তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি পার্ট:১৫+১৬

তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
পার্ট:১৫+১৬
#পিচ্চি_লেখিকা

বারান্দায় দাড়িয়ে অতিতের কিছু কথা ভাবছে আর নিরবে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে আরিয়া,,হঠাৎ করেই কেউ দরজায় নক করায় তাড়াহুড়ো করে চোখের জল মুছে দরজা খুলে দেখে সার্ভেন্ট দাড়িয়ে আছে,,,সার্ভেন্ট আরিয়াকে লিভিং রুমে যেতে বলে চলে যায়,,,হঠাৎ ডাকার কারন আরিয়া বুঝতে না পেরে চোখে মুখে পানি দিয়ে লিভিং রুমে যায়,,,আরুশের সাথে একটা ইয়াং ছেলে বসে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে,,আরিয়া ভ্রুকুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ফুপির কাছে গিয়ে দাড়ায়,,তানিয়া তুলি আর রায়ানা শপিং করতে গেছে,,আরিয়াকে যাওয়ার জন্য জোড় করলেও মন ভালো না থাকায় সে যায়নি,,,আয়ান কলেজে আর আইরা স্কুলে গেছে,,,তাই বাড়িতে তেমন কেউ নেই,,,আরিয়া কে দেখে আরুশ বলে,,,

“””এইটা তোর ভাবি আর আরিয়া এই হচ্ছে সিজান খান আমার ফ্রেন্ড,,,

আরিয়া মুচকি হেসে সালাম দেয়,,

“”” আসসালামু আলাইকুম,,,

“”” ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,কেমন আছেন ভাবি?

“”” জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো,,আপনি?

“” এই তো অনেক ভালো,,,

কিছুক্ষণ কথা বলে আরুশ আর সিজান চলে যায়,,,পুরোটা সময়ই সিজান খুব বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো,,,যেটা আরুশ আর আরিয়া দুজনেই খেয়াল করেছে কিন্তু আরুশ মুখে কিছু না বললেও হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছিলো,,,কোনো রকম কথা বলেই আরুশ সিজান কে নিয়ে বেরিয়ে যায়,,,আরিয়া কিছু না বলে রুমে চলে যায়,,,

রাতে আরিয়া একা একা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে,,,আরুশ ফেরেনি,,,আরিয়ার সারাদিনই মন খারাপ ছিল,,আইরা কাল মামা বাড়ি চলে যাবে তাই আরো বেশি মন খারাপ আরিয়ার,,,আরিয়ার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কারো শীতল ছোয়া পেয়ে পিছনে তাকায়,,,আরুশ এসেছে খুব দেখাচ্ছে আরুশকে,,,আরিয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,,,

“”” আজ এত খুশি লাগছে যে?

“”” হুম বউজান আজ আমি অনেক খুশি,,,

আরিয়া আরুশের মুখে বউজান শুনে আরুশের দিকে ফিরে তাকায়,,,অবাক চোখে তাকিয়ে মুখটা আরুশের দিকে নিয়ে স্মেল নেয়,,,না আজ নেশার ঘোরে না হুসেই বউজান বলছে,,,,

“”” বাব্বাহ আজ চাঁদ কোন দিকে উঠেছে বলুন তো?

“”” চাঁদ?হঠাৎ চাঁদের খোজ কেন?

“”” আজ তো নেশা করেননি অথচ আমাকে বউজান বলছেন,,,কই নেশা করা ছাড়া তো কখনো বউজান বলেন না,,

“”” বলতাম না সেইটা আলাদা ব্যাপার,,,এখন থেকে বলবো,,

আরিয়ার নাকের সাথে নিজের নাকটা ঘষে দেয়,,,

“”” তো বললেন না তো এত খুশি কেন হঠাৎ?

“”” বলবো,,আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

“” পারমিশন কেন নিচ্ছেন?করেন কি জিজ্ঞেস করতে চান,,

‘”””তোমার কি আর কোনো বোন নাই?

