তৃষ্ণা ” পর্ব-২

0
1727

তৃষ্ণা
পর্ব ২
মিশু মনি
.
বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলো মাহিব। এমন সময় অংশী এসে ঘরের দরজায় দাঁড়ালো। মাহিব ওর দিকে এক পলক তাকিয়েই বুঝলো মেয়েটা কিছু বলতে চায়। অংশী ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। কিভাবে শুরু করবে হয়তো বুঝতে পারছে না।

মাহিব নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলো, ‘কিছু বলবে?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘বলো?’
– ‘আমার সাথে আসেন।’
কৌতুহলী হয়ে অংশী’র সাথে যাবার জন্য ঘর থেকে বের হলো মাহিব। অংশী ওকে নিয়ে জংগলের দিকে চলেছে। জংগলে কেন নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছে না মাহিব। নাকি আড়ালে নিয়ে গিয়ে কিছু বলবে? রহস্যজনক একটা ব্যাপার।

অংশী আগে আগে হাঁটছে। সাহেবের দিকে তাকাতে যদিও ওর ভীষণ লজ্জা করছিলো। মাথা নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে সাহেবকে এক জায়গায় নিয়ে এসে দাঁড়ালো। মাহিব সামনে তাকিয়ে দেখে কলাপাতা দিয়ে চারিদিকে ঘিরে একটা ঘরের মত বানানো হয়েছে। ওর কৌতুহল আরো বেড়ে গেলো। অবাক হয়ে বললো, ‘এটা কি?’
– ‘আমাদের বাড়িত টয়লেট নাই। আব্বারে অনেক বলছি তাও বসায় নাই। আপনার লাইগা এই ব্যবস্থা করলাম। ভেতরে দেখেন।’

মাহিব বেশ বিস্মিত। মাথা উঁচু করে এগিয়ে এসে ভেতরে তাকিয়ে দেখলো। একটা গর্তের উপরে কাঠ বিছিয়ে দিয়ে সামান্য জায়গা ফাঁকা করে রেখেছে। কাঠের উপর দিয়েছে দুটো ইট। মাহিব এই মেয়ের বুদ্ধি দেখে একেবারে অবাক!

বললো, ‘কি দরকার ছিলো এসবের? এত কষ্ট করে আমার জন্য টয়লেট বানাতে গেলে তুমি?’
– ‘প্রকৃতির ডাক আসলে সারতে তো হইবো তাই না? আপনি তো আমাদের মত জংগলে সারতে পারবেন না।’
হঠাৎ খুব হাসি পেলো মাহিবের। হাসি চেপে রাখতে না পেরে শব্দ করে হেসে উঠলো। অংশী ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো মাহিবের দিকে। হাসলে মানুষ টাকে কি অপূর্ব লাগে! এ জীবনে কখনো বাস্তবে এমন নায়কের মত সুন্দর কাউকে দেখে নি অংশী।

ও বললো, ‘আমি তাইলে যাই।’

অংশী একটা ছুট লাগানোর চেষ্টা করছিলো। মাহিব ডাক দিয়ে বললো, ‘দাঁড়াও মেয়ে। এত সুন্দর ব্যবস্থা করে দিয়েছো যখন একটা ধন্যবাদ নিয়ে যাবে না?’
– ‘ধন্যবাদ। আর আমি কিন্তু মজা কইরা বলছি। আমি ওয়াশরুম মানে বুঝি, টয়লেট মানেও বুঝি। আমাকে বুঝানোর জন্য আর হাগা বলতে হবে না।’

আবারও হেসে উঠলো মাহিব। অংশী ও ফিক করে হেসে একটা দৌড় লাগালো। মাহিব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অংশীর দিকে। চিকন চাকন মিষ্টি একটা মেয়ে। পাহাড়ের ভাঁজে এমন রূপ লুকিয়ে থাকতে পারে এ রহস্য জানা ছিলো না মাহিবের। যাই হোক, মেয়েটার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হতেই হয়।


