তুমি_যে_আমার🥀 Writer_Nondini_Nila Part_5

তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_5

‘এই মেয়ে শুনো, তোমার খিদে পেয়ে থাকলে চুপচাপ খাবার খেয়ে নাও। নাহলে না খেয়ে থাকো এখানে তোমাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য কেউ বসে নাই।’

‘আপনি আসলেই বাজে লোক একটা। দেখতে সুন্দর হলে কি হবে? মানুষটা আপনি একটুও ভালো না। এইভাবে ধমকে কথা বলছেন।’

বর্ষার কথা শুনে তূর্যের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। বেশি কথা ওর একদম পছন্দ করে না। এই পর্যন্ত এই খাইয়ে দেওয়ার কথা বলার জন্য। এই নিয়ে মেয়েটাকে কতোবার ধমক দিলো হিসেব নাই। কিন্তু মেয়েটা ভয় পেয়ে তাকিয়ে আবার কথা বলে যাচ্ছে। জ্বরের ঘোরে এসব করছে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না হলে এসব করার সাহস পেতো না। এই আধ বেহুঁশ মেয়েকে নিয়ে করবো কি এখন? কপালে হাত দিয়ে আছে তূর্য। নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। মেয়েটার কথা শুনে ওর মন চাইছে থাপ্পড়িয়ে গাল লাল করে দিতে।
বর্ষা বিরবির করছে। তারপর নিজেই হাত বারিয়ে প্লেট হাতে নিলো।খাবার খাওয়ার জন্য কিন্তু শরীর দুর্বল হ‌ওয়ার জন্য ওর হাত কাঁপছে একটু উঁচু করতেই যেন হাত ফসকে যাবে। তাই হলো পরে যাবে এমন সময় তূর্য তা দেখে কোন রকম ধরে ফেললো দ্রুত। খাবার সরিয়ে নিজেই বর্ষার পাশে বসলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
এই মেয়েকে সেবা যত্ন করার কোন ইচ্ছাই ওর নাই। তবুও এখন একে খাইয়ে দিতেই হবে না হলে এই মেয়ে আরো অসুস্থ হবে। এখন রাগ না দেখিয়ে আগে একে সুস্থ করতে হবে। দাঁতে দাঁত চেপে বর্ষার মুখে খাবার তুলে দিলো। বর্ষা তার মায়াবী চোখে তূর্যের দিকে তাকালো। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। কথা বলছে না কিন্তু ওর ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি। যা চোখ এড়ালো না তূর্য এর। ও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে এই মেয়ে হাসছে কেন?

‘এই মেয়ে! তুমি হাসছো কেন?’

বর্ষা কিছু বলতে চাইলো কিন্তু খাবারের জন্য বাদ গেলো। তূর্য চরম বিরক্ত নিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে।
বাইরে থেকে তূর্যের সার্ভেন্ট এসব দেখে চোখ বড় বড় করে ফেললো। বসকে এসব কি করতে দেখছে। একটা মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে।

খাওয়া শেষ হতেই বর্ষা পানি খেয়ে নিলো। বিছানায় শুতে যাবে তূর্য ওকে ঔষধ দিলো। তা খেয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো আর বললো,

‘ শেষমেষ খাইয়ে দিলেন ই তো।’

তূর্য রেগে গিয়ে বর্ষার একদম কাছে চলে এলো। ওর দুপাশে হাত রেখে বর্ষার মুখের উপর ঝুঁকে বললো,

‘ একদম বকবক করবে না। না হলে মেরে দেবো।’

বর্ষা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে তূর্য এর দিকে। তূর্যের নিঃশ্বাস ওর চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে ওর বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। ও কথা বললো না ঘুম পাচ্ছে ওই ভাবেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। তূর্য রক্ত লাল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফাজিল মেয়ে আমাকে কথা শুনায়। ও ঝুঁকে থাকায় মাঝেই বর্ষার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এলো। এই মেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। ও গড আমি একে ধমক দিলাম আর এ ঘুমিয়ে পরলো।

নিজের মাথায় হাত দিয়ে সরে এলো তূর্য বর্ষার উপর থেকে। এই জন্য মেয়েটাকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো।

বর্ষার জ্বর কমে এসেছে। সারাদিন তূর্য বাসায় না ও চলে গেছে ওর কাছে। নিজের রুমে বর্ষাকে আটকে রেখে গেছে। বর্ষা বিছানার থেকে নামালো। সম্পূর্ণ জ্ঞানে আছে এখন বর্ষা মাথা ব্যাথা নাই। শরীর দূর্বল লাগছে কিন্তু শরীর ঠান্ডা এখন। ওকে আরেকটা রুমে আটকে রেখেছে।এটাতো অদ্ভুত রুম। মুখ ডাকা একটা ব্রাউন চুলের ছেলের ছবি টাঙানো।
এই চুল এই চোখের ছেলেকে আমি মনে হয় দেখেছি। সকালের কথা ভুলে গেছে বর্ষা ওর কিছু মনে নেই। ও ছবির সামনে এসে দাড়িয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। নীল চোখের ছেলেটির দিকে।