আরুশের কথা শুনে আরিয়া আতকে উঠে নিজেকে সামলিয়ে বলে,,,

“”” এটা কেমন কথা,,,আমরা ২ বোন সেইটা তো জানেন ই,,আমি আর আইরা,,,কি যে উদ্ভট প্রশ্ন করেন আপনিই জানেন,,আসেন তো অনেক রাত হয়ছে ঘুমাতে হবে,,,

আরিয়া আরুশকে টানতে টানতে রুমের ভেতরে নিয়ে যায়,,,আরুশ একটু মুচকি হেসে আরিয়ার সাথেই আসলো,,

__________________

সকাল সকাল উঠে আরিয়া ছাদে চলে গেলো,,,আরিয়া বুঝতে পারছে না আরুশ কেন তাকে এসব প্রশ্ন করছে,,তবে কি কিছু জানে আরুশ?জানলেই বা এত খুশিতে কিভাবে আছে সে?মনে মনে আবার কোনো প্ল্যান নেই তো?না না যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে,,,এসব ভেবে আরিয়া নিচে চলে আসে,,আইরা আর আয়ানকে খাইয়ে দিয়ে ওদের নিয়ে চলে যায়,,,আরিয়াও ভার্সিটি যাবে আজ,,,

আরুশ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়,,,নিচে এসে দেখে আরিয়া নেই,,,আরুশ তার ফুপি কে জিজ্ঞেস করলে বলে ভার্সিটি গেছে,,,আরুশ আর কথা না বাড়িয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ে,,,

আইরা কে স্কুলে দিয়ে আয়ান আর আইরা একসাথে ভার্সিটির দিকে আসলো,,তারপর আয়ান চলে গেলো কলেজে আর আরিয়া ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে,,,একটু যেতেই হঠাৎ কেউ আরিয়ার চোখ ধরে নেয়,,,আরিয়া ভড়কে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,

“”” কে?

“”” নিশ্চুপ….

“”” দেখ দিশা মজা করিস না,,,চোখ ছাড়,,,

“”” নিশ্চুপ…

“””” কি হলো ছাড় তোর কিন্তু খবর আছে ডাইনি,,ছাড়,,

আরিয়া জোড় করে হাত সরিয়ে নিয়ে দেখে দিশা,,দিশা খিলখিল করে হেসে উঠে,,আর আরিয়া তেলে বেগুনে জ্বলছে,,,দিশা আর আরিয়া ভার্সিটিতে চলে যায়,,আরিয়া গভীর চিন্তায় মগ্ন,,,দিশা আরিয়ার অন্যমনষ্কতা দেখে জিজ্ঞেস করেছিলো কি হয়েছে কিন্তু আরিয়া কাটিয়ে দিয়েছে……..

কেটে গেছে ২ দিন,,,এই ২ দিনে আরুশ আরো বেশি খুশি থেকেছে,,,আরিয়াই গম্ভীর মুখ নিয়ে থেকেছে,,

আরুশ অফিসে কাজ করছিলো,,এমন সময় টুং করে আরুশের ফোনে মেসেজ আছে,,,আরুশ কি ভেবে যেনো মেসেজটা ওপেন করে,,মেসেজটা দেখে খুশি মুখ নিয়েই বেরিয়েই যায় আরুশ,,নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে হাসি মুখে গেলেও সেখানকার মানুষটা কে দেখে হাসি মিলিয়ে গেলো,,,কালো হুড পড়ে কেউ লেকের কাছে দাড়িয়ে আছে,,,আরুশ গিয়ে দাড়াতেই সে পিছনে ফিরে রহস্যময় এক হাসি দেয়……

চলবে…..