খাওয়া দাওয়া শেষ করে মাহিব বিশ্রাম করছে। আমির আলীর একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে। কিন্তু সে কাজে যেতে চায় নি। কথাটা শুনে মাহিব বলেছিলো, ‘আপনি কাজে যান। কাজ ফেলে আমাকে সময় দিতে হবে না। আমি একাই এলাকাটা ঘুরে দেখতে পারবো।’

আমির আলী আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু মাহিব অনুরোধ করলেন কাজ ফেলে ওর সাথে না যাওয়ার জন্য। এরপর বাধ্য হয়ে আমির আলী ওনার মেয়ে অংশীকে সাহেবের সাথে বাইরে যেতে বললেন। পুরো এলাকা ঘুরে ঘুরে মাহিব লোকেশন পছন্দ করবে, একা থাকলে কেউ হয়তো কিছু বলতে পারে। অংশী সাথে থাকলে কারো কিছু বলার দুঃসাধ্য হবে না।

অংশীর খুব ভালো লাগছিলো বাবা মেহমানের সাথে ওকে পাঠাচ্ছেন বলে। কিন্তু লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে রইলো ও। মাহিব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওকে সহজ করে দিয়ে বললো, ‘তুমি মোটেও আনইজি ফিল করবে না। মানে এত লজ্জা সংকোচের প্রয়োজন নেই। দুপুরে যে ব্যাপারটা ঘটেছে তার জন্য আমি সরি। দেখো আমরা যেখানে থাকি সেখানে মেয়েরা হাতাকাটা জামাকাপড় পড়ে ঘুরে বেড়ায়। এসব দেখে আমি অভ্যস্ত।’

অংশী জিহ্বায় কামড় দিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। লোকটার একটুও লজ্জা নেই দেখছি। অবশ্য নাটকেও যেসব নায়ক থাকে ওদেরও এরকম লাজ লজ্জার বালাই নাই। এই লোকটাও সেরকম। আসলেই শহরের লোকদের বোধহয় লাজ লজ্জা কমই থাকে।

দুজনে নদীর তীর ধরে হাঁটছিলো। অংশী আগে আগে হাঁটছে আর মাহিব পিছনে। নদীর জল এত স্বচ্ছ যে অনেকদূর পর্যন্ত বালি স্পষ্ট দেখা যায়। মাহিব ভেবেছিলো পানি অনেক কম। কিন্তু পা দিতেই গড়গড় করে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছিলো। অংশী পিছনে তাকিয়ে এই অবস্থা দেখে ছুটে এসে বললো, ‘আরে আরে কি করতেছেন? উঠেন উঠেন, পইড়া যাইবেন তো।’

মাহিব উঠে আসতে আসতে বললো, ‘পানিগুলো কি স্বচ্ছ! কি এত গর্ত হবে সেটা ভাবিনি।’
– ‘আমারে একবার বলবেন না? আর নাইমেন না।’
– ‘আচ্ছা। দূরে একটা রাস্তা দেখা যাচ্ছে। ওই রাস্তাটা কোথায় চলে গেছে?’
– ‘জংগলের ভেতরে।’
– ‘আমাকে নিয়ে চলো না।’
– ‘কিন্তু ওইখানে যাইতে হলি নৌকা দরকার হইবো।’
– ‘একটা ব্যবস্থা করো। জংগলের ভিতরে আমাকে যেতেই হবে।’

অংশী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। মনেমনে ভাবতে লাগলো, কাম সারছে তো এই লোক। জংগলের ভিতরে গিয়ে কাম কি? আবার বলে কিনা যেতেই হবে। কি আর করার, যেতেই হবে যখন নিয়ে যাই।

