“ঠক, প্র*তারক, দুচ্ছ*র আমার ফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করে এখানে মেয়েদের নিয়ে ফস্টিনস্টি করা হচ্ছে। ”
কথাটা বলেই ধরীতা সিয়ামের কলার চেপে ধরল। সিয়াম কিছুটা বিমূর্ত হয়ে গেল আচমকা আক্রমণে। রেস্টুরেন্টের সব লোক হা করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। ধরীতার সেদিকে কর্ণপাত নাই। কণ্ঠটা আরও উঁচু করে ধরীতা এবার হাত টা বাড়িয়ে কষিয়ে ঘুষি দিতে নিল সিয়ামকে। এমন সময় অধরা পিছু ডেকে বলল
“ধরীতা তুই কাকে মারছিস? উনি তো আমার বয়ফ্রেন্ড না। আমার বয়ফ্রেন্ড তো পাশের চেয়ারে বসা।”
ধরীতার মুখটা এবার চুপসে গেল। সিয়াম রাগী চোখে ধরীতার দিকে তাকিয়ে আছে। অধরার বয়ফ্রেন্ড পরিস্থিতি বেসামাল দেখে দৌড় লাগাল। ধরীতা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বিমূর্ত হয়ে গেল। হালকা গলায় বলল
“সরি ভাইয়া মিস্টেক হয়ে গেছে। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি অধরার বয়ফ্রেন্ড। দুজন পাশাপাশি হওয়ায় গুলিয়ে ফেলেছি। আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ।”
সিয়াম রাগে ধরীতার দিকে তেড়ে এসে বলল
“কিসের সরি হ্যাঁ? আপনার জন্য কত বড়ো ক্ষতি হয়েছে জানেন? আমি মেয়ে দেখতে এসেছিলাম। আপনার জন্য মেয়েটা ভুল বুঝে চলে গেছে আমায়। মান সম্মানও ধুয়ে দিলেন আমার। রেস্টুরেন্টের সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমি কাঠগড়ার আসামি। সমস্যা আপনি করেছেন ভুল আপনি করেছেন আমি কেন ফল ভুগ করব? আপনার মতো মেয়েদের জন্য অনেক ছেলে হ্যারেজ হচ্ছে।”
সিয়ামের কথা শুনে ধরীতা মাথায় যেন আরও রাগ চড়ে বসলো। রুষ্ঠ গলায় বলে উঠল
“বলেছি তো সরি তারপরও এত কথা কেন বলছেন। কিসের হ্যারেজ করেছি শুনি? আপনি তো বেশ বেয়াদবের মতো কথা বলছেন। ভালো করে সরি বলেছি ভালো লাগছে না? এভাবে কথা কেন বলছেন। কী এমন ক্ষতি করেছি আপনার। ভুল হতেই পারে। আমরা মানুষ বলেই ভুল হয়েছে। সরিও বলেছি।”
সিয়াম হাতটা ছুড়ে দিয়ে বলল
“রাখেন আপনার সরি। আমার যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতিপূরণ কে দিবে? আর আপনি একটা মেয়ে না? মেয়ে হয়ে রাস্তায় নেমেছেন গুন্ডাঘিরি করতে?”
