#তোমায় ঘিরে
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৭
ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই সে আঁৎকে উঠল। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গেল অধরার বয়ফ্রেন্ড ছাকিবকে দেখে। ছাকিব এসে বেশ চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে। গতকাল তাকে পিটানোর জন্য আজকে বাসায় নালিশ নিয়ে এসেছে। তা নিয়ে বড়োসড়ো হুলস্থুল পাঁকতে শুরু করল। অধরাও ছাকিবকে কড়া কথা শুনাতে লাগল। আর ছাকিব ধরীতার মামা, মামীকে একের পর এক কথা শুনাতে লাগল। ধরীতার মামা রুষ্ঠ গলায় ছাকিবকে উত্তর দিতে লাগল। যদিও তারা পুরো ঘটনা জানে না। জানলে হয়তো আজকে ধরীতার রক্ষা নেই। ধরীতাকে দেখতেই ছাকিব আরও ক্ষেপে ধরীতার দিকে তেড়ে আসলো। ধরীতা আর নিজেকে সংবরণ করতে পারল না। নাক বরাবর ঘুষি কষিয়ে দিয়ে বলে উঠল
“তোকে কী আজরাইল টানতেছে নাকি রে। বাসায় এসে ঝামেলা করছিস। তুই কী ভেবেছিস বাসায় এসে সিনক্রিয়েট করবি আর আমরা তোকে মেনে নিব।”
বলেই কলারটায় ধরে আরও কয়েকটা চড় থাপ্পর দিতে লাগল। এ মুহুর্তে সিয়াম প্রবেশ নিল ঘটনা স্থলে। সিয়াম অবশ্য এসেছিল ধরীতার ঘড়িটা দেওয়ার জন্য। যদিও ঘড়িটা দেওয়ার থেকে, মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ধরীতার খোঁজ নেওয়া। এসেই এমন একটা ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে আশায় করেনি। যদিও এটা নতুন কিছু না। ধরীতার আচরণটায় এমন। সিয়াম চুপ হয়ে একদিকে দাঁড়িয়ে রইল। ধরীতা কিছুক্ষণ ছাকিবকে পিটিয়ে নিল। ধরীতার মামা, মামী কেউ এই বাঁধা দিল না। বরং উল্টে ধরীতাকে এ বিষয়ে বেশ উৎসাহ দিতে লাগল। ধরীতা কিছুক্ষণ উত্তম মধ্যম দিয়ে ছাকিবের কলারটা ধরে বাসা থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করল। বের করার পর পাশ ফিরে তাকাতেই সিয়ামের সম্মুখীন হলো। ভীষণ অবাক হলো সিয়ামকে দেখে। কী বলবে বুঝতে পারছে না। কেমন জানি বুক কাঁপছে তার। সিয়ামকে দেখে এমন বুক থরথর করে কাঁপার যদিও কোনো কারণ নেই তবুও এমন কেন হচ্ছে সে জানে না। সিয়ামের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। ধরীতার মা,মামা, মামী আর অধরার চক্ষুগোচর হলো সিয়ামকে। ধরীতার মা সবসময় নীরব দর্শক হয়ে থাকেন। অনেক কিছু বলার থাকলেও তিনি বলতে পারেন না। এ বাসার এমন একজন মানুষ তিনি যার সমস্ত অধিকার থাকা সত্ত্বেও মুখে বুঝে সব সহ্য করতে হয়। তিনি এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে প্রবেশ করলেন। চোখের এক কোণে ঘামের বিন্দুর মতো জল জমা হয়ে আছে। কখন যে গড়িয়ে পড়বে বলা যায় না। এ জল দেখে ফেললে হাজারটা কথা শুনতে হবে তাকে। নাটকবাজ এই সেই হাজারটা কটু কথার সম্মুখীন হতে হবে তাকে। তাই নিজের চোখের জলটাকে আটকে নিয়ে দ্রূত তিনি তার রুমে প্রবেশ করলেন।
এদিকে ধরীতার মামী সিয়ামের কাছে আসলো। তাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল
“কে আপনি? আবার কোন নাটক করার জন্য এসেছেন? একটাকে তো পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করেছে আপনাকে ও কী তাই করতে হবে?”