নিজের দিকে এখনো তাকায় নি। ছবির সামনে থেকে সরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাড়ালো। আর তখন ওর চোখ গেলো আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের উপর। নিজের গায়ে ছেলেদের শার্ট ও প্যান্ট দেখে চমকে উঠলো। ও নিজেও লেডিস শার্ট, টপস, লেডিস প্যান্ট পরে কিন্তু এসব তো অন্য কারো দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এই পোশাক আমার শরীর এ আসলো কিভাবে?
অনেক চিন্তা করেও মনে করতে পারলো না। বিরক্ত হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পুরো রুমটা দেখলো বর্ষা ওর চোখ গেলো জানালার কাছে ও তারাতাড়ি সেখানে গিয়ে জানালা খুলে ফেললো আর নিচে তাকালো। জঙ্গলে ঘেরা নিচে। এ কোন জঙ্গলে এসে পরলাম আমি। চোখ ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই অনেক গুলো প্রাইভেট করা দেখতো পেলো। বাসার গেইট আছে পেছনে দিয়ে জঙ্গলের মাঝে দিয়ে আল্লাহ এমন রাস্তা কেন বাইরে থেকে তো বুঝাই যাবে না এটা রাস্তা। সেই এলোমেলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কালো পোশাক পরিহিত মাক্স পড়া বন্দুক হাতে অনেক জন্য। এরাই তো আমাকে কিডন্যাপ করেছিলো। এরাই এখানে এনেছে আমাকে। কি ভয়ংকর জায়গা ভয় পাচ্ছে বর্ষা। এখানে থেকে মুক্তি পাবো কি করে? বাপি আমাকে খোঁজে পাচ্ছে না কেন?

দরজার কাছে এলো হাত দিয়ে আঘাত করছো কাজ হলো না।

এদিকে তূর্য বাসায় এসে পৌঁছায় রাত আটটার। দুইজন সার্ভেন্ট ভেতরে আছে। একজন রান্না করে দেয় আরেকজন বাসা পরিষ্কার রাখে। তাদের কাজ হলে তাঁরা ও বাইরে চলে যায়। এই বিশাল বড় বাসায় তূর্য আর শাওন থাকে।এটা ওদের গুপ্ত স্থান বাইরে থেকে এখানে কেউ থাকে বুঝাই যাবেনা। জঙ্গলে ঘেড়া। আর গার্ডরা সবাই গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। পুলিশ এই জায়গায় ঠিকানা এখনো পায়নি এজন্য তো আমার বাকি বাড়ি গুলোতে ও খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে বসে আছে।

তূর্য রুমে এসে নিজের শরীরের কালো কোর্ট ও শার্ট খুলে নিজের ফর্সা শরীর উন্মুক্ত করে ফেলে। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে একটা লম্বা শাওয়ার নিবে তূর্য। ওর মনেই ছিলো না এই রুমে ও ব্যতিত আরেকজন আছে। সে আর কেউ না বর্ষা যাকে সকালে এখানেই রেখে গিয়েছিলো। ব্যস্ততায় ভুলে গেছে।
তখন খুব নিকটে কারো তীব্র চিৎকার শুনে চমকে উঠে। একটা মেয়েলী চিৎকার। সাথে রাগ হয় ওর বাসায় কোন মেয়ে নেই এটা কে আর রুমে এলো কি করে? রেগে পেছনে তাকাতেই বর্ষাকে দেখে। বর্ষা চোখে হাত দিয়ে চেচাচ্ছে।

তূর্যের বর্ষাকে দেখে মনে পরে যায় সকালের কথা আর এখন এক নাগাড়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছে সব কিছু তে রাগ মাথা উঠে যায়। রেগে ওর কাছে গিয়ে এক ধমক দেয়।বর্ষা ধমক খেয়ে ভয়ে মুখে থেকে হাত সরিয়ে চুপ করে যায়। তূর্য বর্ষার হাত টেনে শক্ত করে ধরে বলে,

‘ আর একবার চিৎকার করলে থাপ্পড়িয়ে গাল লাল করে ফেলবো ইডিয়েট।’

বর্ষা তূর্য কে দেখেই ওর সকালেও কথা আবসা মনে পরে গেছে। ও তূর্যের কঠিন স্বরে কথা শুনে ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে। ওর ভয়ে হৃদপিণ্ড কাঁপছে। হাত এতো শক্ত করে ধরেছে যে ব্যাথা পাচ্ছে কিন্তু ভয়ে তা বলতে পারছে না। ভয়ে মিলিয়ে লজ্জা এসে জেঁকে ধরলো আচমকাই বর্ষার। তূর্য ওকে খালি গায়ে নিজের সাথে চেপে ধরে আছে। লজ্জা কখন গরম করে আসছে। তূর্য বর্ষাকে ভয় পেতে দেখে মনে মনে শয়তানি হাসি দিচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করলো বর্ষা লজ্জা পাচ্ছে। পাগল নাকি এই মেয়ে এখন লজ্জা কে পাচ্ছে নিজের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে ছেড়ে দিলো।আর নিজের রুমের দরজা খুলে বের করে দিলো।
হাত ধরে টেনে। গেট আউট।

বর্ষা দরজার বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে ফিরে তাকাতেই আমার চোখ পরলো বাসাটায় দিকে। বর্ষা এক পা এগুতে যাবে তখন পেছনে থেকে হেঁচকা টান পরে। তূর্য রাগে কি করেছে বুঝতে পেরে তারাতাড়ি ওকে টেনে আবার ভেতরে নিয়ে আসে। আচমকা টানে বর্ষা তূর্যের বুকে গিয়ে পরে।

#চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here