#তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
পার্ট:৭
#পিচ্চি_লেখিকা
আরিয়া আপন মনে হেটে যাচ্ছে আর শুভ আরিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে,,,শুভকে দেখে মনে হচ্ছে আজ বাজে কিছু করবে মুখে তার শয়তানির হাসি,,,তবে সেদিকে খেয়াল নেই আরিয়ার,,,আরিয়া আপন মনে কিছু ভাবছে আর হাটছে মাথা নিচু করে হঠাৎ আরিয়ার সামনে কেউ এসে দাড়ালে আরিয়া ভয়ে লাফ দিয়ে ২ পা পিছিয়ে দাড়ায়,,সামনে তাকাতেই আরিয়া দেখে আরুশ সামনে দাড়িয়ে আছে,,,আরিয়া রেগে তেড়ে এসে বলে,,,
“” এই মিস্টার গুন্ডা কি সমস্যা আপনার?সব সময় এভাবে তাল গোল পাকিয়ে সামনে আসেন কেন?
“” কেন?মিস আরিয়া আফরিন বুঝি ভয় পেয়েছে,,
“” সাট আপ,,,উগান্ডার টিকটিকির লেজ কোথাকার গন্ডার একটা,,,বেশি কথা বলেন আপনি,,,
“” আমি বেশি কথা বলি না ম্যাম,,,আপনি বেশি কথা বলেন,,,লাইক বাচাল,,,(বলেই আরুচ হাসতে লাগলো)
“” কি বললেন আপনি?ভেবেছিলাম সরি বলবো আপনাকে আর বলবোই না ভাগেন এখান থেকে,,,
আরুশ ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললো,,
“” আমাকে হঠাৎ সরি,,,কারন কি?
“” বলবো না সরেন এখান থেকে,,,
“”” ইসসস সরি,,,আর বলবো না বাচাল,,,এখন বলো কেন সরি বলতে?
“” কাল না জেনেই কথা শোনালাম সবার সামনে গুন্ডা বললাম তাই,,,
“”এটা আর নতুন কি,,,তুমি তো আমাকে গুন্ডায় বলো,,
“” আপনি তো গুন্ডায়,,হুহ,,
“”” হুম আমি গুন্ডা তবে,,,
আরুশের থেমে যাওয়াতে আরিয়া প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকায়,,আরুশ আরিয়া একদম কাছে মুখটা এনে বলে,,
“” তুমি চাইলে ভালো হয়ে যাবো,,,
আরিয়া আরুশের কথা বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে,,,আরুশ আরিয়ার তাকানোর ভাব দেখে হেসে দেয় আর আরিয়া ভেঙচি কেটে চলে যায়,,,
শুভ এগিয়ে আসার সময় আরুশকে দেখেই রেগে যায়,,শুভ আর যায় হোক আরুশকে ভালো ভাবেই জানে তাই আর না এগিয়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে,,,আড়াল থেকেই সব দেখে রাগে ফোসফোস করতে করতে তাকিয়ে থাকে,,,আরিয়া চলে গেলে আরুশও চোখে সানগ্লাস পড়ে চলে যায়,,,আর শুভ রাগে ফোস ফোস করতে থাকে,,,তার মাঝে প্রতিশোধের দ্বিগুন আগুন জ্বলছে,,,
আরিয়া ভার্সিটিতে ঢুকতেই দিশা এগিয়ে আসে,,,
“”” কিরে আজ লেইট করলি না যে,,
“” কেন রে?তাতে তোর কি?
“” না মানে আজ রাস্তায় কেউ ছিলো না,,,(ঠোট টিপে হেসে)
“” দিশু তোরে কিন্তু এক লাথি দিয়ে উগান্ডায় পাঠিয়ে দিবো,,,
“”সত্যি কথা বললেও আজ মানুষ লাথি দিয়ে উগান্ডায় পাঠাতে চায়,,,
“”” ওরে আমার সত্যের উড়োজাহাজ,,এক থাপ্পড় খাইলেই সব সত্যি কথা ভুলে যাবি,,,
“” হুহ,,
আরিয়া আর দিশা ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে ঝগড়া করছিলো তখনই একটা মেয়ে আসলো,,,
“” এক্সকিউজ মি,,
আরিয়া পিছন ফিরতেই দেখলো একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে,,,আরিয়া উত্তর দিলো,,
“” জি আপু কিছু বলবেন?
“” আপু আপনি কি আরিয়া আফরিন কে চিনেন?
“” কেনো?
“” উনার সাথে একটা জবের বিষয়ে কথা বলার আছে,,
“”” জবের বিষয়ে?
“”” জি,,,
আরিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই দিশা বলে উঠলো,,,
“” আরে আপু,,এটাই আরিয়া আফরিন,,আপনি ওর কাছেই ওকে খুজছেন হেহেহে,,,
“” ওই উগান্ডি চুপ,,,আপু আপনি বলেন কি বলবেন?
“” আপনার একটা জবের দরকার তাই না?
