ত্রয়ী পর্ব ১২

0
929

ত্রয়ী
মোর্শেদা হোসেন রুবি
১২||

হাসপাতালে আজ মিলির সপ্তম দিন। মায়ের অবস্থা এখন যথেষ্ট উন্নতির দিকে। তিনি চাইলে বাড়ি যেতে পারবেন। গতরাতেই চেকআপ শেষে ডাক্তার একথা জানিয়েছেন। শোনার পর আর মিলি দেরী করেনি। সবার আগে মঈনকে ফোন করে খবরটা জানিয়েছে। মাত্র সাতটা দিনেই যে লোকটা ওর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে কোনদিন ভাবেনি মিলি। গত সাতদিন মঈন চুড়ান্ত রকম সাহায্য করেছে ওকে আর কৃতজ্ঞতার পাল্লা দিনকে দিন ভারী করে চলেছে। মঈন কীভাবে এই কৃতজ্ঞতার শোধ চায় জানেনা মিলি। তবে সে প্রস্তুত। এই দেনার শোধ দিতে। মঈনের সুখ দুঃখের সাথী হতে। এ ব্যাপারে কথা হয়েছে ওর মঈনের সাথে। মঈন ওকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব করেছে সেদিন তবে তার আগে একটা ছোট্ট ভূমিকা পেশ করেছে। মা নেই মঈনের। নীলিমা আপার মা বাবার প্রথম স্ত্রী। তার কাছে থেকে এ বাড়ীতেই মানুষ হয়েছে মঈন। সৎমাও বেশিদিন বাঁচেন নি। তারপর থেকে নীলিমা আপার কাছে আছে। এখানে থেকেই পড়াশোনা করেছে। পৈত্রিক সম্পত্তিতে মঈনের প্রাপ্ত অংশও নীলিমা আপার কাছেই গচ্ছিত। জমির কাগজপত্র সবই তার কাছে। তবে জমি থেকে যা আয় হয় তা থেকে মাসে মাস কিছু হাত খরচ তিনি মঈনকে দেন। সম্পর্কে সৎবোন হলেও নীলিমা আপা ওর ব্যপারে যথেষ্টই কনশাস। তিনি অদূর ভবিষ্যতে মঈনকে ব্যবসা দাঁড় করিয়ে দেবেন। এমনটা নীলিমা আপার বক্তব্য। তবে সেই অদূর ভবিষ্যত কবে আসবে মঈনের জানা নেই। এদিকে মঈনের এখন ছাব্বিশ চলছে। পড়াশোনার পাট চুকিয়েছে আরো তিনচার আগেই। অথচ এখনও সেই অদূর ভবিষ্যতের দেখা মেলেনি। মঈনের ধারণা এভাবে তার পুরো বয়সটাই চলে যাবে নীলিমা আপার বাড়ীর খেদমত করতে করতে। ঘটনাচক্রে সেই রাতে মিলিকে দেখার পর ওর মনে হয়েছে ঠিক এরকম উপযুক্ত সঙ্গীনি পেলে নীলিমা আপার মুখোমুখি কথা বলার সাহস পাবে ও। লড়াই এর মাঠে নামতেও ভয় পাবেনা মঈন। মিলি ধনী না গরিব তা দিয়ে মঈনের দরকার নেই। তার দরকার মিলির মত একজনকে। ওর ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে কাজ নেই ওর। মিলি রাজী হবে কী না সেটাই প্রশ্ন। মিলি অবশ্য সব শুনে বলেছে, ভেবেটেবে জানাবে। এরপর আর কথা বাড়ায়নি মঈন। নিরবে ওর পাশে থেকেছে। একটু আগে ওকে ফোন দিয়ে বলেছে, ” আপনি সব গুছিয়ে রাখুন। আমি একেবারে গাড়ি নিয়ে আসব। আমি আসার আগেই বিলটিল নিয়ে কথা বলতে যাবেন না। তাহলে আপনাকে একা মেয়েমানুষ পেয়ে বানিয়ে খাবে স্টাফরা।
মিলি সতেজে উত্তর দিয়ে বলেছে, ‘আমাকে বানিয়ে খাওয়া এত সহজ না।’ মঈন আর তর্ক করেনি কেবল অপেক্ষা করতে বলেছে। মিলিও খুব দ্রুতই সব কিছু গুছিয়ে ফেলেছে। এখন কেবল মঈনের অপেক্ষা। বেচারা দায়িত্বটা পালন করতে চাইছে যখন করুক।

