আমি সময় মতো তোর কাছে ডিবোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবো।’

এতো সাধনার পর কাক্ষিত মানুষটিকে পেয়েও ছাড়তে হবে। নিদ্রা এটা করতে পারবে না। ভাগ্য নিজেই তোকে আমাকে এক সুতায় বেঁধে ফেলেছে আমি তা ছিন্ন করতে পারবো না।

‘কি‌ রে কি ভাবিস?’

নিদ্রা কিছু বললো না।
বিয়ের কথা ভালোবাসার মানুষটির মুখে অন্য কারো জন্য অসীম ভালোবাসা দেখে ও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলো ভাগ্য কে মেনে নিয়েছিলো।
এতো কিছুর পর নিদ্রা নিজের ভালোবাসা নিজের মনে কবর দিয়ে ফেলেছিলো। বিয়েটাতে জোর করে হাসি এনে সম্পূর্ণ কাজ করেছে। ভালোবাসার মানুষকে জোর করে পাওয়ার থেকে ও তার থেকে সরে এসে তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে মিলতে দেখে তৃপ্তির হাসি হাসতে চেয়েছিল। কিন্তু যখন সব ভন্ড হয়ে যায় আর নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়ার সুযোগ পায় শেষবারের মতো পায় কেউ। সেই লোভ সামলাতে পারেনা। নিদ্রা ও পারেনি। তাই তো তাকে নিজের করে নিয়েছে। এখন চায় তাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে নিজের কাছেই রাখতে কিন্তু একি সে তো তাকে জীবন থেকে তারানোর সব কিছু করে ফেলছে। কিন্তু যাই হোক অভ্র ওকে যত‌ই সরাতে চায় না কেন ও তত‌ই ওর ভালোবাসা দিয়ে আটকারে রাখার শেষ অবধি চেষ্টা চালিয়ে যাবে। আমার ভালোবাসা সত্যি হলে অভ্র ও আমাকে ভালোবাসবে ঠিক‌।

পৃথিবীতে নিদ্রার আপন বলতে কেউ নেই। ওকে ছোট বেলায় এতিম খানায় থেকে দত্তক এনেছিল এক ধনী পরিবার সেখানেই ও বেড়ে উঠে ভালোবাসায়। তারা ছিলো সন্তান হীন। এজন্য নিদ্রাকে তারা জান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো। কলেজ লাইফ থেকে অভ্রের সাথে বন্ধুত্ব। তারপর ভালো লাগা, ভালোবাসা। নিদ্রার পালিত বাবা তখন স্টক করে মারা যান। তখন নিদ্রা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। কষ্ট নেমে আসে জীবনে নিদ্রা ও তার পালিত মায়ের। অনেক টাকা পয়সা থাকায় টাকা- পয়সার কষ্ট হয় না। কিন্তু কষ্ট হয় দুটো মহিলার বেঁচে থাকা। পালিত বাবা মারা যাবার পর সব সম্পত্তি মালিক হয় মা। পালিত মা সব সম্পত্তি নিদ্রার নামে করে দেয়। আর পেপার্স এ লেখা থাকে যদি নিদ্রার কিছু হয় তাহলে সব সম্পত্তি এতিমখানার নামে চলে যাবে। কারণ তিনি মনে করেন তার স্বামীকে এই সম্পত্তির জন্য মারা হয়েছে। কোন স্টক এ তিনি মারা যাননি। উইল করার পনেরো দিনের মাথায় নিদ্রার পালিত মাও মারা যান। নিদ্রা দ্বিতীয় বারের মতো এতিম হয়ে যায়। তখন নিদ্রার চাচা পালিত বাবার বড় ভাই ভাবি ও তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ওই বিশাল বাড়িতে এসে হাজির হন‌। নিদ্রাকে একা বাসায় রাখবে না এখন থেকে তিনি এখানে থাকবেন ও সব কিছু দেখাশোনা করবেন। আসলে তিনি একজন খারাপ মানুষ সম্পত্তির প্রতি তার অনেক লোভ। এজন্য এক এক মিথ্যা কথা বলে বাসায় গাটি গেড়েছেন। নিদ্রা কে তো মারতে পারবে না তাই তাকে বাঁচিয়ে রেখে সব কিছু তিনি ভোগ করবে নিদ্রাকে সামনে রেখে তাই হচ্ছে।