ভাবতে ভাবতে তীর ঘেঁষে হাঁটছিলো অংশী। মাহিব অংশীর পিছুপিছু আসছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। মাঝেমাঝে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছে আনমনে। অংশী বুঝতে পারে না মাহিব কি ভাবে! কিন্তু লোকটা যে স্বাভাবিক আচরণ করছে না এটা নিশ্চিত ও। সমস্যা আছে নাকি কোনো? কখনো আবার একা একা কথা বলছে। হাত নাড়াচ্ছে। কি জানি বাবা! অদ্ভুত লোক একটা।

মাহিব অংশীকে একটা নৌকা দেখিয়ে দিয়ে বললো, ‘ওই যে নৌকা। ওটার ব্যবস্থা করা যায় না?’
-‘ওইটার কাছেই নিয়া যাইতেছি। আপনি কাছে গিয়া দাঁড়ান, আমি একটা বাঁশ নিয়া আসি।’

মাহিব ‘আচ্ছা’ বলে হাঁটা ধরলো। নৌকার জন্য বৈঠা দরকার। বৈঠা আনতে গেছে অংশী। কাছেই নৌকার মালিকের বাড়ি, তাকেও একবার বলে আসতে হবে। কিন্তু তার বাড়ি থেকে ফিরতে ফিরতে কয়েক মিনিট দেরি হয়ে গেছে। এসে দেখলো অভাবনীয় একটা কাজ হয়ে গেছে। মাহিব মাঝনদীতে নৌকায় স্তব্ধ হয়ে বসে আছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। অংশী তো অবাক! এই লোক বৈঠা ছাড়াই চলে গেছে তাও আবার একা। সাঁতারও জানে না। দাঁড়ালে নৌকা যেভাবে দোল খায়, নির্ঘাত পানিতে পড়বে। তারাতাড়ি বাঁশ নিয়েই পানিতে লাফিয়ে পড়লো অংশী। মাহিবের কোনো ভাবান্তর নেই। অংশী দ্রুত সাঁতার কাটছে। মাহিব ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে অংশীর সাঁতার। মজাই লাগছে ওর।

অংশী নৌকার কাছাকাছি আসতেই মাহিব হাত বাড়িয়ে দিলো। বাঁশটাকে নৌকায় দিয়ে ইতস্তত করতে করতে হাতটা ধরে নৌকায় উঠে পড়লো অংশী। নৌকা অনবরত দুলছিলো বলে অংশী নৌকায় উঠেই মাহিবকে জাপটে ধরে রইলো যাতে লোকটা পড়ে না যায়। কিন্তু মাহিব ভেবেছে অংশী ভয় পাচ্ছে। ও হেসে বললো, ‘ভয় পেয়েছো?’
– ‘মরন! আমি কেন ভয় পাইবো? আপনি যে এইভাবে নৌকার বান্ধন খুলে দিছেন, আপনার ভয় করে নাই?’

মাহিব পাটাতনে বসতে বসতে বললো, ‘আমি কি আর জানতাম স্রোতের টানে নৌকা ভেসে যাবে। আমি তো ভাবলাম বাঁধন খুলে দিয়ে নৌকায় উঠে বসি। যাতে তুমি আসামাত্রই নৌকায় উঠে চালাতে পারো। কিন্তু ওঠার সাথে সাথেই স্রোত এসে নৌকাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।’

হেসে ফেললো অংশী। অংশীর হাসিতে একটা পাহাড়ের ছাপ আছে। পাহাড়ি ধাচে গড়া ওর ধারালো চেহারা। লাবণ্যময় মুখশ্রী। হাসলে চোখ ছোট ছোট হয়ে যায়। ভালো লাগে দেখতে।

অংশী বললো, ‘যদি ভাইসা যাইতেন কি হইতো?’
– ‘এডভেঞ্চার হতো। ভাসতে ভাসতে অনেক দূরে চলে যেতাম। মজাটা আর হতে দিলে না।’