(জানি পার্ট টা ছোট হয়েছে তার জন্য দুঃখিত❤️❤️)

#তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
#পার্ট:১৬
#পিচ্চি_লেখিকা

আরুশ লেকেড় পাড়ে যেতেই দেখলো একজন কালো হুডি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে,,আরুশ আগা মাথা না বুঝে কিছু বলতে যাবে তখনই হুডি পড়া ব্যাক্তিটি পিছনে তাকালো,,,আরুশ মুচকি হেসে বললো,,,

“”” কি ব্যাপার আজ আমার বউজান হুডি পড়েছে,,,

আরিয়াও মুচকি একটু হেসে বললো,,,

“”” ইচ্ছা করলো তাই,,আমার কাছে এসে দাড়ান,,,

আরুশও এগিয়ে গিয়ে আরিয়ার পাশে দাড়ায়,,

“” বলো,,কেন ডাকলে এত তাড়াতাড়ি?

আরিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,

“”” জানেন পাপ করলে তার কর্মফলও পেতে হয়,,

আরুশ মুচকি হেসে বলে,,

“” হুম জানি,,,

আরিয়া এতক্ষণ ঠান্ডা থাকলেও এবার আর না পেরে আরুশের ব্লেজারের কলার টেনে ধরে,,,আরিয়ার এহেন কান্ডে আরুশ ভড়কে যায়,,

“””মনে পড়ে মিস্টার আরুশ আরফান স্মৃতি কে মনে পড়ে?কতটা নোংরা আপনারা?অতীতের সেই কালো দিন গুলো মনে পড়ে?

বলেই এক ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দেয় আরুশকে,,আরুশ টাল সামলাতে না পেড়ে কিছুটা দুরে সরে যায়,,আর আরিয়া কোমড় থেকে একটা গান বের করে আরুশের সামনে রাখে,,আরুশ মুখে বাকা হাসি রেখে বলে,,,

“”” তুমি স্মৃতির বোন?তাই তো আরুজান?

“”” হ্যা হ্যা আমি স্মৃতির বোন,,কিন্ত তোরা কেড়ে নিয়েছিস,,,

“”” আরুজান আমার কথাটা শোনো,,,

“”” তোর কথা শুনবো? তোর মতো খুনীর কথা শুনবো?না আর না,,,

আরিয়া আরুশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়ে গানটার ট্রিগার ধরে রাখে তবুও আরুশের মুখে তৃপ্তির হাসি,,আরুশ ভালো ভাবেই জানে আরিয়া ওকে ঘৃণা করলেও মারতে পারবে না,,আরিয়া এতগুলো দিনে আরুশকে ভালোবেসে ফেলেছে তা আরুশ খুব ভালো ভাবে জানে,,আরুশ মৃদু হেসে আরিয়া কে বলে,,,

“”” পারবে না আরুজান,,নিজের হাতে নিজের ভালোবাসাকে খুন করা তোমার পক্ষে সম্ভব না,,,

আরিয়া জানে আরুশের বলা সব কথা সত্যি হাত ভিষন ভাবে কাাপছে তার কারন কি?না না দুর্বল হলে চলবে না,,নিজের বোনের অাপরাধীকে শাস্তি তো দিতেই হবে,,চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নেয় আরিয়া,,কিন্তু সাহস করে উঠতে পারছে না,,নিজের হাতে নিজের ভালোবাসা কে মারতে হবে,,না চাইতেও তো আরুশ আরিয়ার স্বামী,,কি করে এতো বড় পাপ টা করবে সে?কিন্তু বোনের সাথে যারা অন্যায় করছে তাদের তো সে শাস্তি দিবেই,,দুর্বল হবে না এই মনোবল নিয়ে ট্রিগারে হাত দেয়,,,হঠাৎ করেই গুলির আওয়াজে আরিয়া চমকে চোখ মেলে তাকায়,,,আরুশ হাসি মাখা মুখ নিয়েই নিচে পড়ে যাচ্ছে,,আরিয়া অবাক হয়ে আশে পাশে চোখ বুলিয়ে নেয়,,আরুশ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,,মুখে সেই বিশ্বস্ত হাসি তবে এই হাসি টা বুঝিয়ে দিচ্ছে আরুশ ভুল ভালোবাসে না আরিয়া তাকে,,কষ্টে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে,,,আরিয়া করুন চোখে আরুশের দিকে তাকায়,,,আরুশ মুখে হাসি টেনেই ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,,,