অধরা তার মায়ের কথা শুনে জিহ্বায় কামড় দিয়ে মাকে বলে উঠল
“মা তুমি কাকে কী বলছো? উনি তো আমাদের ভার্সিটির শিক্ষক। তোমাকে তো বললাম উনার কথা ভুলে গেছ? গতকাল উনিই আমাদের দিয়ে গেছেন। এভাবে কথা কেন বলছো উনার সাথে মা। ”
অধরার কথা শুনে তিনি দাঁতে দাঁত কামড়ি দিয়ে বলে উঠলেন
“আরে আমি কী জানতাম নাকি।”
তারপর সিয়ামের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে উঠলেন
“বাবা দুঃখিত। আমি তো ভেবেছি তুমি ঐ খবিশ ছেলেটার কিছু হও। তুমি আমার ছেলের বয়সী তাই তুমি করে বললাম। আসো ঘরে এসে বসো।”
কথাটা বলেই ধরীতার মামাকে উদ্দেশ্য করে ধরীতার মামি বললেন
“কী গো স্যারের জন্য নাস্তা কিনে নিয়ে এসো।”
ধরীতার মামা চটপট উঠে ঘর থেকে নাস্তা কেনার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এদিকে একই মানুষের দু রকম আচরণ দেখে সিয়াম কেবল ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার মনে শুধু প্রশ্ন জাগছে মানুষগুলোর এত রূপ কী করে হয়। ধরীতাও একেক সময় একেক রকম। এদিকে এ মহিলাও কম যায় না। এই রুষ্ঠ এই কোমল। কোনটা যে কার সঠিক রূপ সেটাই বুঝা বেশ দায়।
সিয়ামের এমন বিস্ময় নিয়ে তাকানো দেখে ধরীতার মামী কিছুটা ভড়কে গেল। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলল
“কী ব্যাপার বাবা এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কোনো সমস্যা? ”
সিয়াম কিছুটা নড়ে বলে উঠল
“না আন্টি কোনো সমস্যা না। আমি এসেছিলাম ধরীতার ঘড়িটা দিয়ে যেতে। গতকাল মনে হয় গাড়িতে রেখে এসেছিল। এখন আপাতত আর বসব না। পরে একদিন আসব।”
“আরে এমন বললে হয় নাকি। আমি এখনই তোমার আংকেলকে বললাম খাবার নিয়ে আসতে। তুমি এসো এসে নাস্তা করে তবেই যাবে। এর আগে না। ”
অধরাও বেশ জোর গলায় বলে উঠল
“স্যার এসে ভেতরে বসুন। আর একটু আগের ঘটনার জন্য দুঃখিত। মা বুঝতে পারেনি। একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটছে কী বলব।”
“আমি কিছু মনে করেনি। এটা নতুন না। আপনাদের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই এমন ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি। মনে হচ্ছে এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।”
সিয়ামের কথা শুনে ধরীতার রাগ লাগতে লাগল। সিয়াম যে ধরীতাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেছে সে খুব ভালোই বুঝতে পারছে। তবে এখন রাগের প্রকাশ ঘটানো মোটেও যাবে না। হালকা গলায় সিয়ামকে বলল
“আপনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে এসে বসুন। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে আর কত কথা বলবেন।”
ধরীতার কথায় সিয়াম ভেতরে এসে বসলো। সিয়ামের অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর আজ মিলল। বুঝতে পারল ধরীতা তার মামা, মামীর সাথে থাকে। যে মহিলাটা ধরীতার মাথাটা ফাটিয়েছিল তিনি আর কেউ না ধরীতার মামী। ধরীতা এখানে থাকে বিষয়টা বেশ ভালোভাবে নেয় না তার মামী। ধরীতার দায়িত্ব নিতে তারা নারাজ। তবে চাপের সম্মুখীন হয়ে দায়িত্ব নিতে হচ্ছে সেটা বুঝায় যাচ্ছে। সিয়াম ধরীতার মাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। ধরীতার বাবা কোথায় কে জানে? তিনি কী বেঁচে আছেন কি’না তাও জানা নেই। অপেক্ষার প্রহর বেশিক্ষণ গুণতে হলো না। ধরীতার মা সিয়ামের জন্য শরবত নিয়ে এসে সিয়ামের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন
“আমি ধরীতার আম্মু। আপনি কেমন আছেন স্যার।”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আন্টি আপনি আমার অনেক সিনিয়র আমাকে আপনি তুমি করে বলবেন।”
“ঠিক আছে বাবা।”
এটুকু কথোপকথনেই তাদের মাঝে হলো। তিনি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে গেলেন। ধরীতার মামা কিছুক্ষণের মধ্যে ভালোমন্দ নাস্তা নিয়ে প্রবেশ করলেন। সিয়ামকে বেশ আপ্যায়ন করা হলো। সিয়াম খাওয়া দাওয়া আর সামান্য আড্ডা দিতে দিতে লক্ষ্য করল ভার্সিটির সময় হয়ে গিয়েছে। তাই সে ধরীতা আর অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
“আপনাদের ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। আপনারা নাহয় রেডি হয়ে আসুন। আমার সাথেই ভার্সিটিতে চলুন। ”
ধরীতার মামা অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
” যা,যা দ্রূত তৈরী হয়ে আয়। ”
অধরা আর ধরীতা গেল তৈরী হতে৷ এদিকে অধরার মা সিয়ামেক যে হারে আপ্যায়ন করছে সিয়ামের হালকা সন্দেহ হতে লাগল কেন এত আপ্যায়ন করা হচ্ছে তাকে। তবে সন্দেহটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। এর মধ্যেই অধরা আর ধরীতা তৈরী হয়ে আসলো। সিয়াম সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেল।
অধরা আর ধরীতা গাড়িতে উঠল আগে। তারপর সিয়াম গাড়িতে উঠল। গাড়িটা চলতে লাগল। অর্ধেক রাস্তায় যেতেই আবারও এক বিপত্তির সম্মুখীন হলো।
চলবে