আধাঘন্টার মধ্যেই মঈন এল। ড্রাইভারকে সাথে করে নিয়ে এসেছে সে। এসেই তাকে সহ হাসপাতালের একজন স্টাফকে নির্দেশ দিল, জিনিসপত্র সব গাড়ীর ডিকিতে তুলতে।
মিলির সন্দেহ হতে বাধা দিয়ে বলল, ” ড্রাইভারটা কী আপনার নীলিমা আপার গাড়ীর ? ”

-” হ্যাঁ, কোন অসুবিধা নেই। ইয়াদ আলী খুব বিশ্বস্ত লোক। আপাকে বলে দেবেনা। কাজ শেষ করে ওকে কিছু চা পানি খাবার জন্য টিপস দিয়ে দিলেই খুশি হয়ে যাবে।” মুহূর্তেই মিলির মুখ শক্ত হল।

-” আপনার অসুবিধা না হলেও আমার অসু্বিধা আছে। ইয়াদ আলীকে চলে যেতে বলুন আর একটা ক্যাব ভাড়া করে নিয়ে আসুন। আমি নীলিমা আপার গাড়ীতে যাব আপনাকে কে বলল ? ”

মঈন হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, ” আচ্ছা, ঠিকআছে। আমি ওকে চলে যেতে বলছি। আপনি রাগ করবেন না প্লিজ। ” বলে মঈন ইয়াদ আলীকে নিচে যেতে বলে স্টাফদের সবাইকে টিপস দিতে দাঁড়াল। বাঁধল আরেক হাঙ্গামা। স্টাফরা এই টিপসে সন্তষ্ট না। তারা আরো বাড়িয়ে দেবার জন্য ধরল। মঈন তাদের বিভিন্ন ভাবে বোঝাতে চেষ্টা করল যে রুগী এমনিতেই নাজুক। তার পক্ষে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করা কষ্টকর। এরই মধ্যে মিলি পেছন থেকে এসে মঈনের হাত থেকে টাকাগুলো টান দিয়ে নিয়ে বলল, ” দেখি আমাকে দিন।” তারপর স্টাফ দুজনকে কঠিন স্বরে বলল, ” ট্রলি ঠেলা ছাড়া আর কোন কাজ করেন নাই। সেদিন তো ডেকেও আপনাদের পাই নাই। অথচ এটাই আপনাদের কাজ। এই কাজের জন্যই বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে আপনাদের। এত ডিমান্ড কিসের। যেটা দিচ্ছি সেটা আপনাদের বাড়তি পাওয়া। কাজেই নিলে নেন না নিলে সরেন এখান থেকে। ধমকে কাজ হল। তারা টিপস নিয়ে সুরসুর করে সরে গেলে মিলি মঈনের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আপনি কী হা করে দাঁড়িয়েই থাকবেন না কী গাড়ী আনবেন? ” মঈন সম্বিত ফিরে পেয়ে ত্রস্তে বেরিয়ে গেল গাড়ী আনতে।
গাড়ীতে বিশেষ কথাবার্তা হলো না মিলির মা সামনে ছিলেন বলে। তবে মিলিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে বেরিয়ে যাবার পথে মঈন বলল, আজ আমি খুব ব্যস্ত তো তাই বসতে পারব না। আপনি সব গোছগাছ করে বিশ্রাম নিন। আপনার বড় দুলাভাই এর সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। কাল বিকেলে উনি আমাদের ব্যপারটা নিয়ে বসবেন কথা দিয়েছেন।”
-” আমাদের কী ব্যপার নিয়ে বসবেন? ”
-” মানে ? আপনাকে না বললাম না সেদিন ? ”
-” আপনি তো অনেক কথাই বলেছেন। কোনটা বুঝব ? ”
-” আরে, আমাদের বিয়ের ব্যপারে আর আবার কোন ব্যপারে ? ” কিছুটা উসখুস করে বলেই ফেলল মঈন।