“এই যে মিস্টার মুখ সামলে কথা বলেন। নাহয় সত্যি সত্যি গুন্ডি হয়ে মুখটা থেতলে দিব।”
সিয়াম কথাটা শুনে ধরীতার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল। ধরীতা সিয়ামের চাহনি দেখে কিছুটা জোর গলায় বলে উঠল
“,এত বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাচ্ছেন কেন? চোখ উপড়ে ফেলব আপনার।”
পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ দিকে মোড় নিচ্ছে। অধরা তা টের পেয়ে ধরীতার হাতটা ধরে টানতে টানতে বলল
“দোস্ত থাম তুই। চল এবার। তোকে আর কিছু করতে হবে না। ছাকিব তো চলেই গেছে। উল্টা ওর তো কিছু করতে পারলি না আরও ঝামেলা পাঁকলো।”
ধরীতা আরও কী যেন বলতে নিবে এমন সময় অধরা তার মুখটা চেপে ধরে কিছুটা জোরপূর্বক ধরীতাকে টেনে রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে রাস্তার একপাশে দাঁড়াল। ধরীতা লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে লাগল। অধরা বেশ বিরক্ত গলায় বলল
“শুধু শুধু ছেলেটার সাথে লাগতে গেলি কেন? ছেলেটা তোকে কী এমন করেছে। বরং দোষটা তুই করেছিস।”
ধরীতা রেগে গিয়ে বলল
“সরি বলেছি তবুও এত পকপক করতে কেন করতে হবে? এসব ছেলে দেখলে গা জ্বলে যায়। ”
“হয়েছে চল এবার। এত তর্ক করিস তুই কী বলব। মাথা ঠান্ডা কর এবার। তোর মাথা অনেক গরম।”
কিছুক্ষণ নীরবতা। ধরীতা আর অধরা বসে আছে ক্যাম্পাসে। সবে মাত্র ভর্তি হয়েছে তারা। দুজনেই একই ডিপার্টমেন্টে। গাছের নীচে বসে আছে। ক্লাস শুরু হতে এখনও ঘন্টা বাকি। ধরীতা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর নিজের শরীরের উড়না ধরে মুচরাচ্ছে। এমন সময় লক্ষ্য করল সিয়াম ঢুকেছে ক্যাম্পাসে। ধরীতার মাথায় যেন আগুন ধরে গেল। সুর সুর করে গাছের নীচ থেকে উঠে দ্রূত সিয়ামের সামনে গিয়ে বলতে লাগল
“আমার পিছু পিছু এখানেও চলে এসেছেন? ও মাই গুডনেস। আপনি তো দেখি নাছোরবান্দা পাগল। আমাদের পিছুও নিয়েছেন। মেয়ে দেখে চুলকায় তাই না? গড় গড় করে লু*চ্চামি করতে চলে এসেছেন?”
“মুখের ভাষা সংযত করুন। আপনি যা বলছেন বুঝে শুনে বলছেন তো? আর আপনি এখানে কেন?”
ধরীতা উড়না ঠিক করতে করতে বলল
“আমি এখানে এডমিট হয়েছি। বাই দ্যা ওয়ে পিছু নিয়েছেন কী কিছু বলার জন্য? ”
“কোন ডিপার্টমেন্ট?”
“আপনাকে কেন বলতে হবে?”
“বলার দরকার নেই।”
বলেই সিয়াম ক্যাম্পাসের দিকে ছুটে গেল। ধরীতাকে অধরা এবার ধাক্কা দিয়ে বেশ কটু গলায় বলল
“তুই কাজগুলো মোটেও ঠিক করছিস না। উনাকে বারবার হ্যারেজ করছিস। মানুষকে বিরক্ত করা তোর একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। অভ্যাস টা পরিবর্তন কর।”
কথাটা বলেই অধরা ধরীতাকে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে বলল
“দোস্ত ঐ তো ছাকিব। যার জন্য এতকিছু। তাকে কিছু বল। সাথে ওর ঐ গার্লফ্রেন্ডটাও আছে।”
ধরীতা আর সময় নিল না। দ্রূত পায়ে ছাকিবের কাছে গিয়ে কয়েকটা গালি দিয়ে চড় কষাতে লাগল। পুরো ক্যাম্পাসের সবাই তার দিকে হা করে আছে। এতে তার তেমন কোনো ভাব আবেগ হচ্ছে না। ছাকিব চড় খেয়ে কিছুটা বেসামাল হয়ে দৌড়ে গেল। সিয়াম পেছন থেকে ধরীতাকে ডেকে বলল
“ভার্সিটিতে কী গুন্ডামি করতে আসেন নাকি? পড়ালেখা রেখে মারামারি শুরু করছেন। যেখানে যান যাকে তাকে মারতে শুরু করেন সমস্যা কী আপনার?”