মাহিবের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো অংশী। অংশীর চুলে কচুরিপানা লেগে আছে। কচুরিপানাগুলো এমন ভাবে আটকে আছে যেন ইচ্ছেকৃত ভাবে হেয়ার স্টাইলের জন্য ব্যবহার করা। মাহিব দেখছে আর হাসছে।
অংশী মাহিবকে জায়গামতো বসিয়ে দিয়ে নৌকা ছেড়ে দিলো। আসার আগে বাবা ওকে বুঝিয়ে দিয়েছে মাহিব সিনেমা বানায়। সিনেমার শুটিং করার জন্য এখানে জায়গা পছন্দ করবে। কথাটা শুনে অংশীর আনন্দ হচ্ছে যেমন, পাশাপাশি মাহিবের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। যেহেতু সিনেমা বানায়, তারমানে অনেক বড় কিছু। এইজন্য দেখতেও নায়কের মত। এমন একজন মানুষের সাথে ঘুরতে বের হওয়াটাকে ভাগ্যের ব্যাপার ভাবছে অংশী। আনন্দিত মনে নৌকা চালাচ্ছিলো ও। আর মাহিব মুগ্ধ হয়ে আশেপাশে সবকিছু গভীরভাবে অবলোকন করছে।

মাহিব নদীর অপর পাশের যে রাস্তাটার কথা বলেছিলো, সেখানে এসে নৌকা দাঁড় করালো অংশী। এরপর হাত ধরে মাহিবকে নৌকা থেকে নামালো। একটা গাছের সাথে নৌকার রশিটা বেঁধে দিয়ে রাস্তা ধরে এগোলো দুজনে।

রাস্তাটা চলে গেছে জংগলের ভিতরে। জংগলে প্রবেশ করামাত্রই ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক কানে আসলো। পাহাড়ের এই এক আনন্দ, পাহাড়ি পোকাদের শব্দ কানে বাজতে থাকে। যত গহীনে যাওয়া যায়, শব্দ তত তীব্র হতে থাকে। চারিদিক নিস্তব্ধ হওয়ায় শব্দটাকে নিজের খুব কাছে মনে হয়। গা ছমছম করে।

চিকন একটা রাস্তা চলে গেছে জংগলের ভিতর দিয়ে। অংশী ও মাহিব পাশাপাশি হাঁটছে। গা ছমছম করছে মাহিবের। অংশী এসবে অভ্যস্ত। এই জংগলের এর আগেও কয়েকবার এসে ছিলো ও। খুব বেশি ভিতরে প্রবেশ করা হয় নি। কিন্তু এই লোকের পাল্লায় পড়ে মনে হচ্ছে আজ জংগলের আনাচে কানাচে সবকিছুই দেখা হয়ে যাবে। গাছের পাতার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে আলো এসে পড়েছে রাস্তায়। আজ অবশ্য বেশিদূর যাওয়া হবে না। কেননা সন্ধ্যা নামবে একটু পরেই। সন্ধ্যার আগেই এসে মাহিব রওনা দেবে ভাইয়ার থানায়। লোকেশন আজকে পছন্দ হবে বলে মনে হচ্ছে না, কাল আবার আসতে হবে।

অংশী একটা গাছে হেলান দিয়ে বললো, ‘মেলা হাঁটছি। খানিক রেস্ট নিই।’
– ‘ওকে।’
অংশীর আশেপাশে আনমনে হাঁটতে হাঁটতে মাহিব কবিতার সুরে বলতে লাগলো, ‘গহীন অরণ্যে কত নিস্তব্ধ লতাগুল্ম। তারই আড়ালে তুমি আর আমি, দুজন লতার মত পেঁচিয়ে আছি একে অপরকে। তোমার শরীর থেকে ভেসে আসে মাছের গন্ধ, চুলে কচুরিপানার রং।’

কথাটা বলেই মাহিব অংশীর চুলে হাত দিয়ে একটা কচুরিপানা ঝেড়ে ফেলে দিলো। অংশীর শরীরটা কেমন ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। মনেমনে ভাবলো, লোকটা আসলেই অদ্ভুত। একা একা কথা বলে শুধু। আর অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ করে!