মিলি অবাক হল, ” এত তাড়াহুড়ার কী আছে। আমার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা সামনে আর আপনি এখনই বিয়ের জন্য উতলা হয়েছেন কেন। তাছাড়া এখনই আমাকে বিয়ে দেবার মত সামর্থ আমার মায়ের নেই।”
-” কিন্তু দুলাভাই যে বলল…!”
-” দুলাভাই এর কথা বাদ দিন। আমি এখনও মনস্থির করিনি।”
-” মিলি, আপনি কী আমাকে বিয়ে করতে চান না? ” কাতরপ্রায় কণ্ঠে বলল মঈন।
-” চাইনা তা তো বলিনি। বলেছি, ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগবে। কারণ বিয়েটা আপনার আমার হলেও এটা একটা সামাজিক বন্ধন। দুটো পরিবারের আত্মীয়তা। আমার পরিবার আপনার বোনের সামনে অস্বস্তিবোধ করলে তখন আমার কিছু করার থাকবেনা।”
-” প্লিজ, মিলি। বিষয়টাকে আবারও জটিল করে ফেলবেননা। বিয়েটা আমি করব। আমার বোনের ছেলে করবে না যে তার অনুমতি লাগবে। নীলিমা আপার সাথে আমার সম্পত্তির দেনাপাওনা ছাড়া আর কোন ঝামেলা নেই। নীলিমা আপার কথা আসছে কেন। আপনি তো নীলিমা আপার সাথে আত্মীয়তা করতে যাচ্ছেন না।”
-” তাহলে কী আমি ধরে নেব, বিয়ের পর আপনি আলাদা বাসায় তুলবেন আমাকে ? ” মিলি সরাসরি জানতে চাইল।
-” না, আলাদা বাসা এখনই কীভাবে সম্ভব ! মানে, টাকাপয়সা তো সব নীলিমা আপার কাছে। একটা সুরাহা না করে… ” ইতস্তত করে থেমে গেল মঈন। মিলির রাগ বাড়ল।
-” তাহলে আবার বলছেন কেন নীলিমা আপার সাথে কোন লেনদেন নেই ? যেখানে তার বাড়ীতেই থাকতে হবে আমাকে সেখানে আপনি বলছেন নীলিমা আপার কথা আসছে কেন ?”
-” আমি আপনাকে ঠিক বোঝাতে পারছি না মিলি।”
-” ঠিকআছে, এখন বোঝাতে হবেনা। দুলাভাই আসুক। সবার সামনে বোঝাবেন। এখন বসলে বসুন আর নয়ত যান। আমার অনেক কাজ আছে। আপনার সাথে বসে গল্প করতে গেলে আমার সব কাজ পড়ে থাকবে।”
-” কাল তাহলে দেখা হবে। আর অবশ্যই কালকেই আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেব। সে যেমন করেই হোক না কেন। আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন তো মিলি? ”
-” অপেক্ষা আর কী করব । আপনি এলে কথা হবে আর না আসলে নাই।”
মঈন অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকল। ম্লান সুরে বলল,
-” এতটা রুডনেস আপনাকে মানায় না। এভাবে বললে আমি যেতে পারব না মিলি। ”
মিলি একটু ভেবে অবশেষে ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবশেষে মুচকি হেসে বলল, ” আচ্ছা, আপনি এবার যান। কাল দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। ”

====

সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে মঈনের। আজ সন্ধ্যায় মিলির দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক থাকলে কাজী ডেকে এনে আজই বিয়ে পড়িয়ে ফেলবে। দুলাভাই নিজেও সেরকমই আশ্বাস দিয়েছেন ওকে। তার মতে, মেয়েমানুষ ওরকম একটু নাক্কুরনুক্কৃুর করবেই। এদের সাথে কিছু জিনিসে জবরদস্তি করতে হয়। বরং এতে আরো খুশি হয় ওরা। বিয়ে, প্রেম আর বিয়ের পর…! মঈন অবশ্য অতটা ভাবতে চায়না। আপাতত বিয়েতে যে দুলাভাই পজিটিভ এতেই সে খুশী। এখন আকদটাতো হয়ে থাক। পরে সময় সুযোগমত বাড়ি তুলে নেয়া যাবে। এমনেই মিলির যা রাগ। একটু বেচাল দেখলে ফট করে কোনদিন দেখা যাবে মানাই করে দেবে। বিয়ে হয়ে গেলে যত রাগারাগিই করুক ছেড়ে তো আর যেতে পারবে না। এই বুনোপাখিকে পোষ মানানোর একটাই পথ, তাকে খাঁচায় পুরে ফেলা।
বিয়ে সংক্রান্ত একটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই তৈরী হল মঈন। সেই ইচ্ছেতে নিজের জমানো টাকাও সব তুলে ফেলেছে। মোহরানা কিছুটা আজই শোধ করে দেবে। বাকিটা সময় চেয়ে নেবে। তাছাড়া হুট করে শাড়ীটাড়ি কেনার দরকার পড়লেও তো টাকা লাগবে। এমনিতেও ঠিক করে রেখেছে, যাবার পথে মিরপুরের রস থেকে পাঁচকেজি মিষ্টি নিয়ে নেবে। বিয়ের কথা বলতে যাচ্ছে। খালিহাতে যাওয়াটা ঠিক দেখায় না। একটা ইমপ্রেশন তৈরীর দরকার আছে। পাণীপ্রার্থী বলে কথা।