“” জি বাট আপনি কে?
“” আপনি আমাকে চিনবেন না,,,আমি জানি আপনি জব খুজছেন,,আমি একটা জবের অফার করতে পারি,,,আপনি চাইলে করতে পারেন,,,
আরিয়া বুঝতে পারছে না মেয়েটা কে,,তাই সে জবের জন্য রাজি হবে না ঠিক করলো,,অপরিচিত কারো থেকে কেন জব নেবে,,
“” সরি আপু,,আমার লাগবে না জব,,আপনি বলেছেন এটাই অনেক,,
মেয়েটি মুচকি হেসে বললো,,
“”বুঝতে পেরেছি,,,আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না ইটস ওকে,,,
আরিয়ার দিকে একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললো,,
“” এই কার্ড টা রাখেন,,যদি আপনার প্রয়োজন মনে হয় জব করাটা,,তবে কাল সকাল ৯ টাই চলে আসবেন ইন্টারভিউ দিতে,,বাকিটা আপনার ইচ্ছা,,,
বলেই মেয়েটি মুচকি হেসে চলে গেলো,,আরিয়া কার্ডের দিকে তাকিয়ে দেখে,,,সেখানে শুধু ঠিকানা লিখা,,আর উপরে অফিসের নাম,,A A group of industries…
আরিয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে কার্ডটা নিয়ে ক্লাসে চলে গেলো,,,আর এদিকে আরুশ সবটাই দেখলো,,দেখে মুচকি হেসে গাড়িতে উঠলো,,আরুশ ভালো ভাবেই জানে আরিয়া কাল ইন্টারভিউ দিতে যাবে,,,
_________________
আরিয়া ক্লাস শেষ করে বাড়ি চলে গেলো,,,আরিয়া বার বার ভাবছে কি করবে,,,যাবে নাকি যাবে না,,,বুঝে উঠতে না পেরে শাওয়ার নিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লো,,,আর আরুশ কালকের জন্য সবটা রেডি করলো,,যদিও রাসেল অনেক বার বলেছে যদি না আসে আরিয়া তখন কি হবে কিন্তু আরুশ দৃঢ় কন্ঠে বলে আমার মন বলছে আরিয়া আসবে,,,তাই রাসেলও চুপ করে বসকে হেল্প করতে থাকে,,,রাসেল এই কয়দিনে তার বসকে চেঞ্জ হতে দেখেছে,,এতে সে নিজেও খুব খুশি,,,আরুশের সাথে রাসেল ৪ বছর হলো আছে কিন্তু কখনো তাকে হাসতে দেখেনি,,কিন্তু আরিয়া আরুশের লাইফে আসার পরই আরুশকে হাসতে দেখেছে সে,,,রাসেল অনেক খুশি যে তার বস একটু একটু হলেও স্বাভাবিক লাইফে ফিরছে,,,রাসেল সব সময় আল্লাহর কাছে বলে,,,
“””বস জিবনে অনেক কিছু হারিয়েছে সে যেন আর কিছু না হারায় আল্লাহ,,,আরিয়া ম্যাম যেন বসকে ছেড়ে কখনো না যায়,,,
এভাবেই কেটে যায় ওই দিনটা,,,আরিয়া অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় সে যাবে ইন্টারভিউ দিতে,,বাকিটা পরে দেখা যাবে,,,
_________________
সকাল সকাল উঠে সব কাগজ রেডি করে নেয়,,,অনেক টেনশনে আছে আরিয়া,,,,আরিয়া একদিকে জবের টেনশন করছে অন্যদিকে কার অফিসে যাচ্ছে সে নিজেও জানে না,,,তাই আরো ভয় পাচ্ছে,,,আরিয়া ৯ টার আগেই সেই অচেনা অফিসের দিকে রওনা দিলো,,,আরিয়া টেনশন আর ভয়ে বারবার ঘেমে যাচ্ছে,,,আরিয়া বরাবরই সাধারন ভাবেই থাকে,,,অফিসের সামনে এসে দাড়িয়ে একবার চারপাশ দেখলো,,,অনেক বড় অফিস,,চারপাশটা আরো বেশি সুন্দর,,,আরিয়া কোনোরকম অফিসে ঢুকতেই দেখলো সবাই সবার মতো কাজ করছে,,,কালকের সেই মেয়েটা এগিয়ে আসলো আরিয়ার দিকে,,,
“”চলে এসেছো,,,এবার চলো স্যারের কেবিনে,,,
মেয়েটা আরিয়া কে কিছু না বলতে দিয়ে হাটা ধরলো,,আরিয়া আর কিছু না ভেবে মেয়েটার পিছু পিছু গেলো,,,,আরুশ এতক্ষণ সবই দেখেছে,,,আরিয়ার এমন দশা দেখে আরুশ না হেসে পারেনি,,,আরিয়া আর ওই মেয়েটা চলে গেলো আরুশের কেবিনে তবে আরুশ নেই কেবিনে,,,রাসেল আছে,,,আরিয়া কেবিনে ঢুকে আশে পাশে চোখ বুলিয়ে দাড়ালো,,,তখনি পিছন থেকে একটা লোক এসে বললো,,