“”” বউজান পাপের ফল সবাই পায়,,তবে যে পাপ না করেও শাস্তি পায় তার কি নাম দেবে?আজকের এই একটা কাজের জন্য সারাজিবন তুমি নিজের কাছে দোষী হয়ে থাকবে,,,আমার কথার মানে আজ বুঝবে না তবে যেদিন সব জানবে সেদিন সব বুঝবে,,,আমার ভালোবাসায় খুত ছিলো না,,,সবটা উজাড় করেই ভালোবেসেছি তোমাকে,,,

আরিয়ার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে,,সেইটা মুছে নিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,,,

‘”””ভালোবাসা?হাউ ফানি,,এই ভালোবাসি বলেই আমার আপুর জিবনটা আপনি শেষ করে দিয়েছেন,,আজ আবার আমাকে?আপনার এই ভালোবাসা নিজের সাথে রাখেন লাগবে না আমার,,,নিজের শাস্তি পেয়ে গেছেন,,

আরিয়া আর কথা বাড়ালো না,,,যতই আরুশকে যা তা বলুক ভালো তো বাসে সত্যি,,,এখানে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না ভেবেই দৌড়ে চলে আসে,,,আরুশের নিথর দেহ টা ওখানেই পড়ে থাকে,,আরিয়া গাড়ির কাছে এসেই শব্দ করে কেদে নিচে বসে পড়ে,,,নিজেকে সামলানো বড্ড দায় তার কাছে,,কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,,বুক চিড়ে কান্না আসছে,,আরিয়া গাড়িতে উঠে নিজেই ড্রাইভ করে,,,সোজা মামা বাড়ি চলে যায়,,সেখানে আইরা আছে,,,আরিয়া কোনো রকম মামা বাড়িতে ঢুকে আইরা কে ডাকে,,,আরিয়ার ডাকে সবাই বাইরে চলে আসে,,,আরিয়ার এই অবস্থা দেখে ওর মামি জিজ্ঞেস করে,,,

“”” কি হয়ছে তোর এই অবস্থা কেন?

“”” কিছু হয়নি মামি,,তোমরা আমাদের অনেক সাহায্য করছো তার জন্য অনেক ধন্যবাদ,,আমি আর আইরা আজ চলে যাবো,,বিডিতে আর থাকবো না,,,লন্ডনের ফ্লাইট আছে সন্ধ্যা বেলা,,,

আরিয়ার কথা শুনেই তার মামির বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠে,,,এতদিন একসাথে থাকতে থাকতে মায়া বসে গেছে ওদের উপর,,

“”” আর কিছুদিন থেকে গেলে হয় না?

“”” না মামি,,,আজই চলে যাবো,,যে কাজে এসেছিলাম হয়ে গেছে,,এখানে আর থাকতে চায় না,,,আমি আর আইরা ওখানে কিছুদিন থেকে আসি,,,তার পর না হয় আবার আসবো,,,তোমরা ভালো থেকো,,,

ওদের কথার মধ্যেই আইরা নিজের সব কাপড় গুছিয়ে নিয়ে চলে আসে,,আরিয়া আইরা কে আগেই বলে রেখেছিলো তাই সব আগেই ঠিকঠাক করেছে,,,দুজনে বিদায় নিয়ে যখন আসবে তখনই তিনা আর তার মামি ধুম কান্নায় ফেটে পড়ে,,,মামা আর তন্ময় বাড়ি নেই,,,তিনা কে নিয়ে যেতে চাইলেও ওর পড়াশোনার কথা ভেবে আর নিলো না সাথে,,,চলে গেলো এয়ারপোর্টে,,,