খুঁজে পেতে ক্যাটস আইয়ের ওশন ব্লু রঙের শার্টটা পরল মঈন। এই শার্টটাতে নাকি ওকে খুব মানায়। সায়রাই বলত। আজ ওকে একটু স্পেশাল দেখাতে হবে। স্বাধীন আর স্বতন্ত্র।
আয়নার ভেতর দিয়ে সায়রাকে রুমে ঢুকতে দেখল মঈন। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-” কোথাও যাচ্ছ মামা ?”
-” হম ! জরুরী একটা কাজে।”
-” তোমার জরুরী কাজের ধরণ তো আমি জানি। হয় মিটারে কার্ড ভরতে যাবে নয়ত ব্যাঙ্ক থেকে আম্মুর টাকা তুলতে। কিন্তু আজ যেভাবে মাঞ্জা মেরেছ তাতে মনে হচ্ছে না ঐ দুচোর একটাও হবে। তোমার আজকের জরুরী কাজটা ধরা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।”
মঈন সায়রার দিকে তাকাল। কিছু বলতে গিয়েও হঠাৎ মনে হল, ব্যপারটা সায়রাকে কিছুটা হলেও জানিয়ে রাখা উচিত। কারণ সে না বললেও সাবার কাছ থেকে ঠিকই জেনে যাবে সে। গত এক সপ্তাহের ব্যপারে কিছু জানে কী না কে জানে। হাবভাবে তো বোঝা যাচ্ছে না। তারচেয়ে বলে দেয়াই ভাল। এমনিতে সায়রা যথেষ্ট ভাল মেয়ে। মায়ের মত অহংকারী নয় সে। মঈন হালকা স্বরে বলল ,” আমি যাচ্ছি আমার বিয়ের কথা পাকা করতে। ”
-” হুউওয়াট..?” বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠেই গলার নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল সায়রা, ” রিয়েলি মাম্মা?” বলতে গিয়ে সায়রার বড় বড় চোখগুলো গোল হয়ে গেল।
-” ইয়েসসস….!” গায়ে পারফিউম স্প্রে করতে করতে বলল মঈন।
-” আমি কী কিছু ধারণা করতে পারি? ”
-” পারিস।”
-” সাবার বোন মিলি…!”
সায়রার কথা শেষ হবার আগেই নীলিমা ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকলেন। সায়রা মা’কে দেখে থেমে গেল। নীলিমক হড়বড় করে বলে উঠলেন, ” মঈন, গাড়ী নিয়ে একটু নিকুঞ্জ যা তো। বারসাতরা তো আমাদের বাসা চেনেনা। তুই গিয়ে ওদের নিয়ে আয়। আর তোর গাড়ীতে বারসাতকে নিবি। ওরা মোটামুটি পাঁচজন আসবে। এক গাড়ীতে ঠাসাঠাসি করে আসার দরকার নাই। তাড়াতাড়ি যা দেরী করিস না।”
নীলিমা যেভাবে এসেছিলেন সেভাবেই বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। সেজন্যই হয়ত মঈনের বেশভূষা লক্ষ্য করার সুযোগ পান নি। মঈন কী বলবে ভেবে পেলনা তবে সায়রা চেঁচিয়ে উঠল, ” আম্মু , মামা একটা জরুরী কাজে যাচ্ছে। তুমি ইয়াদ আলী চাচাকে পাঠাও। ”
-” কীসের কাজ ? ” নীলা এতক্ষনে মঈনের দিকে ভাল করে তাকালেন। ” কোথায় যাচ্ছিস তুই? ”
-” ইয়ে, আপা মানে। এক বন্ধুর বিয়ে..!”
-” সেটাতো রাতে। এখন বিকেল। তোর হাতে এখনও কত সময় বাকি। ”
-” না মানে, ও তাড়াতাড়ি যেতে বলে।”
-” বারসাতদের এখানে নামিয়ে দিয়ে যা। তাছাড়া আজ বাসায় এত দামী গেস্ট আসছে। তুই কী মনে করে আজ প্রোগাম রাখলি? জানিস আজ আমার মেয়ের একটা কাজ আছে। তোর কী কোনদিনই আক্কেল হবেনা ? ” বেরিয়ে গেলেন নীলিমা। মঈন কিছু বলার সুযোগই পেলনা। উল্টো পনের মিনিটের মাথায় ওকে গাড়ী নিয়ে বেরোতে হল নিকুঞ্জের উদ্দেশ্যে। একবার ভাবল মিলিকে ফোন দেবে। পরক্ষণেই চিন্তাটা বাদ দিল। এটা বললে ওরা ভাববে মঈন আজ না আসার ব্যপারে আগাম ঘোষণা দিচ্ছে। তারচেয়ে গাড়ী টান দিয়ে গেলে সন্ধ্যার মধ্যে ব্যাক করতে পারবে। এদের নামিয়ে দিয়ে সোজা মিলিদের বাসায় ছুটবে। সেটাই ভাল।
রাত সাড়ে নয়টা। মঈন মিলির নাম্বারে বেশ কয়েকবার ট্রাই করল, বুঝিয়ে বলতে চাইল সে কেন আসতে পারেনি। কিন্তু জেদী মেয়েটা তার মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে।

