#তোমায় ঘিরে
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৯
কারণ সিয়াম ধরীতার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে মুগ্ধতা নিয়ে দেখছে। সিয়ামের মনে হচ্ছে সে রাজপ্রাসাদের কোনো ঘুমন্ত সুন্দরী রাজকন্যাকে অবলোকন করছে। যার সৌন্দর্যের বিস্তৃতি বর্ণণা করার সাধ্য সিয়ামের নেই। এ সৌন্দর্য শুধু অবলোকন করা যায় অনুভব করা যায় কিন্তু বর্ণণা করা দুষ্কর। ধরীতার শরীর হালকা কাঁপুনি দিচ্ছে। এটা অসুস্থতার কাঁপুনি না। অনুভূতির সমাবেশের কাঁপুনি৷ ধরীতাও সিয়ামের দিকে তাকাল। এ প্রথম কোনো ছেলের প্রতি তার তীব্র মায়া কাজ করছে। তবুও সে মায়াটাকে নিবারণ করল। নিজের বাবার কথা মনে পড়তেই চোখটা সরিয়ে নিল। সিয়াম ধরীতার অস্বস্তি লক্ষ্য করে হালকা কাশি দিয়ে বলল
“আপনার কাচ্চি সেই কখন এসেছে। আপনি তো একদম ঘুম। ঘুমাচ্ছিলেন আরাম করে তাই ডাকিনি। এবার একটু উঠে বসুন। কাচ্চিটা উঠে খান।”
ধরীতার চোখ বেয়ে আচমকায় পানি পড়ছে। চোখটা মুছে উঠতে নিয়েও উঠতে পারছিল না। সিয়াম ধরীতাকে ধরে উঠে বসাল। খাবার গুলো নিয়ে ধরীতার মুখের সামনে চামচ দিয়ে ধরল। ধরীতা খাবারটা মুখে নিয়ে খেতে লাগল আর সিয়ামের কথা ভাবতে লাগল। ছেলেদের নিয়ে ধরীতার অভিজ্ঞতা তেমন ভালো না। ধরীতার জীবনে যত ছেলে দেখেছে তারা হয় ঠক নাহয় কোনো না কোনো সমস্যায় জর্জরিত। বাবার কাহিনির পর থেকে ধরীতা ভালো ছেলের মুখোমুখি কখনও হয় নি। এ প্রথম মনে হয় কোনো ছেলের এত পরম মায়া আর কেয়ার পাচ্ছে সে। অনুভূতিটা বেশ ভালো আবার খারাপও। একবার মনে হচ্ছে সিয়ামের এসবের পেছনে কোনো স্বার্থ রয়েছে আবার মনে হচ্ছে হয়তো সিয়াম মানুষটায় এমন। অনেক কিছুই মাথায় আসছে তার তবে সে মাথা আর বেশিক্ষণ ঘামাল না সে। নিজেকে সামলে নিয়ে খাবারটা শেষ করল। মৃদু গলায় বলল
“অধরা কোথায়?”
“ভার্সিটিতে আছে।
” আচ্ছা।”
বলেই ধরীতা আবারও চোখ বন্ধ করল।
সন্ধ্যা সাতটা বাজে। সিয়ামের কোমল কণ্ঠে ধরীতার ঘুম ভাঙল। আগের চেয়ে শরীরটা বেশ হালকা লাগছে আর শক্তিও পাচ্ছে। নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক লাগছে এখন। চোখ মেলে শুয়া থেকে উঠে বসল। অধরা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ধরীতাকে উঠতে দেখে অধরা তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করল
“এখন শরীর কেমন? বাসায় যেতে পারবি তো?”
ধরীতা স্বাভাবিক কণ্ঠে জবাব দিল
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এখন বাসায় যেতে কোনো সমস্যা হবে না। জ্বরও কমে গিয়েছে আর শরীরও বেশ হালকা লাগছে। ”
সিয়াম ওদের কথার মধ্যে বলে উঠল
“ডাক্তার যদিও বলেছিল একদিন ভর্তি থাকতে তবে আপনাদের সমস্যা হলে আমি বাসায় দিয়ে আসতেছি। বাকি ট্রিটমেন্ট নাহয় বাসায় করা যাবে।”
ধরীতা জবাব দিল
“বাসায় দিয়ে আসলেই ভালো হয়। আচ্ছা রাণীর কি অবস্থা ও সুস্থ হয়েছে?”