এদিকে আরুশকে না পেয়ে রাসেল আরুশের ফোন ট্রেক করে চলে আসে,,,রাসেল যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে,,এরকম কিছু দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে,,,বুক বরাবর একটা গুলির চিহ্ন রক্তে ভেসে যাচ্ছে জায়গাটা,,,মুখটাও বিকৃত করে দেওয়া হয়েছে,,যেন কেউ নিজের মনের সব রাগ মিটিয়ে নিয়েছে,,রাসেল ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখে আরুশের ব্লেজার শার্ট পেন্ট সব এই লোকটার গায়ে,,রাসেল এগুলো দেখেই থমকে একটু পিছিয়ে দাড়ায়,,,রাসেলের সাথে আসা গার্ড দের নির্দেশ দেয় লোকটাকে চেক করার জন্য,,,যদি কিছু পাওয়া যায়,,

গার্ড রা খুজে লোকটার প্যান্টের পকেট থেকে আরুশের ফোন উদ্ধার করে,,,লোকটার কাছে আরুশের ক্রেডিট কার্ড ও পায়,,,সব প্রমান দেখে বুঝায় যাচ্ছে এটা আরুশের লাশ,,,কিন্তু মারলো কে?সেইটাই বোধগম্য হচ্ছে না রাসেলের,,,রাসেল কাউকে ফোন করে আসতে বলে,,,পুলিশকে এখনো জানানো হয়নি তাই পুলিশ কেও ফোন করে জানিয়ে দেয়,,,

কয়েকঘন্টার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বেষ্ট বিজনেসম্যান আরুশ আরফান মৃত্যুর ঘটনা,,,আরুশের বাড়িতে চলছে পিনপতন নিরবতা,,,শুভ আর সিজানও এসেছে,,শুভর তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না এমন কিছু আদৌও হতে পারে,,,আরুশের ফুপি বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে আয়ান যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে,,,কাদছেও না চুপ করে আরুশের লাসের দিকে তাকিয়ে আছে,,,আগরবাতির ঘ্রানে চারদিক ম ম করছে,,যেখানে ফুলের গন্ধে সব সময় ভড়ে থাকতো সেখানে এই মুহুর্তে আগরবাতির ঘ্রান বয়ে বেড়াচ্ছে,,তুলি,শুভ্র,রাকিব,রায়ানা, তাদের বাবা মা সবাই এসেছে,,আয়ান তো যখন থেকে ভাইয়ের মৃত্যুর কথাা শুনেছে তখন থেকেই চুপ করে আছে,,,সবাই আরিয়া কে খুজলেও পায়নি,,,এদিকে তানিয়া আয়ান কে ধাক্কাচ্ছে আর কান্না করতে বলছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না,,,কিছু সময় যাওয়ার পর হঠাৎ ই ডুকরে কেদে উঠে আয়ান,,,চিৎকার করে কাদতে থাকে,,কান্নার শব্দে পুরো আরফান বাড়ি কেপে উঠছে,,,আয়ানের বাবা মা না থাকা স্বত্ত্বেও সে কখনো বাবা মার অভাব পায়নি,,যে মানুষটা বাবা মার মতো আগলে রেখেছে আজ সেও চলে গেলো,,,আয়ানের কান্না বেড়েই চলেছে চিৎকার করে কেদেই যাচ্ছে,,আয়ানের এমন কান্নায় সবার চোখই ভিজে গেছে,,,শুভ এত শক্ত মানুষ হওয়া স্বত্ত্বেও নিজেকে সামলাতে পারছে না,,,,আরফান বাড়িতে শুধু চিৎকার করে কান্নার শব্দরই প্রতিধ্বনি হচ্ছে,,,