মাহিব আবারও ঘুরতে লাগলো আর মুখে উচ্চারণ করছে, ‘ঠিক ঠিক ঠিক। এই লাইন দুটোই নায়ক বলবে। আর নায়িকার চুলে থাকবে কচুরিপানা, শরীর ভেজা। কত আর্ট মিশে থাকবে ব্যাপারটায়। ওয়াও দারুণ আইডিয়া। থ্যাংকস অংশী থ্যাংকস।’

অংশী চোখ পিটপিট করে বললো, ‘আপনার কি মাথা খারাপ টারাপ নাকি? এমন করেন ক্যান?’

হেসে উঠলো মাহিব, ‘এ তুমি বুঝবে না রমণী। যদি গাছ হতে, তবে বুঝতে। যদি নদী হতে, তবে বুঝতে। প্রেমিকের তপ্ত হৃদয়ে বটবৃক্ষের ছায়া…’

কথাটা বলতে বলতে মাহিব জংগলের ভিতরের দিকে হাঁটা শুরু করলো। স্তব্ধ অংশী নিরবতা ভেঙে পিছুপিছু দৌড়াতে দৌড়াতে বললো, ‘আরে দাঁড়ান দাঁড়ান। হারাই যাইবেন তো।’
– ‘হারিয়ে যাওয়া নয় বালিকা, বলো এডভেঞ্চার। হা হা হা।’

শব্দ করে হাসতে লাগলো মাহিব। ওর হাসির শব্দ জংগলে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। গা শিউরে উঠলো অংশীর। ভয় হচ্ছে তো এবার! লোকটা ভয়ংকর। অদ্ভুত ভয়ংকর!

অনেকদূর হেঁটে হেঁটে আশেপাশে ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করলো মাহিব। সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায়। সূর্যের রং দেখা যাচ্ছে না। এবার ফিরতে হবে। মাহিব মনেমনে ভাবছে, ‘আজকে আর ভাইয়ার ওখানে ফিরবো না। এদের বাসাতেই থেকে যাবো। কালকে আরো কয়েকটা জায়গা দেখে লোকেশন ম্যানেজ করতে হবে।’
অংশী দ্রুত হাঁটছে জংলী রাস্তায়। মাহিব লতাপাতার সাথে মার খেয়ে দুলে দুলে হাঁটছে। নদীর ধারে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো অংশী। নৌকা নেই! কয়েজনের পায়ের ছাপ দেখে মনে হচ্ছে নৌকা কেউ নিয়ে গেছে। এবার কি হবে!

মাহিব হেসে উঠলো শব্দ করে- এডভেঞ্চার! এডভেঞ্চার!

অংশী চেঁচিয়ে উঠলো, ‘মজাটা বুঝবেন। এই ঠান্ডায় নদীর তীর দিয়া দুই ঘন্টা হাঁটতে হইবে।’
– ‘হাঁটলাম না, বাসায় গেলাম না। আজকের রাতটা এখানেই থেকে গেলাম?’
– ‘পাগল আপনে? আব্বা টেনশনে পাগল হইয়া যাইবো। আমার সাথে হাঁটা ধরেন। আর নয়তো সাঁতরে নদী পার হন।’
– ‘তুমি বাসায় যাও, আমি এখানে থাকি?’
– ‘এমনিতে ই আপনার মাথা খারাপ। সারা রাত জংগলে থাকলে আরো খারাপ হইবে। আমার সাথে হাঁটবেন আসেন।’

মাহিব কিছুক্ষণ হাঁটলো চুপচাপ। কিন্তু সন্ধ্যার অন্ধকার নামার পর ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে হাঁটা ধরতে হলো। একবার ভাবলো অংশীকে বলি, ‘তোমার বাবার ফোনে কল দেই? এখানে টেনওয়ার্ক শো করছে।’ পরবর্তীতে ভাবলো, ‘কি দরকার? হাঁটতে তো ভালোই লাগছে।’

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here