“আগের চেয়ে বেটার। ওকে আরও দুই তিনদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। এরপর বাসায় নেওয়া হবে। ওকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। ওর সবকিছুর দায়িত্ব আমি নিয়েছি। আপনারা একটু তৈরী হয়ে বসুন আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি।”
কথাগুলো বলে সিয়াম কেবিন থেকে বের হলো। অধরা ধরীতার পাশে বসে কানে কানে বলল
“আমার কেনো জানি না মনে হচ্ছে স্যার তোর প্রেমে পড়েছে।”
অধরার কথাটা শুনে ধরীতার বেশ ভালো লাগলেও সেটা সে চেপে গেল। মনে মনে তারও সিয়ামকে বেশ ভালো লাগতে শুরু করেছে। তবে বাবাকে ঘিরে একটা ব্যথাকাতুর অভিজ্ঞতা যেন সে ভালো লাগায় বারবার ব্যাগরা দেয়। সে শত চেষ্টা করেও কোনো পুরুষকে বিশ্বাস করতে পারে না। সবাইকে তার মুখোশধারী মনে হয়। মনে হয় সে ও যদি মায়ের মতো কষ্ট পায় তখন সব মেনে নিতে পারবে তো? এসব ভেবেই সে সিয়ামকে ঘিরে ভালো লাগাটাকে আর সামনের দিকে এগুতে পারে না। তাই অধরার কথাটাকে হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল
“তুই যেমন পাগল তোর ভাবনা চিন্তাও পাগল। আরে এমন কিছু না। একজন পরিচিত হিসেবে উনি সাহায্য করেছেন। দেখলি না রাণীকে কত সাহায্য করল। আমি ঠিক ঐ রাণীর মতোই একজন। এর বাইরে কিছু না। এটাকে বড়ো করে দেখার মতো কিছু হয়নি।”
অধরা তবুও বলতে লাগল
“আমার কখনও ভুল হয় না। আমি নিশ্চিত স্যার তোর প্রেমে পড়েছে। সেটা উনার চোখ দেখেই বুঝা যায়। ”
ধরীতা আর অধরাকে কথা এগুতে দিল না। একটা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল। এর মধ্যে সিয়াম এসে গেল। আবারও তিনজন রওনা দিল বাসার উদ্দেশ্যে। সিয়াম গাড়িতে বসে সামনের আয়নাটা ধরীতার মুখ বরাবর তাক করল। গাড়িটা যতক্ষণ চলছিল ততক্ষণ কিছুক্ষণ পর পর সিয়াম সামনের আয়নাটার দিকে তাকাচ্ছিল। ধরীতা তা টের পেয়ে হুট করেই বলে উঠল
“গাড়ি থামান। ”
সিয়াম কিছুটা বিচলিত হয়ে গাড়ি থামাল। ধরীতা দ্রূত গাড়ি থেকে নামল। অধরা বুঝতে পারছে না ধরীতা গাড়ি থেকে কেন নামছে। সে চুপ করে বসে বসে কান্ড দেখতে লাগল। ধরীতা গাড়ি থেকে নেমে গাড়িটার সামনের দরজা খুলে সামনের সিটে বসে সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা মুচকি হেসে মৃদু সুরে বলল
“কষ্ট করে আয়নায় দেখতে হবে না। এখন আমি আপনার পাশেই বসে আছি। মন দিয়ে গাড়ি চালান। নাহয় বারবার আয়না দেখতে গিয়ে এক্সিডেন্টের সম্মুখীন হতেন। এমনিতেই রাস্তায় জ্যাম। এই গাড়ি চলছে তো থামছে এর মধ্যে আমার দিকে তাকালে আপনার আরও সময় নষ্ট হত। তাই আপনার সময় বাঁচাতে সামনের সিটে বসলাম।”
অধরা আড়ি পেতে কথা শুনার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। তাই আর ব্যর্থ চেষ্টা না করে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ল। এদিকে সিয়াম ধরীতার কথা শুনে হালকা হাসলো। এ হাসিতে এক অন্যরকম স্নিগ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। গাড়িটা চলতে লাগল। জ্যামের কারণে তেমন এগুচ্ছে না। সিয়াম পেছনে তাকিয়ে লক্ষ্য করল অধরা ঘুমিয়ে পড়েছে। বিষয়টা ধরীতাকে অবগত করে বলল
“আপনার বোন তো দেখা যায় ঘুমিয়ে পড়েছে। ”
ধরীতা উত্তর দিল
“ও একটু এমনেই যেখানে একটু সুযোগ পায় ঘুমিয়ে নেয়।”
ধরীতার কথা শুনে সিয়াম প্রশ্ন করল
“আর আপনি কেমন?”
প্রশ্নটার কোনো উত্তর সে দিল না। ব্যস্ত শহরের ক্লান্তহীন জ্যাম পেরিয়ে গাড়িটা গন্তব্যে থামল। অধরার মা সিয়ামকে দেখে পুনরায় চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল। মেয়ে দুটে দেরি করে বাড়ি ফিরেছে তাতে উনার কোনো মাথা ব্যথা নেই। সিয়ামকে দেখে এক লাফে ঘর থেকে বের হয়ে হাসতে হাসতে বলল
“বাবা তুমি আবার এসেছো অনেক খুশি হয়েছি। ”
ধরীতা তার মামীর খুশির পেছনের কারণটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে। হয়তো অধরার জন্য সিয়ামকে উনার অনেক পছন্দ হয়েছে তাই এমনটা করছে। সিয়ামও বেশ হাসি গলায় উত্তর দিল
“হ্যাঁ আপনার মেয়ে দুটোকে নিয়ে গিয়েছিলাম এখন দায়িত্ব সহকারে দিয়ে গেলাম। আজকে তাহলে গেলাম পরে আপনার সাথে আবার দেখা হবে।”
ধরীতার মামী সিয়ামের হাতটা টেনে সোফায় বসিয়ে বলল
“আরে এখনি এসে চলে গেলে হবে নাকি? এখানে বসো। রাতে একদম খেয়ে তারপর যাবে। এত তাড়াহুড়ো করো না তো।”
কাহিনির সার সংক্ষেপ ধরীতা টের পেলেও সিয়াম পাচ্ছে না। সে বুঝতে পারছে না এই ভদ্র মহিলা এমন কেন করছেন। এখানে কথা না বাড়িয়ে সিয়াম সোফায় বসলো। এর মধ্যে ধরীতার মামী দ্রূত নিজের রুমে প্রবেশ করল মিনেটে দশেকের মধ্যে বেরও হলো। ধরীতা আর অধরা উনাকে দেখে কিছুটা চমকে গেল সে সাথে সিয়ামও হা হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে যা দেখা হচ্ছে সেটা কী সঠিক নাকি ভুল নাকি মতিভ্রমের বিস্তরণ। কারণ
চলবে?