আরিয়া আর আইরা এয়ারপোর্টে বসে আছে,,,একটু পরই তাদের ফ্লাইট,,,আরুশের পাগলামো আরুশের বউজান ডাক,,হুট হাট ভালোবাসি বলা,,রাতে জড়িয়ে ঘুমানো সবটাই যেনো চোখের সামনে ভাসছে তার,,,নিউজে দেখাচ্ছিলো আরুশের মৃত্যুর ব্যাপারে সেইটা দেখার পর আরো ভেঙে পড়ে আরিয়া,,,চিৎকার দিয়ে কাদতে ইচ্ছা করছে তার কিন্তু পারবে না কাদতে,,,তাই নিরবেই চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে,,,আইরা খুব ভালো করে আরিয়ার দিকে তাকায়,,কাদতে কাদতে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে,,,আইরা কিছু না বলে আগে আরিয়ার হাত টা শক্ত করে ধরে,,আরিয়া করুন চোখে আইরার দিকে তাকিয়েই জড়িয়ে ধরে কেদে উঠে,,,যেন এতক্ষণ সে এরকম একটু সাপোর্ট চাইছিলো,,,আইরা আরিয়া কে শান্ত করার চেষ্টা করছে,,,

“”” আপু কেদো না প্লিজ,,,

‘””””(কেদেই যাচ্ছে)….

“” আপু এখন কেদে কি হবে?আগে ভাবতে পারতে,,,বড় আপু মারা গেছে সেই ২ বছর আগে,,,আরুশ ভাইয়া কে দেখে কখনোই মনে হতো না সে এরকম বাজে কাাজ করতে পারে,,,

আরিয়া এবার একটু শান্ত হয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,,

“”” কতটুকু জানিস ওর বিষয়ে?

“”” যতটুকুই জানি,,,তবে এটা বলতে পারি অন্যায় ছাড়া কাউকে মারার মতো লোক ভাইয়া না,,,

আরিয়া আর আইরা কে কিছু বলতে না দিয়ে ওকে নিয়ে প্লেনে উঠে যায়,,,আইরা ছোট কি ই বা বুঝে শুধু শুধু তো ওর সাথে তর্ক করা যায় না,,

আরুশের দাফন কাফন করে সবাই এখনো এই বাড়িতেই আছে,,,সবাই আরিয়া কে নিয়ে চিন্তিত থাকলেও শুভ সবাইকে চুপ করিয়ে দেয়,,,শুভ ভালো ভাবেই জানে এসব কে করেছে,,,কিন্তু এখন না সময় মতো ঘা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে,,রাসেল কেও বুঝ দিয়ে দিয়েছে,,পুলিশ রা নিজেদের মতো ইনভেস্টিগেট করছে,,

আরুশ মারা যাওয়ার ২ মাস কেটে গেছে,,
আরিয়া বেচে থেকেও প্রায় আরুশের মৃত্যুতে কাতর হয়ে আছে,,সব সময় নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখে,,আরুশের স্মৃতি গুলো তাকে কুড়ে কুড়ে খায়,,পাগলের মতো হঠাৎ করেই কেদে উঠে,,,চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে,,,আগের মতো সৌন্দর্য ফুটে উঠে না,,,আরফান বাড়িতেও সবাই চুপচাপ থাকে,,আগের মতো আর নেই সবাই,,,বিজনেসটা এখন রাসেল আর আয়ানই সামলাচ্ছে,,,আয়ান ছোট হওয়ায় তেমন কিছু বোঝে না,,,কিন্তু রাসেল তাকে সব বুঝিয়ে দেয়,,,শুভও সাহায্য করে আয়ানকে,,,আরুশের মৃত্যুতে রাসেলও অনেকটাই শোকাহত,,,আরিয়ার এমন অবস্থা আরুশের মৃত্যু আরুশের পরিবারের এমন অবস্থা দেখে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে অন্য কেউ,,যা কারোর ই জানা নেই…শুভ নিজের মতো করে সবটা সাজাচ্ছে,,,