নিদ্রা মেডিক্যাল এ ভর্তি হয়ে বাসা ছেড়ে হোস্টেলে চলে আসে। আর এখন ও বাসা ভাড়া করে থেকে হসপিটালে জব করে।‌ ও দিকে সব ভোগ করছে তার চাচারা।
নিদ্রার বিয়ের খবর ও তারা এখনো জানে না। জানলে তুলকালাম করে ফেলবে কারণ তারা যে চায় তার এক মাত্র ছেলের সাথে নিদ্রার বিয়ে দিতে চান। যাতে সব সম্পত্তি তাদের হয়ে যায়।

অভ্র নিদ্রার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ থাকবি নাকি চলে যাবি।তোর যেটা ইচ্ছে সেটাই করতে পারিস।একদম বিয়ে নিয়ে সিরিয়াস হ‌ওয়ার দরকার নেই। তুই চলে যেতে চাইলে আমি কাল তোকে দিয়ে আসবো।’

নিদ্রা বলে,’ তার দরকার নাই।’

অভ্র কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলে, ‘ মানে?’

‘ মানে আমি কোথাও যাচ্ছি না। যতদিন তোর ব‌উ আমি এখানে ই থাকবো। আমার সমস্যা নাই।’

‘সত্যি নিদ্রা এসব তুই বলছিস? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’

‘ বিশ্বাস না হ‌ওয়ার কি আছে?’

‘ না মানে আমি ভাবছিলাম তুই এই জোর করে বিয়েটা নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবি। চলে যাবি কিন্তু সব উল্টা হচ্ছে। তুই ঝামেলা করছিস না কেমন সব মেনে নিচ্ছিস যেন তুই এমনটাই চাইতি।’

অভ্রের কথা শুনে নিদ্রার হেঁচকি ওঠে যায়। ও তো সত্যি এসব চাইতো কিন্তু সেটা ও এতো সহজে শিকার করতে পারবে না অভ্রের কাছে।

অভ্র নিদ্রার হেঁচকি দেওয়া দেখে উঠে বোতল এনে ওকে দেয় পানি খাওয়ার জন্য। নিদ্রা পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। গরম লাগছে ওর এসব পাল্টানো দরকার।

অভ্র ওকে বাথরুমে যেতে দেখে হাত ধরে আটকে ফেলে। নিদ্রা চমকে হাতের দিকে তাকায় পেছনে ঘুরে। আবার চোখ সরিয়ে অভ্রের মুখের দিকে তাকায়,
ততক্ষণে অভ্র নিদ্রা টেনে কাছে এনে ওর বাম গালে নিজের ডান হাত রেখে বলে,

‘ তোকে খুব চিন্তিত লাগছে নিদ্রা। এসবের জন্য তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস তাইনা। আমার আর আমার পরিবারের সম্মান এর জন্য তোকে এসব করতে হলো মনের বিরুদ্ধে। আই এ্যাম সরি নিদ্রা‌।’

‘ এতো বার সরি বলার দরকার নাই।আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড আর ফ্রেন্ড হয়ে ফ্রেন্ডের জন্য এই টুকু করতে পারবো না।’

‘কিন্তু..

‘চুপ। একটা কথা বলবি?’

‘ কি কথা বল।

‘ আমি তো বর্ষার থেকে সুন্দর। আই মিন আমি বলতে চাইছি বর্ষার থেকে অনেক সুন্দর মেয়ে তোকে প্রপোজ করেছে। তারা অনেক ফর্সা তুই তাদের রেখে বর্ষাকে কেন ভালোবাসলি। ও তো এতোটা ফর্সা ও না। চুল ও পিঠ অবধি খুব লম্বা না। ওকে তোর কেন ভালো লাগলো?’