======

আহমেদ বারসাত মির্জা। ভারতীয় নাগরিক হলেও পূর্ব পুরুষ একসময় মুর্শিদাবাদের অধিবাসী ছিল। বর্তমানে শিলিগুড়িতে বসবাস করছে দুই যুগ ধরে। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর গ্লোবাল ম্যানেজার পদে আছে বর্তমানে। বয়স ত্রিশের কোঠায় হলেও দেখতে আরো কমবয়স্ক মনে হয়। এর আগে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এলেও এবার একেবারেই পারিবারিক কারণে মায়ের সাথে আসা। কারণটা বারসাতের অজানা নয়। বারসাতের জন্য বিয়ের পাত্রী খুঁজছেন মা। এবার পেয়েও গেছেন। ছবি দেখিয়েছেন ওকে। মেয়েটা সুন্দর তাতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু বয়স একেবারেই কম। আর বারসাতের আপত্তিটা সেখানেই। এত কমবয়সী মেয়ে বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই নেই ওর। বিয়ের মত একটা জটিল চুক্তির জন্য যে পরিমান কম্প্রোমাইজের দরকার তার জন্য অপরপক্ষের মানুষটিকে ন্যুনতম সহনশীল হওয়া জরুরী। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিত্য নতুন কনসেপ্টের প্রগতিশীল নারী ওর দরকার নেই। আর এতো একেবারে বাচ্চা একটা মেয়ে। নিজে ব্যক্তিজীবনে খুবই ঘরোয়া মনের ছেলে বারসাত। মেয়েটাকে তার যথেষ্ট নমনীয় মনে হয়নি। ছবিতেও কেমন ঠোঁটের কোন বাঁকিয়ে রেখেছে। রাগী ? হতে পারে। বারসাত নিজেও কম রাগী না। দুই রাগী ষাঁড় এক ঘরে একত্রিত হলে দাঙ্গা বাঁধতে কতক্ষণ। তারপরেও মায়ের পীড়াপীড়িতে আসতে রাজি হয়েছে সে। এখানে আসার পর হঠাৎই মনে হচ্ছে, আরো আগে আসা উচিত ছিল। ভাবনাটা মনে আসতেই নিজের ওপর বিরক্ত হল বারসাত।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here