ধরীতা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল সিয়াম। রাগের মাত্রা বাড়িয়ে বলল
” আমার লাইফ আমি যা ইচ্ছা করব। আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেন? আমার পিছে পিছে এসে এসব বলার কারণ দেখছি না। ছেঁছড়া পাবলিক।”
বলেই ধরীতা হন হন করে হেঁটে ক্লাসের সামনে গিয়ে বসলো। অধরা ধরীতার পাশে বসেই কাঁদতে লাগল। ধরীতা রাগ গলায় বলতে লাগল
“কাঁদছিস কেন হুদাই? ঐ ছেঁ*ছড়ার জন্য এত কাঁদার কী আছে? এগুলার জন্য কাঁদিস না। তোরে আগেই বলছি ছেলেরা ভালো না। গেলি কেন প্রেম করতে?”
“আমি কী জানতাম ও এমন। ”
“তোকে তো সাবধান করেছিলাম। তুই শুনিস নি কেন?”
“তুই তো কোনো ছেলেই দেখতে পারিস না তাই ভাবলাম ওকে ও দেখতে পারিস না।”
“বাদ দে ক্লাসে চল। এত ঘটনা আজকে ঘটল। মেজাজ পুরো গরম। আর ঐ ছেলেটাকে দেখে আরও রাগ লাগল।”
“কোন ছেলেটা”
” ঐ যে ঐ রামগাধাটাকে।”
“হয়েছে দোষ তোর কম না। ”
“বাদ দে সেসব কথা চল ক্লাসে।”
ধরীতা আর অধরা দুজনেই ক্লাসে প্রবেশ করল। ক্লাসের সামনের বেঞ্চে বসলো দুজন। ক্লাস শুরু হতে এখনও ২০ মিনিট বাকি। প্রায় সবাই উপস্থিত। প্রথম ক্লাস সবার মধ্যে বেশ উত্তেজনাও চলছে। ধরীতা সময়ের অপেক্ষা করতে লাগল। অপেক্ষার প্রহর শেষ হলেও স্যার বা ম্যাডাম এখনও ক্লাসে প্রবেশ করল না। এর মধ্যেই ধরীতার চোখে পড়ল সিয়ামকে। সিয়াম ক্লাসে ঢুকেছে। ধরীতা সিয়ামকে দেখেই রেগে আগুন হয়ে বলতে লাগল
“আপনি আমাকে ফলো করে ক্লাসেও চলে আসছেন?”
সিয়াম যেন বোকা বনে গেল। ধরীতাকে দেখে কিছুটা চমকালো বটে। এ মেয়ে এ ক্লাসে সেটা সে আশায় করেনি। এদিকে ধরীতা চুপ গলায় রাগী চোখে সিয়ামের দিকে তাকাল। সিয়ামের রাগ মাথায় উঠলেও সেটা সামলে নিয়ে ধরীতাকে এবং বাকিদের উদ্দেশ্য করে বলল
“সাইলেন্ট সবাই। আমি আপনাদের টিচার সিয়াম আহমেদ। সবাই ভর্তি হতে পেরে কেমন লাগছে আর পরিচয় বলে যান একেক করে।”
কথাটা বলেই ধরীতাকে উদ্দেশ্য করে বলল
“আপনি প্রথম উঠেন আর বলেন।”
ধরীতা এবার বিস্মিত হয়ে গেল। বুকটা তার কাঁপতে লাগল। স্যারের সাথে এত কাহিনি করে আসলো এখন কী হবে সেটাই ভাবছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। সিয়ামের কণ্ঠসুরে যেন এবার ধরীতার বুকে খরা পড়তে লাগল।
তোমায় ঘিরে পর্ব-১
#শারমিন আঁচল নিপা
চলবে?