অভ্র নিদ্রার দিকে তাকিয়ে আছে এসব ও জিজ্ঞেস করবে ভাবেনি। নিদ্রা জিজ্ঞেস করেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগছে। অভ্র কিভাববে ওকে।

অভ্র হাসি টেনে বললো, ‘ জানি ওকে কেন আমি ভালোবেসেছি শুধু জানি ওকে আমি ভালোবাসি। আরেকটা কথা ভালোবাসা কিন্তু সৌন্দর্য দেখে হয় না যাকে ভালোবাসা যায় তার সব কিছু ভালোলাগে।’

নিদ্রার বুকে গিয়ে লাগলো অভ্রের কথা গুলো।ও অভ্রর হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে বাথরুমে চলে এলো।আর দরজা আটকে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল। ভালোবাসার মানুষটির মুখে থেকে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা কোন মেয়েই সহ্য করতে পারে না। নিদ্রার পারছে না।

অনেক ক্ষণ কান্না করলো। দরজা ধাক্কায় থেমে গেলো নিদ্রা। অভ্র ডাকছে তারাতাড়ি বের হতে বলেছে।

💮💮

বর্ষার বাবা নিবিড় আহমেদ পুলিশের সাথে রাগারাগী করছে ফোনে,

‘ হ্যালো ইন্সপেক্টর মাহফুজুর আপনি কি করছেন বলুন তো? দুইদিন চলে গেলো আপনি এখনো আমার মেয়ের কোন খোঁজ দিতে পারলেন না।’

ইন্সপেক্টর মাহফুজুর বললো, ‘ স্যার আমরা আমাদের সব টুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু কোন হদিস পাচ্ছি না। কিন্তু আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা আপনার মেয়েকে খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো।’

‘ আর কতো তাড়াতাড়ি পাবেন শুনি। এই দুইদিন চলে গেলো। ওর যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায়।’
চেঁচিয়ে উঠলো নিবিড় আহমেদ।

‘ শান্ত হোন প্লিজ। আপনি এটা বলুন আপনার কাছে কেউ মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করেছিলো?’

‘ নো।’

‘ তার মানে যিনি নিয়ে গেছে তার উদ্দেশ্য টাকা না। কিন্তু আপনি অপেক্ষা করুন আপনার হাতে তো এখনো কেস আছে এমন হতেই পারে তাদের কেউ এমন করেছে। আপনাকে খুব তারাতাড়ি তারা কল করবে আমার মন বলছে।’

নিবিড় আহমেদ রেগে গেলো আরো আর বললো,’ ইন্সপেক্টর আপনার মন কি বলছে তা আমি শুনতে চাইনি। আমি আমার মেয়েকে চাই আর কিছু না ওকে। যেভাবেই হোক আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।আমার কলিজা টুকরো আমার মেয়ে ওর কিছু হলে আমি আপনার চাকরি শেষ করতে দুই বার ভাববো না।’

আর কিছু না বলে নিবিড় আহমেদ কল কেটে দেয়। মেয়ের জন্য তার বুকের ভেতরটা যে কেমন হাহাকার করছে শুধু তিনি জানেন। কিন্তু শক্ত থাকছেন। এদিকে বর্ষার মাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে তিনি জাগলেই বর্ষা বলে চেঁচামেচি করে, পাগলামো করে। অনেক সাধনার পর এক সন্তান আল্লাহ তায়ালা তাদের দিয়েছে। জান দিয়ে ভালোবাসে। তার কিছু হলে তারা দুজনেই পাগল হয়ে যাবে।

ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানের কপালে ঘামে ভিজে গেছে টিস্যু দিয়ে তা মুছে নিচ্ছে। আল্লাহ কে ডাকছে যেন এই নিবিড় আহমেদের মেয়েটাকে সুস্থ অবস্থায় বাসায় ফেরত দিতে পারে। না হলে চাকরি উনি খেয়ে দিবেন। ভয় পাচ্ছেন উনি। এই কোন বিপদের কেস এসে পরলো।

এদিকে মেয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে নিবিড় আহমেদ।
আর এই সব কিছু দেখে একজন তৃপ্তির হাসি হাসছে। নিবিড় আহমেদ কে কাঁদতে দেখে সে আনন্দ পাচ্ছে। এমন করেই একদিন সেও কেঁদেছিলো এই লোকটার জন্য। আজ নিজের জায়গায় নিবিড় আহমেদ কে দেখছে। ঠোঁট কামড়ে হাসছে। আর বিরবির করে বলছে,

‘ আরো কতো কাঁদতে হবে। এখন‌ই সব কাঁদা শেষ করলে হয় নাকি। আরো অনেক কষ্ট অপেক্ষা করছে।’

#চলবে

(ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে যথার্থ মন্তব্য করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here