“”” বসুন মিস আরিয়া,,,
আরিয়া কারো কন্ঠ পেতেই পিছন ফিরে তাকালো,,,একটা লোক তালগাছের মতো লম্বা,,,ব্লাক ব্লেজার গায়ে জড়ানো হাতা ফোল্ড করা তবে মুখে মাস্ক দেয়া,,,আরিয়া বেশ অবাক হয়ে গেলো,,,নিজের অফিসে কে মাস্ক পড়ে?,,কন্ঠটাও তার চিনা চিনা লাগলো তবুও মাস্ক পরিহিত থাকায় কন্ঠটাও বেদে যাচ্ছিলো,,,তাই আরিয়া চিনতে পারলো না,,,লোকটা কথা বলতে বলতে গিয়ে নিজের চেয়ারটাই বসলো,,,আরিয়াও বসলো,,,আরিয়া নিজের সাথে আনা ফাইলটা লোকটাকে দিলো,,লোকটা সেইটা নিয়ে দেখা শেষ করে বললো,,,
“” আপনার এখনো পড়াশোনা কমপ্লিট হয়নি রাইট,,,
“” জি স্যার,,,
আরিয়া মাথা নিচু করে আছে আর সামনে বসে থাকা লোকটি বারবার আড় চোখে তাকাচ্ছে,,আরিয়া টেনশনে ঘামতে শুরু করেছে,,,
“”” তো আপনি কি পি.এ জব করতে পারবেন?
আরিয়া অবাক চোখে তাকালো,,,
“” এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?
“”আব,,না মানে আম আমার তো কোনো তেমন সার্টিফিকেট নেই তবুও আপনি জব দিয়ে দিলেন,,,
“”” দেখুন আপনি পড়াশোনা শেষ না করেই যখন জব খুজছেন তার নিশ্চয় কোনো কারন আছে,,,যায় হোক আপনার জব কনফার্ম,,,যদি জব করেন তো কাল ৯ টা থেকে জয়েন করেন,,,
আরিয়া খুশি হয়ে ওকে বলে চলে আসতে গেলেই লোকটা আবারও তাকে ডাকে,,,
“” এই যে মিস দাড়ান,,,
“” জি স্যার,,,
“” আপনার একটা কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করতে হবে,,
“” কিসের কন্ট্রাক পেপার?আর কি লিখা আছে তাতে?
“” হুম এই কন্ট্রাক পেপারে লিখা আছে আপনি ১ বছরের আগে জবে রিজাইন দিতে পারবেন না,,,আমার পি.এ হওয়ায় আমি যে কাজ যখন বলবো তখনই করবেন,,,সব বিজনেস মিটিং এ আপনাকে উপস্থিত হবে,,,ব্লা ব্লা ব্লা,,
“”এটা কেমন কন্ট্রাক?
“”” যেমনই হোক সাইন করুন,,
আরিয়া ভাবলো কি এমন আর কঠিন কাজ তাই সাইন করতে গিয়ে আবারও থেমে গেলো,,,তখন লোকটি বলে উঠলো,,,
“” চিন্তা করবেন না,,আমি আপনাকে এমন কোনো কাজ দেবো না যা আপনাার জন্য ইম্পসিবল,,,আপনি একজন মেয়ে এটা আমার মাথায় থাকবে,,
আরিয়া যেন সস্তি পেলো,,,খুশির ঠেলায় পেপার না পড়েই সাইন করে দিলো,,আর সামনে থাকা লোকটি বাকা হাসলো,,,আরিয়া সাইন করে চলে গেলো,,আর লোকটি মাস্ক খুলে বললো,,
“” আরুজান চলে তো এসেছো তোমার এই গুন্ডার কাছেই কালকে অনেক বড় সারপ্রাইজ পাবে,,,
বলেই আরুশ বাকা হেসে বাইরে আসলো,,,আরিয়া খুশি মনে ভার্সিটি গেলো যদিও লেইট হয়ছে তবুও গেলো,,,আরিয়া দেখে আজও দিশা ক্যাম্পাসে বসে আছে,,,আরিয়া দৌড়ে গিয়ে দিশা কে জড়িয়ে ধরলো তারপর টেনে তুলে দিশার হাত ধরে ঘুরতে লাগলো,,,দিশার মাথার উপর দিয়ে সব যাচ্ছে তাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,,,আরিয়া হাপাতে হাপাতে বলতে লাগলো,,,
“”” দিশু আমার জব হয়ে গেছে,,ইয়াহুুুহহ,,,
দিশা আরিয়ার জবের কথা শুনে খুশি হয়ে আরিয়া কে জড়িয়ে ধরলো দিশা আরিয়া কে কংগ্রেস করলো,,,তখনই পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,,,
“”” আরে দুজন কিসের খুশিতে এতো নাচতেছো…..
চলবে….
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🍂🥀