আরিয়াকে এভাবে রাখলে যে সে পাগল হয়ে যাবে তার কোনো সন্দেহ নেই,,,তাই আরিয়া কে আর আইরা কে মিষ্টার সালমান শেখ(আরিয়ার বাবা)তার বন্ধুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়,,,আরিয়া যদিও যেতে চায়নি কিন্তু ছোট বোনের আবদারের কাছে হার মেনে নেয়,,,লন্ডনেই তার বাবার বন্ধুর বাড়ি,,,তাই যাবে বলেই ঠিক করলো,,,

পরেরদিন আইরা আর আরিয়া চলে যায় তাদের আঙ্কেলের বাড়ি,,আরিয়ার নিরবতা আইরার পছন্দ না,,যে মেয়ে সারাদিন বক বক করে সবাইকে পাগল করে দেয় সে কি না এতো চুপচাপ,,,কেউই এই কঠিন সত্যিটা মানতে চায় না,,,৪৫ মিনিট জার্নি করে চলে আসলো তার বাবার বন্ধুর বাড়ি,,,বাড়ির সামনেই মিস্টার সাহেদ হোসেন ও তার ওয়াইফ অর্পা হোসেন দাড়িয়ে আছে,,,২ বোন মুচকি হেসে আঙ্কেল আর আন্টির কাছে এসে সালাম দেয়,,,সাহেদ হোসেন এবং তার ওয়াইফ যথেষ্ট ভালোবাসে ২ বোন কে,,

“”” আসসালামু আলাইকুম,,,

“”” ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,

“”” কেমন আছো আঙ্কেল আন্টি?

“”” আলহামদুলিল্লাহ মা ভালো আছি,,,তোমরা কেমন আছো?

“”” জি আন্টি আমরাও ভালো,,,

“”” আন্টি রিমা আপু কই?(আইরা)

“”” আসতে না আসতেই রিমা আপুর খোজ হুম,,,

“”” হ্যা হ্যা তাড়াতাড়ি বলো কোথায়?আপু ছাড়া ভালোই লাগে না,,,

“””, নিজের রুমে আছে,,,তোমরা আগে চলো ফ্রেশ হয়ে নাও,,,

“”” আচ্ছা চলো,,,

২ জনে বাড়ির মধ্যে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নেয়,,,আইরা আর আরিয়া রিমার কাছে যায়,,,রিমা সাহেদ হোসেন আর অর্পা হোসেনের এক মাত্র মেয়ে,,একটা বাদর ছেলে আছে বটে,,,ইমন,, অনেক ভালো আর অনেক মিশুক,,,আরিয়া আর আইরা রিমার রুমে গিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করলো,,বিকেলবেলা আরিয়া আইরা আর রিমা ঘুরতে বের হয়,,,আইরা ঘুরতে ঘুরতেই জিজ্ঞেস করে,,,

“”” আচ্ছা রিমা আপু ইমন ভাইয়া কোথায়?আসার পর একবারো দেখলাম না,,

“”” ওকে কি আর তোরা পাবি?সে তো ঘুরছে ফ্রেন্ড দের সাথে উড়নচণ্ডী একদম,,,

“”” উড়নচণ্ডী?

“”” ভুল ধরিস না তো যা বলেছি ওই অনেক,,,

আইরা আর রিমা গল্প করছে কিন্তু সেদিকে মন নেই শুধু আরিয়ার,,,হাটতে হাটতে হঠাৎ করেই আরিয়ার চোখ যায় একজনের উপর,,,বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে…..

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️পুরো গল্প না পড়ে কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না,,ভালো না লাগলে গল্প এড়িয়ে যান😊অনেকেই অনেক কিছু হয়তো বুঝেননি তবে এই পার্টটার পর সব সম্পর্ক বদলে যাবে🙂ধৈর্য ধরে গল্পটা পড়ুন😊❤️)

হ্যাপি রিডিং😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here